somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

জনতার প্রতিবাদে কি সব হত্যার বিচার হয়?

০৩ রা জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এপ্রিল ১৯৭৮ সাল স্বামীর হাতে নিহত হন সালেহা। যৌতুকলোভী ডা. ইকবাল তার নিজের বাড়ির গৃহপরিচারিকার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে সংসারে নেমে আসে অশান্তি। এক সময় স্ত্রী জেনে যায় প্রিয়তম স্বামীর এসব বাজে কীর্তিকলাপ। এরপর স্ত্রী এসবের প্রতিবাদ করলে ফুঁসে ওঠেন ডা. ইকবাল। শুরু হয় স্ত্রীর ওপর নির্যাতন। সালেহার ধনাঢ্য বাবা মেয়ের শিক্ষার্জনের বিষয়টিকে খুব একটা পাত্তা দেননি। ভেবেছিলেন বিত্তের জোরেই মেয়েকে ভালো একটা পাত্রের হাতে তুলে দেবেন। পেয়েও গেলেন। মেয়ের সুখের গ্যারান্টির জন্য সালেহার বাবা নিজের টাকায় ইকবালকে ডাক্তারি পাস করান। সালেহা হত্যার ঘটনায় দেশের মানুষ নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশে সোচ্চার হয়েছিল। যার সুফল হিসেবে ১৯৮০ সালে যৌতুকবিরোধী আইন প্রণীত হয়। ১৯৮৭ সালে গৃহপরিচারিকার সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে স্ত্রী সালেহাকে হত্যার দায়ে ডা. ইকবালের ফাঁসি হয়েছিল।


এপ্রিল ১৯৮৯ খ্যাতনামা ডাক্তার বাবা-মা'র ব্যবসায়ী ছেলে মুনির হোসেন তার স্ত্রী শারমিন রীমাকে বিয়ের তিন মাসের মাথায় হত্যা করে। বিক্রমপুরের মেয়ে ছিল শারমিন রীমা। পিতা শহীদ সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদ। মনির হোসনে আরা খুকুর সাথে পরকীয়া প্রেমের কারণেই রীমাকে হত্যা করে। ৭ই এপ্রিল ঢাকা থেকে রওনা হয়ে যাওয়ার দুদিন পরে ফেরার পথে স্বামী মুনির হোসেন তাকে হত্যা করে নারায়ণগঞ্জের মিজমিজি গ্রামের কাছে ফেলে রেখে আসে। মনিরের ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল। মনিরের পরিবারের কিছুটা প্রভাব ছিল। তারাও চেষ্টা করেছিল কিন্তু আন্দোলনটা ছিল ওই চেষ্টার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। মনিরের মা ডা. মেহেরুন্নেছার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তার হাতপাতাল থেকেই নাকি কারো পুত্র সন্তান সরবরাহ করা হয়েছিল…। তখন এরশাদ বিরোধী মনোভাবও মানুষের মধ্যে বিরাজ করছিল। সব মিলিয়েই মানুষ ফুসে উঠেছিল। সারাদেশেই মিছিল প্রতিবাদ হয়েছে। সরকার বাধ্য হয়েছে বিচার করতে।


এপ্রিল ২০১৯ সকালে উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত। মাদ্রাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করেছে, এমন সংবাদ দিলে সে ছাদে যায়। মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে ৮০% শতাংশই ঝলসে যায়। ১০ এপ্রিল ২০১৯ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাত এর মৃত্যু ঘটে। এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নুসরাতকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ এর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করা হয়। মাওলানা সিরাজ গ্রেফতার হলে নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ওসি-এসপি ও নেতা সবাই মিলেই ধাপাচাপা দিয়ে ফেলেছিল প্রায়। কিন্তু এখনতো অনলাইন যুগ। অনলাইনেই মানুষ প্রতিবাদের ঝড় তুলে। সেই ঝড়েই সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। ফাঁসির রায় হয় মাওলানা সিরাজসহ অপরাধীদের।



এসব দেখে মনে হবে যতদিন প্রতিবাদ থাকবে ততদিনই মানুষের বিচার পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়তে থাকবে। সাংবাদিক সাগর-রুণি নিজ কক্ষে খুন হন। নাট্যকর্মী-কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ দুটি ঘটনার নেপথ্যে খুবই শক্তিশালী-প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠে। দুটি ঘটনাতেই প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সারাদেশে মিছিল-প্রতিবাদ হয়েছে, অনলাইনে ঝড় উঠেছে, অভিযোগের তীর উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কিন্তু কিছুই হয়নি। কারো নামও চিহ্নিত করতে পারেনি প্রশাসন। মনে হতে পারে সাগর-রুণি-তনু নামের কাউকে যেনো কেউ হত্যাই করেনি।এমন ঘটনা দেখে উল্টোটাও মনে হবে- প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে সহজে কিছু করা যায় না। আন্দোলনের মাত্রাটা যদি সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে তবেই সম্ভাবনা তৈরি হতো। সালেহা, রিমা ও নুসরাতের খুনিরা অত বেশি প্রভাবশালী ছিলেন না। তারাও খুনকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আন্দোলনের মুখে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২০ বিকাল ৪:০৫
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলা কাকতালীয় না কি পরিকল্পিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২

গতকাল (২ ডিসেম্বর) ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। বিভিন্ন তথ্যে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করি না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০



আমাদের দেশে অনেক মুসলিম থাকে আর ভারতে থাকে অনেক হিন্দু। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য হতাশা জনক নয়। সেজন্য মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে।মুসলিমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূস গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড - শেখ হাসিনা।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩৬


৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পলায়নের পর বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করা নতুন সরকার কে বিপদে ফেলতে একের পর এক রেকর্ড ফোন কল ফাঁস করতে থাকেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শকুনি মামার প্লে-বুক থেকে সাবধান!

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:০৮

হিন্দুত্ববাদী ভারতের আয়নায় নিজেদের না দেখুন!পাতা ফাঁদ থেকে দূরে থাকুন!

ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াই এখন চূড়ান্ত অবস্থায় আছে।এটা আমাদের সকল পক্ষের জন্যে এক অগ্নি পরীক্ষা!দাঙ্গা বাঁধানোর সকল চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×