somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অাট কুঠুরী নয় দরজা

২৪ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দবির উদ্দীনের ঘুম ভাঙ্গে বুকে প্রচণ্ড ব্থা নিয়ে। চাপ চাপ ব্যথার সাথে দমও বন্ধ হয়ে আসছিল। ক’টা বাজে দেখার জন্য দেয়ালের দিকে তাকায় সে। কিন্তু ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেয়াল ঘড়িটা দেখা যাচ্ছে না। নিশ্চয় লোডশেডিং হচ্ছে। অস্ফুট স্বরে স্ত্রীকে ডাকে সে, শান্তা! শান্তা! দুইবার ডাকার পর মনে পড়ে স্ত্রী পাশে নেই। এমনকি বাসাতেও নেই। স্ত্রী-মেয়েসহ শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিল। তার কাজ থাকাতে চলে আসে। মেয়ের স্কুল বন্ধ তাই তারা আর ক’দিন থেকে আসবে।

দবির উদ্দীনের মনে হচ্ছে বুকের বাম পাশটায় কেউ খামচি দিয়ে চেপে ধরেছে। বুকের ভেতরের সবকিছু যেন ছিঁড়ে ফেলতে চাচ্ছে। শরীরের ঘামে বিছানা বালিশ সব ভিজে গেছে। তার ছা পোষা মধ্য তিরিশের কেরাণী জীবনের মতো মাথার উপরের ফ্যানটাও স্তব্ধ হয়ে আছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু কী করবে বা কী করা উচিৎ তার কিছুই মাথায় আসছে না। নাক-মুখ দিয়ে এক সাথে বড় বড় করে শ্বাস নিতে চেষ্টা করছে দবির উদ্দীন। তাতেও কোনো আরাম বোধ হচ্ছে না। শ্বাসকষ্টটা যাচ্ছে না। শ্বাসকষ্টের সাথে সাথে তীব্র পিপাসা বোধ করে দবির উদ্দীন। বিছানায় বসে বালিশের নিচ থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে সে। মোবাইল ফোনের স্ক্রীনের আলোতে ফ্রিজের কাছে যায়। ফ্রিজ খুলে ঠা-া পানির বোতল থেকে গলায় অনেকটা পানি ঢেলে দেয়।

একা বাসায় এই অবস্থায় চরম অসহায় বোধ করে দবির উদ্দীন। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানসহ আপনজনদের মুখগুলো একে একে চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। বাবা মারা গেছেন চার বছর হয়; মা-ও চলে গেছেন এক বছর আগে। বাবা মৃত্যুর সময় বলে গেছেন পাড়ার শরীয়তপুর ফার্মেসীতে সাত শ’ টাকার মতো বাকি আছে। মা মারা যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল, প্রতিবেশি এক কাকীর কাছে তার দুই হাজার টাকা ঋণ আছে। ভেবেছিল পরিশোধ করে দিবে। আজ দিবে কাল দিবে করে এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয় নি ভেবে এই মুহূর্তে তার খুবই অনুশোচনা হচ্ছে। আসলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দিতে পারে নি। মাস শেষ হওয়ার আগেই বেতন শেষ হয়ে যায়। তার নিজের ঋণের পরিমাণও লক্ষ টাকা ছাড়াবে।

কিছুক্ষণের মধ্যে চাপটা একটু কমে আসে। একটু সহজ হয় শ্বাসপ্রশ্বাস। ব্যাথাটা থেকে গেছে এখনও আগের মতোই। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে দবির উদ্দীন চলে আসে সিঁড়ির দরজার কাছে। নবটা ঘুড়িয়ে দরজা খুলে কপাটটা একবারে পেছনের দেয়ালে ঠেকিয়ে দেয়। তারপর কপাটে হেলান দিয়ে বসে পড়ে। পাশের বিল্ডিংয়ের জানালা দিয়ে কারো নাক ডাকার আওয়াজ আর ঝিঁঝিঁ পোকাদের অবিশ্রান্ত ডেকে চলা ছাড়া কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই। ডান হাতে বুক চেপে ধরে বাম হাতে মোবাইলে সময় দেখে৷ রাত তিনটা বাইশ৷ তারপর স্ত্রী শান্তার নাম্বার ডায়াল করে। চারবার রিং বাজার পর শান্তা ফোন ধরে।

-হ্যালো শান্তা! প্রথমে কথা বলে দবির উদ্দীন নিজেই

-হ্যালো দবির! কী হয়েছে তোমার? স্ত্রীর উদ্বিগ্ন কণ্ঠ কানে আসে দবির উদ্দীনের।

-কিছু না শান্তা! আই লাভ ইউ!

-এই কথা বলার জন্য এত রাতে তুমি আমাকে ফোন দিয়েছ? আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। একটা খারাপ স্বপ্ন দেখতে দেখতে তোমার ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে।

-মেয়েটা কী করে? ঘুমায়?

-হুম, মেয়ে ঘুমায়। কিন্তু তোমার কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন? তোমার কী হয়েছে দবির?

শান্তার শেষ কথাগুলো দবির শুনতে পায় না। একটা দলা পাকানো ব্যাথার তীব্র আক্রমণে শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে দবির উদ্দীন। ধপাশ করেই মেঝেতে পড়ে যায় তার শরীরের উপরের অংশ। মোবাইলটা পড়ে যায় হাত থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×