ইরান-সৌদির দ্বন্দ্ব নিয়ে নানান বিশ্লেষণ চলছে। কেউ বলছেন এটা শিয়া-সুন্নী বিরোধ আবার কেউ বলছেন এটা আরব-পারসিয়ান বিরোধ আবার কেউ বলছেন ইরানে ইসলামী বিপ্লব হওয়ার কারণেই ইরান-সৌদি বিরোধ। আসলে সবাই আংশিকভাবে সত্য বলেছেন যদিও সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করে বললে সেটা অতি সরলীকরণ হয়ে যায়। তবে শিয়া সুন্নী বিরোধটা একেবারেই গৌণ।এটা অনেকেরই হয়তো জানা নেই সৌদি আরব রাস্ট্রীয়ভাবে সুন্নীজম লালন করে না। সৌদি আরব রাস্ট্রীয়ভাবে ওহাবিজম তথা সালাফিজম লালন করে যা বর্তমানে জঙ্গীবাদ প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।তবে মুসলিম বিশ্বে সুন্নীরা অতিমাত্রায় সংখ্যাগরিষ্ট হওয়ায় ইরান-সৌদি দ্বন্দ্বকে শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্বে রুপান্তর করা সৌদি আরবের জন্য অতি লাভজনক; তাই সৌদি আরব ইরান-সৌদি দ্বন্দ্বকে শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্বে রুপ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই কাগুজে হলেও সৌদির নেতৃত্বে ৩৪ জাতির সুন্নী সামরিক জোট গঠনের উদ্দেশ্যই হল শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্ব জাগিয়ে তোলা।কারণ এই জোট কার্যকর হলে লাভের ষোল আনাই যাবে সৌদির ঘরে।কার্যকর না হলেও ধর্মান্ধ মুসলিমদের সমর্থন ও তাত্বিকভাবে সৌদি আরবের লাভ আছে।
আরব-পারসিয়ান দ্বন্দ্ব ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। পারসিয়ানরা স্বভাবতই উগ্র জাতিয়তাবাদী। আরবরা তাদের পার্শ্ববর্তী অন্যান দেশকে জয় করে তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা পরিবর্তন করে আরব বানিয়ে দিলেও আরবরা পারসিয়ানদেরকে এক টানা প্রায় প্রায় ৬০০ বছর ধরে শাসন করে তাদের শুধুমাত্র ধর্ম পরিবর্তন করলেও তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন করতে পারেনি। উল্টো আরব ও ইসলাম দুটোই তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ইসলাম পরবর্তিতে বিকশিত ও প্রচারিত হয়েছে পারসিয়ান ধারায় কারণ তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী ও সুফি সাধকরা ছিলেন পারসিয়ান প্রভাবিত। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশেও ঠিক তাই ঘটেছে। এজন্যই আমরা সালাত না বলে নামাজ বলি, সাওম না বলে রোজা বলি, আ্ল্লাহ হাফেজ ব্যবহার না করে খোদা হাফেজ বলি-----। যদিও পেট্রো ডলারের প্রভাবে এখন আবার আরবীয় প্রভাব চলমান। পারসিয়ান প্রভাব মুক্ত হয়ে আরবীয় প্রভাব চলমান হওয়ায় বর্তমানে ইসলামের নামে জঙ্গীবাদের তাত্বিক দিকটা এখানেই নিহিত।
ইরানিরা তাদের পুর্ব ধর্মমত জরথ্রুস্ট পরিত্যাগ করে আরবদের প্রবর্তিত ইসলাম গ্রহন করলেও পরবর্তীতে তারা দলে দলে আরবদের মাইনরিটি ইসলাম গ্রহন করে যা ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল হযরত মোহাম্মদ (সা) এর ইন্তেকালের পরপরই তার উত্তরাধিকারী নিয়ে যা আজকে পরিচিত শিয়া-সুন্নী বিভাজন নামে।তৎকালীন সুন্নীরা হযরত আলি ও তাঁর অনুসারী তথা শিয়াদেরকে টেক্কা দিয়ে রাস্ট্রক্ষমতা দখল করলে স্বভাবতই পরবর্তীতে শিয়ারা আরবে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।যাইহোক শিয়া-সুন্নীর তাত্বিক বিভাজন আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়।
বিশ্বের মধ্যে যে প্রাচীন কয়েকটি সভ্যতা ও সাম্রাজ্য ছিল তার মধ্যে পারসিয়ান সাম্রাজ্যের প্রভাব প্রতিপত্তির কথা সকলেরই কম বেশি জানা আছে।পারসিয়ানদের তৎকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল রোম সাম্রাজ্য।আরবরা তাদের গণনার মধ্যে ছিল না। এখনও ইরানিরা নিজেদেরকে ইউরোপিয়ানদের সমকক্ষ মনে করে। সেই পারসিয়ানরাই ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী আরবদের কাছে পরাজিত হয় যা ছিল তৎকালীন পারসিয়ানদের জন্য অতি লজ্বাজনক ও অপমানজনক যা আজো অনেক ইরানি স্মৃতিচারণ করে।তারপরেও বর্তমানে সৌদি-ইরান দ্বন্দ্বকে আরব-পারসিয়ান দ্বন্দ্ব উল্লেখ করাও হবে তাত্বিকভাবে ভুল।ইসলামকে মাইনাস করে ধরে নিলে বর্তমান ইরানি শাসন ব্যবস্থা অধিকমাত্রায় পারসিয়ান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী বহন করলেও সৌদি আরব কি আরবীয় সাম্রাজ্য বা আরবদের প্রতিনিধিত্ব করে ? উত্তর হবে ’না’। পুরোমাত্রায় আরব জাতীয়তাবাদের চরিত্র লালন করেছিলেন মিসরের প্রেসিডেন্ট গামাল নাসের।গাদ্দাফিরও ছিল বৈকি তেমনি কিছুটা হলেও ছিল সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদের। কিন্তু এদের সাথে ইরানের কোনো ধরণের সংঘর্ষ কখনও বাঁধেনি। উল্টো ইরানে ইসলামি বিপ্লব হওয়ার পর ইরানের সাথে সিরিয়ার ঘনিষ্ট সম্পর্ক দেখা যায়। ইরানে রাজতান্ত্রিক শাহ ক্ষমতায় থাকার কারণে হয়তো বাঁধেনি কারণ শাহের মধ্যে ইরানি জাতীয়তবাদের চেতনা ছিল না। সৌদি আরব কি আরবীয় জাতীয়তাবাদের চরিত্র লালন করে ? উত্তর হবে ’না’। তাহলে ইরান-সৌদি দ্বন্দ্বকে শুধুমাত্র পারসিয়ান-আরব দ্বন্দ্ব বলে চালিয়ে দেওয়াটাও অযৌক্তিক হবে। তবে অবশ্যই ইতিহাসগতভাবে আরব-পারসিয়ান দ্বন্দ্ব প্রভাবক। এই প্রভাবকটা সভ্যতাগত নয়, সভ্যতার সংঘাতও নয় এই প্রভাবক হল ইরানিদের কাছে সৌদি রাজতন্ত্র উৎখাতের ভয়।ঠিক একই কারণে সাদ্দাম ১৯৮০ সালে ইরান আক্রমন করে। কারণ সাদ্দাম সেসময় ইরান আক্রমন না করলে ইরানের ইসলামি বিপ্লব ইরাকে রপ্তানি হত। ইরানের তৎকালীন বিপ্লবী নেতারা প্রতিবেশী দেশগুলিতে বিপ্লব রপ্তানি করার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছিলেন।একমাত্র সিরিয়া বাদে আরবের সকল স্বৈরশাসক ও রাজা, বাদশাহরা ইরানকে ঠেকাতে সাদ্দামের পক্ষ নিয়ে সাদ্দামকে সামরিক ও অর্থনৈতিকসহ সকল ধরণের সহায়তা করেছিল ঠিক একই কারণে। ইরান-ইরাক যুদ্ধ পরবর্তীতে ঐ আরব শাসকরাই সাদ্দামের বিপক্ষে চলে যায় যার পরিণতিতে ১৯৯১ মার্কিন নেতৃত্বে উপসাগরীয় যুদ্ধ। ঐ উপসাগরীয় যুদ্ধের অন্যতম একটা কারণ ছিল সাদ্দামের ইরাকের কাছে সৌদি রাজতন্ত্র ও অন্যান্য আরব রাজতান্ত্রিকদের গদি হারানোর ভয়।
ইরানে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের আগেে ইরান ছিল মার্কিন সাম্রাজ্য ব্লকভুক্ত একটি রাস্ট্র। রাস্ট্রক্ষমতায় ছিল রাজতান্ত্রিক রেজা শাহ বর্তমানে ঠিক সৌদি আরবের ন্যায় মার্কিন দাস ছিল ইরান। তবে ইরানে হাজার বছর ব্যাপী রাজতন্ত্র থাকলেও ১৯৫০ এর দশকে কিছুটা হলেও গণতন্ত্র ছিল , ছিল পার্লামেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। সেই গণতন্ত্রের জোরে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় আসে ইরানি জাতীয়তাবাদী নেতা ড. মোসাদ্দেক।জাতীয়তাবাদী নেতা মোসাদ্দেক ইরানের শাহ( রাজা) ও মার্কিন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জন্য সুবিধাজনক ছিল না বিধায় ১৯৫৩ সালে মার্কিন ও ব্রিটিশ চক্রান্তে মোসাদ্দেককে উৎখাত করে রেজা শাহ পাহলভি পূর্ণ ক্ষমতা গ্রহন করেন। রেজা শাহ’র দীর্ঘ শাসনামলব্যাপী সৌদি-ইরান দ্বন্দ্বের কথা যেমন শোনা যায়নি তেমনি আরব-পারসিয়ান দ্বন্দ্ব ও শিয়া সুন্নীর দ্বন্দ্বের কথাও শোনা যায়নি। শুধু তাই নয় রেজা শাহের আমলে সৌদি রাজা ও প্রিন্সরা নত মস্তকে রেজা শাহের হাতে চুমু দিত এমনকি নিজেরাই নেচে কুদে রেজা শাহকে বিনোদনও দিত যা বর্তমানে কোনো ইরানি নেতার সামনে তাদের এরকম অচরণ করতে দেখা যায় না অন্তত চুমু তো নয়ই।দুটোই দেশই ছিল রাজতান্ত্রিক ও মার্কিন পদলেহি। এরকম তখনই হয়ে থাকে যখন সম্পর্কের পারদের মাত্রা অনেক উপরে থাকে।
না, ইরানের বিপ্লবই যে ইরান-সৌদি দ্বন্দ্বের কারণ সেটাও নয়। মূলত কারণ হল বিপ্লবের চরিত্র। সর্বোপরি ইরানিদের চরিত্র তথা ইরানি জাতীয়তবাদ যার প্রভাবক হল পারসিয়ান সাম্রাজ্যবাদ। ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লব শুধুমাত্র ইসলামি বিপ্লব ছিল না সঙ্গে ইরানি জাতীয়তবাদী বিপ্লবও প্রকট মাত্রায় ছিল। রেজা শাহের আমলে ইরানকে বলা হত মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পুলিশ রাস্ট্র। ইরানের রেজা শাহ অন্যান্য আরব রাজতান্ত্রিকদের চেয়ে আধুনিকতায় অগ্রগামী হওয়ার পরেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দোসর ও তল্পিবাহকের ভূমিকা, ইরানি জাতীয়তবাদকে প্রধান্য না দেওয়ায় ধীরে ধীরে ইরানি জনতা ফুঁসে উঠে।রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে শাহের গোপন পুলিশ বাহিনী সাভাকের ভূমিকা.......এসব নানা কারণেই ইরানি জনতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির তথা ইমাম খোমেনির নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে বিপ্লব ঘটায়। আয়াতুল্লাহ খোমেনি ইসলাম ও ইরানি জাতীয়তাবাদের চেতনা ভালভাবেই ইরানি জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। ইরানি জাতীয়তাবাদের মাত্রা এতই প্রকট ছিল যে একক সুপার পাওয়ার আমেরিকা ও তার সহযোগী ব্রিটিশ, ফ্রান্সসহ পুরো ইউরোপ ও আরবদের মিত্র হওয়ার পরেও রেজা শাহ ইরান ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। বিপ্লবের পরই মার্কিন দুতাবাস দখল করে কোনো অঘটন ছাড়াই কুটনীতিকদের ৪৪৪ দিন আটকে রাখার সামর্থ থেকেই প্রমান হয় বিপ্লবের চরিত্র। ইরানি জাতীয়তাবাদের ঐ চরিত্রের কারণেই জল সীমা লঙ্ঘনের কারণে ব্রিটিশ সেনা ও আমেরিকার সেনাদের গ্রেফতার করে আটকে রাখতে পারে ইরান। আটক সেনাদের অপমানজনক ভিডিও প্রকাশ করে ছেড়েও দিতে পারে ইরান। ইরানি বিপ্লবের এই চরিত্রই ভীত করেছে আরব রাজতান্ত্রিকদের, সঙ্গে মার্কিনিদেরও। ইরানের বর্তমান শাসনযন্ত্র ইরানি জাতীয়তাবাদের প্রতিনিধিত্ব করে বলেই বিপ্লবের পর থেকে বর্তমান ইরানি নেতারা মার্কিন বিরোধী ও মার্কিন বিরোধী তথা সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সাথে তার সুসম্পর্ক । ঠিক একই কারণে মার্কিন, ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের দ্বারা ডজন ডজন অর্থনৈতিক ও সামরিক কঠোর অবরোধের শিকার হওয়ার পরেও স্বমহিমায় এগিয়ে গেছে ইরান। যার ফলশ্রুতিতে মার্কিন ও ই্উরোপিয়রা ইরানের সাথে পরমানু সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়েছে যা ক্ষিপ্ত করেছে সৌদি ও অন্যান্য আরব রাজতান্ত্রিকদের।
প্রথমেই বলেছি ইরান-সৌদি দ্বন্দ্ব শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্ব যেমন নয় তেমনি সভ্যতার সংঘাতও নয়।শিয়া-সুন্নীর দ্বন্দ্ব হলে নিশ্চয় ইরান সুন্নী ফিলিস্তিনের পক্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দৃড় অবস্থান গ্রহন করত না যা অন্য কোনো মুসলমান দেশই করতে পারেনি।আর সভ্যতার সংঘাত হলেই কেবল আরব-পারসিয়ান দ্বন্দ্ব বলা যেত। সৌদির নেতৃত্বে কোনো সভ্যতার সংঘাত নেই যা আছে যে কোনো মূল্যে রাজতন্ত্র রক্ষা তথা নিজেদের শাসনযন্ত্র রক্ষার তাগিদ।সৌদিরা আরব জাতীয়তাবাদের উত্তরাধিকারী নয় বরং সৌদি শাসনযন্ত্রকে বলা যায় একদল ডাকাত গোষ্ঠীর শাসন যাদের জন্মই হয়েছে ব্রিটিশ সরকার, মোহাম্মদ ইবনে ওহাব ও আব্দুল আজিজ বিন সৌদের সহবাসে। নিজ বংশের নামে সৌদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সময় লক্ষাধিক সুন্নি হত্যা করেছিল আব্দুল আজিজ বিন সৌদ। সৌদি রাজতন্ত্র টিকে আছে শুধুমাত্র মার্কিন ও ইউরোপিয়দের সমর্থনের কারণে। একই কারণে ইরানি ও অন্যান্য দেশের হাজিদের সৌদি আরবে ১৯৮৭ সালে মার্কিন ও ইসরায়েল বিরোধী স্লোগানকে নিজ রাজতন্ত্র বিরোধী স্লোগান মনে করে নির্মমভাবে কয়েকশ হাজিকে হত্যা করে তা দমন করে ও ইরানের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্কছেদ করে সৌদি আরব। আজকেই ইরানিরা সৌদি রাজতন্ত্র স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা দান করলে আগামীকালই সৌদিরা ইরানিদের শুধু হাত নয় পা-ও চাটবে।শেখ নিমর আল নিমর সৌদিদের পাঠার বলি মাত্র। উদ্দেশ্য শিয়া সম্প্রদায়কে উস্কে দিয়ে শিয়া-সুন্নীর বিভেদ বাধিয়ে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা আড়াল করে রাজতান্ত্রীক শাসনের মেয়াদ বর্ধিত করা ও পেট্রোডলার ছিটিয়ে গরীব মুসলমান দেশগুলিতে তার প্রভাব ধরে রাখা ও প্রভাব বাড়ানো।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫০