আজ আমরা কোরআনে একটি বিশেষ দোয়া শিখবো যা হজরত ইবরাহিম (আঃ) বলেছিলেন।
وَإِذَا مَرِضْتُفَهُوَ يَشْفِينِ
....যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। --[সূরা আশ-শো’আরা ( মক্কায় অবতীর্ণ ),সুরা নং ২৬) আয়াত ৮০]
এখানে مَرِضْتُ বলতে বলা হয়েছে যখন আমি রোগাক্রান্ত হই। এখানে একটি খুবই সূক্ষ একটি পয়েন্ট রয়েছে ; আল্লাহর নবী/রাসুলেরা আল্লাহর প্রতি কেমন শ্রদ্ধা ও সম্মান পোষন করেন তা বোঝা যায়। এখানে ইবরাহীম (আঃ) বলেননি "যখন আল্লাহ আমাকে রোগাক্রান্ত করেন" বা আল্লাহ রোগ দেন বরং তিনি বলেছেন "যখন আমি রোকাক্রান্ত হই" এর মাধ্যমে তিনি তার রোগের জন্য আল্লাহকে দোষারোপ করছেন না বা এর দায় আল্লাহর উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন না। যদিও তিনি ভাল করে জানেন সুস্থাস্থ্য এবং রোগ সবই আল্লাহর পক্ষ হতে কিন্তু আমরা(ঈমানদাররা) আমাদের রোগ কে দেখি আল্লাহর পক্ষ হতে টেস্টপরিক্ষা হিসেবে তবুও ইবরাহিম (আঃ) এর আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান থাকার কারনে তিনি বলেননি রোগাক্রন্ত বা দুস্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া আল্লাহর দোষ বা আল্লাহ ওনাকে রোগাক্রান্ত করেছেন বরং তিনি স্বীকার করছেন রোগাক্রন্ত হন বা হয়েছেন নিজের কারনে।
আমরা যদি একটু গভীর ভাবে ভাবি তবে দেখবো যদিও রোগ, দুশ্চিন্তা , মন খারাপ , সুস্বাস্থ্য বা ভাল অবস্থা, খুশি আল্লাহর পক্ষ হতে তবুও মানুষ কিছুটা এর জন্য দায়ি যেমন ধরুন শীতকাল আসলেই আমাদের ঠান্ডা, সর্দি, বা কাসি বা জ্বরের বা অন্য কোন ফ্লুর প্রভাব বাড়ে এখন যারা সতর্ক হয়ে চলে তাদের সেই ফ্লুতে আক্রান্ত বা ঠান্ডা লাগার সম্ভবনা কম, বা হাত না ধুলে জীবানু আমাদের পেট খারাপ করে দেয় বা এইডস যা রক্ত বা শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছরায়।
জীবানু গুলো তো আল্লাহর তৈরি কিন্তু সেটা মানুষের ক্ষতির জন্য দায়ী মানুষও তাই না ? কারন সে সেটা হতে চাইলে বেচে চলতে পারতো আবার অনেকে বেচে চললেও সে রক্ষা পায় না সো কিছু মানুষদের হাতে কিন্তু পরম ক্ষমতা আল্লাহর হাতে। আর এই বিষয়টা বুঝতে বা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন নবী ইবরাহিম (আঃ) তাই তিনি স্বীকার করছেন রোগাক্রন্ত হন বা হয়েছেন নিজের কারনে। আবার মানুষের মনের রোগ বা আমরা বিভিন্ন বিষয়ে যে দুস্চিন্তা করি সেটাও মানুষের নিজের কারনে হয় আবার অনেক চিন্তা আসে মনের অজান্তে শয়তানের প্ররোচনার কারনে এবং কিছু মানষিক রোগ হয় মানুষের নিজের দুর্দশা বা বিপদের কারনে।
এবার আয়াতের দ্বিতীয় অংশ দেখি فَهُوَ يَشْفِينِ এর পর তিনি বললেন তখন তিনিই(আল্লাহ) আরোগ্য দান করেন এখানে আল্লাহকে ভাল কিছুর বা ভাল গুনের জন্য তিনি শুধু আল্লাহকেই মর্যাদা ও সকল ভাল কিছুর মালিক বলে স্বীকার করছেন। يَشْفِينِ এই শব্দটা দিয়ে বোঝাচ্ছে যে এই রোগাক্রান্ত একবারের বেশি হতে পারেন। তাই ইবরাহিম (আঃ) বলেন যখন আমি রোগাক্রান্ত হব মানে তিনি একবারের বেশি হতে পারেন বা ভবিষ্যতে হলে তিনি স্বীকার করছেন আল্লাহ ওনাকে প্রতিবার শিফা বা রোগমুক্তি দিবেন।
হজরত ইবরাহীম (আঃ) এমন ভাবে বলতে পেরেছেন কারন ওনার আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা ও অগাধ বিশ্বাসের কারনে, ওনার হৃদয়ের ধার্মিকতা ও গুনের কারনে যা ওনার চরিত্রে এবং কর্মে প্রকাশ পায় এজন্যই আল্লাহ ওনাকে নিজের খলিল বা কাছের বন্ধু রুপে গ্রহন করেন তাই ওনাকে বলা হয় ইবরাহীম খালিলুল্লাহ। আর নবী ইবরাহীম (আঃ) এর এই সকল গুলাবনী কোরআনে প্রকাশ করেছে মাত্র পাচটি শব্দ দ্বারা!
আর এখানেই কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য কারন দেখুন সেই আয়াতের আগের ও পরের আয়াত সমুহ সকল কিছুতে আল্লাহর কথা যেমন তিনি সৃস্টি করেছেন , তিনি পথ প্রর্দশক, যিনি আহার ও পানি দান করেন এর পর চাইলে বলতে পারতেন তিনি রোগ দেন এবং তিনি রোগমুক্তু করেন কিন্তু সেটা না বলে রোগের কারন মানুষকেও উল্লেখ করা হয়েছে এরপর বলা হয় তিনি মৃত্যু ও পুর্ন জীবন দান করেন।
সূরা আশ-শো’আরা ( মক্কায় অবতীর্ণ ),সুরা নং ২৬) আয়াত ৭৮-৮১
৭৮:-যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেন, ৭৯:-যিনি আমাকে আহার এবং পানীয় দান করেন, ৮০:-যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। ৮১:- যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবন দান করবেন।
দেখলেন তো কোরআন কত সুক্ষ বিষয়েও নির্ভুল ভাবে বর্ননা করা হয়েছে কারন একটাই এটা মহান আল্লাহর প্রেরিত বানী।
এবার রোগাক্রান্ত বিষয়ে কোরআনের আয়াত আশ শিফা বা রোগ মুক্তির কিছু আয়াত :
১।হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য। ---[ সূরা ইউনুস সুরা নং ১০ আয়াত নং ৫৭]
২। সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। মৈমাছির পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।--[ সুরা নাহল সুরা নং ১৬ আয়াত নং ৬৯]
৩।আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। [-- সুরা বনী ইসলাঈল/ আন নজম সুরা নং ১৭ আয়াত নং ৮]
৪।আমি যদি একে অনারব ভাষায় কোরআন করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় বিবৃত হয়নি কেন? কি আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষী! বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার। যারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কোরআন তাদের জন্যে অন্ধত্ব। তাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়। [সুরা হা-মীম সেজদাহ/আল -ফুসিলাত আয়াত নং ৪৪]
৫।যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। --[সূরা আশ-শো’আরা ( মক্কায় অবতীর্ণ ),সুরা নং ২৬) আয়াত ৮০]
এই পোস্টের মুল বিষয় নেয়া হয়েছে এখান হতে:: http://www.linguisticmiracle.com/gems/ill
পুর্বের পর্ব সমুহ:
# কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য:পর্ব ৯ কোরআনে দিন ৩৬৫ , মাস ১২ ও দিন সমুহ ৩০ বার উল্লেখ
Click This Link
# কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য:পর্ব ৮ মাক্কা বনাম বাক্কা.।
Click This Link
কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য:পর্ব ৭ সূরা আল আহযাব সুরা নং ৩৩) আয়াত ৪
Click This Link
কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য:পর্ব ৬- সুনিদ্দিস্ট শব্দ/কথা/বাণী/উক্তি সিলেকশন- সূরা ফীল ১০৫: আয়াত নং ১
Click This Link
কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য:পর্ব:৫/ সূরা ইয়াসীন ৩৬ আয়াত:৪০
Click This Link
কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য:পর্ব ৪/ সূরা আল মুদ্দাসসির আয়াত:৩
Click This Link
কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য:পর্ব ৩ সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত ২৩-২৪ ইসলামে পিতা মাতার অধিকার
Click This Link
কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য:পর্ব: ২ :- নিশ্চই আমি মানুষকে কষ্ট সহ্য কারী/পরিশ্রমি রূপে সৃষ্টি করেছি।
Click This Link
কোরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য-১: সুরা বাকারা ২ আয়াত ১৪৩
Click This Link