আমি কিছুক্ষন দুঃখের ভাব করে বললাম, কিন্তু সামিয়াতো আমাকে এখনোও ভালোবাসে! হাহ!
ঘটনার সারমর্ম এই যে, পরশুদিনের আগে মনেই ছিলো না ফেব্রুয়ারির চৌদ্দ আসতে বেশি বাকি নেই। ভালোবাসা দিবস নিয়ে বেশ মাতামাতি হবে বুঝতে পারছি। ব্লগ ও স্কুল দুটোতেই উত্তেজনার তুমুল ঝড় উঠবে। সারা পৃথিবী জুড়ে এক কোটি কার্ড আদান-প্রদানের মধ্যে এ বছর কিছু হবে আমাদের স্কুলে, কিছু নেটে। রাস্তায় হাটার সময় চোখ বন্ধ করে থাকতে বাধ্য করবে কিছু সুখ পাখি। নিপিয়ান রিভারে যাওয়ার পথে যে খালি রেস্টুরেন্টটা পড়ে - ভ্যালেন্টিনো - সেটায় সেদিন বসার সিট পাওয়া যাবে না। এর পরের দিন স্কুলের আগ থেকেই ফিসফিস শুরু হবে কে কয়টা কার্ড পেলো।
পাঁচ বছর আগে ঐ দিনে মজার কান্ড ঘটেছিলো। ক্লাসের সবচেয়ে ছোটখাটো ছেলেটা হঠাৎ করে চেঁচামেচি শুরু করেছে - কে যেন তার ব্যাগে একটা কার্ড রেখে দিয়েছে। ভেতরে ছন্দহীন ছোট্ট একটা কবিতা। ছেলেটা সাইজে ছোট হলেও ভীষণ মজা করতে পারতো। সে সারাদিন এক একটা মেয়েকে কৌশলে জিজ্ঞাসা করে নিলো তারা রেখেছে কিনা। দিনের শেষেও অবশ্য বের করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত, বেশ কয়েকদিন পর বের হলো, ক্লাসের সবচেয়ে লম্বা মেয়েটার কাছ থেকে সেটা এসেছে। আমরা বাকিরা হাসতে হাসতে কাত। ব্যাপারটা যদিও খুব অন্যায় হয়েছিলো, তখন ছোট মাথায় এতো কিছু ভাবার জায়গা ছিলো না।
এরপর থেকে ভালোবাসা দিবসগুলো মোটামুটি সরল ভাবেই গিয়েছে। সবাই ছেলেবন্ধুর কাছ থেকে আসা ফুল, কার্ড ও চকোলেট নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে। এর পরের বছর আরেকজনের কাছ থেকে পাওয়া ফুল, কার্ড ও চকোলেট নিয়ে হাসাহাসি করে। এর পরের বছর আবার অন্য কেউ।
ওরা ভাবিয়ে তোলে আমাকে। ভালোবাসা এতো সহজেই দেওয়া ও পাওয়া যায়? এ জিনিসটাকে অর্থ দেয় কয়েকটা গোলাপ আর ফেরারো রোশ্যের? একটুও চিন্তা করতে হলো না তাদের?
আমিও ভালোবেসেছি। ভালোবাসি মাকে, ভালোবাসি বাবাকে, ভালোবাসি আপুনি ও ভাইয়্যুনকে। মারিসা, নিরো ওদেরও ভালোবাসি, তাই এতোদুরে চলে যাওয়ার পরও ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলে যেতে পারি। আকাশ ভালোবাসি, তাই তার দিকে নির্লজ্জভাবে তাকিয়ে থাকতে পারি। দৌড়ে ভেজা ঘাস মাড়িয়ে ব্যাকইয়ার্ড থেকে ড্যফোডিল আনতে পারি, কারন তাকেও ভালোবাসি। বাংলাদেশকে ভালোবাসি, তাই তাকে মিস করি। সিডনিকে ভালোবাসি, তাই তাকে কখনোও পুরোপুরি ছেড়ে যেতে পারবো না। ভালোবাসি সামহোয়ারইন। ভালোবাসি গোসলের গরম পানি। ভালোবাসি নিজস্ব বিছানা ও কম্বল।
ভালোবাসা কখনোও স্বার্থপর হয় না। স্বার্থের ছিটেফোটা থাকলেই তা অন্য কিছু হয়ে যায়। এ জিনিসটা একটু বিপজ্জনকও। অন্যকিছুকে দুর থেকে দেখে ভালোবাসা বলে ভুল করে অনেকেই। এই জন্যই প্রতি বছর ভিন্ন দোকান থেকে ভিন্ন ধরনের গোলাপ পায় তারা। ভুল ভাবে সুখ খুঁজে বেড়ায়। নকল ভালোবাসা থেকে কখনও শিক্ষা নেয় না। যা আছে তা দূরে ফেলে যা নেই তার পিছে ছোটে।
আর ভালোবাসা দিবস? হি হি হি। এর জন্য কোন দিবস দরকার নাকি? আমিতো মাকে সারাক্ষনই ভালোবাসছি। আকাশটাও তো শুধু একদিনের জন্য ঝলমল করে না। কম্বল জড়িয়ে শুচ্ছি প্রতি রাতেই।
নাহ, ভালোবাসার কোন দিবস নেই। যাদের ভালোবাসি, তাদের তিনশ পঁয়ষট্টি দিনই ভালোবাসি।