যুক্তরাষ্ট্রের বহুল প্রচারিত দ্বিমাসিক পত্রিকা ফরেইন পলিসি (Foreign Policy) এবং যুক্তরাজ্যের মাসিক প্রস্পেক্ট ম্যাগাজিন (Prospect Magazine) যৌথ উদ্যোগে পাঠকদের ভোটের মাধ্যমে সর্বশেষ ২০০৮ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করে। এর আগে পত্রিকা দুটি ২০০৫ সালেও একই ধরনের তালিকা প্রকাশ করেছিল। ২০০৮ সালের তালিকায় শীর্ষ দশ বুদ্ধিজীবির মধ্যে সকলেই মুসলমান। তারা হলেন যথাক্রমে তুরষ্কের ফেতহুল্লাহ গুল, বাংলাদেশের মুহাম্মাদ ইউনুস, মিশরের ইউসুফ আল কারদাভী, তুরষ্কের ওরহান পামুক, পাকিস্তানের এইতজাজ আহসান, মিশরের আমর খালেদ, ইরানের আব্দুল করিম শরশ, সুইজারল্যান্ডের তারিক রামাদান, ভারতের মাহমুদ মামদানী এবং ইরানের শিরিন এবাদি। উল্লেখ্য ২০০৫ সালের তালিকায় শীর্ষ দশজনের মধ্যে কোন মুসলমান বুদ্ধুজীবীর ঠাই হয় নি।
১। ফেতহুল্লাহ হুল (Fethullah Gülen)
ফেতহুল্লাহ গুল ১৯৪১ সালের ২৭ এপ্রিল তুরষ্কে জন্মগ্রহন করেন। তিনি একাধারে একজন লেখক, শিক্ষাবিদ এবং ইসলামী পন্ডিত। গুল এ পর্যন্ত ৬০ টিরও বেশি গ্রন্থ রচন আকরেছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্টের পেনসুলভেনিয়ায় নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।
২। ড: মুহাম্মাদ ইউনুস (Dr. Muhammad Yunus)
ড: মুহাম্মাদ ইউনুস ১৯৪০ সালের ২৮ শে জুন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র্ঋন কার্যক্রমের সূচনা করেন। ২০০৬ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুষ্কার লাভ করেন।
৩। ইউসুফ আল কারদাভী (Yusuf Al-Qaradawi) ইউসুফ আল কারদাভি ১৯২৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মিশরে জন্মগ্রহন করেন। কারদাভীকে সমসাময়িক কালের অনত্যম শীর্ষ ইসলামী পন্ডিত বিবেচনা করা হয়। আল কারদাভি প্রায় ১২০ টিরও বেশি বই রচনা করেছেন। ১৯৮১ সাল তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত করা হয়। ২০১১ সালে ৩০ বছর পর তিনি নিজ দেশ ভ্রমন করেন। ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্য তাকে ভিসা দিতে অস্বীকার করে চলতি বছর ফ্রান্স সেদেশে তাকে নিষিদ্ধ করে।
৪। ওরহান পামুক (Orhan Pamuk)
ওরহান পামুক ১৯৫২ সালের ৭ জুন তুরষ্কে জন্মগ্রহন করেন। ওরহান পামুক বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ঔপন্যসিক, লেখক এবং শিক্ষাবিদ। ২০০৬ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেন।
৫। এইতজাজ আহসান (Aitzaz Ahsan)
চৌধুরী এইতজাজ আহসান ১৯৪৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের রাওয়ালপন্ডিতে জন্মগ্রহন করেন। তিনি পাকিস্তানের প্রখ্যাত আইনজীবি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। তিনি একাধিকবার পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করেন। ২০০-০৮ সালে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েসনের সভাপতি নির্বাচিত হন।
৬। আমর খালেদ (Amr Khaled)
আমর খালেদ ১৯৬৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় জন্মগ্রহন করেন। আমর খালেদ মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় টিভি মুখ। ইসলামী বিভিন্ন বিষয়ে টেলিভিশনে তিনি বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম পরিচালনা করেন।
৭। আব্দুল করিম শরশ (Abdulkarim Soroush)
আব্দুল করিম শরশ ১৯৪৫ সালে তেহরানে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ইরানের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, সংগঠক এবং তাহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং স্কলার হিসেবে কর্মরত।
৮। ড: তারিক রামাদান (Dr. Tariq Ramadan)
তারিক রামাদান ১৯৬২ সালের ২৬ আগস্ট সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড এর প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নার নাতি। তারিক রামাদান হাল সময়ের অন্যতম শীর্ষ একজন ইসলামী পন্ডিত এবং লেখক। ২০০৩ সালে ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির সাথে তিনি ঔতিহাসিক টেলিভিশনে বিতর্কে অংশ নেন। বর্তমানে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কনটেম্পরারি ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
৯। মাহমুদ মামদানী (Mahmood Mamdani)
মাহমুদ মামদানী ১৯৪৬ সালের ২৩ এপ্রিল ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহন করেন। তিনি একজন শিক্ষাবিদ, লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বর্তমানে তিনি উগান্ডার ম্যাকেরের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
১০। শিরিন এবাদি (Shirin Ebadi)
শিরিন এবাদি ১৯৪৭ সালের ২১ জুন ইরানে জন্মগ্রহন করেন। শিরিন এবাদি একজন আইনজীবি, সাবেক বিচারক এবং মানবাধিকার কর্মী। ২০০৩ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।