প্রতিবছর বংলাদেশ থেকে উল্লখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ইউএসএ, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়। বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া বা কানাডার প্রতি অধিকাংশ বিদেশ গমনেচ্ছু ছাত্র ছাত্রীদের আকাঙ্খা থাকলেও বিগত কয়েক বছরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক ও জার্মানিতে বেশকিছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর আগমন ঘটেছে। আজকে অবশ্য আমি ফিনল্যান্ডে পড়াশুনার ব্যাপারে কয়েকটি ভাল দিক নিয়ে কিছু কথা বলব। কেউ যদি সত্যিকার অর্থে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে বিদেশে আসতে চায় তাদের জন্য ফিনল্যান্ড হতে পারে একটা আদর্শ জায়গা। এখানে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য প্রচুর সুযোগ সুবিধা রয়েছে। তবে অনেকেরই এগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকায় এখানে আসার প্রতি তেমন একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় না।
বিশ্বব্যাপী সমাদৃত মানসম্মত ডিগ্রী
ফিনল্যান্ডের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ই সরকারী এবং শায়ত্ব শাসিত। এখানকার ডিগ্রী দেশ বিদেশের সব জায়গাতেই বিশেষ বিবেচনার দাবী রাখে। আধুনিক বিশ্বের চাহিদার সাথে মিল রেখেই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কারিকুলাম তৈরি করা হয়। প্রযুক্তির দিক দিয়েও ফিনল্যান্ডের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত অগ্রগামী। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পুর্ন কম্পিউটারাইজড হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাবিধ সুবিধা ভোগ করে। তদুপরি ছাত্র ছাত্রীদের মানসম্মত শিক্ষাদানে শিক্ষকদের রয়েছে আপ্রান চেষ্টা যা বাংলাদেশে একেবারেই কল্পনাতীত।
বিনা টিউশন ফিতে লেখাপড়ার সুযোগ
ফিনল্যান্ডে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ প্রোগ্রাম ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানেই লেখাপড়ার জন্য কোন টিউশন ফি দিতে হয় না। বাংলাদেশে যেমন ভর্তি ফি, পরীক্ষা ফি সহ রকমারী ফি দিতে হয়, এখানে সেরকম কোন ফিও দিতে হয় না। লাইব্রেরীগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান বই থাকার দরুন বই পুস্তকের পেছনেও খুব একটা টাকা পয়সা ব্যায় করার প্রয়োজন পড়ে না। অধিকন্তু কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাগজ, প্রিন্টিং ইত্যাদিও সম্পুর্ণরূপে ফ্রি যার কারনে শিক্ষার্থীদের সম্পুর্ণ নিশ্চিন্তে লেখাপড়া শেষ করার সুযোগ রয়েছে। কাউকেই পড়াশুনার জন্য টাকা পয়সা নিয়ে অতিরিক্ত কোন চিন্তা ভাবনা করতে হয় না।
স্বল্পখরচে আবাসন সুবিধা
ফিনল্যান্ডে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু কিছু ছাত্রাবাস রয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগন্য। এখানে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই রয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী ছাত্র ইউনিয়ন। তবে এই ইউনিয়গুলো বাংলাদেশের মত নোংরা রাজনীতি দারা কলুষিত নয়। বরং তারা শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা নিয়েই বেশি তৎপর। এরকম একাধিক ছাত্র ইউনিয়ন পরিচালিত সারা দেশব্যাপী বেশ কতগুলো ছাত্রাবাস রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা স্বল্প খরচে আবাসন সুবিধা ভোগ করে থাকে। এখানে তাদের জন্য রয়েছে ফ্রি বিদ্যুত ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড়
সর্বক্ষেত্রে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। ফিনল্যান্ডে খরচের অন্যতম একটি বড় খাত ভ্রমন টিকিটের জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ৫০% ছাড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ছাত্রদের জন্য রয়েছে নামমাত্র খরচে খাওয়া দাওয়ার সুযোগ। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তুলনামুলকভাবে অনেক কম হওয়ায় খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রেও খুব একটা খরচ করতে হয় না।
খন্ডকালীন চাকুরীর সুবিধা
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ফিনল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম একটা শক্তিশালী দেশ। সম্প্রতি সমগ্র বিশ্ব মন্দার কবলে পড়লেও ফিনল্যান্ডে সার্বিক দিক দিয়ে এর প্রভাব অতটা ভয়াবহ ছিল না। আর এখন অর্থনীতি ক্রমশ উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এখানে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য রয়েছে কাজ করার প্রচুর সুযোগ যা ইউরোপের যে কোন দেশের তুলনায় নিঃসন্দেহে অনেক ভাল। এখন পর্যন্ত কাজ কর্ম নিয়ে কেউ বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছে বলে শোনা যায় নি। বরং সকলেই আসার কয়েক মাসের মধ্যেই মোটামুটি কাজ যোগাড় করতে সমর্থ হয়। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের সুবিধামত সময়ে কাজ করারও বিশেষ সুবিধা রয়েছে।
মাল্টিকালচারাল পরিবেশ
এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী থাকায় একজন শিক্ষার্থী একটা মাল্টিকালচারাল পরিবেশের মধ্য দিয়ে তাকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এখানে সে মিশতে পারে অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে, পরিচিত হতে পারে তাদের কৃষ্টি কালচার সম্পর্কে। এখান থেকে তাদের পৃথিবীর নানান দেশের মানুষের সম্পর্কে সাধারন ধারনা লাভের প্রচুর সুযোগ রয়েছে যা বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে পেশাগতসহ জীবনের সর্বক্ষেত্রে অত্যন্ত অপরিহার্য।
সামাজিক নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি
ফিনল্যান্ডের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামকরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি আছে যার মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীরই একচেঞ্জ স্টুডেন্ট হিসেবে এক বা দুই সেমিস্টার আন্যান্য দেশে লেখাপড়ার সুযোগ রয়েছে। এরজন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্য থাকা খাওয়া ছাড়া আর কোন টাকা পয়সা খরচ করতে হয় না। উপরন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন থেকে মাসিক ভিত্তিতে কিছু টাকা পাওয়া যায় যা দিয়ে মোটামুটি খরচ চালিয়ে নেয়া সম্ভব। এর মাধ্যমে একজন ছাত্র বা ছাত্রী অন্য দেশের ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে কিছটা জ্ঞান লাভ করে যা তার পেশাগত জীবনের জন্য যথেষ্ট সহায়ক হয়। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমেও বিভিন্ন দেশে সভা, সেমিনারে অংশগ্রহন করার সুযোগ রয়েছে।
একজন শিক্ষার্থীর যাবতীয় খরচ মেটানোর জন্য ফিনল্যান্ডে প্রতি মাসে ৩০০-৪০০ ইউরো খরচ হয়। এখানে যে কোন ধরনের খন্ডকালীন কাজ পেলে নিজের খরচ চালানোর পরও প্রতি মাসে কিছু টাকা জমানো সম্ভব। অনেকেই আস্তে আস্তে ছোট খাটো ব্যবসা বানিজ্যের সাথেও জড়িত হয়। অবশ্য কাজ কর্ম পেতে একজন ছাত্রকে প্রথম দুই তিন মাস বা তার থেকেও একটু বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে এ সময়ের মধ্যেও কিছু ছোট ছোট কাজ করে টাকা পয়সা আয় করা সম্ভব হতে পারে। আগামীতে ফিনল্যান্ডে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে।