সাবেক মার্কিন পররাস্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিন্জার একবার বলেছেন-মিশর ছাড়া আরবরা যুদ্ধ করতে সক্ষম নয়। আর আমি বলতেছি সিরিয়া ছাড়া আরব ও ইরান ইসরায়েলকে থামাতে সক্ষম নয়। যদি কোন ভাবেই আসাদের পতন ঘটে ১০০% নিশ্চিত করে বলা যায় হিজবুল্লাহরও পতন বিশ্ববাসী অচিরেই দেখবে। হিজবুল্লাহর পতন হলে লড়াকু ও নির্ভিক হামাসের মুত্যৃ নিয়ে ভবিষ্যৎবানী করার কোন প্রয়োজন নেই । আর সিরিয়া না থাকলে ইরানকে হয়তো মার্কিন বিরোধী ভূমিকা পরিত্যাগ করতে হবে অথবা নিজেকে জ্বলে পুড়ে মরতে হবে । আর রাশিয়া ও চীনের মত দেশগুলিও এ থেকে বাদ যাবে না । সেই আগুন তাদেরও স্পর্শ করবে।কারণ সিরিয়া বধের পরের দৃশ্যে আছে ইরান বধ আর সেখানে সফল হলে যুক্তরাস্ট্রের নেতৃত্বাধীন হায়েনার দল চাপ বাড়াবে রাশিয়া, চীন ও ভারতের মত দেশগুলির উপর তাদের খেয়াল খুশিমত চলতে।
আর সুচতুর ইসরায়েল এই সুযোগে অবশিষ্ট ফিলিস্তিন ভূমি ও হয়তো আরবের কিছু অংশ লাইক ১৯৬৭ দখল করে নিবে কারণ ইসরায়েলকে প্রতিরোধ করার মত কোন শক্তি আর তখন নেই । মেরুদন্ডহীন ও মর্কিন পাপেট আরবরা সাময়িক লাভের জন্য যে ভূল পথে পা বাড়িয়েছে বুক চাপড়ানো ছাড়া প্রায়শ্চিত্ত করার মত তাদের আর কিছু থাকবে না !
রাশিয়া সেটা ভাল করেই বুঝেছে । লিবিয়ায় সফল হয়েছে পশ্চিমারা, এবার সিরিয়া বধের চেষ্টা চলছে, তারপরে হয়তো বধ হবে ইরান তারপর রাশিয়া ও চীনও । তাই তো রাশিয়া পশ্চিমা ও ইসরায়েলের শত বাধা উপেক্ষা করে সিরিয়ায় পাঠালো মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম এস -৩০০ !অবশ্য পরে রাশিয়া অস্বীকার করেছে তবে রাশিয়া সিরিয়াকে অন্যান্য সামরিক সহায়তা দেওয়া অব্যহত রেখেছে।সিরিয়াকে মিগ-২৯ এর উন্নত সংস্করণ দেওয়ার জন্য নতুন করে আলোচনা করতেছে ! এইসব সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য অভিনন্দন রাশিয়াকে।
সিরিয়াকে নিয়ে খেলা জমে উঠেছে । তবে এই খেলায় বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সিরিয়ায় বর্তমানে যা হচ্ছে তাকে পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না । একদিকে সিরিয়ার জঙ্গী গোষ্ঠী ওহাবী ও সালাফি ও এদের দোসর পাপেট আরব শাসকগণ, তুর্কি, যুক্তরাস্ট্রসহ গোটা ইউরোপ আর অন্যদিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার মিত্র রাশিয়া, ইরান ও চীন । কেউ কাউ কারো চেয়ে কম নয় ।যে সিরিয়া ছিল শিক্ষায় দীক্ষায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আরব দেশগুলির মধ্যে অগ্রগামী বিদেশী হায়েনা ও দেশীয় কিছু রাজাকার ও ক্ষমতালোভী মোনাফেকদের কারণে আজ সেই সিরিয়া ধ্বংসের পথে !!!
মূলত যুক্তরাস্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব, পাপেট আরব বিশ্ব ও জঙ্গীরাই এজন্য দায়ী । একটা প্রতিষ্ঠিত সরকার ও প্রতিষ্ঠিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আর যাই হোক যুদ্ধ সমর্থন করা যায় না । ওরা সিরিয়ার নাগরিক নয় -ওরা বিদেশীদের দালাল, পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরায়েলের পুতুল । পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশ্য আসাদকে উৎখাত করে সিরিয়ায় একটি ধর্মভিত্তিক জঙ্গী সরকার প্রতিস্থাপিত করা । এই ধর্মভিত্তিক জঙ্গী রাস্ট্রের বিষ থাকবে কিন্তু কোন বিষ দাঁত থাকবে না । কারণ তাদের বিষে জর্জরিত হবে সিরিয়াসহ পুরো্ আরব বিশ্ব কিন্তু বিষদাঁত না থাকার দরুণ তারা যুক্তরাস্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য কোন হুমকি হবে না, যেমন সৌদি । আর সিরিয়ায় এই দালালরা যাদের বেশির ভাগই বিদেশী নাগরিক তারা সিরিয়ার ক্ষমতায় আসলে শুধু সিরিয়ার জনগণ নয় ওরা সারা বিশ্বের জন্যই বিপদ ! আফগনিস্থানে তালেবানদের সহযোগীতা করেছিল যুক্তরাস্ট্র, পাকিস্থান, সৌদি সহ গোটা পশ্চিমা বিশ্ব আর আজকে আফগানিস্থানের করুণ পরিণতির কথা সবার জানা আছে।
তবে এটা এখন পরিষ্কার সিরিয়ার আসাদ সরকারের পতন হচ্ছে না fআর এটা আর এখন কোন ভবিষ্যৎবানী নয়।কোন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা না থাকলে আন্দোলন শুরু হওয়ার এরকম দুই বছর পরেও টিকতে পারত না এটাতে কোন সন্দেহ নেই । আমি এর আগেই এই বিষয়ে লিখেছিলাম সেখানে বলেছি সিরিয়ার গণআন্দোলনের শুরুতে যারা ভেবেছিলেন আসাদের পতন সময়ের ব্যাপার তারা ভূল হিসাব কষেছেন । সিরিয়ার রাজনৈতিক সমীকরণ এত সহজ নয় । সিরিয়ার বর্তমান শাসনযন্ত্রের সাথে জড়িত আছে পরাশক্তি ও আঞ্চলিক পরাশক্তিদের ভাগ্য । এই খেলায় যারা জয়ী হবে তারাই হবে নতুন মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রনকর্তা !
লিবিয়াতে রাশিয়া ও ইরান সেরকম বলিষ্ঠ কোন ভূমিকা নিতে পারেনি -সত্য কিন্তু এর অনেক কারণও ছিল যা গাদ্দাফির অস্থির ও ভ্রান্ত নীতিই মূলত দায়ী। কিন্তু সেই দিক দিয়ে আসাদ সরকারের কোন দুর্বলতা নেই । আর আরব দেশগুলির মধ্যে সিরিয়াই একমাত্র ইরান, রাশিয়া ও চীনের বিশ্বস্ত মিত্র । তাই ইরান ও রাশিয়া কিছুতেই হারাতে চায় না এই মিত্রকে । ইরান তো ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছে তারা যে কোন মূল্যে সিরিয়ার আসাদ সরকারের পতন ঠেকাবে। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের প্রত্যাশা রাশিয়া, চীন ও ইরান বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও যুক্তরাস্ট্রের আগ্রাসী রাশ টেনে ধরতে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক ।
জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানুষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।
সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আমার আগের দুটি আর্টিকেল -
ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে সিরিয়া ( ১ম পর্ব)
ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে সিরিয়া ( ২য় পর্ব)