একটা গল্প বলবো শুনবেন প্লিজ? না না.. স্ক্রল করে নিচে নামবেন না প্লিজ, শুনেন না একটা গল্প! কত বছর মা-খালাদের পাশে বসে আদুরে গলায় ডালিম কুমার, কোঠাল কুমারদের রাক্ষসী বদের গল্প শুনিনা। আরে না! রূপকথার গল্প শুনাবো না আপনাদের, ঐগুলো শুনিয়ে ফালতু টাইম বরবাদ করবো এমন ভালো মানুষ আমি নই! ঊফফ!! ভুলে গেলাম কি গল্প শুনাতে চেয়েছিলাম। আচ্ছা আপনারাই বলুন কি গল্প শুনতে চান? -কি
গল্প শুনবেন তাও বলতে পারছেন ন! আচ্ছা ঠিক আছে... গার্মেন্টস কর্মী শেফালীর গল্প শুনবেন? যে কিনা প্রতিদিন ভোর ছটায় একটু সাজগোজ করে, চুল গুলো বেণী করে, ভরপেট পান্তা খেয়ে মহা উৎসাহে দু মাইল হেটে কর্মক্ষেত্রে যায়, আর ঠিক রাত আট টার দিকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, সাথে একটু এগিয়ে দেয় সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখানো একই গার্মেন্টস কর্মী রহিম ছেলেটি। রহিম তার স্বপ্নগুলো পূরন করেছিলো কি না আমার জানা নেই, তবে আমি এটা জানি শেফালী এখনো স্বপ্ন দেখে, শহরের ব্যস্ত জংশনে চোখে কাজল মেখে অপেক্ষা করে স্বপ্নের খোরাক
জমানো পুরুষ গুলোর জন্য। নাহ..শেফালীর গল্প বলবো না, কত শেফালীই তো ছড়িয়ে আছে এই শহরে, কয়টা শেফালীর গল্প বলবো! তার
চেয়ে বরং আক্কাসের গল্প বলি... আক্কাসকে চিনেন, না? আরে ঐ যে স্টেশন রোডের সেই পথশিশুটি, বয়স কতই বা.. এই দশ-বারো, ময়লা
চেহারা, হাতে অজস্র কাঁটা দাগ, যাকে বললেই অনায়াশেই আপনাকে টাকার বিনিময়ে গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, ম্যানেজ করে দিতে পারবে। শুনবেন তার গল্প? শুনবেন না! আচ্ছা থাক, রিকশা চালক রহমত মিয়ার গল্প শুনবেন আবার? ঐ যে, যার একটি অন্ধ মেয়ে ছিলো, যাকে
প্রায় সামান্য ভাড়ার জন্য তথাকথিত সুশীল মানুষদের কাছ থেকে থাপ্পর খেতে হয়, তার গল্প? জানেন... তার মেয়েটিকে কারা যেনো ধর্ষন করেছে, তারপর বিভৎস ভাবে হত্যা করেছে, সেই তনুর মতো, তনু কে তো চিনেন? ও তনুর নাম শুনেছেন। আচ্ছা তনু ড্রামা কি শেষ! আহারে তনু... মাফ করে দিস, আমার ফেইসবুক ওয়ালেও তোকে নিয়ে দুটি পোষ্ট আছে, তুই
বিচার পাস বা না পাস, আমি কিন্তু প্রচুর লাইক কমেন্ট হাতিয়ে নিয়েছি, সাথে স্যোসাল মিডিয়ায় আমার একটু ভালো মানুষ টাইপ ইমেজও হয়েছে! অথচ তনু তুই কি জানিস, সময় সুযোগ অনুকূলে থাকলে আমিও তোকে, তোদের কে...! কি লাভ বল, এই ভালোমানুষী মুখোশ পড়ে! ওহ্.. আমি গল্প বলবো বলে লেখা শুরু করেছি, আর এদিকে রোবটিক মানুষগুলোর সময়ক্ষেপন করে চলেছি! মানুষের হাতে এত সময় আছে! তুই তনু কবরেই শান্তিতে বেহেস্ত থেকে ভেসে আশা ঠান্ডা সুশীতল
বাতাসে আরাম কর, এই দেশে তোর বিচার হবে না, হলেও সঠিক অন্তত না। ততদিন আমরা আর একটা তোর জন্য অপেক্ষা করি, তারপর
আবার স্যোসাল মিডিয়ায় ঝড় তুলবো! সেই ঝড়ে বিচার হোক বা না হোক, লাইক কমেন্টের খেলা অন্তত হবে! ওহ্.. চলেন আপনাদের গল্প বলি, মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ কেরামত আলীর গল্প। যে কিনা ক্ষুধার জ্বালা আর সহ্য করতে না পেরে চক্ষুলজ্জার ভয়ে এখন শহরে ভিক্ষে করে, " বাবা একটু সাহায্য করবা, কিছু খাব... সারাদিন কিছু খায়নি"। ১২০টাকার গ্রিল নামের মুরগির ঠ্যাং খেয়ে দু টাকা দিতেও আমার বিরক্তি লাগে! বলি, যাও এখান থেকে বিরক্ত করো না! অসহায় কেরামত আলীর ভরসা হারানো বিষাদ চোখ আমার মনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। কেরামত
আলী রা এভাবে শহরে অপমানিত হোক, ততক্ষন বেনসনে একটা সুখটান দিয়ে নিই। না, কেরামত আলীদের গল্প থাক! চলুন, জরিমন বিবির গল্প বলি। ঐযে রোড এক্সিডেন্টে স্বামী সন্তান হারানো নিম্নবিত্ত বৃদ্ধা জরিমন বিবি, যার সহায় বলতে আর কিছু নেই, যার ভরনপোষণ করার মতও কেউ নেই, যার চোখে পানি শুকানো ছাঁনি পড়ে গেছে, যে এখানে এক মুঠো অন্নের জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পাতে, যার ছেড়াঁ শাড়ি আমাদের অসহায়ত্বের কথা বলে... শুনবেন তার গল্প? শুনবেন না! তাহলে চলুন...
রেল স্টেশনে প্রতিদিন অপেক্ষা করা সেই কিশোরী বধূটির গল্প বলি, যার স্বামী তাকে পোয়াতী অবস্থায় ফেলে এসেছিলো গ্রামে, এখন তার বাবুটির বয়স দুবছর কিন্তু বাবার আদর এখনো পাওয়া হয়নি তার, মার সাথে সেও তার বাবাকে খুঁজে বেড়ায় প্রতিদিন, তারপর আবার ভিক্ষের টাকা নিয়ে রাতে বস্তির খুঁপড়ি ঘরে ফিরে যায়। তারা কি খুঁজে পাবে তাদের কাঙ্খিত মানুষটিকে? কি... দুখী কিশোরীর গল্প শুনবেন না! তাহলে চলুন, প্রেমে ব্যর্থ সেই যুবকটির গল্প বলি, যে কিনা একটি মানুষের কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো, অথচ তাকে ভালোবাসার মত
অজস্র মানুষ এখনো পৃথিবীতে বিদ্যমান। সে কি জানতো তার চলে যাওয়াতে তার মা- বাবা, ভাই-বোন কতটা কষ্ট পেতো? তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে নিত্য হাসি ঠাট্টা করলেও তাকে কতটা ভালোবাসতো? সে কিভাবে চিন্তা করলো একটি অমানুষের জন্য কতগুলো মানুষকে দুঃখের সাগরে
ফেলতে! নাকি সেই মেয়েটির গল্প শুনবেন, যার প্রেমিক পুরুষ তাকে অজস্র লাল-নীল- বেগুনী স্বপ্নে ভাসিয়ে আর একটি সুন্দর হাত
ধরে পরবর্তী প্রজন্মের স্বপ্ন দেখছে! শুনবেন তার গল্প? নাকি সেই 'বি বি এ' করা বেকার যুবকটির গল্প শুনবেন, যে কিনা প্রতিদিন হন্যে হয়ে চাকুরির খুঁজে পায়ের স্যান্ডেল ক্ষয় করে। যার পক্ষে রিকশা চালানো,
হকারী করা, কিংবা কলেজ গেটে দাড়িয়ে ফুঁচকা বিক্রি করা সম্ভব নয়। এদিকে তার টাকাটাও ভীষন দরকার। কি করবে সে এখন, কি করা উচিত তার? না, চলুন সেই লোকাল বাস ড্রাইবারটির গল্প বলি যে কিনা, আস্ত একটি ঘরকে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিয়ে গিয়ে আমাদের
নিরাপদে গন্তব্যে পৌছে দেয়, অথচ কতটা অনিরাপদ জীবন অতিবাহিত করে তারা। নাকি তাদের গল্প শুনবেন, যারা আস্তে আস্তে এরকম অজস্র গল্পের জন্ম দিবে... সেই দূর্নীতিগ্রস্ত পুলিশবাহীনী, দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুশীল সেজে থাকা অসুশীল বুদ্ধীজীবী, রাজনীতিকে
পেটনীতি বানিয়ে ফেলা সেই তথাকথিত নেতাগন, শিক্ষার প্রকৃত মূল্যবোধ না জানা সার্টিফিকেট ধারী অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী, অবুঝ মানুষগুলোকে ভুল তথ্য গিলানো সাংবাদিক, দেশের জনগনের অর্থ লোপাঠ করে বিদেশের ব্যাংক সমৃদ্ধ করা সেই সব লাগব-বোয়াল, নিজ স্বার্থে একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে আঘাত করা সেই সব তথাকথিত নাস্তিক, ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা না জানা শরীরে ধর্মীয় লেভাস লাগানো আস্তিক... শুনবেন তাদের গল্প??? কি, শুনবেন না! সময় নেই হাতে, ক্ল্যাশ অব ক্লেন খেলবেন! ওহ্...আমি দুঃখিত, লজ্জিত আমি, আপনাদের কোনো গল্প শুনাতে পারলাম না। যদি ঔপন্যাসিক হতাম, তাহলে মিষ্টি একটা প্রেমের গল্প
শুনাতাম! কিন্তু আমি ঔপন্যাসিক নই, নই গল্পকারও, অযতাই গল্প বলবো বলে আপনাদের সময় নষ্ট করলাম। অন্য একদিন নাহয় শুনাবো সাতরঙা এক অসাধারণ গল্প। এবারের ব্যর্থতার জন্য কি ক্ষমা পেতে পারি না?!