শরীরের বয়স বাড়ে। শৈশব থেকে কৈশোর পেরিয়ে মানুষ যৌবনে পা রাখে। তারপর একদিন উদ্দাম যৌবনেও যবনিকা নামে। তখন মানুষ প্রৌঢ়ত্বের খাতায় নাম লেখায়। ধীরে ধীরে বার্ধক্য আসে। তারপর একদিন...............শেক্সপীয়ার তো কবেই বলে গেছেন “সেভেন স্টেজেস অফ ম্যান”। একে অস্বীকার করার উপায় কোথায়! কিন্তু, মনের বয়স? এই মনকে ঠিক রাখতে হলে নিজেকে সুস্থ রাখা অপরিহার্য।
আমরা এখন যে পরিবেশে বাস করছি নিজেকে সুস্থ রাখা কঠিন হয়ে পরেছে বিশেষ করে ঢাকা শহরে। কেমিক্যাল ও ফরমালিন সম্মৃদ্ধ ভেজাল খাবার। ঘড়ে ও অফিসে মাথার উপর সবর্দা ফ্যান, লাইট, টিভি, এসি'র ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ডের রেডিয়েশন, বাইরে মোবাইল কোম্পানির বড় বড় টাওয়ারের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির রেডিয়েশন আর শীশাযুক্ত দুষিত বাতাস। বেচেঁ থাকা এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে সঙ্গী করেই বেচেঁ থাকার আশায় এখনও আমরা বুক বাধি। সুস্থ থাকতেই হবে সুস্থতার কোন বিকল্প নেই। আর শরীরকে সুস্থ রাখাতে হলে নিয়মিত কিছু নিয়ম পালন বা চর্চা করা প্রয়োজন।
তা হলো নিয়মিত গভীর ভাবে কিছু সময়ের জন্য দমের চর্চা করা। দম চর্চায় জীবণীশক্তি বৃদ্ধি পায়। গভীর শ্বাস প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেহকে প্রাণবন্ত করে তোলা যায়। দেহ থাকবে সতেজ, মন হবে প্রফুল্ল। উপভোগ্য হবে প্রতিটি ক্ষণ। দম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি থেকে অক্সিজেন বা জীবণীশক্তি গ্রহণ করে ফুসফুসের প্রসারণ ঘটে। দম ছাড়তে ছাড়তে শরীর থেকে দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করার সময় ফুসফুসের সংকোচন হয়। একবার দম নেয়ার সাথে সাথে শরীরের ৫ ট্রিলিয়ন রক্তকণিকা বাতাসের মুখোমুখি হয়। প্রতিটি রক্তকনিকায় রয়েছে ২৮০ মিলিয়ন হিমোগ্লোবিন অণু। আর প্রতিটি হিমোগ্লোবিন অণু আটটি করে অক্সিজেন পরমাণুকে ধরতে ও পরিবহন করতে পারে। প্রতিবার দমের সাথে ১১-র পাশে একুশটি শূন্য বসালে যে সংখ্যা হয় সে পরিমাণ অক্সিজেন পরমাণু শরীরে প্রবেশ করে। প্রতিটি সুস্থ মানুষের দেহে ফুসফুস এ কাজটি জন্ম থেকেই করে যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবে জীবন চলে।
নিয়মিত সঠিক নিয়মে দম চর্চার সাথে সাথে বিশ্বাস করতে হবে সুস্থ ও নিরাময়ের অসীম ক্ষমতা দেয়া আছে আপনার মধ্যেই যা সংরক্ষিত আছে আপনার জেনেটিক কোডের সুবিন্যস্ত তথ্যমালায়। এ বিশ্বাসই আপনার মধ্যে সৃষ্টি করবে বিশেষ নিরাময় তরঙ্গ আপনি এগিয়ে যাবেন সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূর পথে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের ৯০ ভাগ মানুষই সঠিক প্রক্রিয়ায় শ্বাসক্রিয়ার ব্যবহার জানেন না। এখনে কিছু দম চর্চা বা অনুশীলনের প্রক্রিয়া দেয়া হল।
ক) সকাল বেলা খালি পেটে পদ্মাসনে মেঝেতে বসে পরুন। হাত দুটো দু হাটুর উপর রাখুন। বুক ভরে নাক দিয়ে লম্বা দম নিন, আস্তে আস্তে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ত্যাগ করুন। দম নেয়ার চেয়ে ছাড়তে বেশী সময় দিন। এভাবে দুই থেকে পাঁচ মিনিট এবার বিরতি দিন।
খ) স্বাভাবিক গতিতে নিঃশ্বাস যাতায়াত কালে নিঃশ্বাস ছড়ার সময় শুধু পেটকে ভিতর দিকে চাপ দিন একেক সেশনে আটাশ বার হাপিয়ে গেলে বিশ্রাম নিন। জোর করে অনুশিলনের চেষ্টা করবেন না। এক থেকে দুই সেশন।
গ) স্বাভাবিক গতিতে নিঃশ্বাস যাতায়াত কালে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিন। এবার সব বাতাস ছেড়ে দিয়ে পেটকে ভিতর দিকে টেনে রাখুন যতক্ষন পারেন। এভাবে তিন থেকে পাঁচ বার।
ঘ) ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ডান নাক বন্ধ করুন। এবার বাম নাক দিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিন। ডান হাতের তর্জুনী দিয়ে বাম নাক বন্ধ করে ডান নাক দিয়ে নিঃশ্বাস ত্যাগ করুন। এভাবে দুই থেকে পাঁচ মিনিট।
ঙ) ছবির আদলে দুই হাত দিয়ে চোখ, নাক ও কান চেপে বন্ধ করুন। মুখ দিয়ে বুক ভরে জোরে দম নিন। ভ্রমর যে ভেবে গুঞ্জন করে ঠিক সে ভাবে শব্দ করে দম ছাড়ুন। দম ছাড়ার সময় যেন ভাইব্রেশন সৃষ্টি হয় এবং ব্রেন ও মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। এভাবে দুই থেকে পাঁচ মিনিট। (বিঃদ্রঃ সকল দম চর্চার মাঝে অবশ্যই বিরতি দিতে হবে এবং জোর করে এ চর্চা করে যাবে না। সব কিছুই নিজ দায়িত্বে করবেন)।
এ ছাড়াও সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্ম ব্যস্ত সুখী জীবন গড়তে পরোপকারী হতে হবে,দান করুন। সর্বদা বর্তমানের সাথে চলুন। দুঃচিন্তা, পেরেশান, দুঃখ বেদনা, না পাওয়ার হাহাকার পরিত্যাগ করতে হবে। আমার না ভেবে আমাদের ভেবে কাজ করুন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা করুন এবং সে লক্ষে কাজ করে যান। আপনি দীর্ঘায়ু হবেন ও সুস্থ থাকবেন।
নীচে ছবিগুলো ক্রমান্বয়ে দেয়া হলো (ক থকে ঙ)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:০৩