সেই ছোটবেলায় মায়ের মুখে শুনে শুনে প্রথম গুনতে শেখা । তারপর স্কুল-কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় । যোগ-বিয়োগ, গুন-ভাগ, সুদ কষা, সরল, ঐকিক পেরিয়ে রসায়নের জারন-বিজারন আর পদার্থবিজ্ঞানের কত শত জটিল হিসাব শিখেছি । বাবা-মায়ের কোন বৈশিষ্ট কোন পুরুষে কিভাবে আবির্ভাব হবে – জীববিজ্ঞানের এমন মজার ধাঁধার জট খুলতে শিখেছি ।
কিছু সরল হিসাব কেন যেন কোনদিন মেলাতে পারি না । এই হিসাব জীবনের, ছোট ছোট আনন্দের, অনেক ব্যস্ততার মাঝে এতটুকু অবসরের । এই হিসাব শরৎ আকাশের তুলো মেঘের, দিগন্তজোড়া খোলা মাঠের, সবুজ ঘাসের ওপর চিকচিক করা সোনা রোদের । এই হিসাব রাতের আকাশে তারার মেলার, টিনের চালে সুমধুর বৃষ্টির গান আর ক্ষেতের আলে আমের ডালে দুরন্ত কিশোরবেলার অনাসৃষ্টির ।
আজকাল জীবনের হিসেবটা কেন যেন এলোমেলো-খাপছাড়া, জটিল অংকের সরল নামের মতো । এখন আমাকে আমার চেয়ে বেশী ওজনের বইয়ের বোঝা নিয়ে চলতে হয় । বাসায় ফিরে গানের টিচার, তারপরই বাগীর কাজ, বিজ্ঞান-বাংলা-অংক । নইলে আগামী ক্লাসে পিছিয়ে পরব । পরশু আবার সাপ্তাহিক পরীক্ষা । এ ক্লাস মিস্ করা চলবে না, তবে তো গড় হিসেবে অনেকের পিছনে চলে যাব । বার্ষীকী শেষ হলে আরও ভাল স্কুলের জন্য ভর্তিযুদ্ধের সৈনিক হতে হবে । তাই এবারও নানাবাড়ী যাওয়া হবে না আম্মুর । এভাবেই দিন হারিয়ে যায় – স্কুল, কলেজ তারপর বিশ্ববিদ্যালয় । চোখ মেলে আকাশটা দেখা হয়না কোনদিন, কান পেতে শেখা হয়না বৃষ্টির ফোটায় পাতার গান ।
সুসময় আসবে এ ভাবনায় অবশেষে ছাত্রত্বের অবসান – বইয়ের বোঝা নয় এ যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচা । পিঠে বইয়ের ওজন নেই তবে চোখের তারায় ঠাঁই নেয় বেকারত্বের হতাশা । দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভাগ্যক্রমে চাকরী মেলে আর মনের আকাশে স্বপ্নরা উঁকি দেয় । কিন্তু হায়! পাখা মেলে না । নতুন সংসার, নানা খরচ । অন্যদিকে ছোট চাকরী, আয় অপ্রতুল । এরপর জীবনের গল্প বাকী থাকে অল্প । খরচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্লান্ত চাকরীর চাকা । তাই স্বপ্নরা জমা পরে মনের গহীন সিন্দুকে – ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য । কি নির্ম্ম পরিহাস – এখান থেকেই তো আমার যাত্রা শুরু । ভবিষ্যৎ প্রজন্ম – সে তো আমারই প্রতিচ্ছবি, একই পরিনতি ।
দুই পুরুষের যোগফল শুন্য । আদিতে শুন্য, ইতিতে শুন্য, গুনফলও শুন্য । জীবনের অংক কেন এমন হয় ? আমরা আর কত শুন্যতে মিলিয়ে যাব ? না এভাবে আর নয় । এখনই সময় নতুন ধারার উন্মোচন করে নতুন স্রোতে জীবন তরীকে ভাসিয়ে দেয়ার । অনাগত ভবিষ্যৎ যেন তর্জনী উচিয়ে বলতে না পারে – “ তোমরা কিছুই রেখে যেতে পারনি - সব জন্জাল, সব অহেতুক ।”
জীবনের বঞ্বনা যেন তাদের না ছোঁয় এমন আগামীর দিগন্ত মেলে ধরার নতুন ধারা বহুমুখী বিপনন ব্যবস্থা । এ ধারার মোহনায় জন্ম নেয়া এক স্বপ্নদ্বীপ ডেসটিনি । স্বপ্নেরা যার পলিভুমিতে নীড় খুঁজে পায়, যার আকাশে কচি স্বপ্নরা মিুক্ত বিহঙ্গের মতো পাখা মেলে ধরে । ডেসটিনি আজ স্বপ্নহারাদের নতুন ঠিকানা, দৈন্যতায় কুঁকড়ে যাওয়া জীবনের নতুন উদ্দীপনা । এখানে জীবনের খাতাটা স্বপ্নের মতো, শুধু স্বপ্নপূরনের গুনফলে আকা ।
(শুক্রবার, ২১ আগষ্ট, ২০০৯, দৈনিক ডেসটিনি ।)