পরিবর্তন জীবনের রীতি ।
যারা শুধু অতীতে তাকিয়ে থাকে অথবা
বর্ত্মানে মগ্ন থাকে তারা নিশ্চই
ভবিষ্যতের সুসময় ভোগ করবে না ।
- প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডী
পরিবর্তন ।
আজকের পৃথীবিতে আমাদের জীবনের মৌলিক সত্য ।
কিন্তু; সকল মানুষ পরিবর্তনের পরিপন্থী । আমরা একে বাধাগ্রস্থ করি । মানব প্রকৃতি হচ্ছে পরিবর্ত্ন হতে হবে নিজেদের অনুকুলে ।
কিন্তু; এটাও সত্য যে যাকে আপনি বাধাগ্রস্থ করবেন পক্ষান্তত্রে তা স্থায়ী রূপ লাভ করবে । যখন কোন সময়োপযোগী পরিবর্ত্নকে প্রতিরোধ করবেন অনেক বড় সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন !
আপনি যতই পরিবর্ত্নকে বাধা দিবেন – পরিবর্ত্ন ততোই আপনাকে প্রতিরোধ করবে !
প্রগতিশীলতা বনাম পশ্চাৎপদকরন
মানব সভ্যতার ইতিহাস জুড়ে দেখা যায়, যখন কোন পরিবর্ত্ন নতুন আলো নিয়ে এসেছে, মানুষ সম্মিলিত ফুৎকারে সে প্রদীপ শিখা নিভিয়ে দিয়েছে, ছুড়ে ফেলে দিয়েছে সে মঙ্গল দ্বীপ, যাতে পৃথীবি নিরবিচ্ছিন্ন অন্ধকারময় থাকে !
শিল্পকলা, বিজ্ঞান, ঔষধ, ব্যবসায় – জ্ঞানের যে জগৎই হোক না কেন, প্রতিটি প্রচেষ্টা, প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রত্যেক নতুন চিন্তা, ধ্যন-ধারনাকে প্রথমেই বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে । প্রথমেই প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে । আবিষ্কার যত নিরূপম, যত বৈপ্লাবক, পরিবর্তনের ব্যপকতা-বিশালতা যতটা সুদূর প্রসারী – প্রতিপক্ষ ততোটাই বলিষ্ঠ, ততোটাই সোচ্চার হয়েছে ।
অন্ধকার যুগের আতঙ্কিত, কুসংষ্কারাচ্ছন্ন মানুষ এমনকি এই সতের, আঠার এবং ঊনিষ শতাব্দীতেও মানুষ কেন নতুন দৃষ্টান্ত, নতুনকে ভয় পায় – এটা বোঝা কঠিন কিছু নয় । প্রশাসন কোপার্নিকাস-কে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল । গ্যালিলিও-কে হুমকি দিয়েছিল । ক্রিষ্টোফার কলম্বাস-কে উপহাস করেছিল । লুই পাস্তুর-কে ব্যাঙ্গ করেছিল । এমনকি এডিসন এবং আইনস্টাইন-কে বিদ্রুপ করেছিল । অথচ আমাদের বর্ত্ মান আধুনিক জীবন তাদের আশির্বাদপুষ্ট । আপনি জানেন ? আজও আমরা পরিবর্ত্নকে বাধাগ্রস্থ করি ।
কিছু সমসাময়িক দৃষ্টান্ত পর্যালোচনা করা যাক ।
আমেরিকার ক্রয়-বিক্রয়
মস একদা, সেই সতের থেকে আঠার শতাব্দীর শুরুর দিকে, উত্তর আমেরিকার অধিবাসীগন পারিবারিক ব্যাবস্থাপনায় পরিচালিত ক্ষুদ্র দোকান থেকে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করত ।
উদাহরনস্বরূপ – কসাইখানা, বেকারী, মোমবাতি ইত্যাদী ।
তখন এ টি স্টুয়ার্ট্ (A T Stuart) নামের এক আইরিশ অভিবাসী একটি চমৎকার উপায় চিন্তা করলেন । তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই সকল ছোট ছোট পৃথক দোকানগুলোকে এক ছাদের নিচে এনে একটি বড় স্টোরে পরিনত করবেন । তিনি ১৮৬২ সালে নিউ ইয়র্ক্ শহরে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর প্রতিষ্ঠা করেন । এটি পরবর্তীতে The Marble Palace নামে পরিচিত হয় যা ছিল একটি বিশাল বহুতল বিশিষ্ট ভবন । সেখানে সবাই শুধুমাত্র এক ডিপার্টমেন্ট থেকে অন্যটাতে ঘুরে ঘুরে তদের গৃহস্থালীর সবকিছুই কিনতে পারত ।
বিখ্যাত ডিপার্ট্মেন্টাল স্টোর- উদহরন স্বরূপঃ- Macy’s, Lord & Tailor’s, Sears, Woolworth’s, Hudson’s Bay Company, Marshall Field, Wannamaker’s এবং JC Penny’s প্রভৃতি দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আমরা ডিপা্র্টমেন্টাল স্টোরের সোনালী যুগে প্রবেশ করলাম ।
ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ভোক্তাদের কেনাকাটায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল, এক নতুন এবং উন্নত পদ্ধতি । অধিক বিক্রয়, সঠিক মূল্য, উন্নত মান এবং অধিক স্বাচ্ছন্দ্য ।
মানুষ প্রতিনিয়ত দল বেঁধে কেনাকাটায় মগ্ন হলো । ১৯০০ সালে শুধুমাত্র শিকাগোর মার্শাল ফিল্ড-এ প্রতিদিন ৪০,০০০ মানুষ কেনাকাটা করতে যেত ।
ভাবতে পারেন এর পরের ঘটনা কি ছিল ?
সেই পুরোন পদ্ধতি
এক কথায়, পৃথক পৃথক জায়গায় পসরা নিয়ে বসা ক্ষুদ্র দোকানীরা চরম নাখোশ । কারা দেখলেন তাদের ব্যবসায় প্রতিনিয়ত মন্দা যাচ্ছে, যেহেতু সবাই কাছের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে বাহারী পন্যের সমাহার, কম দাম, অধিক স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করতে লাগল ।
সময় অনুপযোগী ঐসব ছোট দোকানগুলো উড়ন্ত পিপিলিকার ন্যয় ঝড়ে যেতে লাগল ।
ভাল কথা, ঐ দোকানীরা এটা মোটেই বরদাস্ত করল না- অবশ্যই না । তারা আন্দোলন গড়ে তুললো । তারা একটা নতুন ও উন্নত পদ্ধতির বিরূদ্ধে শুধু নিজেরা আন্দোলন করলেন না ।বরং পুরাতন ধ্যন-ধারনাকে আঁকড়ে ধরে রাজনৈতিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুললেন ।
যেহেতু তারা হাজার হাজার ভোট সমেত হাজার হাজার দোকান মালিক ছিলেন, পুরাতন পদ্ধতিতে বেচাকেনা করার অধিকার রক্ষায় দ্রুত একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করলেন ।
অধিকাংশ ভোক্তা সচেতন বিধায় এই আন্দোলন সম্মুখে অগ্রসর হয়নি এবং ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বেচাকেনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে । পরবর্তী চমক শপিং মল – তৎকালীন ব্যবসার একটা বড় অংশ দখল করে নিল ।
মনে রাখবেন, আপনি যা বাধাগ্রস্থ করবেন তা স্থায়িত্ব পাবেই । আপনি একটি নতুন এবং উন্নত পদ্ধতিতে পরিবর্তনের সময় – বিশেষ করে যখন ভোক্তাশ্রেনী সাদরে গ্রহন করে – বিরুদ্ধাচরন করার চেয়ে ঐ পরিবর্তনের সম্মুখভাগে থেকে পথ প্রদর্শ্ক হওয়ার মাধ্যমে নিজ ভাগ্য সুপ্রসন্ন করতে পারেন ।
শপিং সেন্টার এবং শপিং মল
চেইন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খুচরা বাজারের বড় অংশ দখল করার পরে ছোট দোকানীদেন টনক নড়ে এবং তারাও নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহন করে । তারা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর পদ্ধতিতে সুবিধা নেয়ার জন্য নিত্য নতুন পন্থা বের করতে থাকেন ।
বড় শহরের আশে পাশে যেভাবে প্রতিনিয়ত জনবসতি গড়ে ওঠে, সেভাবেই দলে দলে ছোট দোকানীরা সম্মিলিতভাবে শপিং সেন্টার গড়ে তোলেন । যেখানে বিভিন্ন ধরনের আলাদা স্টোর সুবিধাজনক একই স্থানে অবস্থান করে । এরপরেও কিছু দোকানীরা শপিং সেন্টার পদ্ধতিতে প্রবেশ না করে বিভিন্ন আন্দোলনে ইন্ধন দিয়েছেন, এটা অবশ্যই ন্যাক্কারজনক এবং অবাঞ্চিত ।
ঘটনাক্রমে, শপিং সেন্টার পদ্ধতিও বিস্তার লাভ করে । একটা সময় ব্যবসায়ী বোদ্ধাগন একত্রে এক ছাদের নিচে পরিবেষ্টন করেন – অনেকটা চেইন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর প্রাথমিকভাবে যেরকম ছিল – এবং এর নাম দেন “শপিং মল”।
শপিং মল দ্রুত উত্তর আমেরিকার জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশে রূপান্তরিত হয় ।
অধিকন্তু আজ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এবং শপিং মল উভয়ই পুরোন ও বিলীন হবার উপক্রম হচ্ছে ।
একটি পরাজিত লড়াই
কোন ব্যাক্তি, এবং কোন কিছুই পরিবর্তনের উর্ধ্বে নয় । এমনকি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর – যা এক শতাব্দী আগেও শক্তিশালী ও গ্রহনযোগ্য ছিল – আজ ভোক্তা চাহিদা মেটাতে অক্ষম ।
তাহলে কি ঘটেছিল ?
বিশালাকায় মল…., বিশেষায়িত দোকান, বড় মূল্য হ্রাস স্টোর…. এবং ই-কমার্স্ সাইট ক্রমাগত তাদের ব্যবসা দখল করে নিচ্ছে । ১৯৭৪ সালের মধ্যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বেচাকেনা ৫০ শতাংশ নেমে গিয়েছিল ! যখন মূল্য হ্রাসের স্টোরগুলোতে বেচাকেনা ৬৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল । ইতিমধ্যে, ই-কমার্স্ পদ্ধতি তড়িৎ গতিতে উন্নতি সাধন করে যা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ব্যবসা আরও কমিয়ে আনে ।
এখন, শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ভাগ্যকে বরন করে নেয় – অনেক মল কিন্তু অপ্রতুল ক্রেতা । তাই এক নতুন প্রতিযোগীতার লড়াই সূচনা হয়, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য শপিং সেন্টারগুলো হলিউডি কৌশল অবলম্বন করে । শপিং মল পরিনত হয় থিম পার্কে – বেচাকেনা পরিনত হয় বিনোদনে । আপনি লস্ এন্জেলস্ এর সেঞ্চুরী সিটি (Century City) ঘুরে আসতে পারেন অথবা তারচে’ ভাল কানাডার এডমন্টন মল (Edmonton Mall) আরেক ডিজনিল্যান্ড ।
এডমন্টন মল । এক বিস্ময় ! একটা শপিং মল ১১৫ টি ফুটবল মাঠের সমান, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীন বিনোদন পার্ক্, ওয়েভ পুল, ক্ষুদ্রাকায় গলফ্ কোর্স্ । সেখানে আরও আছে সম্পূর্ন্ সচল সামরিক বহর, ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জাহাজের অবিকল প্রতিরূপ, সান্তা মারিয়া এবং এক হাজার আলাদা স্টোর !
আপনি শুনলে আরও বিস্মিত হবেন ! আমেরিকার ব্লুমিংটন, মিনেসোটার মল আরও বড় ! এরপর কি ? রোড আইল্যান্ড (Rhode Island) প্রদেশের উপর একটা ছাদ তৈরী করবেন ? বেচাকেনাকে শক্তিশালী করার জন্য সেটা কেমন হবে ?
কিন্তু; আজকের দিনে শপিং মলকে টিকিয়ে রাখার জন্য এরকম সব কিছুই করতে হচ্ছে । দূর্ভাগ্যজনক – এডমন্টন মল এখন অসংখ্য বন্ধ দোকান এবং শূন্য পার্কিং এরিয়া নিয়ে ব্যবসা করছে ।
ডুবন্ত জাহাজ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়া সত্যিই কঠিন ।
ফ্রাঞ্চাইজিং (Franchising)
বেচাকেনার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত আমেরিকার সবচেয়ে বিস্ময়কর উদ্ভাবনের মধ্যে ফ্রাঞ্চাইজিং উল্লেখযোগ্য ।
আপনি হয়তবা জানেন, ৫০ বছর পূর্বে ফ্রাঞ্চাইজিং ছিল এক বৈপ্লবিক নতুন প্রযুক্তি – পন্য, খাদ্যদ্রব্য এবং সেবা ভোক্তার নিকট পৌছানোর এক নতুন এবং উন্নত পদ্ধতি ।
বন্ধু, মানুষ কি এই পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল ? হ্যাঁ, প্রবল বাঁধা-বিপত্তির পাহাড় অতিক্রম করতে হয়েছে ।
সকল সংবাদপত্র, ম্যাগাজিনগুলো তখন বড়-মোটা হরফে প্রতিদিন নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরীতে ব্যস্ত ছিল – কতনা খারাপ ছিল ফ্রাঞ্চাইজিং । কিছু ফ্রাঞ্চাইজিং কোম্পানীর কাছে সর্বস্ব খুঁইয়ে পথে বসেছে এমন অনেকের গল্প তখন প্রতিদিনের রটনা ছিল ।
অধিকন্তু; ফরচুন-৫০০’র মতো বিখ্যাত, ব্যাপক প্রসারমান প্রতিষ্ঠানও ফ্রাঞ্চা্ইজিং পদ্ধতির সাথে একাত্নতা ঘোষনা করল । বড় বড় কর্পোরেশন’র প্রধান নির্বাহী কর্ম্কর্তাগন বিজ্ঞাপন এবং ম্যাগাজিনের চটকদার গল্প – এমনকি নিজেদের ফ্রাঞ্চাইজিং –র জন্য খরচ করা অনর্থ্ক মনে করলেন । পরবর্তীতে, কংগ্রেসের নির্বাচনে ১১ ভোটের ব্যাবধানে ফ্রাঞ্চাইজিং সিস্টেম আইনগত বৈধতা লাভ করে । (ঘটনাটা কিছুটা পূর্বের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মতোই মনে হচ্ছে – তাই নয় কি ?)
আজ – কোন এক সময়ের অনির্ভ্রযোগ্য, কুখ্যাত এবং নিকৃষ্ট ফ্রাঞ্চাইজিং উত্তর আমেরিকার মোট বেচাকেনার ৩৩ শতাংশের বেশী দখল করেছে । প্রায় এক হাজার ভিন্ন প্রকৃতির ফ্রাঞ্চাইজিং পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতি বছর ট্রিলিয়ন ডলারের পন্য বিক্রি হচ্ছে – এবং এই সূচক ক্রমশ উপরের দিকেই ধাবমান !
ফ্রাঞ্চাইজিং নিছক একটি নতুন প্রযুক্তি । পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে – একটি বৈপ্লবিক, অত্যন্ত শক্তিশালী এবং অনেক অনেক বেশী সফল প্রযুক্তি – পন্য ও সেবা বিক্রয় এবং বিপননের একটি নতুন ও উন্নত এবং পূর্বের থেকে ভিন্নতর ধারনা ।
বিক্রয় ও বিপননের আরও নবতর এক প্রযুক্তি
Free Enterprise System – এর বিবর্তনে পরবর্তীতে নতুন কোন পদক্ষেপ কি এসেছে ?
বর্তমানে খুচরা বাজার দাপটে চলা ফ্রাঞ্চাইজিং পদ্ধতিকে কয়েক ধাপ পিছনে ফেলে পন্য বিক্রয় ও বিপননের দিগন্তে নতুন কোন প্রযুক্তির উদ্ভব কি হয়েছে ?
অবশ্যই ।
নেটওয়ার্ক্ মার্কেটিং ।
যথারীতি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বিশাল মূল্যহ্রাস স্টোর, শপিং সেন্টার, মল এবং ফ্রাঞ্চাইজিং –এর চেয়েও নেটওয়ার্ক্ মার্কেটিং অনেক বেশী বাধাঁগ্রস্থ হয়েছে, হচ্ছে । এই পদ্ধতিকে ভুল বোঝা হচ্ছে । একটি মহল এর বিরূদ্ধে সমালোচনা করছে, বিদ্রূপ করছে, আইনী চক্রান্ত করছে !
ঠিক যেমন হয়েছিল ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিরূদ্ধে…., যেমন হয়েছিল ফ্রাঞ্চা্ইজিং এর বিরূদ্ধে….. ।
কি ? হেসে ফেললেন !
নতুন দিনের প্রবর্ত্ক
উত্তর আমেরিকাতে ডাইরেক্ট সেলিং এর ইতিহাস অনেক ব্যাপক এবং সমৃদ্ধ । সেই ষোঢ়শ শতাব্দীতে ইয়াংকী ফেরীওয়ালারা (Yankee Peddler) শহরতলীতে, গ্রাম থেকে গ্রামে অতীব প্রয়োজনীয় গৃহস্থালী পন্যসমূহ, যেমনঃ বিভিন্ন তৈযসপত্র, মোমবাতি প্রভৃতি ক্যানভাস করে বেড়াত ।
তারপর…. ১৮০০ শতকের শেষ দিকে Sears & Roebucks – এর প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড্ সিয়ার্স্ (Richard Sears) প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে নেটওয়ার্ক্ মার্কেটিং এর প্রবর্ত্ন করেন । তখন পয়েন্টের বিপরীতে তালিকাভুক্ত ক্রেতাগনদের নির্ধারিত আত্নীয়-বন্ধুদের জন্য বেচাকেনা বা কমিশন বন্টন পদ্ধতির প্রচলন হয় ।
ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে সি জে ওয়াকার (C J Walker) নামে এক আফ্রো-আমেরিকান ভদ্র মহিলা তার পন্যসমূহ (চুল ও ত্বক চর্চাকারী) বিক্রির জন্য উচ্চাকাঙ্খী কিন্তু বেকার কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের কমিশনের ভিত্তিতে নিয়োগদানের মাধ্যমে আধুনিক নেটওয়ার্কিং –এর সুযোগ উন্মোচন করেন । এই অশিক্ষিত কৃতদাসকন্যা, ওয়াকার বুঝতে পারেন সফলতার জন্য ব্যাক্তিক উন্নয়ন অত্যাবশ্যকীয় । তার বিক্রয়কর্মীদের সফলতার কলাকৌশল শেখানোর জন্য তিনি বিভিন্ন শহরে প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্থাপন করেন । ১৯১৭ সালে তার দেহত্যাগের পূর্বে, ওয়াকার’র প্রতিষ্ঠানে শুধু উত্তর আমেরিকাতে ২০ হাজার বিক্রয় প্রতিনিধি নিযুক্ত হয় ।
প্রথম আমেরিকান স্ব-কৃত (self-made) নারী মিলিয়নিয়র হিসেবে ওয়াকার’র নাম গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড্স –এ উজ্জ্বল হয়ে আছে ।
প্রচলিত রীতির বাইরে নতুন ধারা প্রবর্তনের মাধ্যমে সিয়ার্স্ এবং ওয়াকার প্রাত্যহিক ভোক্তাদের অর্থোপার্জনে উৎসাহিত করেছেন । ফলশ্রুতিতে তাদের এবং তাদের আত্নীয়-বন্ধুদের জীবন যাত্রায় এক নতুন মাত্রা যোগ হয়ে নেটওয়ার্ক্ মার্কেটিং –এর জন্য মজবুত মঞ্চ রচনা হয়েছে ।
এজন্য আমি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য নেটওয়ার্ক্ মার্কেটিং-কে এই সহস্রাব্দের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম বিবেচনা করি । নতুন নতুন প্রযুক্তিকে আত্নীকরনের মাধ্যমে পন্য বিপননের এই পদ্ধতি প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুনরূপে আবিষ্কার করছে । এক শিল্প পর্যবেক্ষক তো বলেই ফেলেছেন – “ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল, আপনাকে সানগ্লাস পরতে হবে !”
আমি এখন দৃঢ় বিশ্বাসী ।
আমরা ইতিহাসকে বারংবার ফিরে আসতে লক্ষ্য করলাম ।
আমি বিশ্বাস করি, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও ফ্রাঞ্চাইজিং –র বিস্ময়কর সাফল্যকেও নেটওয়ার্ক্ মার্কেটিং অতিক্রম করবে । কেননা নেটওয়ার্ক্ মার্কেটিং উত্তর আমেরিকা এমনকি তাবৎ দুনিয়ার বেচাকেনার চেহারাতে বৈপ্লবিক পরিবর্ত্ন আনবে ।
কেন ? একটু চোখ মেলে চারপাশ দেখে নিন ।
এটা ইতিমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে ।
মূলঃ- বার্ক্ হেজেস্
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩০