বাংলাদেশের সমকালীন বুদ্ধিজীবী মহলে ফরহাদ মজহার একজন প্রখ্যাত লেখক, কলামিস্ট, কবি, সামাজিক ও মানবাধিকার কর্মী, এবং পরিবেশবিদ হিসাবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। কয়েক মাস পূর্বে লন্ডনের প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক আলোচনায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা রেখেছেন যার প্রেক্ষিতে আমি কিছু লিখতে চাই। বক্তৃতাটা প্রথমে সামাজিক মিডিয়া ফেইসবুকে কিছুটা শুনে পরে পুরা বক্তব্যটা ইউটিউবে শুনলাম। ফরহাদ মাজহারের প্রতিটি কথা চিন্তার খোরাক জাগায়।
তিনি ঐতিহাসিক দলিল ভিত্তিক তথ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে মুক্তি যুদ্ধের চেতনা বলতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সমাজতন্ত্র কিংবা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির কোনটিই ছিল না। ১০ই এপ্রিল স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য বিধিবদ্ধভাবে যে উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয়েছিল তা হল:
(১) সাম্য তথা মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা
(২) ব্যক্তি ও সমাজের মান-মর্যাদার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং
(৩) সামাজিক ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করা।
তাই আজ প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশে কি একাত্তরের সেই উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে?
অন্য দিকে চিন্তা করলে দেখা যায় স্বাধীনতা যুদ্ধের বিধিবদ্ধভাবে যে উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয়েছিল তার কোনটাই তো ইসলামের নীতির পরিপন্তি নয় তাহলে যারা ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন তারা মুক্তি যুদ্ধের চেতনা বিরোধী হয়ে যান কিভাবে? আজকে আমাদের দেশের আলেম উলেমাকে ইসলামের রাজনীতির কথা বললে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি হিসাবে চিত্রায়াত করার সুযোগ বামপন্তী, নাস্তিক ও পৌত্তলিকেরা কিভাবে পায় সেটা চিন্তা করার কথা।
যাক আসল কথায় আসা যাক, সারা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলাতে যা হচ্ছে তা কেন হচ্ছে তা আগে বুঝতে হবে। জনাব ফরহাদ মজহারের কথার সঙ্গে একমত তিনি বলেছেন "বিশ্বের মুসলিমরা আজ মুজলুম" কারণ প্রতিটি মুসলিম দেশের সম্পদ লুঠার উদ্দেশ্যে সে সব দেশে চলছে সাম্রাজ্যবাদীর হামলা। তাদের স্ট্রেটিজিক্যল পার্টনার হচ্ছে দুর্নীতিবাজ অসৎ, ডেসপটিক ও ক্ষমতালোভী ফ্যসিষ্ট চরিত্রের রাজনীতিবিদরা।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে এ জন্য কি শুধু অস্ত্র ব্যবসায়ী ও বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরাই দায়ী না সে দায়িত্ব মুসলিম সমাজের উপরও বর্তায়? শুধু সাম্রাজ্যবাদীদেরকে দুষ দিলে কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?
ইসলামকে শুধু ধর্মীয় আচার আনুষ্ঠানিকতার মাঝে সীমাবদ্ধ রাখলে কোন আপত্তি নাই কিন্তু যখনই রাজনীতিতে ইসলামের কথা বলা হয় তখনই আসে আপত্তি। তবে সমস্যা হচ্ছে যারা ইসলামকে রাজনৈতিক অঙ্গনে নিয়ে আসতে চান তাদের দুর্বলতা হল ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন যে বিশ্ব মানবতার কল্যাণকে তরান্বিত করতে পারে এবং ন্যায় নীতির ধারক বাহক হবে এ চিরন্তন সত্যকে আধুনিক সমাজে তারা দার্শনিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করাতে পারেন নাই বিশ্ব দরবারে। তা না করে ইসলামী আন্দোলন শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক এবং ধর্মীয় অনুসারীদের ধর্মপালনের সংগ্রাম হিসাবে অমুসলিম জন গুষ্টির কাছে প্রকাশ পেয়েছে। আমি মনে করি এখানেই হচ্ছে চরম ব্যর্থতা! তাছাড়া মুসলিমদের নিজেদের মধ্যকার অনৈক্যতা তো আছেই। আল্লাহ বলেন "ওলা তাফার্ রাক্কু" অর্থাৎ ইসলামের রজ্জুকে শক্তভাবে ধরে রাখতে বিভক্ত না হতে কিন্ত আজ মুসলিমেরা ঐক্য বলতে বুঝে পরস্পরের মাঝে বিভক্তি!
বর্তমান বিশ্বে চলছে জুডিও ক্রীষ্টান সভ্যতা যা ইউরোপীয় রেনেসাঁ আন্দোলনের মাধ্যমে পাদ্রী শাসনকে বিতাড়িত করে বিশ্ব দরবারে জ্ঞানবিজ্ঞানের ধারক ও বাহক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। এ সমাজে একদিকে যেমন বলা হয় অর্থই হচ্ছে সকল সুখের উৎস তেমনি ধর্মকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ব্যাপার বলা হয় তবে কাউকে শুধুমাত্র ধর্মের কারণে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বৈষম্য করা নিষেধ। এটাই হচ্ছে এ সভ্যতার প্রতিষ্ঠিত দর্শন। যদিও ইদানিং "ইসলাম ফবিয়ার" কারনে এ দর্শনের উপর দাগ পড়তে শুরু হয়েছে। জুডিও ক্রীষ্টান সভ্যতার আরেকটি মূল বিষয় হচ্ছে এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার সবার উর্দ্ধে এবং অর্থনীতি হচ্ছে পুজিবাদ। পুজির মালিক যে সেই হচ্ছে অর্থনীতিতে প্রধান, পুঁজিপতির স্থান সবার উপরে। এ সভ্যতার অর্থনৈতিক দর্শন হচ্ছে পুঁজির মুনাফাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবং এখানে সুদ ও মুনাফা অর্জনে যে যা কিছু করতে চায় তাতে বাধা নেই যাকে বলা হয় ফ্রি ইকোনমি। এখনে সব কিছু পরিচালিত হয় বড় বড় কোম্পানির স্বার্থে অর্থাৎ কোর্পরেট ওয়ার্ল্ড। এটাই হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতা যা চলে আসছে ইসলামী সভ্যতার পতনের পর আজ শত শত বৎসর ধরে। এই বাস্তবতাকে সবাই মেনে নিয়েছে বা মানতে বাধ্য হয়েছে এমনকি মুসলিম প্রধান দেশগুলাও এর বাহিরে নয়। কিন্তু ইসলামী দর্শন হচ্ছে এর অনেক কিছুর বিরোধী।
ইসলামের একটি আলাদা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন ও নীতি আছে। ঈমানদারের দাবী করব কিন্তু ইসলামী এই সত্যকে অগ্রাহ্য করা কি ভাবে মুসলিমদের কাজ হতে পারে? ইসলামী অর্থনীতিতে সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্পদের সুসম বণ্টনের তাগিদ সবচেয়ে বেশী এ জন্য আছে জাকাতের ব্যবস্থা। আবার লোক দেখানোর জন্য দান খয়রাতি করাও ইসলামে নিষেধ,আল্লাহ অপছন্দ করেন। ইসলামে সামাজিক দায়বদ্ধতা ব্যক্তি স্বাধীনতার চেয়ে উপরে। এখানে এক আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এ বিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে হালাল রুজি,হালাল খাওয়া,মানুষের সাথে সঠিক ও ভদ্র আচরণ, মানবাধিকার, জ্ঞানের পরিচর্যা, সমাজের অন্যায় অবিচার দূর করন ও সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপন ইত্যাদি হচ্ছে আসল কথা।
আগেই বলেছি বর্তমানে বিশ্বের প্রতিটি দেশ যেহেতু চলে জুডিও ক্রীষ্টান তথা পশ্চিমা সভ্যতার প্রভাবে। সেখানে ইসলামের সার্বজনীন মানব কল্যাণের আদর্শ নিয়ে একটি সমাজ চালাতে চাইলে এবং জুডিও ক্রীষ্টান সভ্যতার কুফল থেকে মানব জাতিকে উদ্ধার করার প্রয়োজনীয়তা মানুষকে বুঝাতে পারলে তারা কি তা গ্রহণ করতে আপত্তি করবে?
মানুষকে যুক্তি দিয়ে বোঝালে মানুষ ভাল জিনিস গ্রহণ করতে চাইবে এটাই হচ্ছে স্বাভাবিক।একটা দেশের মুল চাবিকাঠি যদি থাকে এমন এক শ্রেণীর মানুষের হাতে যারা জীবনের প্রতিটি কাজে খুঁজবে মহা প্রভু আল্লাহর সন্তুষ্টি যারা এ দর্শন বিশ্বাস করে তাদের হাতে কি হতে পারে অন্যায়?
আমি জানি অনেকেই হয়তবা বলবেন এসব হচ্ছে কিতাবি কথা বাস্তবতার সাথে মিল নাই। বাংলাদেশে যারা ইসলামকে প্রতিনিধিত্ব করার দাবী করেন সেই মাদ্রাসার ছাত্ররা ও তাদের শিক্ষকদের সমাজে অবস্থান কোথায়? তাদের উপর সাধারন ধারনা হচ্ছে পিছনে পড়ে থাকা এক জন গুষ্টি যারা চলে সমাজে অন্যদের সহায়তায়, দান দক্ষিণায়। তারা কিভাবে ইসলামকে একটি উন্নত আদর্শ হিসাবে প্রকাশ করার যোগ্যতা রাখবেন। অথচ এক কালে এই আলেম উলেমারাই ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রামের দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন। তারা সফলকাম কেন হতে পারেন নাই সে অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু তাদের মাঝে যে সংগ্রামী চেতনা ছিল তা কিভাবে আজ নিস্তেজ হয়ে গেল?
আমদের দেশের মাদ্রাসার আলেমদের মুখে শুনা যায় সাহাবীদের সুন্দর সুন্দর কিচ্ছা কাহিনী, হাদিস কোরআনের ব্যাখ্যা কিন্তু কিভাবে বর্তমান যুগে সে আদর্শ প্রয়োগ করা যায় তার কোন দিক নির্দেশনা নাই। কিভাবে মুসলিম সমাজের নেতৃত্ব ভাল মানুষদের হাতে ন্যস্ত করা যায় নাই কোন পরিকল্পনা। আধুনিক সমাজে সুস্থ ও সঠিক নেতৃত্ব নিতে হলে মুসলিমদেরকে একদিকে যেমন ইসলামের জ্ঞান অর্জন করতে হবে সেই সাথে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। এটা কোন নতুন কথা নয় কিন্তু প্রচেষ্টা কোথায়? প্রশ্ন হচ্ছে মুসলিমদের বিশেষ করে বাংলাদেশের মুসলিম নেতাদের ও আলেম উলেমাদের এদিকে এগিয়ে আসতে কিসের বাধা?
তাই আজ মুসলিম দেশে সত্যিকার কল্যাণ আনতে হলে গতানুগতিক পন্থা ছেড়ে নতুন কিছু করতে হবে। ভুলটা কোথায়? What went wrong? তা দেখতে হবে। আমাদেরকে সামাজিক আন্দোলনে মননিবেশ করতে হবে এবং মানুষের চিন্তার জগতে বিপ্লব আনতে হবে। ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য ইসলামের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে হবে আর সে জন্য ইসলামী অনুসারীকে মানবতার কল্যাণে দুনিয়ায় কি ভূমিকা রাখছেন তার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামী বিপ্লব ঘটাতে হলে আগে জুডিও ক্রীষ্টান সভ্যতার দার্শনিক শক্তির উৎস কোথায় আর দুর্বলতা ও পঙ্কিলতা কোথায় তা জানতে হবে এবং তাদের খারাপটা ছেড়ে ভালটা গ্রহনে যে ইসলামের আপত্তি নাই সেটাও মানুষকে বুঝাতে হবে। ইসলামের বিকল্প ব্যবস্থা যে কল্যাণ আনতে পারে এবং তা বাস্তব সম্মত সেটা মানুষকে বুঝাতে হবে।
কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে মানুষকে আল্লাহর খলিফার দায়িত্ব দিয়ে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন আবার মানুষকে স্বাধীনতাও দেয়া হয়েছে এ দায়িত্ব গ্রহণের ও পরিত্যাগের। গ্রহণ করলে কি পুরস্কার না করলে কি শাস্তি সেটাও বলা আছে। প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ যদি অমুসলিমকে এ পৃথিবীতে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত থেকে বঞ্চিত না করেন তা হলে আল্লাহর খলিফা হব এবং একটি রাষ্ট্রে মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করব, ইসলামী শাসন কায়েম করব অথচ একই রাষ্ট্রে জন্ম নেয়া অন্য ধর্মের ভাল লোককে আমার দলে রাখতে পারবনা তা কেমন করে হয়? আপনি দেশে ন্যায় বিচার কায়েম করবেন,অন্যায় অত্যাচার বন্ধ করবেন সেখানে আপনার সাথে অমুসলিম কেউ থাকতে পারবেনা কেন? রাসুলের মদিনা সনদ কি সে শিক্ষা দেয়? আল্লাহ বলেন কোরআন হচ্ছে সিফা, এ গ্রন্থ হচ্ছে মুবিন, এটা হচ্ছে ফোরকান, হুদাল্লিল নাস তথা বিশ্ব মানবতার পথ নির্দেশক। আমরা যারা কোরআন পড়ি তারা নিজেরাও কি এ সত্য অনুধাবনের জ্ঞান রাখি? কিভাবে কোরআন মানুষের কল্যাণ আনতে পারে আমরা কয়জনই-বা এ সত্যটাকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারি?
ইংরেজরা মুসলিম দেশে একটি কাজ খুব চতুরতার সাথে করতে সক্ষম হয়েছে তাহলো মনে প্রাণে তাদের অনুসারী একটি গুষ্টিকে সৃষ্টি করতে পেরেছে যারা নিয়েছে সমাজের কর্তৃত্ব যাদেরকে বলা যায় কালচারেল মুসলিম আবার কিছু লোককে "মোল্লা" বানাবার কারখানায় পাঠিয়ে দুনিয়া বিমুখ করাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু কোরআন কি শিক্ষা দেয়? আল্লাহ তো মুসলমানকে জুম্মার দিনে নামাজ শেষে রোজগারের উদ্দেশ্যে বাহির হয়ে যেতে বলেন (ফান তাছিরু ফিল আরদি..)
আজ ইসলাম হচ্ছে পৃথিবীর দ্রুততম বিস্তার লাভ করা ধর্ম কিন্তু খোজ নিলে দেখা যাবে নিও মুসলিমদের কেউ বর্তমান মুসলিম সমাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম কবুল করছে না বরং তারা তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় ইসলাম বুঝে, কোরআন ও সুন্নাহ পড়ে এর সৌন্দর্য দেখে মুসলিম হচ্ছে। আজ সেই নিওমুসলিমরা যেভাবে ইসলামকে বুঝে আধুনিক মানুষের সামনে যে সাহস ও প্রজ্ঞা নিয়ে ইসলামের উপস্থাপনা ও ব্যখা দিতে পরছেন সে ক্ষমতা আমাদের আলেমদের মাঝে বিরল তার কারণ কি তা ভাবতে হবে।
এবার আরেকটা বিষয় চিন্তা করেন সেনাবাহীনির কাজ কি? দেশকে বাহিরের শত্রু থেকে নিরাপদ রাখা প্রয়োজনে যুদ্ধ করা। সে উদ্দেশ্যে সৈনিকদেরকে নিয়মিত ব্যায়াম করায়ে ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের জন্য শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি দেয়া হয়। তাদেরকে ডিসিপ্লিন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা করা হয়। কিন্তু সে জন্য সেনা অফিসারকে কি মদ পান করতেই হবে? মুসলিম দেশগুলার সেনানিবাসে ইংরেজের দেয়া মদের বার কি বন্ধ হয়েছে?
কোথাকার কোন পাগল ইসলাম সর্ম্পকে কি বলেছে আর আমরা নেমে পড়লাম রাস্তায়! ফাসি চাই বলে। মিডিয়া যে কোন পাগলের কথা ফলাও করলেই শুধু তার পিছনে প্রতিবাদ করা্টাই হল ইসলাম রক্ষা। আমি বলছিনা যে নবী রাসুলের বা ইসলামের অপমান করে কোন বক্তব্য দিলে প্রতিবাদ করব না। কিন্তু মসজিদের পাশেই যে গ্রামের মোড়ল অন্যায় করছে, ইসলাম বিরুধী কাজ করছে, দেশের যুবক যুবতিরা আধুনিকতার নামে ধ্বংস করে যাচ্ছে তাদের চরিত্র এমন কি পশ্চিমা দেশে যা হয়না তারও এক দাফ বেশী করতে তারা মত্ত সে দিকে খেয়াল নাই বা কিভাবে এসব বন্ধ করা যায় তার নাই কোন প্রচেষ্টা। চোখের সামনে দেখছেন একটা রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগ দলীয়করন করে সুশাসন ও ন্যায় বিচারের অযোগ্য করা হচ্ছে!কিন্তু এর বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস নাই।
বছর দুয়েক আগে তুরস্কে বেড়াতে গিয়েছিলাম তখন সে দেশের এক লোকের কাছে কিছু ডলারের বিনিময়ে স্থানীয় মুদ্র লিরা ক্রয় করেছিলাম। কয়েক কদম সামনে চলার পর কেন জানি মনে হল হিসাবে আমি কম পেয়েছি। তাই ফিরে গেলাম লোকটির কাছে সে ক্যালকুলেটর দিয়ে চেক করে দেখালো আমি ঠিক পেয়েছি। কিছুটা লজ্জিত মনে হল নিজের সন্দেহ প্রবণতার জন্য। কিন্তু সেদিন সে লোকের একটি কথা আমি কখনও ভুলব না তা হল সে আমাকে বলেছিল "স্যার আমি এক জন মুসলিম"। সাদা চামড়ার সেই ইউরোপীয় মানুষটিকে তখন স্যালুট দিতে মনে হয়েছিল। সে তো আগেই আমাকে বলতে পারত আমি মুসলিম ধোকাবাজি করতে পারিনা কিন্তু কেলকুল্যটার দিয়ে চেক করে কথাটা আমাকে শুনালো। আজ আমাদের মুসলিমদের সমস্যা হল ইসলাম সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে বলে চিৎকার করতে থাকি কিন্তু আগে যদি আমরা সমস্যার সমাধান করে বলতে পারি যে এটা করেছি যেহেতু আমি ইসলামে বিশ্বাসী তাহলে কি ভাল হয় না? ঠিক যেমন তুরস্কের সে ইউরোপিয় মুসলিম ভাই আগে নিজেকে নির্ভুল প্রমাণ করে বলতে পারল যেহেতু সে মুসলিম তাকে সন্দেহ করার কারণ নাই কেননা এক জন মুসলিম ধোকা দিতে পারে না।
পরিশেষে যে কথাটি বলতে চাই তা হল বাংলাদেশের ইসলামী দলের উচিত হবে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে বাংলাদেশে কায়েম করা তথা ১০ই এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য বিধিবদ্ধভাবে যে উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয়েছিল যেমন (১) সাম্য তথা মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা (২) ব্যক্তি ও সমাজের মান-মর্যাদার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং (৩) সামাজিক ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করা।
যে দিন বাংলাদেশে বিশ্বজনীন এ আদর্শগুলা প্রতিষ্ঠা হবে তখনই বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে উদয় হবে নতুন সূর্য। আর সেই সকালে গর্বের সঙ্গে বলতে পারবেন আমরা এ কাজ এ জন্য করেছি যে আমরা ইসলামে বিশ্বাসী
ফরহাদ মজহার সাহেবের কথা শুনতে এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৫ সকাল ৮:৩২