সারা পৃথিবীতেই মৃত্যু ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। কভিড ২০১৯ এ মৃত্যুর পরও একেক দেশে লক্ষ লক্ষ বাড়তি মৃত্যু দেখা যাচ্ছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি মৃত্যু ৫ লক্ষ ৪৫ হাজার, রাশিয়াতে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার, মেক্সিকোতে ৩ লক্ষ ৮ হাজার, ব্রাজিলে ২ লক্ষ ১৮ হাজার, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৫ শত, বৃটেনে বাড়তি মৃত্যু ১ লাখ ২৪ হাজার, পেরুতে ১ লক্ষ ১৬ হাজার ইত্যাদি। রাশিয়াতে করোনায় মৃত্যুর চেয়ে এই বাড়তি মৃত্যু প্রায় ছয়গুণ, দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনায় মৃত্যুর চেয়ে এই বাড়তি মৃত্যু আড়াইগুণের বেশি, মেক্সিকোতে প্রায় আড়াই গুণ। সবদেশেই এমন খারাপ অবস্থা নয়। জাপান, থাইল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া, সিংগাপুর, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনের মতো দেশে বাড়তি মৃত্যুতো হয়ইনি বরং তারা ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে অন্যান্য মৃত্যুই কমিয়ে আনতে পেরেছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার কি অবস্থা বা বাংলাদেশের?
https://www.economist.com/.../coronavirus-excess-deaths... ওই ঠিকানায় বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার কোন নামগন্ধই নেই। যেখানে বাড়তি মৃত্যুর বিপুল আভাস রয়েছে। বাংলাদেশের কিছু তথ্য দিতে পারি-
বাংলাদেশের সরকারি জরিপের তথ্য বলছে, দেশে গত বছর ব্রেন স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত মৃত্যু প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২০ সালে ব্রেন স্ট্রোকে মারা গেছেন ৮৫ হাজার ৩৬০ জন। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার ৫০২। কিডনি রোগে মৃত্যুহার প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। গত বছর হার্ট এটাক বা হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ৪০৮ জন মারা গেছেন। আগের বছর এ রোগে মারা যান ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৯ জন। একইভাবে ক্যানসার এবং কিডনির রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। বেসরকারি জরিপের হিসাবে আত্মহত্যায় মৃত্যু এবং প্রবণতা বৃদ্ধির হার প্রায় ৪৪ শতাংশ বেড়েছে । স্ট্রোক, হৃদ্রোগ ও ক্যানসারে মৃত্যুহার অনেক বেশি হওয়ায় মোট হিসাবে ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর মৃত্যু অনেক বেড়েছে। শুধু ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট এটাকেই মৃত্যু বেড়েছে ৭৩ হাজার। সাথে শুধু বাড়তি শিশু মৃত্যু ধরলে লক্ষ পায় হয়ে যায়।
ব্রেইন স্ট্রোকে বাড়তি মৃত্যু: ৩৯৮৫৮ জন
হার্ট এটাকে বাড়তি মৃত্যু: ৩৩১৪৩ জন
পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার যা ২০১৯ সালের চেয়ে ১৩% বেড়েছে। অর্থাৎ এক বছরেই শিশু মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ২৭ হাজার। অথচ ১৯৯০ সালের তুলনায় শিশুমৃত্যুর হার দুই তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনতে পেরেছে যে ৬২টি দেশ, বাংলাদেশ তার একটি। গত ২৫ বছর ধরে গোটা বিশ্ব শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনায় কাজ করেছে। ১৯৯০ সালের তুলনায় পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হার এখন ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। একই সময়ে নবজাতকদের মৃত্যুহার কমেছে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে এখন শিশুমৃত্যুর হার ৩৮ অথচ ১৯৯০ সালে ছিল প্রতি হাজারে ১৪৪টি এবং ২০০০ সালে ছিল ৮৮ টি। সামগ্রিকভাবে শিশু মৃত্যুর হার প্রতিবছরে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হারে কমেছে।
আমার এক শ্রদ্ধাভাজন বন্ধুকে এই তথ্য শোনানোর পরে তিনি বললেন, করোনাকালে মানুষের উদ্বিগ্নতা বেড়েছে বলেই হার্টএটাক ও স্ট্রোকে মৃত্যু বেড়েছে, আত্মহত্যার ঘটনাও বাড়বে। বহু মানুষের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাহলে ২৭ হাজার শিশু মৃত্যু? এখানেও বলা যায় পরিবহন সংকট, পরিবারের আর্থিক সংকট বৃদ্ধি, ডাক্তার না পাওয়া ইত্যাদি কারণেও শিশু মৃত্যু বাড়তে পারে। তাহলে জাপান, থাইল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া, সিংগাপুর, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনের ক্ষেত্রে কি বলবেন? তারাতো অন্যান্য মৃত্যু কমিয়ে আনতে পেরেছে। আমার জানা বেশ কয়েকজনই মারা গেলেন করোনা উপসর্গ নিয়ে। তাদের কেউ কেউ শেষ দিকে পরীক্ষা করিয়ে পেয়েছেন নেগেটিভ ফল। বাস্তবিক তখন তার মধ্যে করোনাভাইরাস ছিল না তবে ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতি করে যাওয়াতে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুগুলোও বাড়তি মৃত্যু। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে কভিড-১৯ এ মৃত্যু ছিল ৭ হাজার ৫ শত জন। ওই তিন ক্ষেত্র ধরলেই করোনার চেয়ে বাড়তি মৃত্যু দাঁড়ায় ১৩ গুণ! ভারত বা পাকিস্তানের কি অবস্থা জানি না। তবে সেখানেও বাড়তি মৃত্যু এমন বিপুলই হবে যদি সঠিক জরিপ করা যায়। তার মানে পৃথিবীতে করোনায় যত মৃত্যু মানুষ দেখেছে তার চেয়ে বাড়তি মৃত্যু অনেক বেশি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩০ লক্ষ মৃত্যুর বিপরীতে বাড়তি মৃত্যু কত গুণ? এর সাথে করোনাভাইরাসের কোন না কোনভাবে সম্পর্ক রয়েছেই।