প্রথম আলোতে পূর্বে প্রকাশিত পোস্ট টি এখানে আবার পোস্ট করলাম। সবাই কে অনেক শুভেচ্ছা ভালবাসা সহ পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
===========================================
মূল পোস্ট
মনেশ্বর রোডের একটা পুরানো চারতলা বিল্ডিং এ ছাদের চিলেকোঠায় ভাড়া থাকে মিজান ।ভাড়া মোটে পচিশশত টাকা । প্রথম মাসে কষ্ট করে ভাড়াটা দিয়েছে । এই পাচ মাস কোনো ভাড়া দিতে পারেনি সে ।এখন বাজে সকাল পাঁচ টা, বাড়িওয়ালা চাচা র সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় এবং ফিরে অনেক রাতে । তাড়াতাড়ি শার্ট টা কোনরকমে গলা দিয়ে গলিয়ে সিড়ি দিয়ে লাফিয়ে নামতে শুরু করলো।
আহ হৃদয় আমার শীতল হলো তোমার দর্শনে। পিতার বদলে কন্যার সাথে মোলাকাত । আনন্দে মিজান র হৃদয়টা আকাশ ছুই ছুই। মেঘ না চাইতে জল ।
আহা!!! এত সুন্দর একটা মেয়ে কেন মিজান এর জন্য সেজে অপেক্ষা করেনা । সব সুন্দর মেয়েগুলি এত আয়ত্তের বাহিরে থাকে । বাড়ি ওয়ালা র মেয়ে, নাম কেয়া । অবশ্য মিজান তাকে কখন ও ডাকে রজনীগন্ধা, কখনো বেলি, কখনো শিউলি। ওর পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় ফুলের সৌরভ পায়.মেয়েটা ও এত সুন্দর আর মিষ্টি কিন্তু কোনো অহংকার নাই । দেখা হলে খুব ভদ্র আর মিষ্টি করে সালাম দিয়ে বলবে "কেমন আছেন মিজান ভাই".।
মিজান এর ইচ্ছে করে তখন লাফ দিয়ে আকাশটাকে ছুতে। বিয়ে ঠিক হয়ে আছে কানাডা প্রবাসী ডাক্তার এর সাথে । ইডেন কলেজ এ ফিসিক্স এ মাস্টার্স পড়ে। আজকে যথারীতি খুব মিষ্টি করে বলল,
"আসালামুয়ালায়কুম মিজান ভাই ভালো আছেন "? মিজান এর হার্ট টাতে ছোট বিস্ফোরণ এর আওয়াজ হলো যেন । আরো কিছুক্ষণ দেখা গেলে ভালো হত. কিন্তু বাড়িওয়ালা চাচার কাশির শব্দ শুনে পড়িমড়ি করে দৌড় দিয়ে বের হয়ে আসল। নাহলে চাচার হাতে পাকড়াও হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ।
গলির শেষ মাথা য় যে চাযের দোকান আছে এখানে মিজান সবসময় সকালে র নাস্তা সারে বিস্কুট কলা দিয়ে।
তাড়াতাড়ি একটা কড়া চা লাগাও আসগর মিয়া, মন টা অনেক খারাপ ।উদাস কন্ঠে বলে।
দোকানির নাম আসগর কেন কি হইছে ভাইজান? মন খারাপ কেন ?
আসগর চা বানাতে বানাতে বলল ভাইজানরে একটা কথা বলতে চাইতেছি যদি কিছু মনে না করেন l
আরে একটা কেন একশটা বল তোমার সাথে আমার কি মনে করাকরির সম্পর্ক ?
তারপরও হাত কচলাতে কচলাতে ইতস্তত করে বলে ফেলল আসগর
"ভাইজান আমার চার মাস এর বাকি টা যদি দিয়ে দিতেন আমার খুব উপকার হত, দোকানের মাল কিনার টাকা ও আমার কাছে নাই ।
আরে দিব দিব ,যা..আমি তো মানিবাগ ফালাই আসছি বলে কিছুক্ষণ মিথ্যে মিথ্যি পকেট হাতড়ালো।
অবশেষে এ বলে রফা হলো কালকে অর্ধেক টাকা পাচশ টাকা হলে দিয়ে যাবে ।
চা শেষ করে মনটা আরো বেশি উদাস হয়ে গেল. এই বেকার জীবন টা অনেক কষ্টের. কবে জব হবে কোথায় টাকা পাবে, কিভাবে সব দেনা শোধ করবে এই চিন্তায় মাথা খারাপ এর মত অবস্থা ।
এত কপাল খারাপ কারো হয়, ছোটো একটা চাকরি পেয়েছিল, পনর দিন ও করতে পারলনা ।
দেখি আশফাক এর সাথে কথা বলি । তারা চার বন্ধু, আশফাক, জামিল, মজনু সবাই কি সুন্দর জব পেয়ে গেল, সুন্দর মেয়ে দেখে বিয়ে করলো।তার কপালে কবে যে এসব হবে ?
আশফাক কে রিং করলে কখনো ই পাওয়া যায়না, সে সবসময় ব্যস্ত। কালকে থেকে ফোনও আর ব্যবহার করা যাবেনা ।
ফোন এর আওয়াজ।দেখি কার ফোন? আশফাক মিঞা।
হ্যালো কিরে তোর্ কি খবর ?
আমার আর কি খবর দোস্ত তোরা তো তোদের গরীব দোস্তর খবর ও নিসনা।
তোর্ অফিস এ একটা ব্যবস্থা করে দেনারে। আমি দরকার হলে পিয়ন এর চাকরি ও করব, আমার অবস্থা খুব করুণ। সাহায্য কর দোস্ত।
হো হো করে হেসে উঠল আশফাক।মজা বাদ দে
দেখি কি করা যায় । তোর্ resume কি আছে ? কালকে আমার অফিস এ চলে আয় । একসঙ্গে লাঞ্চ করব আর তোর্ সব কথা শুনব.।
আমার শোনার মত কোনো কথা নাই .যদি পারিস দশ হাজার টাকা ধার দে l
কি করবি দশ হাজার টাকা দিয়ে ?
চার মাসের বাড়ি ভাড়া চায়ের দোকানের বিল। ,দোস্ত রাস্তায় থালা নিয়ে বসে আছি ।তুই না দিতে পারলে জামিল, জামিল না পারলে মজনু আর মজনু যদি না পারে জনে জনে ভিক্ষা করা শুরু করব ।
২রাত এগারটায় খুব আস্তে আস্তে পা টিপে ঢুকতে গিয়ে আবার কেয়ার সাথে দেখা ।
খুব মিষ্টি করে হেসে বলল সেই সকালে বেরিয়ে এখন আসলেন ?
হা একটু কাজ ছিল আমতা আমতা করে জবাব দেয় মিজান ।
রাতের খাওয়া কি হয়েছে ?
জি হোটেল থেকে খেয়ে এসেছি।
মিথ্যে কথা কেন বলছেন? আপনার সারাদিন খাওয়া হয়নি চেহারা ই বলছে
আসুন ভিতরে আসুন বাবা আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন ।
ইয়ে ইতস্তত করে বলল আমি ওনার সাথে কালকে দেখা করব, সব ভাড়া দিয়ে দিব ।
ঠিক আছে দিবেন এখন বাবা আপনার সাথে অন্য একটা ব্যপারে কথা বলবেন.।
হাত ধরে টেনে কেয়া ঘরে নিয়ে আসল. মিজান যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে ।
সে কোনো সপ্ন দেখছে না তো ?
বাড়িওয়ালা দরজার কাছে দাড়িয়েছিলেন ।
আস আস বাবা সারাদিন কোথায় ছিলে? মিজান এর চোখে পানি চলে এসেছে.।
চোখের জল গোপন করার জন্য মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো ।
যাও বাবা বাথরুম এ গিয়ে ফ্রেস হয়ে আস
টেবিল এ এসে দেখে অনেক মজার খাবার সাজানো.।কেয়া প্লেট এ ভাত বেড়ে প্লেট টা তার দিকে বাড়িয়ে ধরল, চাচা প্লেট এ মাংশ তুলে দিলেন. মিজান আর সামলাতে পারলনা নিজেকে, টপ টপ করে তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো.।
একি কান্ড আপনি কাঁদছেন কেন ? কেয়া হটাৎ করে তার হাত ধরে ফেলল. তারপর নিজের উত্তেজনায় নিজে বিব্রত হয়ে পড়ল.।
চাচা ও অস্থির হয়ে পড়লেন একি কান্ড বাবা মন খারাপ কোরনা আমরা আছিনা তোমার পাশে.।
চোখ মোছ আর খাওয়া শেষ করে আস অনেক জরুরি একটা কাজের ভার দিব .এখন থেকে তোমার সব টেনসন আমাদের ।
৩ সারা রাত মিজান দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি
এক অসহ্য আবেগ অনুভূতিতে তার সারা শরীর থর থর করে কেপেছে ।
মনের এক অংশ এ এত আনন্দ এত আনন্দ নিজেকে সামলাতে পারছেনা,
অন্য অংশ একটা কেমন হাহাকার, অপ্রাপ্তির বেদনায় ভেসে যাচ্ছে ।
একরাতের মধ্যে যেন অদৃশ্য বিধাতা তার জীবন টা পরিবর্তন করে দিয়েছে ।
এইযে অপূর্ব বাবা আর মেয়ে তাদের অপূর্ব হৃদয়স্পর্শী ভালবাসা য় একবেলায় মিজান এর জীবন টা যেন বদলে দিয়েছে.।
দরজায় টুক টুক করে কে যেন নক করছে.।
দরজা খুলে কিছুক্ষণের জন্য নিশ্বাস নিতে ভুলে গেল মিজান.।
এত ভোরবেলায় স্নান শেষে পরিপাটি রূপে পবিত্র দেবী যেন দরজায় এসে দাড়িয়েছে আজ বর দিবে বলে.।
আহ এত অপূর্ব কেন এ মেয়ে টা .একজীবন না একে হাজার জীবন ভালোবাসলে তার ভালবাসার ভান্ডার ফুরাবে না.।
মিজান এর অবস্থা টা কিছু বিব্রতকর. পরনে রাতে র পোশাক, চুল উস্কুখুস্কু এরকম চেহারা নিয়ে কোনো ভদ্র অভিজাত সুন্দরী র সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়া অস্বস্তিকর.।
আয়নায় না দেখে ও তার চেহারা কেমন হয়ে আছে বুঝতে পারছে.।
কেয়া হেসে ফেলল তার অবস্থা দেখে ।
শুভ সকাল। দেখে তো মনে হচ্ছে রাতে ভালো ঘুম হয়নি l
কারো সাথে মনে হয় যুদ্ধ করেছেন ?
তার চোখে মুখে কিছুটা দুষ্ট হাসি
হা আমার নিজের সাথে, আমার অসহায় অবস্থার সাথে, বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে গেল মিজান এর ।
সব সময় এসব ভাববেননা প্লিস, সব দেখবেন একসময়ে ঠিক হয়ে যাবে ।
বলতে বলতে কেয়ার চোখ মুখ সজল হয়ে গেল ।
তাড়াতাড়ি আসুন বাবা আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে টেবিল এ বসে আছেন
আল্লাহ উনি কেন কষ্ট করে বসে আছেন, ওনাকে খেয়ে ফেলতে বলুন, আমি পরে বাহিরে গিয়ে কিছু খেয়ে নিব ।
আরে আসুন তো তাড়াতাড়ি আর কোনো বাদানুবাদ এর সুযোগ না দিয়ে কেয়া নিচে নেমে গেল.।
খুব দ্রুত ওয়াশরুম এ ঢুকে নিজেকে ভদ্রস্ত করার চেষ্টা করলো মিজান
কোনো ফল হয়নি , অগত্যা এই উদ্ভ্রান্ত চেহারা নিয়ে আবার কেয়ার সম্মুখীন হওয়া ।
"কি হয়েছে বাবা তোমার, শরীর খারাপ নাকি ? এমন দেখাচ্ছে কেন?
বাবা উনি রাতে না ঘুমিয়ে ওনার এক বন্ধু র সাথে কানা মাছি খেলেছে বলে ফিক করে হেসে ফেলল কেয়া ।
মনে মনে বলল দুষ্ট কেয়া.।
বস বাবা নাস্তা কর চাচা জি প্লেট ডিম তুলে দিলেন ।
টেবিল অনেক ধরনের নাস্তা সাজানো,তার মনে ও পড়েনা কখনো তার মা ও কি এভাবে খাইয়েছে কিনা ,আবার চোখের পানি চলে আসছিল প্রায়।
কেয়া প্লেট এ রুটি সাজিয়ে দিল, ডিম, সবজি ,দিল
বাবা আর মেয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে তাকে দেখছে সে খুব বিব্রত বোধ করছে .
ওকি এখনো একটা রুটি নিয়ে বসে আছেন? রুটি সরিয়ে রাখুন পরোটা খান মিষ্টি দিয়ে.
এত যত্ন, আদর ভালবাসা মিজান এর জীবনে প্রথম ।
খাওয়া শেষে চাচার সঙ্গে কথা হলো, জানা হলো তাদের একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়া তে সেটেল করেছে, সে খ্রীষ্টান হয়েছে, এক অস্ট্রেলিয়ান সিটিজেন বিয়ে করে, দেশে আসার কোনো সম্ভাবনা নাই l তার তিনটা প্রেস আছে এসব দেখা শোনা করার মানুষ এর অভাব ।
বৃদ্ধ এর আবেগ এর কারণ এতক্ষণে বুজলো. ইনি তার ছেলেকে খুব মিস করছেন. মমতায় মিজান বৃদ্ধেরহাত নিজের হাতে নিয়ে বুলিয়ে দিল ।
পরম নির্ভরতায় চাচা ও তার হাত চেপে ধরলেন l
চাচা আমাকে দিয়ে যদি আপনাদের কোনো উপকার হয় তো বলেন
আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনাদের কাজে লাগতে ।
আমি চাচ্ছি তুমি যদি আমার প্রেস গুলি দেখাশোনা কর , আমার বয়স হয়ে গেছে , আগের মত পারিনা সব দেখে রাখতে, মেয়েটা চলে যাবে বিয়ের পরে, তখন তো আমি একেবারে একলা হয়ে যাব ।
মেয়েটা চলে যাবে? হায় কেয়া কি চলে যাবে সত্যি, তার জীবন থেকে সত্যি হারিয়ে যাবে .এতদিন ছিল ব্যপারটা অন্যরকম, আজকে সে কেয়া বিহীন তার জীবন ভাবতে পারেনা. অন্ততপক্ষে যদি প্রতিদিন একবার করে দেখা যায়..তবু সে সন্তুষ্ট থাকত ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল. একটু আগের আনন্দ টা যেন মন থেকে চলে গেল আবার ।
চাচার কথায় আবার চিন্তার সুত্র ছিন্ন হলো ।
কেয়া অবশ্য বাহিরে যেতে যায় না, বাহিরের ছেলে বিয়ে করতে চায়না
এই ছেলেকে সে বিয়ে করতে ও চাচ্ছেনা, আমার বন্ধুর ছেলে। , বলা যায় একরকম জোর করে ওরা কেয়াকে নিয়ে যেতে চায়. ওদেরকে কিভাবে নিষেধ করব তা বুঝতে পারছিনা বাবা ।
বিয়ে তো ঠিক হয়ে আছে তাইনা ? দেখেন আপনারা সামনা সামনি বসে কথা বলেন নিজের সমসস্যা নিয়ে। অনেক কষ্টে এই কথা টা বলতে পারল মিজান ।
ও বাবা তোমার জন্য তিনতলা র বাম দিকের ফ্লাট টা কেয়া গুছিয়ে রেখেছে, এটা আমার ছেলের রুম ছিল। মনে কর বাবা তুমি ও এখন থেকে আমার ছেলের মত
কোনো সংকোচ করবেনা, যে কোনো কিছু মনে হলে আমাকে বা কেয়া কে বলবে কেমন ।
কেয়া এসে বলল চলুন আপনাকে বাসাটা দেখিয়ে দেই ।
আহ মেয়েটাকে এত সুন্দর লাগছে। .কেয়াকে অনুসরণ করে তিনতলার যে ঘরটাতে
পৌছল তাতে আবার আল্লাহ কে কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে পারলনা. এত ভাগ্য, এত আনন্দ, এত সুখ আল্লাহ তার জন্য রেখেছিল সে ভাবতে ও পারছেনা ।
শুধু তার জীবনে আরেক টা আরাধনার ধন কেয়া ...কেয়া ..কেয়া ।
৩ আশফাক এর অফিস থেকে বের হতে হতে চারটা বেজে গেল মিজান এর .আজকে এত গরম, পানির পিপাসা হচ্ছে.আশফাক এত বেশি খাওয়ার অর্ডার করছে ,একেবারে যত্ন করে খাইয়েছে স্নেহ ময়ী মা এর মত ।
হটাৎ করে যেন যাদুমন্ত্রবলে তার ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে তার পালনকারী আল্লাহ ।
থ্যাংকস দয়াময় ।তার বুকপকেট এ এপয়েন্টমেন্ট লেটার আর পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক তার প্রথম মাসের বেতন অ্যাডভান্স।এত সব সৌভাগ্য একসঙ্গে মিজান বিশ্বাস করতে পারছেনা । জব এর পোস্টিং চিটাগাং।.আশফাক অবশ্য বলেছে পরে ট্রান্সফার হয়ে আসা যাবে l
ঠিক বুঝতে পারছেনা কি ডিসিশন নিবে, চাচা, কেয়া এদেরকে অসহায় অবস্থায় ফেলে এখন কি তার যাওয়া উচিত হবে?তাছাড়া কেয়া কে না দেখে তার পক্ষ্যে থাকা ও সম্ভব না ।
ভাবতে ভাবতে হাটছে এলিফান্ট রোড এর রাস্তা টা দিয়ে. রিকশা নিতে হবে, আর হাটা যাচ্ছেনা ।
পিছন থেকে এই যে এই যে বলে বলে এক নারী কন্ঠের ডাকার আওয়াজ শুনে তাকাতে দেখতে পেল রিকশা য় কেয়াকে ,
এত অন্যমনস্ক মানুষ হয়..আপনাকে কতক্ষণ ধরে মিজান সাহেব মিজান সাহেব বলে চিৎকার করে ডাকছি..আপনি হাসতে হাসতে কি চিন্তা করতে করতে হাটছেন ।
"কি এত ভাবছিলেন বলুন তো ? প্রেমিকার কথা কেয়ার চোখে মুখে দুষ্টুমি র ছাপ.
এভাবে হটাৎ করে রাস্তায় দেখা হওয়াতে মিজান আনন্দের সাগরে ভেসে গেল।
আপনার কথা মিজান ও দুষ্টুমির স্বরে বলল ।
আপনি এখানে কেন?গাড়ি কোথায়?
এমনি ইচ্ছে করলো একটু রিকশা য় ঘুরতে, সকালে বের হয়েছিলাম, হরতাল এর জন্য গাড়ি বের করিনি।
একটু আমার সাথে আসুন তো, কিছু ছেলে দের ড্রেস কিনব, ছেলেরা কি চয়েস করে সেটা আমার চেয়ে আপনি ভালো বলতে পারবেন।
আমার না ছেলেদের সাদা শার্ট, সাদা পাঞ্জাবি এসব এ ভালো লাগে
আপনার যখন ভালো লাগে, ছেলেদের ও ভালো লাগবে.হালকা গলায় বলল মিজান ।
তারা ঘুরে ঘুরে চারটা শার্ট আর দুইটা ম্যাচিং পান্ট ,কিছু টাই, কিনলো,
"কার জন্য কিনছেন? আপনার হবু র জন্য বলল হাসতে হাসতে মিজান।
জি হা আমার ফিউচার এর জন্য?
পাঠাবেন কিভাবে পার্সেল করে ?
হা আকাশের ঠিকানায় বলল কেয়া হালকা সুরে ..
কেনাকাটা শেষ করে কেয়া জোর করে এখানে নুতুন এক চাইনিজ ফুড এর দোকান আছে তাকে নিয়ে ঢুকলো ।
খাওয়া হলো, অনেক গল্প হলো হলো, কেয়ার ছোটবেলার অনেক মজার গল্প ও শোনা হলো ,তার সাত বছর বয়সে একবার আচার বয়ম ভেঙ্গে সে মায়ের বকার ভয়ে খাটের নিচে লুকিয়েছিল, পরে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল খাটের নিচে. আর তাকে না খুঁজে পেয়ে মা বাবার কান্না, পুলিশ চলে এসেছিল,সারা শহরে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল, সন্ধার দিকে অন্ধকার এর জন্য খাটের নিচ থেকে যখন বের হতে বাধ্য হলো তখন এক মজার অবতারণা হলো., সবার হতভম্ব অবস্থা কিছুক্ষণের জন্য, পুলিশ এর সেন্ট্রি হেসে ফেলল ," খুকি এভাবে আর লুকোচুরি খেলনা কেমন" মা একদিকে জড়িয়ে আদর করছে বাবা আরেক দিকে , বলতে বলতে আবার হেসে গড়িয়ে পড়ল কেয়া, মিজান ও হাসতে লাগলো তার সাথে ।
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রিকশা ভাড়া করে কেয়া উঠলো, মিজান দাড়িয়ে থাকলো পাশে
"কি ব্যপার আসুন বাসায় যাবেন না ? দশটা বাজে তো
আমি আপনার সাথে .ইতস্তত করতে থাকে মিজান বলে আমি আরেকটা রিকশা নিচ্ছি। .
বারে আমি তাহলে কার সাথে গল্প করব..তাছাড়া আমি, আপনি যখন এক জায়গায় যাচ্ছি , বাসা একজায়গায়, গন্তব্যস্থল মনের মঞ্জিল যখন এক জায়গায় পৃথক যাত্রা কেন বলল আস্তে করে ।
মিজান উঠে এসে বসলো কেয়ার পাশে, কিন্তু যে জড়সড় হয়ে বসেছে
"আপনি কি জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়ের পাশে রিকশা য় বসলেন বলে কেয়া জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
কেয়াকে এত হাসি খুশি হালকা মুড এ এর আগে কোনো দিন দেখেনি মিজান।
আপনাকে মনে করতাম অনেক গম্ভীর বলে তার দিকে তাকিয়ে হাসলো মিজান। .
মা আর ভাইয়া আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে আসলে আমি আর বাবা হাসতে ভুলে গিয়েছিলাম ।
আপনার মা ?
আমার মা যখন আমার বয়স বারো তখন বাবার এক বন্ধুর সাথে নিউজিল্যান্ড এ চলে যান, পরে বাবা মা আলাদা হয়ে যান ।
কেয়ার কষ্ট টা অনুভব করে মিজান এর মনটা বেদনায় বিবর্ণ হয়ে গেল । সহানুভূতিতে কেয়ার একটা হাত নিয়ে নিজের হাতে চাপড়ে দিল.
সরি "আমার সত্যি কষ্ট হছে আপনার দুখ্খের অতীত টা মনে করিয়ে দিলাম বলে ।
আর এসব নিয়ে ভাববেন্ না ।
না এখন যখন মায়ের কথা মনে হয় ছোটবেলার আনন্দের সৃতি গুলি মনে করি, মাঝে মাঝে মায়ের সাথে ফোন এ কথা বলি, কিন্তু বাবাকে লুকিয়ে,বাবাকে কষ্ট দিতে চাইনা ।
খুব অবাক লাগে এ কথা মনে হলে "মা কিভাবে আমার এই চমৎকার বাবাকে ছেড়ে যেতে পারল, আমাকে ছেড়ে যেতে পারল।
এবার সত্যি মিজান এর কান্না অসতে থাকলো কেয়ার জন্য। পরম আবেগে হাত বাড়িয়ে নিজের বুকের সাথে কেয়া কে জড়িয়ে ধরল মিজান। কেয়া ও নিজেকে আর সামলাতে পারলনা, মিজান এর বুকে মাথা রেখে কাদতে থাকলো ।
আস্তে আস্তে দুজনের আবেগ প্রশমিত হলো, কান্না ও থামল দুজন দুজনের মধ্যে একটা নির্ভরতা খুঁজে পেল. দুজনের সম্পর্ক আজকে একটা নুতুন মাত্রা পেল ।
রিকশা এসে বাসার দরজায় পৌছল, দুজনে রিকশা থেকে নামার পর কেয়া হাত থেকে মিজান কে দিল ।
এখানে কাপড় গুলি তোমার জন্য কেনা কেয়া তাকে তুমি বললে সম্বোধন করলো আজকে ।
তাদের আসার শব্দ পেয়ে দরজা খুলে চাচা বেরিয়ে আসলেন ,তার চোখে মুখে টেনশান এর ছাপ ।
"কি ব্যপার কোনো ফোন নাই, কোথায় ছিলে টেনশান এ থানা য় ফোন করতে যাচ্ছিলাম ।
সরি বাবা সরি সরি , ভুল হয়ে গেছে বাবা, ফোন দেওয়ার স্কোপ পাইনি, বলে জড়িয়ে ধরল বাবাকে কেয়া।
চাচার দিকে তাকিয়ে মিজান এর মনটা দুখে বেদনায় ম্রিয়মান হয়ে গেল.
মনে মনে সে এই প্রতিজ্ঞা করলো তার জীবনে যাই হোক না কেন এই বাবা মেয়ে কে তার শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলে সুখে রাখার চেষ্টা করবে l
৪ খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল মিজান এর।. অনেকদিন পরে আজ অজু করে খাটি মুসলমান এর মত করে টুপি,পরে তার অনেক আগের একবার ঈদ এ মামা একটা পাঞ্জাবি দিয়েছিল সেটা পরে আজকে ফজর নামাজ পড়ল. আজকে সে সব নামাজ পড়বে.ঠিক করেছে.। বাকি সব নামাজ মসজিদ এ গিয়ে পড়বে ।
নামাজ পরে ছাদে কার্নিশ এর সামনে এসে দাড়ালো. নিচে তাকাতে দেখতে পেল কেয়াকে, ফুল গাছে পানি দিচ্ছে. তাকে ছাদে দেখে হাত নেড়ে হাসলো.
আহ ফুলের চেয়ে আরো সুন্দর, মোহনীয় এই মেয়ে. সব ফুলের সৌন্দর্য্য রূপ লাবন্য চুরি করে বসে আছে যেন মেয়েটা। মিজান নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলো এই অপূর্ব মেয়েটার মনে স্থান পাওয়াতে।
ছাদে হাটতে হাটতে এদিক ফিরে আসতে দেখল কেয়া ছাদে উঠে এসেছে. তার হাতের ট্রে তে চা বিসকুট, মুড়ি কলা . যদিও সে মিজান এর চা নিয়ে এসেছে, কিন্তু আজকে সে একটু বিব্রত বোধ, একটু কি লজ্জা ও পাচ্ছে? এতদিন ছিল একরকম, এখন সম্পর্কটা অন্যরকম আন্তরিকতায় পৌছেছে।
আপনার জন্য চা নিয়ে আসলাম, বলল সে অন্য দিকে তাকিয়ে, লজ্জায় তার গাল একটু লাল হয়ে গেল।
মিজান এর মনে একটা কবিতার লাইন চলে আসলো গোলাপী গাল নিয়ে. কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করলো কবিতা আবৃতি করা থেকে, এমনি সে লজ্জায় মরে যাচ্ছে, আজকে আবেগ একটু সংবরণ করা যাক.।চায়ের কাপ নিতে গিয়ে দুজনের আঙ্গুল ছুয়ে গেল. দুজনে যেন একটু কেপে উঠলো. কেয়া লজ্জায় আবার মাথা নিচু করলো.
যাওয়ার সময় ট্রে টা হাতে রেখে যখন পানির গ্লাস টা মিজান এর হাতে দিল.এবার তার সংযম এর বাধ ভেঙ্গে গেল, গ্লাস সহ কেয়ার হাত টা ধরে ফেলল। ধরে থাকলো. দুজন দুজনের চোখে দিকে তাকিয়ে থাকলো অনেকক্ষণ ধরে আচ্ছন্নের মত.
নিচ থেকে কাজের মেয়ের গলা শোনা গেল
"আপা আপনারে খালুজান বোলায়
নিচে নেমে এসে দেখল কেয়া বাবা খুব উত্তেজিত এবং অস্থির পায়ে হাটাহাটি করছেন
দেখো তো মা কি কান্ড, সোহেল তো এখন বাংলাদেশ এ .এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ফোন করলো.।
সে এখানে আসছে এক ঘন্টার মধ্যে .সোহেল যার সাথে কেয়ার বিয়ে হওয়ার কথা সে অনেকদিন পর দেশে আসছে ।
কেয়া ভিতরে একেবারে অফ হয়ে গেল. একই সাথে মন টা ভীষণ চঞ্চল হয়ে গেল এই মনে করে এই পরিস্থিতি তে সে কি করবে।
.
তাড়াতাড়ি দেখো তো মা ঘরে খাওয়া দাওয়ার কি ব্যবস্থা আছে। আমি দেখি মিজান কে ডাকি
কেয়ার মনটা এখন পুরো খারাপ হয়ে গেল মিজান এর কথা মনে করে। .
মিজান ঘর থেকে বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে চাচা কে দেখল,
আস বাবা তোমাকে ডাকতে পাঠাচ্ছিলাম, বলে উঠলেন চাচা
কি ব্যাপার চাচা ব্যাস্ত মনে হচ্ছে
সোহেল কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় আসতেছে, কেয়ার যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা.
মিজান যেন সপ্নের আকাশ থেকে বাস্তব এর শক্ত মাটিতে ঠাস করে পড়ল। তার মন এতই খারাপ হলো যে সে কিছুক্ষণ চাচার মুখের দিকে তাকাতে পারলনা । মনে হলো চাচা তার হটাৎ মুখের এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন বুঝে ফেলবেন. কিন্তু চাচার ওদিকে একেবারে মনোযোগ নাই. তিনি অস্থির পায়ে কার কি কাজ হবে সে পরামর্শ দিচ্ছেন ।
উপরে এসে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল সে।. এ মানসিক অবস্থায় কারো সঙ্গে দেখা করা তার পক্ষে সম্ভব না. চাচা কে মাথা ব্যাথা বলে ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে । কেয়া এসে কয়বার দরজা নক করেছে। নাস্তা খাওয়ার জন্য ডেকেছে. কিন্তু সে কোনো সাড়া শব্দ করেনি. মড়ার মত পড়ে আছে বিছানায় ।
নাহ আর এভাবে পড়ে থাকা যাবেনা, চাচা কি মনে করবে, আওয়াজ পেয়েছে নিচে তাদের গাড়ি এসে থেমেছে, সবার কথা বলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে. তাড়াতাড়ি বাথরূম এ ঢুকে চোখ মুখ পানি দিয়ে ধুয়ে চেহারা থেকে সব অস্বাভাবিকতা মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। কেয়ার সেদিনের কিনে দেওয়া শার্ট টা পড়ল, শেভ করলো, যাক চেহারা টাকে একটু ভদ্রস্থ করা গেল. নিচে নেমে ঘরে ঢুকতে কেয়ার সাথে চোখা চোখি,হয়ে গেল. তার মুখ উজ্জল হয়ে গেল, ইশারা করে মিজান কে ডাকলো..
মিজান এসে কেয়ার সাথে নাস্তার প্লেট গোছাতে লাগলো।
তোমাকে এত সুন্দর আগে কোনদিন দেখিনি বলল কেয়া ফিসফিসিয়ে, মিজান বুঝতে পারল একই সঙ্গে কেয়ার ও মন খারাপ কিন্তু সে চেষ্টা করছে মিজান এর মনটা ভালো করার। এতক্ষণ পরে সে একটু হালকা বোধ করলো বুঝলো কেয়ার মন ও একই গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। এইটুকু জেনে সে বেশ স্বস্তি বোধ করলো কেয়া তো তাকে ভালবাসে. বিয়ে নাই বা হলো. পরক্ষণে বিপরীত গতিতে তার চিন্তা প্রবাহিত হতে থাকে, নাহ কেয়া অন্য কারো হবে সেটা সে ভাবতে ও পারেনা, অন্য একজন পুরুষ তাঁকে স্পর্শ করবে এটা কল্পনা করতে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। .
মিজান বাবা এসেছ নাকি? চাচা ডাকলেন আস এখানে আস, মিজান আসার পর চাচা পরিচয় করিয়ে দিলেন সবার সাথে l . .
এরা সবাই খুব বনেদী এবং অনেক টাকা পয়সা ওয়ালা তা তাদের চেহারা আর আচরণে বলে দেওয়া যায়, সোহেল বলে যে ছেলের সাথে চাচা পরিচয় করিয়ে দিলেন, সে দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি চমৎকার তার কথা বলার ভঙ্গি .মিজান চোখের পলকে মুগ্ধ হয়ে গেল. মিজান অবাক হয়ে ভাবলো কেয়া কেন এই অপূর্ব ছেলে কে রেখে তাকে বিয়ে করতে চাবে তার কোনো যুক্তি সংগত কারণ ও খুঁজে পেলনা।
তার মন এত ই বিষন্ন হয়ে গেল সে স্বাভাবিক ভাবে কথা চালানো ই মুশকিল হয়ে পড়ল।
চাচা বললেন কি ব্যাপার কোনো কিছু নিয়ে কি টেনশান করছ বাবা? .
চাচা একটা জরুরি কাজ ফেলে রেখে এসেছি, আমি একঘন্টার জন্য একটু বাহিরে যাচ্ছি, ফিরে আসব তাড়াতাড়ি । তাকে বাহিরে যেতে দেখে কেয়া তাড়াতাড়ি আসলো কিছু বলার জন্য. মিজান কেয়াকে সে সুযোগ না দিয়ে ঝটপট বেরিয়ে গেল।
কেয়া অসম্ভব মন খারাপ করে মিজান এর গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
এদিকে মিজান উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে রাস্তার এমাথা থেকে আরেক মাথা হাটতে লাগলো. কিছুতে ভেবে বের করতে পারলনা, এ ব্যাপারে সে কি করবে. চাচা কে সরাসরি সব খুলে বলবে..নাহ..এ অসম্ভব ।
কেয়া নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছেনা, ওয়াশ রুম এর দরজা বন্ধ করে বসে রইলো কিছুক্ষণ, বাহির থেকে কার গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে "কেয়া
তাড়াতাড়ি সে চোখ মুখ ভালো করে ফেস ওয়াশ দিয়ে ধুলো যাতে কান্নার চিহ্ন টা মুছে যায়, বের হয়ে দেখে তার বিছানায় বসে সোহেল ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছে।
"কি হয়েছে তোমাকে এমন দেখছে কেন? তুমি ঠিক আছ উৎকন্ঠা নিয়ে সোহেল জিজ্ঞাসা করে কেয়াকে
নিজেকে সামলাতে কেয়ার একটু সময় লাগছে, কথা বলতে পারছেনা সে তাহলে সোহেল কান্নার আভাস পেয়ে যাবে।
কি হয়েছে বলতো বলে সোহেল হাত টেনে এনে পাশে বসালো. কেয়া আড়ষ্ট হয়ে সরে যেতে চাইল.
সোহেল ভাই আমি একটু সময় চাই, তোমার সাথে পরে কথা বলব.
বাবা তো চাচ্ছে কালকে আখত করাবে, কেননা আমার বেশি সময় নাই, একমাসের ছুটিতে আসছি ।
সোহেল ভাই বিয়ের ব্যাপারে আমি এখনো কোনো ডিসিশন এ আসতে পারিনি আমাকে তুমি মাপ কর.
কেন আসতে পারনি, তার কারণ কি ওই ভদ্রলোক তোমাদের ভাড়াটিয়া মিজান সাহেব, বলে কিছুটা কৌতুকের স্বরে কিন্তু তার বিষন্নতা ও লুকিয়ে রাখতে পারলনা।
আমি সব কিছু র জন্য তোমার কাছে অনেক সরি,আমাকে মাপ কর তুমি।
ইটস ওকে তুমি যা চাও তাই হবে, এখন আস আমাদের সাথে খাওয়া দাওয়া কর, ছোটবেলায় তো বন্ধু ছিলাম নাকি, সেই হিসাবে রেসপেক্ট করে একসাথে খাওয়া দাওয়া করি। সব কিছু নিয়ে বাবা চাচা র সাথে আমি পরে কথা বলব। এখন একটু স্মাইল কর তো দেখি।
৫কেয়া অস্থির পায়ে বারান্দায় পায়চারী করছে. এখন সময় রাত ১১:৩০ মিজান ঘর থেকে বেরিয়েছে সকালে ১১ টায়, এখন পর্যন্ত তার কোনো খবর নাই.
সন্তর্পনে কে যেন গেট খুলে ঢুকছে তাকাতে দেখে মিজান আস্তে আস্তে ধীর পায়ে ভিতরে ঢুকছে. কেয়া দৌড়ে সামনে চলে আসল
কি ব্যাপার তোমার কি হয়েছে সারাদিন আমি আর বাবা তোমার জন্য অস্থির হয়ে ওয়েট করেছি.বাবা মাত্র ভিতরে গিয়েছে,.কেয়া এক নিশ্বাস এ হাপাতে হাপাতে বলল কথাগুলি ।
একটু রাস্তায় হাটাহাটি করছিলাম, হাটাহাটি করতে করতে মিরপুর চিড়িয়াখানা র দিকে চলে গিয়েছিলাম। অনেকদিন পরে চিড়িয়াখানার পশু গুলি র সাথে সময় কাটালাম, অনেক ভালো লাগলো, নিজেকে পশু গোত্রের একজন মনে হলো. বানর এর খাচার সামনে গিয়ে ওদেরকে ভেংচি কাটলাম, ওরা দেখি সব একএককরে ভেংচি কাটতে কাটতে আমার দিকে এগিয়ে আসল যেন আমি ওদের এক জমজ ভাই। সত্যি অনেকদিন পরে হাসলাম হা হা করে প্রাণ খুলে, যদি ও সে হাসার চেষ্টা করছে হা হা , তার হাসি তা সত্যি বেসুরো শোনালো কেয়ার কানে, সে হাসিতে না আছে প্রাণ, না আছে সুর.
খাওয়া দাওয়া করেছ? চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে সারাদিন বানর এর খাচায় বানর এর সঙ্গে কুস্তি করছ, কেয়া বলল মজার সুরে মিজান কে হালকা করার জন্য ।
খেয়েছি মোগলাই আর শিক কাবাব, সরি আপনার জন্য আনতে পারিনি।.
হয়েছে আস আর মিথ্যে বলা লাগবেনা, গোসল করে ফ্রেশ হও, আমি তোমার খাওয়া রেডি করছি বলে তার হাত ধরে টানলো.
হিতে বিপরীত হলো.মিজান উঠলো ক্ষেপে এবং যে জবাব দিল তা অত্যন্ত কড়া
আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা কেন আপনি এভাবে আমাকে বিরক্ত করেন? কাল বাদে পরশু আপনার একজনের সঙ্গে বিয়ের কথা চলছে আর আজকে অন্য এক লোকের হাত ধরে টানছেন? আপনার কাছে কি সব কিছু এতই সস্তা?
কেয়া চমকে গিয়ে সরে গেল, মিজান এর মন পরক্ষণে অনুশোচনা আর গ্লানিতে ভরে গেল.
ছি ছি কেয়া কে কিভাবে সে এই কথা বলতে পারল?
পরক্ষণে সরি সরি আমার ভুল হয়ে গেছে, প্লিস আমাকে মাপ কর, বলে কেয়ার হাত ধরার চেষ্টা করলো ।
কেয়া নিজেকে আর সামলাতে পারলনা, সে উচ্ছসিত হয়ে কাদতে শুরু করলো আর বলতে লাগলো
আমার এখানে কি দোষ আজকে সারাদিন তুমি আমাকে কষ্ট দিছ, এটাতো পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছে, আমি সোহেল ভাইকে ভাইয়া র বন্ধু হিসাবে ভাই এর মত দেখি. শুধু বাবাকে কষ্ট দিবনা চিন্তা করে বাবার ইচ্ছেতে সন্মতি দিয়েছিলাম। আর তুমি আমাকে সব কিছু বুঝে ও অযথা কষ্ট দিচ্ছ.বলে সে আবার ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাদতে থাকলো
কেয়ার চোখের পানি দেখে খুব অসহায় বোধ করলো মিজান, সে কি বলে কেয়াকে স্বান্তনা দিবে বুঝে ফেলনা, কেয়াকে বুকে টেনে নিয়ে শুধু মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বিড় বিড় করে বলল
আমি তো তোমার ভালোর জন্য বলতেছি. আমার কি আছে? একটা ভ্যাগাবন্ড না আছে চাল চুলা না শিক্ষা, সে হিরো আর আমি জিরো, বুঝার চেষ্টা কর ।
চাচা একবার তোমার ভাই এর কাছে থেকে আঘাত পেয়েছে, তুমি ও কি আবার কষ্ট দিবে ওনাকে?
আমি বাবাকে সব খুলে বলব.বাবা সব বুঝবে, শুধু তুমি আমাকে ভুল বুঝনা, আমাকে সবসময় সাপোর্ট দিও, এখন তুমি ছাড়া আর কাওকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না, বলে মিজানকে আকড়ে ধরল কেয়া ।
দুজন দুজন কে ধরে এভাবে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো. তাদের এই নিশীথ রাতের প্রেম আর প্রতিশ্রুতি র সাক্ষী হয়ে রইলো এই নিস্তব্দ প্রকৃতি ছাড়া আরেক জন কেয়ার বাবা.
পরপর তিনদিন হয়ে গেল সোহেল দের বাড়ি থেকে না আসছে কোনো ফোন, না কোনো খবর, দেখে কেয়া চিন্তিত হয়ে বাবা কে জিজ্ঞাসা করতে যাবে, তখনি বাবা বলল
যা তো মা মিজান কে ডেকে নিয়ে আয়
মিজান হাত ইশারায় কেয়াকে জিজ্ঞাসা করলো ব্যাপার কি, সে দুশ্চিন্তা চেপে রাখতে পারছেনা
চাচা নিজে বললেন বস বাবা বস এক জরুরি ব্যাপার নিয়ে কথা বলব, কেয়া তুমি ও বস মা
আমি সোহেল আর তার বাবাকে সরি বলে আমাদের অপারগতার কথা বলেছি। বলেছি আরো ছেলেটার দেশে আসার সম্ভাবনা নাই তাই আমি চাই আমার মেয়ে দেশে থাকুক, একটা ছেলে ও আমি পছন্দ করেছি। আমি তোমার কথা ই ভেবেছি, যদি তোমার কোনো আপত্তি না থাকে ।
মিজান বলবে কি আনন্দে উত্তেজনা, তাকে যদি পুরা এক সাম্রাজ্য বা এক কোটি টাকার লটারী জিতে গেলে ও মনে হয় এত হতভম্ব বা এত আনন্দিত হোতনা. কেয়ার অবস্থা ও তদ্রুপ .
দুজনে মনে মনে বাবাকে হাজার বার সালাম করলো। .
কি মা আমি যদি মিজান এর সঙ্গে তোর্ বিয়ে দিতে চাই তোর্ আপত্তি হবেনা তো.
কেয়া আবেগে বাবাকে জড়িয়ে ধরল ,কাদতে কাদতে শুধু এই বলতে পারল
তোমার মত বাবা হয়না, আমার বাবা পৃথিবীর সেরা বাবা ।
মিজান এর এই ব্যাপারে কোনো দ্বিমত রইলোনা ।
পরের সপ্তাহে আখত এর পরে ধুম ধাম করে কেয়া আর মিজান এর বিয়ে হয়ে গেল সপ্নের মত, রূপকথার গল্পের মত
আজকে তাদের বিয়ের রাত. বর বধু বসে আছে বিছানায়. আজকে দুজনে অনেক বিব্রত, কে আগে কথা বলা শুরু করবে তারা ভাবছে, কেয়া ভাবছে মিজান আগে বলুক, মিজান ভাবছে কেয়া কথা বলনা কেন .কথার রানী
এরকম ভাবতে ভাবতে দুজন মুখ তুলতে দুজনের চোখা চোখি হয়ে গেল, আর দুজনে হাসতে শুরু করলো, প্রথমে মুচকি..পরে জোরে জোরে
দুজনের হাসি মুখ দেখতে দেখতে আমরা পাঠক চলে যাই অন্য জায়গায় অন্য ঘটনায়।
সমাপ্ত