somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অতীন্দ্রিয়া
আমি ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম,ঝর্ণার মত চঞ্চল।বিধাতার মত নির্ভয়,প্রকৃতির মত সচ্ছল।আমি আকাশের মত বাঁধাহীন,আমি মরু সঞ্চার বেদুঈন,আমার বন্ধনহীন জন্ম–স্বাধীন,চিত্ত মুক্ত শতদল।ঠিক যেমনটা নজরুল বলেছেন

সে মানুষ নয়,সে মেয়ে

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই মেয়েটা আমার মেয়ে, আজ অনেক উপরে পৌছেছে, অনেক উঁচুতে,এতটা উঁচুতে, মা হিসেবে কখনো কল্পনাও করিনি
আমার গর্ভে ওর যখন মাত্র ছয়মাস,তখন আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে আমি প্রথমদেখি ওর হাত, পা, মুখ, আর ওরা দেখেছিলো যোনি।
চারিদিকে ভয় আর ভয়
যদি পুত্র না হয়!
একটাইতো লিঙ্গ আছে মোটে!
না হওয়া তুলতুলে হাত পা বুক পেট ওরা ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিল যমুনার জলে।

আমি তো মা! বহু সংগ্রাম করে, ভিষন যুদ্ধকরে জন্ম দিয়েছি সেই মেয়েটাকে।
বড় আদরে আল্লাদে একটু একটু করে আমার চোখের সামনে বড় হচ্ছিলো।
ছোট বেলাতেও কোন পুরুষের কোলে কখনো দেইনি,জগৎকেতো একটু হলেও চিনি!
মেয়েটার যখন মাত্র ৬ বছর, ভয়ার্ত চোখে একদিন আমায় জাপটে ধরে, সে কি কান্না!! বললো আমি আর খেলতে যাবো না রিনুদের বাসায়, আমি বুঝে নিলাম, বুঝিয়ে দিলাম পুরুষের দৃষ্টি সেই অবুঝ ছোট্ট শিশুকে।ও বুঝতে চায়না।
আমার চঞ্চলা মেয়ে, সে কেবলি খেলতে গিয়েছিলো আর প্রতিবেশি তাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করেছে,
আমি নিজে আমার মেয়েকে বললাম," শশশ,কাউকে বলিস না, কেউ যেন না জানে)"
কাল থেকে তোর বাইরে যাওয়া বারণ।
মেয়েটি জানালায় বসে মাঠের শিশুদের খেলা দেখতো..
আমায় বলতো,আমার কি দোষ মা?
ও কি জানে!
ও তো শিশু নয়.. ওযে মেয়ে

তার পর এলো পড়াশোনার বয়স,
আমার মেয়ের রুপে বড় ধার ছিলো,মেয়েটির মাংস ছিলো বুঝতো না,বুঝলে কি আর মায়ের কথা না মানতো!

পথে, বাসে, ট্রামে, ট্রেনে যখন অচেনা হাত স্পর্শ করত তখন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতো, মা,মেয়েদের দেহ কি কেবলি পুরুষের বিচরণ ক্ষেত্র!

আমি বলতাম, "হুশশশশ,কাউকে বলিসনা যেন"কেউ যেন না জানে
ও বলতো জানো মা! বিবাদ করলে প্রতিবাদ করলে ওরা উল্টো উপদেশ ঝাড়ে
আমি বলতাম চুপ করে থাকবি।ওভাবে সকলের সামনে বিবাদ করতে লজ্জা করে না তোর!
ও বলতো,ওদের লজ্জা করেনা মা!
আমি বলতাম,ওরা মানুষ,তুই মেয়ে


আমার মেয়েটার মানুষ হওয়ার পন ছিলো....
সেই বিকেলে রাস্তা নির্জন ছিলো
মেয়েটির শরীরটি তার ভুল ছিলো
হায়না গুলো সেদিন ওকে জোর করে উঠিয়ে নিলো আর
ফিরিয়ে দিলো কালরাত্রি ভোর করে
মেয়েটির আর কেউ ছিলোনা তার পরে..আমিও না
মানুষ মরে একবার..আমার মেয়েটা রোজ মরে..
আমি ওর চিৎকার চেপে ধরে রাখি,
ওর ব্যাথা,
হুশশশ, কাউকে বলিসনা যেন, কেউ যেন না জানে

আমিতো জানি! পাছে জানাজানি হলে এই পিচাশ সমাজ জোর করে ওই রেপিস্টের সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দিবে! এ সমাজ নারীর অনুভুতির, নারীর প্রতি ন্যায় বিচারের মুল্য কবে দিয়েছে!
ও তো মানুষ নয়..ও যে মেয়ে! পুরুষের পায়ে যায়গা পাওয়া ওর গর্ব,অনুভুতির কি দাম!


ওই কুকুর গুলো রোজ রাস্তায় ওকে দেখলে হাসে
কখনো রাগে আমিও বলি,তুই ধর্ষিতা তোর দোষে

নিজেকে বদ্ধকরে ফেলা আধপাগল মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি মা আর চুপ থাকতে পারিনি।আমি প্রতিবাদ করলাম, বিচার চাইতে গেলাম আদালতে...

তারপর!!!যার ভয়পেতাম তাই হলো।লোকে জানা জানি হলো।

ওরা আমার ধর্ষিত মেয়ের মুখে ধর্ষনের গল্প শুনতে চায়!!! কোথায় কিভাবে স্পর্শকরেছে সেই হায়নারা ওরা শুনতে চায়!

ওরা আমার মেয়ের আর আমার ছবি আর গল্প ছেপে দিলো পত্রিকা আর টিভির পর্দায়। সে কি জনপ্রিয়তা! দেশ জুড়ে আলোচনা, সমালোচনা, সহানুভূতি!
মুদি দোকানদারও আমায় পেলে বলতো,মেয়েকে একরাত পাঠিয়ে দিও!! তোমারো কিছু কামাই হবে!! এখন আর কি যায় আসে!!
যখন পথে ঘাটে ভরসার হাত বাড়ানো পুরুষগুলোর কাছে সাহায্য চাইতে গেছি তখন তারাও ঝাপিয়ে পড়েছে আমার কচিমেয়েটার উপর!!! আমার দিকেও কুদৃষ্টি দিতে ছাড়েনি!!!

বাঁধা দিলে বলে নষ্টা তুই,
মেনে নিলে বলে ভ্রষ্টা তুই,
আমরা মেয়ে,মানুষ তো নই

আমার নাম হলো ধর্ষিতার মা!কেউ দিতো পোশাকের উপদেশ,কেউ ধর্মের বুলি, কেউ বলতো, আহারে! মেয়েটার আর বিয়ে হবে না!কেউ বললো বিচার চাই!কেউ বললো,
কেন সে বিকালে বেরুলো ঘর থেকে! আমার চরিত্র বিশ্লষনেও কোন কোমতি রাখেনি ওরা

যে তার হারামী কামনা চরিতার্থ করার জন্য অবৈধ প্রয়োজনে আমার মেয়েটাকে ব্যবহার করেছে শুধু একবার। তার পর ছুড়ে ফেলেছে আস্তাকুড়ে। ভুলেগেছে তার পর।
তার বিচারে হলো জরিমানা।ক্ষতিপুরণ দেয়া হলো আমার মেয়েকে

সেদিন সেই পুরুষ নৈয়ায়িকের মাথায় বজ্রপাত হয়নি।
বিধাতার ন্যায়নিক্তি দোল খায়নি এতটুকুও!!
শুধু আমার মেয়ের নাম হয়েছে ধর্ষিতা...!
গর্বিত পুরুষ নন্দিত সংসারে
অন্তরে তার পাপ
নিন্দিত হলো আমার মেয়ে
কেবলি নারী বলে

আমার মেয়েটার বড় অভিমান।চলে গেল সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারকের আদালতে!

আমি মৃত্যু দেখেছি,আমি পাপ দেখেছি,আমার মেয়ের উঁচুতে ঝোলানো লাশ দেখেছি।
ও এখন অনেক উঁচুতে,নিজ প্রচেষ্টায় এত উঁচুতে যাবে, কখনো মা হিসেবে কল্পনাও করিনি..

মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর হাতে লাঞ্চিত রমনীর নাম হয়েছিলো বিরাঙ্গনা..
আমার মেয়ের নাম হলো কলঙ্কিনী, ধর্ষিতা, বেশ্যা.....!

ওদের পিতা হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, অথচ জন্মের আগে থেকেই আমার মেয়ের পিতা হতে চায়নি কোন মানুষ...!
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি তাদের কাছেই যাবে তারা তোমার মূল্য বুঝবে....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৪


মৃত্যুর পূর্বে একজন পিতা তার সন্তানকে কাছে ডেকে বললেন, 'এই নাও, এই ঘড়িটা আমি তোমাকে দিলাম। আমাকে দিয়েছিলো তোমার দাদা। ঘড়িটা দুইশত বছর আগের। তবে, ঘড়িটা নেওয়ার আগে তোমাকে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×