বাঙ্গালী জাতি হল বঙ্গদেশ অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসম ও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী মানব সম্প্রদায় যাদের ইতিহাস অন্ততঃ চার হাজার বছর পুরোনো, মাতৃভাষা বাংলা। তবে এছাড়াও অনেক বাঙ্গালী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভারতের আরো নানা রাজ্যে, যেমনঃ ত্রিপুরা, অসম, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, দিল্লী, কর্ণাটক এবং ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্তের রাজ্যগুলিতে (অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড)। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি সহ সারাবিশ্বে অনেক প্রবাসী বাঙ্গালী আছেন। আগে এদেশের সভ্যতাকে অনেকেই অর্বাচিন বলে মনে করলেও বঙ্গদেশে চার হাজারেরো বেশি প্রাচীন তাম্রাশ্ম (chalcolithik) যুগের সভ্যতার নির্দশন পাওয়া গেছে যেখানে দ্রাবিড়, তিব্বতী-বর্মী ও অস্ট্রো-এশীয় নরসম্প্রদায়ের বাস ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। বঙ্গ বা বাংলা শব্দটির সঠিক বুৎপত্তি জানা নেই তবে অনেকে মনে করেন এই নামটি এসে থাকতে পারে দ্রাবিড় ভাষী বং নামক একটি গোষ্ঠী থেকে।
আবার অনেক ঐতিহাসিক বাড়িয়ে বলেন যে বাংলা এবং বাঙ্গালী জাতির রয়েছে দশ হাজার বছরের ইতিহাস । তবে বাঙ্গালী জাতির অন্তত দশ হাজার বছরের সুনির্দিষ্ট ইতিহাস ও শেকড় রয়েছে। বাংলাদেশের পশ্চিমে আছে পশ্চিম বাংলা, সেখানে মাটি খনন করে পাওয়া গেছে প্যালিওলিথিক ও মাইক্রোলিথিক অস্ত্রশস্ত্র। যেসব অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গেছে, তাতে বোঝা যায়, বাঙালিরা যোদ্ধা জাতি ছিল। পশ্চিমের দেশগুলো থেকে কয়েক হাজার বছর পূর্বে পাকিস্তানের খাইবার নামক গিরিপথ দিয়ে আর্যরা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করেছিল। তারা আসতে চেয়েছিল বঙ্গদেশেও। কিন্তু আদি বাঙ্গালীদের কাছে তারা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ফলে বাংলা অঞ্চলের মানুষের প্রতি আর্য বা আরিয়ানদের ছিল প্রচণ্ড ঘৃণা।
বাঙ্গালা নামে পরিচিত এই বিরাট এলাকায় ছিলো অনেকগুলি রাজ্য-গৌড়, রাঢ়, দক্ষিণ রাঢ়, সুহ্ম, বরেন্দ্রী, হরিকেল, সমতট এবং বঙ্গ। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে আরও ছোটোখাটো রাজ্য ছিল। ১৩৫০-এর দশকে গৌড়ের সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁ জয় করে ‘শাহ-ই বাঙ্গালীয়ান’ অর্থাৎ বাঙ্গালীদের শাহ উপাধি গ্রহণ করেন। বৃহত্তর ‘বাঙ্গালা’র জন্ম তার আগে হয়নি। অন্য দিকে, বাংলা ভাষাও আবার মোটামুটি ওই সময়েই নিজের বৈশিষ্ট্য অর্জন করে স্বতন্ত্র ভাষার রূপ লাভ করে। দুদিক থেকেই বিবেচনা করলে বঙ্গীয় সংস্কৃতির বয়স তাই আট শত অথবা বড় জোর এক হাজার বছর। এর চেয়ে একে পুরানো বলে গণ্য করা যায় না। কিন্তু এই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল এই অঞ্চলের হাজার হাজার বছরের পুরানো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে। একটা দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা যায় যে, খাদ্যাভ্যাসের কারণে বাঙ্গালীদের নাম ‘ভেতো’ বাঙ্গালী। আর্য অথবা মুসলমানরা এ দেশে ধান আনেননি, ধানের চাষ এ অঞ্চলে আরম্ভ হয়েছিল অন্তত পাঁচ হাজার বছর আগে। পরে কখনো আর্য, কখনো সেন, কখনো তুর্কি, কখনো আফগান, কখনো মোগল এবং সবশেষে ইংরেজরা বঙ্গভূমি দখল করেছেন, তবু বাঙ্গালীদের ভাত খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন হয়নি। ভাত বাঙ্গালীর একটি সাংস্কৃতিক ভিত্তি।
বাঙ্গালী জাতির হাজার বছরের এ বিশাল সংস্কৃতি ঐতিহ্য, বৈশিষ্ট্য, কৃষ্টি পৃথিবীতে অন্য কোন জাতির আছে বলে মনে হয় না। বাঙ্গালী জাতি এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ একক জাতি। এ জাতিকে আর রাজনৈতিক কুট কৌশল বা পেশী শক্তি দিয়ে অবদমিত করে রাখা যাবে না। সেই দিন আর বেশীদিন নাই যে দিন পৃথিবী নামক এ গ্লোবটিতে শুধু মাত্র বাঙ্গালী জাতিই প্রতিনিধিত্ব করবে।
তথ্যসূত্রঃ- ১) wiki থেকে সংগৃহীত।
২) বাঙালী: ধূসর পাণ্ডুলিপি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:১৯