[প্রখ্যাত মার্কিন লেখক Edgar Allan Poe সারা বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে একটি অতি পরিচিত নাম। তাঁর লিখিত জগদ্বিখ্যাত সম্পূর্ণ্ উপন্যাস The Narrative of Arthur Gordon Pym of Nantucket (1838) এর বাংলা রূপ এটি। বাংলা রূপান্তর © হামিদ]
কিন্তু রাতের ঠান্ডা বাতাস সবকিছু এলোমেলো করে দিল যেন। যে মানসিক শক্তি তাকে এতটা চাঙ্গা রেখেছিল এবং টেনে এনেছিল এই সমুদ্রে এতক্ষণে তা মিইয়ে গেছে। সুরার শক্তির কাছে হার মেনেছে তার টনটনে মনোবল। এরই মধ্যে একেবারে বেহুঁশ হয়ে পড়েছে। আগামি কয়েক ঘন্টা জ্ঞান ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা দেখছিলাম না।
আর আমি নিজে কতটা আতঙ্কিত তা তো কল্পনারও বাইরে। কিছুক্ষণ পূর্বে গলাধকরণ করা তরলটুকু একেবারেই উবে গেছে। ফলে নিজেকে যেন দ্বিগুণ ভীতু আর অক্ষম মনে হচ্ছিল।
আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে, নৌকাটি নিয়ন্ত্রণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রচন্ড বাতাস আর তীব্র স্রোত আমাকে নিশ্চিত ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। বেশ বুঝা যাচ্ছে যে, পেছনেই জমাট বাঁধছে একটি ঝড়ো মেঘ। নৌকায় কোনো কম্পাস নেই, নেই কোনো রসদ বা খাবার দাবার। স্পষ্টতই বুঝতে পারছিলাম এই বেগে যদি আমরা ছুটতে থাকি তাহলে দিনের আলো ফোটার আগেই আমরা সমুদ্র-উপকূল রেখার দৃষ্টির বাইরে চলে যাব।
এমন সব ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর দুশ্চিন্তা বিদ্যুৎ বেগে আমার মাথাকে উত্তপ্ত করে দিয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ অসাড় আর স্তব্ধ হয়ে রইলাম। প্রচন্ড বাতাসে তীর বেগে ছুটে চলছে নৌকা। নৌকার গতি এতটাই ভয়ঙ্কর তীব্র যে, সামনের গলুই ডুবে ডুবে যাচ্ছে সমুদ্রের ফেনার মধ্যে।
অগাস্টাস হাল ছেড়ে দেওয়ার পর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আমিও হাল ধরতে ভুলে গেছি। তারপরও যে নৌকাটি তলিয়ে যায় নি কেন তা এক বিরাট বিস্ময়ের ব্যাপার! নেহায়েতই বরাত জোরে ডুবতে ডুবতেও তীর বেগে ছুটে চলছে নৌকাটি। এর মধ্যে আমিও একটু একটু করে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে উঠেছিলাম।