"আমি মজলুম। হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে বিচার চাই। আমি গত ৫০ বছর ধরে সারা দেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তোমার কোরআনের কথা প্রচার করেছি। আজ আমাকে বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। হে আল্লাহ তোমার ইজ্জতের কসম,তোমার জাতের কসম, তুমি সাক্ষী ১৯৭১ সালের কোনো কাদা এবং কাদার এক ফোটা পানিও আমার গায়ে লাগেনি।’ বড় ছেলে রাফকী বিন সাঈদীর জানাজার নামাজের পূর্বে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একথা বলেন। মতিঝিল বয়েজ স্কুল মাঠে সন্ধ্যার পূর্বে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিশাল মাঠের গন্ডি পেরিয়ে পুরো রাজারবাগ এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। স্থবির হয়ে পড়ে ওই এলাকার সকল রাস্তাঘাটের চলাচল ব্যবস্থা।
মাওলানা সাঈদী অগনিত মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন,‘হে আল্লাহ আমি তোমার জন্য শহীদ হতে প্রস্তুত আছি। তবে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে, হত্যাকারী হিসেবে, ধর্ষণকারী হিসেবে, চোর, লুন্ঠনকারী হিসেবে আমি ফাঁসি কেন একদিনেরও সাজা চাইনা। এসব অপবাদ নিয়ে আমি মরতে চাইনা। হে আল্লাহ আমি মজলুম। মজলুমের দোয়া এবং তোমার মাঝে কোনো পর্দা নাই। আমি তোমার কাছে বিচার চাই।’ এরপর মাওলানা সাঈদী বলেন,‘হে আল্লাহ তুমি হয় জালিমকে হেদায়েত দাও,না হয় তাদের বিদায় কর। হে আল্লাহ ১৬ কোটি মুসলমানের দেশ বাংলাদেশকে তুমি কাশ্মীর বানিও না, আফগান বানিও না, ইরাক বানিও না। বাংলাদেশকে তুমি রক্ষা কর।’
তিনি আরো বলেন, ‘হে আল্লাহ মুসলমানের দেশে আজ মুসলমান তার পরিচয় নিয়ে চলতে পারে না। তাদের বেইজ্জতি করা হচ্ছে।’
৬টা ১০ মিনিটে মাওলানা সাঈদীকে প্রিজন ভ্যানে করে কড়া পুলিশী নিরাপত্তায় মাঠে নিয়ে আসা হয়। এসময় উপস্থিত জনতা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকাবর বলে স্লোগান দেয় তারা। তবে মাইকে কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো ধরনের স্লোগান দিতে নিষেধ করেন এবং মাওলানা সাঈদীকে নির্বিঘে মাঠে প্রবেশে সহায়তা করতে অনুরোধ করেন।
মাওলানা সাঈদী ছেলের লাশের কাছে আসলে জানাজা আয়োজক কর্তৃপক্ষ মাওলানা সাঈদীকে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে সালাম জানানোর অনুরোধ করেন তাকে পাহারাত পুলিশের প্রতি। এরপর মাওলানা সাঈদী মাইক নিয়ে উচ্চস্বরে সালাম দেন। এরপর ইন্নালিল্লাহ পড়েন। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নার রোল এসময় ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত শোকাহাত হাজারো জনতার মাঝে। সবাই হুহু করে কাঁদতে থাকেন মাওলানার সাথে।
কান্না থামিয়ে মাওলানা সাঈদী এরপর বলেন, ‘হে আল্লাহ কয়েক মাস আগে এই এখানে আমি আমার মায়ের জানাজা পড়িয়েছি। আমাকে আমার বাসায় যেতে দেয়া হয়নি। আমাকে আমার পরিবার পরিজনের সাথে বাসায় গিয়ে মিলিত হতে দেয়া হয়নি। আজ এখানে আমার ছেলে আমার কলিজার টুকরার জানাজায় আমাকে নিয়ে আসা হল।’
তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ দুনিয়াতে সবচেয়ে ভারী বোঝা হল পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ। আমার ছেলে রাফীককে আমি বলতাম তুমি আমার জানাজা পড়াবা। রাফীক বলত, না তুমি আমার জানাজা পড়াবা। আজ আমি তার জানাজা পড়াচ্ছি।’এসময় আবার তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। সাথে সাথে কাঁদতে থাকেন জানাজার জন্য উপস্থিত ব্যক্তিরা।
মাওলানা সাঈদী বলেন,‘আমার বড় ছেলে গতকাল বুধবার বিকালে মারা গেছে। আজ আছরের সময় আমাকে জানানো হয়েছে। একথা বলে তিনি আবারো কাঁদতে থাকেন।’
মাওলানা সাঈদী বলেন, 'হে আল্লাহ আমার কলিজার টুকরা,হে আল্লাহ আমার কলিজার টুকরা,হে আল্লাহ আমার কলিজার টুকরা রাফীককে তুমি বেহেশত দান কর। তার কবরকে তুমি জান্নাতের টুকরা বানিয়ে দিও। তার কবরের সাথে তুমি জান্নাতের সরাসরি রাস্তা করে দিও।
মাওলানা সাঈদী বলেন, আমার ছেলে গতকাল ট্রাইব্যুনালে ছিল। কোর্ট রুম থেকে বের হয়ে যাবার সময় আমাকে বলে যেতে পারেনি। আমি বুঝতে পারিনি ওটাই ছিল আমার সামনে তার শেষ যাত্রা।
এরপর মাওলানা সাঈদী উপস্থিত সবাইকে নিয়ে হাত তুলে দোয়া করেন আল্লাহর দরবারে।
তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ রাফীকের তিনটা ছেলে মেয়ে আছে। আমি তার সন্তান এবং তার স্ত্রীকে তোমার উপর সোপর্দ করলাম।’ তারপর সাড়ে ছয়টার দিকে তিনি জানাজা পড়াতে শুরু করেন তিনি।
নিজ চোখে দেখতে
পিবিসি নিউজ পড়ুন আর গদাম দিন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১২:৩৬