পৃথিবী গোলাকার ও সূর্যের চারদিকে ঘোরে- এটাইতো সহজে মানা হয়নি। বহু হত্যা-নিপীড়ন শেষে ওরা থেমেছে। তার তুলনায় বহু শক্তিশালী ও প্রভাববিস্তারী তত্ত্ব হল- বিবর্তনবাদ এটাও এতো সহজে মানার কথা ছিল না। শুরুতে বিজ্ঞানীদের কাছে অনেক তথ্য ছিল না বলে তারাও নিশ্চিত হতে পারেনি। কিন্তু আজ সব ফকফকা। দরিদ্র দেশের কিছু মানুষ হাউকাউ করে বটে তবে উন্নত দেশের মানুষরা মেনে ও মনে নিতে বাধ্য হয়েছে প্রমাণ দেখেই। বিবর্তনবাদ নিয়ে পোস্ট দিলেই কমন কিছু আপত্তি ও বিরোধীতা আসে। একই জবাব দিচ্ছি বারবার। এক পোস্টেও একই জবাব বারবার দিতে হয়। এজন্য বিবর্তনবাদের বিরোধীতাকারীরা যে যে প্রশ্ন করছেন তার উত্তর একবারেই একসাথে দিয়ে দিলাম। ভবিষ্যতে প্রশ্ন করলে এই পোস্টটি দেখতে বলব-
১। বানর থেকে মানুষ হলে এখনো বানর আছে কেন?/ এটাতো বানর থেকে মানুষ হওয়া/আপনার পূর্বপুরুষ বানর ছিল!
উত্তর: বানর ও মানুষ আলাদাভাবে বিবর্তিত হয়েছে। বানর থেকে মানুষ হয়নি। এমনকি এখন জীবিত রয়েছে এমন কোন প্রজাতি থেকেও মানুষ আসেনি। বানর থেকে মানুষ এসেছে এমন দাবি করে ওয়াজ করতেন মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদী, বিবর্তনকে বিতর্কিত করার জন্য। মানুষের সাথে সবচেয়ে বেশি জিনগত মিল রয়েছে শিম্পাঞ্জির। এরপরে গরিলা, ওরাংওটাং এর মিল রয়েছে। এরা সকলেই পূর্ববর্তী কোন সাধারণ এপ জাতীয় প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়েছে। কারো পূর্বপুরুষই বানর নয়।
২। এটা একটা তত্ত্ব, তত্ত্বতো সত্য নয়- অনুমান মাত্র!
উত্তর: বিজ্ঞানের তত্ত্বকে অবশ্যই প্রমাণিত হতে হয়। ভুল প্রমাণ হলেই বাতিল হয়ে যাবে তত্ত্ব। বিবর্তনবাদও অন্তত ৯ ধরনের হাজার হাজারভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এখন এটাকে সত্য বলেই ধরা হচ্ছে। পৃথিবী গোলাকার, সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহগুলো ঘুরছে, ব্লকহোল, মহাকর্ষ, মধ্যাকর্ষণ ইত্যাদি তত্ত্বের কথা ভাবুন। মহাশূন্যে গিয়ে দেখার আগেই বিভিন্নভাবে প্রমাণিত হয়েছিল পৃথিবী গোলাকার। সৌরজগৎকে আপনিও দেখেননি। যদিও ভবিষ্যতে জানা যায় মধ্যাকর্ষণ শক্তি সত্য নয় অন্য কোন কারণে বস্তু নিচে পড়ে তবে মধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব বাতিল হবে। তবে বস্তুর নিচে পড়ার আরো সঠিক কারণ জানা যাবে।
৩। ভবিষ্যতে ভুল প্রমাণ হতে পারে, কারণ বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল!
উত্তর: বিজ্ঞান সত্যকে অনুসন্ধান করে। পৃথিবী গোলাকার এটা কি ভুল হবে? অনেকবার অনেকভাবে প্রমাণিত হলে তা বাস্তব হয়ে উঠে। প্রজাতি থেকে প্রজাতির উদ্ভব একটি এমনই বাস্তবতা ও বহুভাবে প্রমাণিত। এরপরেও যদি ভিন্ন কোন তত্ত্ব আসে তবুও সেটা ইন্টেলেকচুয়াল ডিজাইন (আইডি) হবে না এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। হয়তো এটা কেবল বিবর্তনেরই উন্নত কোন তত্ত্ব আসবে যেখানে কারণগুলো আরো স্পষ্ট হবে এবং প্রাণের সূচনারও স্পষ্ট প্রমাণ থাকবে।
৪। একটা প্রমাণ দিন, মেনে নিব!
উত্তর: দুটি প্রমাণ দিলাম। ১) করেনাভাইরাসতো আগে ছিল না। এটা অন্য একটি প্রাণির মধ্যে থাকা জীবাণু বিবর্তিত হয়ে করোনাভাইরাসে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যেই এটি হাজার হাজার ভাবে নিজকে বদলে নিয়েছে। ২) ফসিল ও জিনতত্ত্বীয় ভাবে মিলিয়ে দেখা যায় প্রাণিগুলোর পূর্বপরুষ থেকে ধারাবাহিকভাবে তারা বদলেছে। পৃথিবীর আগের স'রে থাকা ঘোড়ার ফসিল মিলিয়ে মিলিয়ে বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে আজকের ঘোড়া এসেছে। তাদের মধ্যে আকার ও আকৃতিতে বিস্তর তফাৎ। জিন গবেষণা করে দেখা গেছে বাস্তবিকই এই প্রাণিটি পূববর্তী প্রাণি থেকে বারবার বিবর্তিত হয়েছে। এমনটা হাতি বা মানুষের ক্ষেত্রেও প্রমাণিত হয়েছে।
৫। বিজ্ঞানীরাই বিশ্বাস করে না বিবর্তনবাদ!
উত্তর: এটা একেবারেই সত্য নয়। জরিপে দেখা গেছে পৃথিবীর তাবৎ বিজ্ঞানীদের ৯২% থেকে ৯৭% বিবর্তনবাদ সমর্থন করে। যারা করে না তারা অধিকাংশই তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞানী যারা তাদের পারিবারিক ভাবাদর্শ বদলাতে পারেন নি বা বিবর্তনবাদ বোঝার চেষ্টা করেননি- যদি সত্যি হয়ে যায় তাহলে বিশ্বাস থাকবে না এই ভয়ে। বিবর্তনবাদ বাদ দিলে এখনকার জীববিজ্ঞান কোন অর্থবহন করে না। বিবর্তনবাদকে কাজে লাগিয়ে গবেষণা করে সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন। বিবর্তন তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তিন বিজ্ঞানী সবুজ জ্বালানি ও কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ওষুধ তৈরির পথ দেখিয়ে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। একে ভুল প্রমাণ করতে পারলে কোটি কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা আছে, তা পাবেন। এছাড়া এমন প্রমাণ তাকে নিশ্চিতভাবেই নোবেল পুরস্কার পাইয়ে দিবে।
ভবিষ্যতে বিবর্তন নিয়ে লিখলেই এই প্রশ্নগুলো করা অবান্তর ও সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু হবে না। আমি বলে দিবো ২০২১ সালের ১৭ মার্চের পোস্ট দেখুন।