ঈদুল আযহার ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ী বগুড়াতে পৌছাই রাত আটটায়। মা, সকল ভাই, ভাই বউ, ছেলে-মেয়ে, বোন, দুলাভাই ও ভাগ্নিদের নিয়ে বাড়ী একবারে লোকজনে রমরমা। গত পাঁচ ছয় বৎসরে এভাবে সকলকে একসাথে নিয়ে ঈদ উদযাপন করা হয়নি। রাত্রি বেলা খাবারের পর হই হট্টগোল, গল্পো গুজবে রাত্র প্রায় বারটা বাজতে চললো। যেহেতু গত দশ বৎসর যাবত কেহই আমরা গ্রামের বাড়ীতে থাকি না তাই সকল সুবিধাবাদি নিয়ে রাত্রি যাপন করাটাও একটু কষ্টকর।
খাওয়া-দাওয়ার পর সকলকে ঘুমানোর জায়গার ব্যবস্থা করে দিয়ে ভাবছি কি করা যায়? চাঁদনী রাত বাড়ীতে থাকার জায়গারও সংকুলান হচ্ছে না। একটু ভিন্নভাবে রাতটা কাটালে কেমন হয়? হঠাৎ মনে পরলো থানচির প্রোগ্রাম উপলক্ষে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি তাঁবু কেনা আছে, তার মধ্যে একটি তাঁবু আমার গাড়ীতেও আছে। বাপ দাদা ও আমার জন্মস্থান বুকে ভয় ভীতিও কম, তাই গাড়ীটা নিয়ে একটা নিরিবিলি স্থানে গেলাম ও জঙ্গলের পাশে উপযুক্ত স্থানে তাঁবুটা সেট করলাম। ভিতরে ম্যাট ও বালিশ পেতে শুয়ে পরলাম একা একা। চারিদিকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক দিগন্ত বিস্তৃত শস্য ক্ষেত। মাঝে মাঝে মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। কেমন যেন একটা ভালো লাগা তৈরি হলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখছি কত মেঘ এদিক থেকে ওদিক উড়ে যাচ্ছে, কিছু সময় পর মেঘগুলো আবারও চাঁদকে ঘিরে ফেলছে। মেঘগুলো যেন চাঁদকে ঢেকে রাখার অব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। কিছু সময়ের জন্য সফল হলেও আবারো ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু চাঁদের আলোর উজ্জ্বলতাকে ম্রিয়মাণ করতে পারছে না। জোস্নার আলোয় ভেসে গেছে দিগন্ত সে এক অপুর্ব অনুভুতি।
এলোমেলো অনেক চিন্তা ভাবনা মাথার ভিতর ঘুড়পাক খাচ্ছে। ভাবছি জীবনটা আসলে তখনি অনেক সুন্দর ছিল, যখন বুঝতাম না জীবনের মানে, ছুটতাম না স্বপ্নের টানে বা কাদঁতাম না কষ্টের কারণে আর এখন? ভাবগুলো ভাবনার রাজ্যে ঘুড়তে ঘুড়তে এক সময় ঘুমের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হয়ে ভাবনাগুলোর ইতি টানে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪২