"জয়! জয় ওঠ বাবা.. সেই দুপুরে ঘুমিয়েছিস, এখনতো সন্ধা হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি ওঠ। মগরীবের আজান দিচ্ছে। নামাজটা পড়ে নে।"
জয় মুখ তুলে মায়ের দিকে তাকালো,,
"মা আরেকটু ঘুমোতে দাও, একটু পরে উঠে নামায পড়ে নেব।"
'আরে নামাজের সময় থাকবেনা। অফিস ছুটি বলে কি এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাবি? উঠে নামাজটা পড়ে নে, আমি চা বানিয়ে আনছি,
বলে জয়ের মা রুম থেকে চলে গেলেন। জয়ও উঠে পড়লো নামাজ পড়ার জন্য। নামাজ পড়ার পর মা চা এনে দিলেন।
চা ক্ষেতে ক্ষেতেই জয়ের মনে পড়ে গেলো লাল রঙের গাড়িটার কথা।
আজ দুইদিন সে গাড়িটাকে আর দেখেনি।
এদিকে ফরীদকেও কিছু বলেনি জয়।
চা শেষ করে জয় ফরীদকে ফোন করলো।
" হ্যলো! কিরে সারাদিন কোন খোজ নাই তোর, ব্যাপরাটা কি? "
' আর বলিসনা, শরীরটা তেমন ভালো ছিলনা। সারাদিনই ঘুমিয়েছি। আমি বের হচ্ছি, তুইও আই, কথা আছে'
কল কেটেই জয় বেরিয়ে পড়লো। পার্কিং থেকে বাইকটা বের করে স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু স্টার্ট হচ্ছিলো।
বাইকে ফুয়েল ভালই ছিলো, হঠাৎ কি হলো!
জয় স্পার্ক প্লাগ খুলে দেখলো তাতেও কোন সমস্যা নাই।
অনেক চেষ্টার পরেও বাইক স্টার্ট হয়নি।
এদিকে ফরীদ জয়কে আবারো কল দিলো।
" কিরে তুই বের হোসনি? "
' দোস্ত বেরতো হয়েছি, কিন্তু বাইক স্টার্ট নিচ্ছেনা। তুই তোর বাইকটা নিয়ে আমাদের বাসার সামনে চলে আয়',,
কিছুক্ষন পরেই ফরীদ চলে আসলো।
" সমস্যা কি হইলো? ফুয়েল আছেতো? "
' হ্যা ফুয়েল আছে, স্পার্ক প্লাগও চেক করেছি, কোন সমস্যাই তো পেলাম না',,
"ঠিক আছে, চল মেকানিকের কাছে নিয়ে যায়। কালকেতো তোর অফীস আছে। ঠিক না করালে যাবি কিভাবে? ""
'ভালো কথা বলেছিস, চল নিয়ে যায়'
ফরীদের বাইকটা জয়দের পার্কিং এ পার্ক করে দুজনে মিলে জয়ের বাইকটা ঠেলতে ঠেলতে মেকানিকের কাছে নিয়ে গেলো।
মেকানিক বাইকটার স্পার্ক প্লাগ, কার্বুরেটর, এয়ার ফিল্টার সহ মোটামুটি সব কিছুই চেক করে কোন সমস্যা পায়নি, তবুও বাইকটা স্টার্ট হচ্ছিলো না।
এরপর সাইলেন্সার পাইপ চেক করে দেখলো, সমস্যা ওখানেই ছিলো! পাইপের ভেতর কেউ একটা কাগজ মুড়িয়ে ঢুকিয়ে রেখেছে।
কাগজটা বের করার পর জয় কাগজটা খুলে দেখলো।
কাগজের ভিতর একটা মেমোরীকার্ড ছিলো।
"কাজটা কে করলো? " ফরীদ জয়ের দিকে বিষ্ময় চোখে তাকালো।
জয়ও ঠিক বুঝতে পারছেনা ঘটনাটা কি!!
জয় বাইক স্টার্ট দিলো, ফরীদ পেছনে বসেছে।
তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে জয় মেমোরীকার্ডটা ওর ল্যপটপে লাগালো।
ফরীদও খুব আগ্রহের সাথে বসে আছে।
মেমরী কার্ডটা ওপেন করার পর ওটার ভিতর একটা ফাইল
দেখতে পেল জয়।
ফাইলটা ওপেন করার পরই একটা ঘটনা ঘটলো। জয়ের ল্যপটপ নিজে নিজেই রিস্টার্ট নিয়েছে। এরপর মেমোরী কার্ডটা আর ওপেন হচ্ছিলোনা। বারবারই লেখা আসছিলো,, ' ইওর এক্সটার্নাল ডিভাইজ ইজ ড্যামেজ্ড'
জয়ের মাথায় কিছু ঢুকছিলোনা।
ফরীদ বললো " কেউ মনে হয় শয়তানি করে নষ্ট মেমোরী কার্ড ঢুকিয়ে দিয়েছে। বাদ দে, চল বাইরে যায়।"
জয় ল্যাপটপ বন্ধ করে ফরীদের সাথে বের হলো, দুজনেই বাইক নিয়ে যে দোকানে আড্ডা দেয় ওখানে গেলো।
কিন্তু জয়ের মাথায় একটাই প্রশ্ন কাজ করছিলো।
বাইকের সাইলেন্সারে কাগজটা কে ঢুকিয়েছে? আর নষ্ট মেমোরীকার্ডই বা কে রাখবে? জয় এই ব্যাপারে ফরীদের সাথে আর কথা বলেনি। পরেরদিন তো ভুলেই গিয়েছে ঘটনাটা।
পরেরদিন অফীস শেষে জয় খালিদকে আর ফরীদকে ফোন করে চায়ের দোকানে দেখা করতে বললো।
কিছুক্ষন পর তিনজন একসাথে হলো।
জয় ফরীদকে উদ্দেশ্য করে বললো,,
"দোস্ত মিরজা আঙ্কেলের ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের একটু সিরিয়াস হতে হবে। সেদিন আন্টিকে নিষেধ করার পর রিংকুকে আর স্কুলে যেতে দেয়নি। একদিক দিয়ে ভালোই করেছে। তবে এভাবে আর কয়দিন! "
ফরীদ জয়ের কথায় সায় দিয়ে বললো,, "হ্যা ঠিক বলছিস, রহস্যটা উদ্ঘাটন করাটা খুব জরুরী।
আর ভালো কথা, ঐ নাম্বারটা থেকে আর কোন মেসেজ এসেছে? "
জয় ফরীদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে..
'না আর কোন টেক্সট আসেনি, আমি আরো কয়েকবার ফোন দিয়েছি, তবে সুইস্ড অফ',,
খালিদ জিজ্ঞেস করলো,, "তাহলে এই লোকের সন্ধান কিভাবে পাবো? ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু উদ্ঘাটনের জন্য লোকটার খোজ পেতেই হবে।"
জয় খালিদের কথায় সায় দিলো,, "হুম! কিন্তু এখন কি করা যায় বলতো! "
খালিদ কিছু বললো না।
এদিকে ফরীদ আবারো মেমোরীকার্ডটার কথা তুললো,
" ভালো কথা, কালকের মেমোরী কার্ডটার কি খবর?
এরপর আর ওপেন হইছে? "
" আরে না ওপেন হয়নি। আর আজকে আমার ল্যপটপে মনে হয় ভাইরাসে এটাক করছে। অনেক গুলো ফাইল করাপ্টেড হয়ে গেছে। মনে হয় কালকের মেমোরীটাতে ভাইরাস ছিলো। "
খালিদ একটু বিষ্ময় চোখে জয়ের দিকে তাকালো,,
"কোন মেমোরীর কথা বলছিস? "
'আরে বলিসনা, গতকাল কে জানি ফাইজলামি করে বাইকের সাইলেন্সারে একটা কাগজ মুড়িয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো, কাগজের ভেতরেই কার্ডটা ছিলো, বাসায় গিয়ে ল্যাপটপে ঢুকিয়ে দেখি নষ্ট মেমোরী কার্ড। প্রথমে একটা ফাইল দেখেেছিলাম, ওটা ওপেন করার সাথে সাথে ল্যাপটপ রিস্টার্ট নিয়েছিলো, এরপর আর ওপেন করা যায়নি। তার পরেইতো আমার ল্যপটপের অনেক গুলো ফাইল করাপ্টেড দেখাচ্ছে। আর মডেম কানেক্ট দেওয়ার পর অনেকগুলো ফাইল নিজে নিজেই ডিলেট হয়ে যাচ্ছে'
খালিদ জয়ের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটেই বললো...
" তুই কি পাগল নাকি? না যেনে তুই ফাইলটা ওপেন করতে গেলি কেন? আমার মনে হয় তোর ল্যপটপ হ্যাক হইছে"
' কি বলিস? কেউ আমার ল্যপটপ হ্যাক করবে কেন?'
ফরীদও একটু অবাক হলো,,
" তোর ল্যপটপে কোন সিক্রেট ফাইল ছিলো নাকি? "
ফরীদের কথা শুনে জয়ের মুখ শুকিয়ে গেলো,,
' আমার কোন সিক্রেট ফাইল নাই, তবে... '
"তবে কি? "
'মিরজা আঙ্কেলের মৃত্যুর কয়েকদিন আগে আমাকে একটা ফাইল দিয়েছিলো, উনি আমাকে ফাইলটা ওপেন করতে নিষেধ করেছিলো, বলেছিলো উনি না বলা পর্যন্ত আমি যেন ফাইলটা ওপেন না করি। তারপরতো আমি ফাইলটার কথা ভুলেয় গিয়েছি'
জয়ের কথা শুনে ফরীদ একটু রাগান্বীত স্বরে জয়কে বললো,, "আরে গাধা তুই কি! কাহিনী এখনো বুঝিসনাই? জলদি বাসায় চল। কাজ যা হওয়ার এতক্ষনে বোধহয় হয়ে গেছে। "
খালিদও জয়কে একটু কটু ভাষায় গালি দিলো।
বাইক স্টার্ট দিয়ে তিনজনই জয়ের বাসায় গিয়েছে।
ল্যপটপ ওপেন করে জয় ফাইলটা কোথাও খুজে পায়নি।
খালিদ জয়কে বললো...
"মেমোরী কার্ডটা কেও ফাইজলামি করে রাখেনি। অনেক প্লানিং করেই রাখছে যাতে মেমোরী কার্ডটা তোর হাতেই পড়ে, আর তুই ওইটা তোর ল্যাপটপেই ওপেন করবি, এটা বুঝেশুনেই করা হইসে। আর যে বা যারা করছে তারা জানতো তোর ল্যাপটপে মিরজা সাহেবের কোন সিক্রেট ফাইল আছে। আর তুই অনেক বড়ো ধরনের একটা পাগলামী করেছিস কোন কিছু চিন্তা না করেই ল্যপটপ দিয়ে মেমোরীটা ওপেন করে। ওরা ফাইলটা হাতিয়ে নিয়েছে মনে হয়"
খালিদের কথায় জয় নিজের বোকামিটা বুঝতে পারলো,,
"এখন কি করা যায়? "
'কি আর করা? রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ফাইলটা বোধহয় অনেক বড়ো একটা ইস্যু ছিলো'
আচ্ছা যা হবার তাতো হয়ে গেছে... এখন আমাদের বিকল্প রাস্তা খুজতে হবে। - ফরীদ বললো....
আচ্ছা বাইকতো পার্কিং এই ছিলো, যে কাজটা করেছে তাকে তো দারোয়ান দেখার কথা। চল নিচে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখি...
জয় বললো.. -হুম ঠিক বলেছিস, চল যাই..
নিচে দারোয়ানকে ডাক দিলো জয়,,
"এনামুল চাচা গতকাল দুপুরের পর কি অচেনা কেউ এসেছিলো? "
এনামুল জয়কে উল্টো প্রশ্ন করলো,,
"ক্যান বাবা, কিছু হইছেনি? "
'কিছু হয়নাই, তবে কেউ একজন বাড়িতে ঢুকেছিলো। আপনিকি অচেনা কাউকে দেখেছেন? '
"আরে বাপজি.. অচেনা কাউরে দেইখলে কি আমি তারে ঢুইকতে দিতাম! "
' না চাচা, আপনি বোধ হয় খেয়াল করেননি। গতকাল কেউ পার্কিং এ ঢুকছে এবং আমার বাইকের সাথে আকাম করছে।'
" কেন কিছু চুরি টুরি করছেনি? "
এনামুলের কথা শুনে জয় একটু রেগে গেলো..
"আরে চাচা চুরি করুক আর না করুক, আপনি গেইটের দিকে খেয়াল রাখবেননা? আপনি ঠিকমত খেয়াল রাখেননি বলেই কাজটা সে করতে পারছে"
জয়ের কথায় এনামুল ভ্যবাচ্যাকে খেয়ে গেলো।,,
"আইচ্ছা বাবজি, এইরকম ভুল আর হইবোনা। আপ্নের আম্মারে কিছু কইয়েননা। নইলে আমার চারকি যাইবো।
এনামুলের কথায় জয় একটু নরম হলো।
এদিকে ফরীদের বাসা থেকে কল আসছে। ও আর খালিদ জয়কে বিদায় দিয়ে চলে গেলো।
১২ টার দিকে একই নাম্বার থেকে আরেকটা টেক্সট এসেছে জয়ের মোবাইলে,
ওখানে লিখা ছিলো,,
"যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিরজা সাহেবের খুনীদের খুজে বের করার চেষ্টা করেন। না হলে রিংকুকে বাচাতে পারবেননা"
জয় মেসেজটা পড়েই নাম্বারটাতে কল করলো।
কিন্তু না, নাম্বারটা বন্ধ।
জয় সাথে সাথেই ফরীদকে কল করে জানালো।
ফরীদ সকালে দেখা করতে বলেছে।
রাতে জয়ের চোখে আর ঘুম আসেনি। কোন কিছু বুঝতে পারছেনা, রহস্যের প্যাঁচটা বড়োই কঠিন।
জয় ভাবলো ব্যপারটা খালিদের মাধ্যমে ওর বড় চাচাকে জানাতে হবে।
সকালে জয় অফীসে যাওয়ার আগে ফরীদের সাথে দেখা করেছে।
" কিরে! রাতে ঘুমাসনি বোধহয়? কি হয়েছে বলতো! "
'দোস্ত সেই নম্বার থেকে আবার মেসেজ আসছে, বলেছে মিরজা আঙ্কেলের খুনীদের ধরতে না পারলে ওরা রিংকুকেও মেরে দেবে'
" দাড়া দাড়া.. আমার মনে হয় ওরা তোর সাথে গেইম খেলতেছে। একটু সাবধানে থাকিস, আমার কেন যানি মনে হচ্ছে ওরা তোকে কোনভাবে ফাঁসাতে চাচ্ছে। "
জয়ের মুখে একটু ভয়ের আভাস দেখতে পেল ফরীদ..
"আরে পাগল ভয় পাইসনা, তোর এই বন্ধুতো আছে তোর পাশে। সবসময় তোর পাশে আছি। টেনসন করিসনা, আমরা এই খেলার শেষ দেখেই ছাড়বো"
জয় ফরীদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।
সন্ধায় অফিস থেকে ফেরার পথে সোহানের সাথে দেখা হলো জয়ের।
" কিরে সোহান কই যাও? "
সোহান কেন যানি জয়কে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো, জয় সেটা স্পষ্ট লক্ষ্য করেছে।
জয়ের দিকে তাকিয়ে সোহান বললো,,
"একটু কাজে যাচ্ছি, পরে কথা হবে " বলেই জয় প্রস্হান করলো...
সোহানের এই হঠাৎ পরিবর্তন জয়ের কাছে তেমন একটা
ভালো লাগেনি। জয়কে দেখে কেমনজানি একটা টেনশনে পড়ে গেছে সে। কিন্তু কেন??
__ _ __ __ __ _ _ চলতে থাকবে।।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৪:০৫