মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজে জয়ের ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। মুঠোফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আননোন একটা নাম্বার থেকে কল আসছে।
আননোন নাম্বার দেখে কিছুটা বিরক্ত লাগছে, এমনিতে রাতে ঘুম হয়নি। ভোর ৪টার দিকেই বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছিলো। কাচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে বিরক্তি লাগাটা স্বাভাবিক। কল রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ এলোনা। জয় কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করার পরও কোন উত্তর পায়নি। ১৫ সেকেন্ড পর ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে দিলো। ব্যপারটা একটু উইয়ার্ড। কিছুক্ষন পর ফোনে একটা টেক্সট আসলো...
" মিরজা খানের মৃত্যুটা স্বাভাবিক না, ঘটনাটার পেছনে অনেক গুলো সত্য ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। আমি কে বা কেন আপনার সাথে যোগাযোগ করছি এটা ইম্পর্টেন্ট না।
ইম্পর্টেন্ট হচ্ছে মিরজা খানের ছেলের কোন একটা বিপদ ঘটতে পারে। সাবধান থাকুন।"
টেক্সটা পড়ার পর জয়ের শরীরে লোম গুলো দাড়িয়ে গিয়েছে।
এর মানে কি? মিরজা সাহেবকে তাহলে কি খুন করা হয়েছে? কারা করলো এমন একটা কাজ?
আর কিইবা স্বার্থ ছিলো ইত্যাদি নানা রকম প্রশ্ন জয়ের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
কয়েকবার জয় নাম্বারটাতে কল দিয়েছে কিন্তু নাম্বারটা বন্ধ। এর মানে টেক্সট টা যে পাঠিয়েছে সে নিশ্চয় মিরজা সাহেবের খুনের সাথে জড়িত, অথবা সে সব কিছুই যানে।
আর এই লোক যদি খুনের সাথে জড়িত হয় তাহলে কেনই বা এভাবে সতর্কবার্তা দেবেন! এই লোকেরই বা কি স্বার্থ আছে?
এসব চিন্তা করতে করতে জয় ফরিদকে কল দিলো।
ফরিদ ওর ঘনিষ্ট বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম। সব ঘটনা সবার আগে সে ফরিদকেই শেয়ার করে। এবারও ফরিদকেই জানাতে হবে।
কয়েকবার রিং হয়ে মোবাইল কেটে গেলো, সম্ভবত ঘুমাচ্ছে। জয় শেষবারের মত চেষ্টা করলে ফরিদ কলটা রিসিভ করলো,,
"কিরে এত রাতে কল দিয়েছিস কেন? "
'ওই হাদারাম এখন রাত নাকি? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ সাড়েসাতটা বাজে'
"ও! আচ্ছা কি হইসে বল! এত সকালে ফোন দিলি কেন? "
'দোস্ত খুব বাজে আকটা ঘটনা বোধ হয় ধামা চাপা পড়ে গেছে। আমরা চোখে যা দেখেছি ভুল ছিল, মিরজা আঙ্কেলের মৃত্যুটা মনে হয় দুর্ঘটনা না।'
জয়ের কথাটা শুনে ফরীদ একটু হকচকিয়ে গিয়েছে।
অনেকটা ধমকের স্বরেই জয়কে বললো,,
"আরে তুই কি এই সাত সকালে পাগল টাগল হয়ে গেলি নাকি? উনিতো ট্রাকের নিচে পড়ে মারা গিয়েছেন সবাই জানে। আর আজ একমাস পর তুই এসব আজগুবি কথা কই পাইলি!"
'এসব কথা আমি একটুও বানিয়ে বলছিনা, তোকে কিছু বলার আছে যা মোবাইলে বলা সম্ভব না, ১০ টার দিকে যেভাবেই হোক একটু সানমারে আয়।,
"আচ্ছা ঠিক আছে, তুই চিন্তা করিসনা আমি আসতেছি।"
এই বলে ফোনটা কেটে দিলো ফরিদ। জয়ের কথায় ওর মাথাতেও বেশ বড়ো একটা চক্কর দিয়েছে।
১০ টার দিকে সানমার ওসান সিটির সামনে জয় দাড়িয়ে আছে, ফরিদের আসতে একটু সময় লেগেছে। বাইকে ফুয়েল শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাই একটু দেরি হয়েছে।
ফরিদের সাথে সোহানকে দেখে জয়ের একটু রাগ হলো। আড় চোখে কয়েকবার ফরিদকে ইশারা করলো কিন্তু কাজ হয়নি, বরং ফরিদ চোখ টিপ দিয়ে বুঝিয়ে দিলো সোহান যানলে অসুবিধা হবেনা। এতে জয় একটু বিরক্তি বোধ করলো, সে সোহানকে তেমন একটা পছন্দ করেনা। কেমন একটা নীরামিশ টাইপের ছেলে। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো পেটে কথা ধরে রাখতে পারেনা।
ফরিদ অভয় দিয়ে বললো,, "কি বলবি বল! অসুবিধা নেই, সোহান কাওকে কিচ্ছু বলবেনা। "
জয়,, "দোস্ত কিছু একটা ধামাচাপা পড়েছে, মিরজা আঙ্কেল দুর্ঘটনায় মরেনি, সম্ভবত উনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে মারা হয়েছে।"
ফরিদ একটু দ্রু কুচকে জয়ের দিকে তাকালো,, "মানে কি? মিরজা সাহেবের পোস্টমর্টাম রিপোর্ট তো আমরা পেলামই। ওখানেতো স্পষ্ট ভাবেই লিখা ছিলো মিরজা সাহেব ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়েই উনি ট্রকের নিচে চলে যান এবং চাকার নিচে চাপা পড়ে মাথা থেতলে যাওয়ার কারনেই উনি স্পটে মারা গিয়েছেন।"
ফরিদের কথা শুনে জয় পকেট থেকে মোবাইল বের করে রাতের টেক্সটটা ফরিদকে দেখালো।
"কে দিয়েছে এটা? "
'যানিনা, টেক্সট টা দেওয়ার আগে একবার কল দিয়েছিলো, আমি রিসিভ করেছি কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ কথা বলেনি। কলটা রাখার পরেই টেক্সট টা দিয়েছে। এরপর কল দিয়েছি কিন্তু ফোন বন্ধ, কিছু বুঝতে পারছিনা'
ফরিদ মেসেজটা খুব মনযোগ সহীত কয়েকবার পড়লো।
সোহানও মোবাইলটা নিয়ে টেক্সটটা একবার পড়লো।
ফরিদ একটু প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিয়ে জয়ের দিকে তাকালো,
" হুম, একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি, ভয়ানক রহস্য। টেক্সট টা যদি সত্যি হয় তাহলে রিংকুর বিপদ হওয়া সম্ভাবনা আছে। আমাদের যেভাবেই হোক রহস্যটা খুজে বের করতে হবে। না হলে রিংকুর বিপদ হতে পারে।"
রিংকু হলো মিরজা সাহেবের একমাত্র ছেলে। বয়স ১৫ কি ১৬ হবে। বাবা মারা যাবার পর এই ছেলেটায় তার মায়ের শেষ সম্বল। মিরজা সাহেবর ব্যাংক ব্যলেন্স কিছু আছে। এই টাকাতেই মা ছেলের কয়েক বছর কেটে যাবে। আবার রিংকুর দুই মামা সুনেছি ওদের দায়িত্ব নিচ্ছে।
রিংকুর চাচা গুলোকে পশু বললেই চলে। মিরজা সাহেবের লাশ দাফনের সময় শুধু একবার এসেছিল রিংকুদের বাড়িতে, এরপর আর কোন খোজ খবরই নেয়নাই।
রিংকুদের বাসায় আরেকজন থাকেন সে হচ্ছে রিংকুর ছোট খালা। সবাই ওনাকে মিস্টি খালা বলেই ডাকে।
আর জয়, ফরিদ, সোহান এদের সাথে রিংকুদের পরিচয় অনেক আগে থেকেই। জয়দের খুবই ঘনিস্ট পরিচয় ছিলো মিরজা সাহেবের সাথে। জয় আর ফরিদ এমবিএ শেষ করে যখন বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছিলো তখনই মিরজা সাহেব এদের পাশে এসে দাড়ায়, দুজনকেই খুব ভালো চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলো। খুবই ভালোমানুষ ছিলেন। এরপর থেকেই জয় আর ফরিদের মিরজা সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
মানুষ এতটাও নিষ্ঠুর হতে পরে জয়ের জানা ছিলোনা।
এত ভালো একটা মানুষকে কিভাবে খুন করা যায়? রিংকুদের কথা ভেবে নিজের অজান্তেই চোখ টলমল হয়ে উঠলো জয়ের।
সন্ধায় অফিস শেষে একটা চায়ের দোকানে এ আবারও এক হলো জয় আর ফরিদ। কিছুক্ষন পর খালিদ আর সোহান ও এলো। ওরা জয় আর ফরিদের সামনের বেন্ঞে মুখোমুখি হয়ে বসেছে।
খালিদও জয়ের মোটামুটি ভালো বন্ধু, ওর সাথেও ঘটনাটা শেয়ার করা যায়। তাছাড়া খালিদের বড়ো চাচা হচ্ছেন খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি। পরবর্তীতে সাহায্য লাগতে পারে। জয়ের মুখে সমস্ত ঘটনা শুনলো খালিদ।
সোহান বলে উঠলো "কথা গুলো আমরা চারজন ছাড়া আর কেও জানা ঠিক হবেনা, সিক্রেট রাখতে হবে। "
ফরিদও সায় দিলো সোহানের কথায়।
খালিদ সমস্ত কথা শোনার পরে বললো,,
"আমাদের সবার আগে এই টেক্সট টা যে দিয়েছে তাকে খুজে বের করতে হবে। আর আমার মনে হচ্ছে 'এটা যদি খুন হয় তাহলে এই টেক্সট দাতাও সব কিছু জানে। এবং এই সতর্কবার্তাটাও ওদের চাল হতে পারে। তাই আমাদের অনেক সতর্ক থাকতে হবে। বড়ো ধরনের কিছু একটা ঘটতে পারে। "
পরদিন জয় রিংকুদের বাসায় গেলো। রিংকুর মায়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বললো,,
"আন্টি রিংকুর মনের অবস্থা খুব একটা ভালোনা। ওকে কয়েকদিন ঘর থেকে বের হতে দিয়েননা।"
রিংকুর মা একটু 'হতভম্ব চোখে জয়ের দিকে তাকালেন
'কিন্তু বাবা ওর স্কুলতো খোলা, তাছাড়া সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। স্কুলে তো যাওয়া দরকার।'
" আন্টি রিংকুকে একা ছাড়বেননা। ওর সাথে সবসময় কাওকে রাখবেন। আর যদি পারেন আপনিই ওকে স্কুল থেকে আনা নেওয়া করবেন। ওকে একা ছাড়াটা ঠিক হবেনা।" রিংকুর মা কিছু বললো না,,
কি যেন এক চিন্তা তার মনে।
জয় উঠে দাড়ালো, বাসায় ফিরতে হবে। বেশ কয়েকটা কাজ আছে।
রিংকুদের বাসা থেকে বাইরে বের হয়েই জয়ের চোখে পড়লো ২০১০ মডেলের লাল রঙের একটা টয়োটা, জয়ের বাইকের থেকে কিছুটা দুরত্বে দাড়িয়ে আছে। দাড়াতেই পারে, অস্বাভাবিক কিছুতো না। জয় ব্যাপারটা নিয়ে কিছু চিন্তা করেনি। কিন্তু আশ্চর্য্য বিষয় হচ্ছে জয় এরপরেও আরো কয়েকবার গাড়িটা দেখেছে।
ওর বুঝতে বাকি রইলোনা কেউ ওকে ফলো করছে।
"কে ফলো করতে পারে আমাকে!" জয়ে নিজের প্রতিই প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ,আবার এদিকে একটু ভয় ভয় ও লাগছে তার।
_______________________ চলতে থাকবে→→
( বড় গল্প লিখার অভ্যাস নেই। এই প্রথম একটা রহস্যজনক বড় গল্প লিখছি। তবে পাঠকদের ভালো লাগবে কিনা জানিনা। ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন। তাহলে পরবর্তীতে লিখার জন্য অনুপ্রেরনা পাবো। আর কিছু ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
বিঃদ্রঃ → গল্প এবং গল্পের চরিত্রগুলো কাল্পনিক )
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৬ রাত ৯:৪৪