এখন পুজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার জয়-জয়কার । যেখানে লাভ সেখানেই পুজির বিনিয়োগ, তা সেই বিনিয়োগ যদি মৃত্যু বেচার বানিজ্যেও হয় তাও সই । নীতি-নৈতিকতা আর মানুষের জীবন-মরণ নিয়ে এত ভাব-ভাবনার সময় কই । তাইতো সকলের দৃষ্টির সামনে চলছে মৃত্যু বেচার বানিজ্য । জায়গামত মাসোহারাও পৌছে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে আর নির্বিরোধে এই বানিজ্যের ক্রম সম্প্রসারণের জন্য । কথা বলছি হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আর সেই হাসপাতাল বর্জ্যকে ঘিরে গড়ে ওঠা বানিজ্যকে নিয়ে।
হাসপাতালে কেউ সুখে যায়না অ-সুখে যায় । আর এই অসুখ থেকে সারিয়ে তোলার জন্য নানা কাজ কারবার । অসুখের জীবাণু আর কারণ নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা আর নির্ণয়ের পরে সুখে প্রত্যবর্তনের জন্য ঔষধ, ইন্জেকশন, স্যালাইন সঙ্গে নানা রকমের পথ্য । অবশেষে সুখে প্রত্যবর্তন, সুস্থ মানুষ হিসাবে সমাজ সংসারে সরব উপস্থিতি । এইতো হবার কথা সুখ-অসুখ চক্রের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি। কিন্তু তাই কি হচ্ছে? হচ্ছে না ।
মাঝে ঢুকে পড়েছে আর একটি চক্র । যারা সহজ মুনাফার এক জীবনধ্বংসী ব্যবসার খোজ পেয়েছে । মানুষের অসুখ এখানে ব্যবসার মুল উপজীব্য । আমাদের হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অব্যবস্থার সুযোগে এরা সংগ্রহ করছে হাসপাতালে ব্যবহৃত সিরিন্জ, স্যালাইন ব্যাগ, ক্যাথেটার ইত্যাদি যাতে জড়িয়ে আছে মৃত্যু বীজ নানা জীবানু। তাপরপর সহজ কিছু প্রক্রিয়ায় সেই ব্যবহৃত সিরিন্জ, স্যালাইন ব্যাগ ইত্যাদি সু-শোভিত মোড়কে আবারও ওষুধের দোকানে, কোন প্রকার স্টেরিওলাইজেশন ছাড়াই - নানা প্রকার মৃত্যু বীজ সহ।
পুরো ব্যাপারটা বেআইনী । হা হা হা কি হাস্যকর কথা । এইখানে আইন মানার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে। অধিক মুনাফা বলে কথা !! জায়গামত মাসোহারা পৌছে যাচ্ছে... ওষুধের দোকানদার সব জানার পরও অধিক মুনাফার জন্য এই রমরমা মৃত্যু বানিজ্যের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে । আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথা না হয় নাই বললাম । সেটা সবাই জানে ।
এর ফলে কি হচ্ছে?? অ-সুখের জীবাণু নির্নয়ের জন্য আপনার শরীরে যখন সিরিন্জ ঢোকানে হচ্ছে তখন তার সাথে ঢুকছে নতুন মৃত্যুবীজ। অ-সুখের চিকিৎসার জন্য যখন আপনাকে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে তখন ঢুকছে নতুন মৃত্যুবীজ। নতুন মা হতে যাওয় নারীটি জানেওনা স্যালাইনের সাথে কোন মৃত্যুবীজ ঢুকে যাচ্ছে তার শরীরে... সেই সাথে তার অনাগত সন্তানটির শরীরে। আমার মা, বাবা, ভাই - বোন এক রোগের চিকিৎসা করতে এসে আক্রান্ত হচ্ছে আরেক রোগে.. তারপর হয়ত মারা যাচ্ছে এক রহস্যজনক রোগে।
এই ব্যাপারটি শুধু মফস্বলের সহজ সরল মানুষদের সাথে ঘটছে তা নয়। মেট্রোপলিটন শহল ঢাকাতেও এটি প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা। রক্তবাহিত রোগের প্রাদূর্ভাব বাড়ছে । পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এইডসের প্রাদূর্ভাব আশংকার কথা । বাংলাদেশে একবার এই রোগ বাসা বাধলে এই মৃত্যুবাণিজ্যের কল্যাণে তা মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছাতে সময় নেবেনা । এই সুখ - অসুখের চক্রের গাতপ্রকৃতিকে ফেরাতে আমাদের কি কিছুই করার নেই!!!
এই মৃত্যু-বানিজ্যকে রুখতে হবে। একটা বড় সামাজিক বিপর্যয় ঘটে যাওয়ার আগেই রুখতে হবে। কেউ শুনতে পাচ্ছেন কি!!!!
বি. দ্র. - লেখাটি পূর্বে প্রকাশিত কিন্তু ৮ তারিখের দু:খজনক ঘটনার সমসাময়িক হবার কারণে এটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তাই আবার পোষ্ট করলাম ।