একাডেমীক অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী বিখ্যাত অভিনেতা শন পেন অভিনীত হলিউড মুভি ‘ডেড ম্যান ওয়াকিং’ একটা অসাধারন ছবি। একটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই ছবিটা রিলিজ হয় ১৯৯৫ সালে। এখানে দেখানো হয়েছে যে আমেরিকার লুসিয়ানা স্টেটের একটা জেলে মৃত্যুদন্ড কার্যকরী হবার জন্য অপেক্ষারত একজন আসামী ও একজন ধর্ম যাজকের (সিস্টার হেলেন) মধ্যে আধ্যাত্নিক সম্পর্ক গড়ে উঠার গল্প। আসামী চরিত্রে অভিনয় করেন শন পেন আর ন্যানি চরিত্রে ছিলেন সুজান সারানডন। এক নব দম্পত্যিকে হত্যা করার জন্য আদালত আসামীকে ইনজেকশন পুশ করার মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সময় সিস্টার হেলেন একদিন আসামির কাছ থেকে একটা চিঠি পান। তাতে অনুরোধ করে লেখা আসামীর প্রানভিক্ষা বা মৃত্যুদন্ড কার্যকর না করার জন্য সিস্টার হেলেন কি কিছু একটা করতে পারেন কিনা। চিঠি পাবার পর সিস্টার আসামীর সাথে জেলে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। তার সাথে কথা বলে সিস্টার বুঝলেন যে আসামী ভীষণ রকম বর্ণবাদী, অনৈতিক ও তিরস্কারযোগ্য ব্যক্তি। কিন্তু তবুও তিনি তার মৃত্যুদন্ড মওকুফ করবার জন্য রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানালেন। আবেদন নামঞ্জুর হল।
আসামী সিস্টার’কে অনুরোধ করলেন যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে যেন তার আধ্যাত্নিক পরামর্শক হয়। সিস্টার রাজি হলেন এবং বললেন যতটুকু সম্ভব সান্ত্বনা বা উপদেশ সহ উনি আসামীর পাশে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবেন। সিস্টার ঐশ্বরিক ভাবে আসামীকে বোঝাতে সক্ষম হলেন যে স্বীয় পাপকর্ম স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমেও মুক্তির স্বাদ মেলে। মৃত্যুর আগে তিনি আসামীর চেহারার মধ্যে একজন পাপিষ্ঠের পরিবর্তে একজন ভালবাসার মানুষকে খুঁজতে লাগলেন। অবশেষে মৃত্যুদণ্ডের দিন আসামী সিস্টার হেলেনের কাছে দোষ স্বীকার করলেন যে সে নব বধুকে ধর্ষণসহ ওই দম্পত্যিকে সত্যিই হত্যা করেছিল। ইনজেকশন পুশ করার আগে মরন বিছানায় শুয়ে আসামীর শেষ আবদার ছিল নিহত দম্পত্যির বাবা-মার কাছে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা। আসামী নিহতের বাবা-মাকে বলে গেলেন তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হয়ত তারা সন্তান হারানোর কিছুটা সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন।
মৃত্যুর পর আসামীকে নিয়মমাফিক দাফন করা হল। সিস্টার হেলেন সহ নিহত দম্পত্যির বাবা এতে অংশগ্রহন করলেন, দোয়াও করলেন। সিনেমা শেষ।
বাংলাদেশের জেলখানা গুলোতে ফাঁসি দেবার জন্য জল্লাদ রাখা হয় জানি কিন্তু মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীদের জন্য কোন রকম আধ্যাত্নিক পরামর্শক আছে কিনা জানা নেই। আমেরিকা সহ পশ্চিমা বিশ্বে হস্পিস সেন্টারসহ হাসপাতাল বা জেলখানা গুলোতে আধ্যাত্নিক পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের কাজ থাকে হাসপাতালের জটিল ব্যাধিগ্রস্থ বা অসহায় মৃত্যুপথ যাত্রী’দের স্বান্তনা দেয়া কিংবা জেলখানার পথভ্রষ্ট মানুষদেরকে সুপথে ফিরিয়ে আনার বা স্বীয় অপকর্মের ভূল থেকে শিক্ষা গ্রহনের জন্য উপদেশ দেয়া। হউক তা মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। দেশে ইতিমধ্যেই একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর একজনের ফাঁসির দড়িতে কলা মেখে পিচ্ছিল করা শুরু হয়েছে। বাকিদের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। মৃতদণ্ডের আগে তারা কি কখনও স্ব জ্ঞানে কয়েক যুগ আগে ঘটে যাওয়া তাদের কৃতকর্মের জন্য ভূল স্বীকার করবেন? তারা কি ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে লুসিয়ানা স্টেটের সেই আসামীর মতো মৃত্যুবরণ করবেন? নাকি কখনই তারা সেই ধরনের আধ্যাত্নিক পরামর্শদের সাক্ষাৎ লাভ করেন না যাদের কাছে মৃত্যুর আগে স্বীয় ভূল স্বীকার করে যেতে চায়।
-- জামাল সৈয়দ
মিনেসোটা, যুক্তরাষ্ট্র