পৌষের কাছাকাছি, রোদ মাখা সেই দিন ফিরে আর আসবে কি কখনো?
ফিরে আসবে কি কখনো?
প্রিয় গানগুলোর ভিতরে এটি একটি৷ যখনই এই গানটি শুনি মনে হয়, আহ্ কি দারুন একটা গান? অসাধারন লিরিক যা চিরন্তন নস্টালজিক একটা আমেজ নিয়ে হাজির হয়। সেই দিন আর কখনই ফিরে আসবে না। আসলে মানুষের এই ক্ষনকালীন জীবনটা অসম্ভব কিছু পাওয়া না পাওয়ার একটা চক্রের মধ্যে ঘুর্ণায়মান। আমাদের জীবন চক্রের সবচেয়ে সুন্দর সময় হল শৈশব। শৈশবের সুখস্মৃতিই নাকি মানুষের সবচেয়ে সেরা স্মৃতি। যা মৃত্যুর আগ মুহুর্তে নাকি ভেসে উঠে শৈশবের কোনো টুকরো ঘটনা।
কিছু কিছু রোমাঞ্চ জীবনে আর ফিরে আসে না, সেই অনুভূতি মনের ভোল্টে অতি মূল্যবান সঞ্চয় হিসেবে জমা থাকে। মাঝে মাঝে সেই সঞ্চয় থেকে সুদ হিসেবে নস্টালজিয়া ধার করি, জটিল জীবনে থেকে নিজেকে আলাদা করে মুক্ত করি নিজেকে সেই নস্টালজিয়া ভরিয়ে দেয়ার জন্য।
কথা হচ্ছিল শৈশবের সুখস্মৃতি। মানুষ তার জীবনের কোন এক সময় তাঁর সুখ স্মৃতিগুলো মনের গভীরে উদ্দীপনা জাগায়। তখন ফিরে পেতে চায় সেই শৈশবে। আহা কি সেই শৈশব! সে সময় ছিল উচ্ছ্বল প্রানবন্ত জীবন। মুসল ধারে বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলা, বর্ষায় নৌকা বাইচ। শরৎকালে সুনীল গগণে সাদা মেঘ স্তূপীকৃত হয়ে ভেসে বেড়ায় ওই সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলা অজানার দেশে। ফড়িং প্রজাপতির পিছনে ছোটা ছুটি। কৃষ্ণ পক্ষের কোন সময় জোনাক পোকা ধরে এনে কাচের বয়্যামে রাখা। কি ছিল না সেই জীবনে? বর্শি, পলো বা জাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরা কি দুরন্তপনা বাধাহীন জীবন। শীতের সকলে পিঠা, মুড়ি খেজুরগুড় নিয়ে উঠানে বসে খেতে খেতে রৌদ্র পোহান। পৌষ পার্বণের দিনে পাড়ার বাড়ি বাড়ি ঘুরে পিঠে খেয়ে বেড়ান।
শীতের সকালে আলস্যের চাদর অবমুক্ত করে কুয়াশার ধূম্রজাল চিরে পুর্ব আকাশে সূর্য নিজেকে জানান দেওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কোমল সূর্যরশ্মিতে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দুগুলো মুক্তোদানার মতো ঝলমল করে। গাছের পাতা থেকে শিশির ঝরে পড়ার টুপটাপ শব্দ আর পাখিদের কলরব আন্দোলিত করে জীবনকে। শিশিরভেজা মেঠো পথে ধরে সরিষা ক্ষেতে খালি পায়ে হাঁটা সে এক অপূর্ব সুখানুভিতি। যেন হলুদের চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। কী অপরূপ প্রকৃতি! ফিরে যেতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির খুব কাছে প্রকৃতির সাথে একাত্ব হওয়ার জন্য।
আমর এ শৈশব ছিল এক দুরন্ত, উচ্ছ্বল, উচ্ছ্বাস ও প্রানবন্ত স্বর্ণ যুগ। যেখানে আর এ মানব জীবন নিয়ে কখনই ফিরে যাওয়া যাবে না। শৈশবের সেই সব সুখ স্মৃতি মনে পরলে, এখন শুধু শাহ আব্দুল করিম এই গানটি মনে মনে গাই -
"আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম"
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৯