প্রকৃতি সৃষ্ট আর মানব সৃষ্ট কারনে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট হারে উর্বরতা হারাচ্ছে উপকুলীয় এলাকার একটি বিস্তীর্ণ অন্চলের ফসলী জমি । এর মুল কারন জমির লবণাক্ততা বৃদ্ধি । বারবার উপকুলে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছাস উপকূল ভূমির উপর একটি লবনের আস্তরণ ফেলে যাচ্ছে যা মাটির খনিজ উপাদানগত তারতম্য সৃষ্টি করছে । মাটির লবনাক্ততা বৃদ্ধির ফলে ফসল মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পানি নিতে পারছেনা, ফলে অপুষ্ট থেকে যাচ্ছে, ফলন হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। আর এ ধারায় একসময় মাটি তার উর্বরতা পুরোপুরিই হারিয়ে ফেলছে।
প্রকৃতি সৃষ্ট এ কারণ ছাড়াও উপকূলীয় এলাকার প্রভাবশালীদের কোন প্রকার নির্দিষ্ট প্ল্যান ছাড়াই ব্যাপক আকারে চিংড়ি ঘের তৈরী এবং এর জন্য সাগরের লবনাক্ত পানি বাধ কেটে সাধারণ কৃষকের জমির উপর দিয়ে নিয়ে আসা পরিস্থিতিকে দিন দিন আরো জটিল করে তুলেছে। কৃষক তার জমির উপর দিয়ে তার অনাহারে মৃত্যুর কালসাপকে নির্বাক চোখে যেতে দিচ্ছে । প্রভাবশালীদের কথার উপর কারো কোন কথা বলার উপায় নেই যে!!
একটা চিংড়ি ঘেরের আশপাশের একটা বড় এলাকা অনাবাদী হয়ে যাচ্ছে। ছোট কৃষকের চিংড়ি ঘের করার সামর্থ্যও নেই, অনুমতিও নেই আর জমির নেই ফসল উৎপাদন করার ক্ষমতা । এই কৃষক কোথায় যাবে? সমবায়ের মাধ্যমে কিছু চিংড়ি ঘের গড়ে উঠলেও বিস্তীর্ণ জমি থেকে যাচ্ছে অনাবাদী হিসাবে, বাড়ছে অনাহারির সংখ্যা ।
শুধু আবাদী ফসল নয়, এই লবনাক্ততা বৃদ্ধির ফলে পুকুরগুলিতে দেশি জাতের মাছ চাষের চেষ্টাও বিপন্ন হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট কোন প্ল্যান নেই আর দেশবাসীর একটা বড় অংশ ধারণাই রাখেননা এই বিপর্যয় সম্পর্কে।
তাহলে এই ক্রমঅগ্রসরমান নীরব মৃত্যু যে দিন দিন উপকূলীয় এলাকার একটা বড় জনগোষ্ঠীকে দিন দিন গ্রাস করতে বসেছে তার থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
একটা সমাধান হতে পারে লবণাক্ত মাটিতে জন্মাতে সক্ষম এরকম প্রজাতির ধান ও গম উদ্ভাবন । বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে। ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক এবং ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (CSIRO) লবনাক্ত মাটিতে জন্মাতে সক্ষম গমের জাত উদ্ভাবন করেছে। প্রয়োজনে তাদের সাথে এ ব্যাপারে কোলাবরেশন করা যেতে পারে। জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই উপায়ে ধান ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের বেলাতেও লবনাক্ত মাটিতে জন্মাতে সক্ষম জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব।
তবে সবার আগে প্রয়োজন পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে সরকার ও নীতি নির্ধারকদের সজাগ হওয়া এবং এটি মোকাবেলায় একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
আর আমাদের মত সাধারন জনগণের দরকার সচেতন হওয়া এবং এর মাধ্যমে সরকারকে সচেতন হতে বাধ্য করা। নইলে আমার মা ভাই বোনের ধীরে ধীরে মৃত্যু যে আমাকে চোখের সামনেই দেখতে হবে! নিশ্চয়ই আমরা সেটা চাইনা ।