মানুষ কেন সিগারেট খায় ? আজব প্রশ্ন ! এ প্রশ্নের উত্তর নিজের মত করে দেবো । আগে সিগারেটের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেয়া আবশ্যক !
ইউরোপিয়ানদের মধ্যে বিখ্যাত নাবিক এবং আবিষ্কারক ক্রিস্টোফার কলম্বাসই প্রথম তামাক গাছ দেখেন। ১৪৪২ সালে কলম্বাস যখন সান সালভাদরে গিয়ে পৌঁছান তখন সেখানকার আদিবাসীরা মনে করেছিলো কলম্বাস ঈশ্বর প্রেরিত স্বর্গীয় জীব! তারা কলম্বাসকে উপহার স্বরূপ কাঠের তৈরি যুদ্ধাস্ত্র, বন্য ফলমূল এবং শুকনো তামাক পাতা দিয়েছিলো। অন্যান্য উপহার গুলো নিলেও কলম্বাস ধূমপান না করে তামাক পাতা গুলো ফেলে দিয়েছিলো।
ঠিক ঐ বছরই আরেকজন ইউরোপিয়ান রডরিগো ডি যেরেয (Rodrigo de Jerez) কিউবায় গিয়ে পৌঁছান এবং ইউরোপিয়ান হিসাবে তিনিই প্রথম ধূমপান করেছিলেন। রডরিগো ডি যেরেয ছিলেন স্পেনের নাগরিক। পরবর্তীতে স্পেনে ফিরে গিয়ে তিনি জনসম্মুখে ধূমপান করে মানুষজনকে চমকে দিতেন। এক জন মানুষের নাক এবং মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে এটা দেখে সাধারন মানুষ ভড়কে যেত। একটা সময় অনেকেই ভাবতে শুরু করে যে রডরিগো ডি যেরেযের উপর শয়তান ভর করেছে। তাই রডরিগোকে ৭ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়! কারাগারে রডরিগোর সাথে থেকে অনেকেই ধূমপান শুরু করেন।
তামাক এবং পাইপের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। একসময় জন্ম হয় সিগারেটের। সিগারেট আস্তে আস্তে সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠে।
১৮১৫ সালে সিগারেট ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়। এমনকি দি হাউস অফ পার্লামেন্টেও সিগারেট খাওয়ার জন্য আলাদা রুম করা হয়।
১৮২৮ সালে নিকোটিনের পিওর ফর্ম আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। কিছুদিনের মধ্যেই সবাই বুঝতে পারে এটা মারাত্মক বিষ!
১৮৫২ সাল থেকেই ধূমপান করার সুবিধার্থে ম্যাচ বা দিয়াশলাই এর প্রচলন হয়।
১৮৫৬ সালে ক্রিমিয়ান যুদ্ধ ফেরত সৈন্যরা তুর্কি থেকে সিগারেট নিয়ে আসে। সৈনিকদের মাঝে সিগারেট অনেক জনপ্রিয় হয়ে পড়ে। অলসতা এবং বিষাদ দূর করার জন্য তখন সৈন্যদেরকে নিয়মিত সিগারেট সরবরাহ করা হতো।
১৮৬৫ সালে আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনার ওয়াশিংটন ডিউক নামের এক ব্যাক্তি প্রথম সিগারেট রোল করে বিক্রি করা শুরু করে।
১৮৮৩ সালেজেমস বনস্যাক প্রথম সিগারেট রোল করার মেশিন আবিষ্কার করেন। এই মেশিন দিয়ে দিনে ১০০০ সিগারেট তৈরী করা যেত। বনস্যাক একটা সিগারেট কোম্পানী শুরু করেন যার নাম ছিলো আমেরিকান টোবাকো কোম্পানী। বনস্যাকের মেশিন সিগারেট শিল্পে বিপ্লবের সূচনা করে। তামাক চাষ এবং সিগারেট প্রস্তুত প্রক্রিয়ার উন্নতির সাথে সাথে সিগারেট ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
১৯১৬ সালে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় আর্মিদের রেশনের সাথে সিগারেটও যুক্ত করা হয়।
১৯৫০ সালে সিগারেটের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে প্রথম প্রচারনা শুরু হয়। এই সময়ই ধূমপান এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করা হয়। ড. ওয়াইন্ডার এবং ড. গ্রাহাম একটি গবেষণায় দেখান যে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ৯৫% মানুষই ২৫ বছর বা তার বেশী সময় ধরে ধূমপানে আসক্ত।
এবার আশা যাক কেন মানুষ সিগারেট খায় এ প্রসঙ্গে ! বেশিরভাগ কিশোর বা যুবক সিগারেট খায় হতাশার কারনে। নিজেকে কষ্ট দিয়ে তারা আনন্দ পেতে চায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা নিয়মিত সিগারেট খায় , তাদের জীবনে একটা খারাপ অতীত থাকে। অতীতের কষ্ট বাষ্প করে দিতে সিগারেটে টান ধরায়। আদৌ কি কষ্ট লাঘব হয় ? সম্ভবত না। আবার এক ধরনের মানুষ সিগারেট খায় শখের বশে ! তাদের ধারনা সিগারেট না খেলে স্মার্ট হওয়া যায় না। যাই হোক , যারা সিগারেট খায় তারা এক সময় আফসোস করে। যদি আপনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে থাকেন , তবে বলব হতাশা কাটাতে বই পড়েন , ঘুরতে যান , ধর্মীয় কাজে লিপ্ত হন। সিগারেট খাবার দরকার কি ! আর যদি আপনি শখের বশে সিগারেট খান , তবে বলব আপনি ভুলের জগতে আছেন। কিছু কিছু লোক আছেন যারা এ খারাপ ত্যাগ করতে চাচ্ছেন কিন্তু পারছেন না। তাদের উচিত হবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা। আমাদের সমাজেরও কিছু সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি। কোন কিশোর সিগারেট খেলে তাকে ঠেলে দেয় নষ্টের কাতারে। সিগারেট খেলে ফুসফুসের ক্ষতি হয় , চরিত্রের কি হয় ! এ দেশে একজন লম্পট চরিত্রের ছেলের থেকে একজন সিগারেটখোর ছেলেকে বেশি ঘৃণার চোখে দেখা হয়। প্রকৃতপক্ষে এই মনোভাবও তাদের সিগারেট খেতে উদ্বুদ্ধ করে। আমি সিগারেট খাওয়াকে সমর্থন করি না। মাত্র অল্প কটাদিন আমরা বাচিঁ। দুঃখ কষ্ট তো থাকবেই ! সিগারেট কখনই দুঃখ লাঘবের হাতিয়ার হিসেবে গন্য হতে পারে না।আরেকবার ভাবুন ! আপনার জীবনের গল্প আপনার হাতে। সুন্দর করে গড়ুন জীবনটা। বেদনাকে এত গাঢ় করে কি লাভ ! জীবনানন্দ দাসের এই কবিতাটা পড়েছেন , " কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে ! "
(কিছু কিছু তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)