*****১) সূরা আল ফাতিহা ( মক্কায় অবতীর্ণ ), আয়াত সংখাঃ ৭ ****
Surat Faateha by Nouman Ali Khan [Part 1] - Beauty of word alhamduLILLAH
৬। সুরা ফাতিহা পড়া: আল কোরআনের প্রথম সুরাতে আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন প্রার্থনা করা, আবেদন করা,নিবেদন করা,অনুনয় করা। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন তাহার পথের দেখা জন্য, চলার জন্য যাতে আমরা সেই অনুযায়ি আমাদের জীবন পরিচালিত করতে পারি আল্লাহ নির্দেশ মতে সরল পথে, শান্তির পথে.
সুরা ফাতিহা কে কোরআনের চাবি হিসেবে মানা হয় আর আল ফাতিহা সেই অর্থই বোঝায় সরল পথের চাবি। আল্লাহযে অসীম দয়াময়,ক্ষমাশীল, করুণাময় তাই তিনি পরের সুরা , সুরা আল-বাকারা আয়াত ২:২ বলেন:
ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রহ্’মানির রহিম
[ শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু]
পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি অনাদি ও অনন্ত শাশ্বত/ অমর/ চিরস্থায়ী/ চিরন্তন/ অবিনশ্বর/ অনন্তকালব্যাপী/ চিরায়ত/অবিনাশী/অপরিবর্তনীয়,যিনি মূল উত্স সকল মঙ্গলের/বদান্যতার /দানশীলতার/ দয়াময়তার , যিনি পরিবেষ্টন করে/ আগলে রাখেন সমগ্র বিশ্ব, যিনি পলন কর্তা এবং তত্ত্বাবধানকারী সকল কিছুর যা হচ্ছে এবং হবে এবং যেমনটি হওয়ার কথা, ঠিক তেমনি যেমন একজন মায়ের গর্ভ পরিপোষণ করে/ভরণপোষণ করে/লালনপালন করে ভ্রূণকে জন্মদান পর্যন্ত কোন প্রতিদানের আশা ছারা নিস্বার্থ ভাবে।
বিসমিল্লাহ বলার পর প্রথমেই আমরা যে আয়াত পড়ি তা হলঃ
সূরা আল ফাতিহা আয়াত নং:১
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
আল-হামদ হল একই সাথে আল্লাহর প্রশংসা আর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা। আর হামদ হল ভালবাসা আর সম্মান এর উপর প্রতিষ্ঠিত। এটি অনেক গভীর একটি শব্দ, এর গুরুত্ব বোঝাতে রাসুল (সাঃ) বলেছেন-
الحمدلله تملأ الميزان
‘আলহামদুলিল্লাহ’ ওজন দণ্ডের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দেবে (সহিহ মুসলিম ২য় খণ্ড, হাদিস ৪৪১)
আমরা যা কিছু অনুগ্রহ আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছি তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলব; এটাও মনে রাখব যে আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারাটাও আল্লাহ্রই আরেক অনুগ্রহ, কারণ এমন বহু মানুষ আছে যারা আল্লাহর এত অনুগ্রহ অনুধাবনও করতে না পেরে তা অস্বীকার করে।
رَبِّ الْعَالَمِينَ
এই কথাটি দ্বারা বোঝায় – ‘সৃষ্টি জগতসমূহের রব’। রব তিনিই যার সমস্ত কিছুর উপর কর্তৃত্ব আছে, যিনি সমস্ত কিছুর পালনকর্তা, সমস্ত মানুষের এবং সমস্ত জিনিসের মালিক। “জগতসমূহ” বলতে বোঝায় সমস্ত সৃষ্টিকুল যার মধ্যে রয়েছে মানুষ, জ্বিন, ফেরেশতা, পশুপাখি ও আন্যান্য সবকিছু; যার প্রতিটিকে একেকটি জগত বলা যেতে পারে, যেমন ‘ফেরেশতাদের জগত’, ‘পশুজগত’, ‘মানব জগত’ বা ‘জ্বিন জগত’। এটা ছোট বড় সব ধরনের সৃষ্টির ব্যাপারেই বলা যায়; যেমন ব্যাকটেরিয়া বা কোষের ও নিজস্ব জগত আছে। বেশির ভাগ সময়ই আমরা আল্লাহর সৃষ্টির এই বিশালতা ও ব্যপকতা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হই, এবং আল্লাহর সৃষ্টির উপর তাঁর ক্ষমতার ব্যপারে অজ্ঞ থেকে যাই।
যে কোন একটি জগতের জটিলতা কিছুটা আন্দাজ করার জন্য আমরা শ্বেতকনিকার উদাহরন নিতে পারি। মাত্র একফোঁটা রক্তের মধ্যে প্রায় সাত হাজার থেকে পঁচিশ হাজার শ্বেতকনিকা থাকতে পারে।
এখন একটি কথাই বলার থাকে –الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِين
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতসমূহের রব।
আরো দেখুন কোরআনে... সুরা:আয়াত [3:189-190, 9:112, 35:27-28]
ভেবে দেখুন আল্লাহর বিশালতম সৃষ্টি থেকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সৃষ্টি সমূহের কথা। এ সমস্ত কিছুই কত চমৎকারভাবে চলছে, আমাদের কোন রকম সাহায্য বা অংশগ্রহন ছাড়াই। আমরা শুধুই বলতে পারিঃ ‘আলহামদুলিল্ললাহি রাব্বিল ‘আলামীন’ -সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সৃষ্টি জগত সমূহের রব।
নামাজঃ একটি কথোপকথন সুরা ফাতিহা সম্পর্কে হাদিসে কুদসি তে বলা হয়েছে যে আল্লাহ বলেন-
আমি সালাত (সুরা ফাতিহা) আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিয়েছি, আর, আমার বান্দা যা চাইবে তাই তাকে দেওয়া হবে।
বান্দা যখন বলেঃ আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামিন বা সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের জন্য,
আল্লাহ তখন বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল।
যখন বান্দা বলেঃ আর রহমানির রহীম বা পরম করুনাময় অতি দয়ালু,
তখন আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার গুণগান করল।
যখন বান্দা বলেঃ মালিকি ইয়াওমিদ্দীন বা প্রতিফল দিবসের মালিক,
তখন আল্লাহ বলেনঃ বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করল।
যখন বান্দা বলেঃ ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্ তা’ঈন বা আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য চাই,
তখন আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বিভক্ত এবং বান্দার জন্য তা-ই রয়েছে যা সে চাইবে।
অতঃপর যখন বান্দা বলেঃ ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম; সিরাতাল্লাযীনা আন’আমতা ‘আলাইহিম গইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ-দল্লীন বা আমাদের সরল পথ দেখাও। তাদের পথ যাদের তুমি নিয়ামত দিয়েছ, তাদের পথ নয় যারা গজবপ্রাপ্ত এবং যারা পথভ্রষ্ট,
তখন আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ এ সব তো আমার বান্দার জন্য এবং আমার বান্দা যা চাইবে তার জন্য তা-ই রয়েছে। (সহীহ মুসলিম ২য়ঃ৭৭৪)
আমাদের রবের সাথে কি চমৎকার কথোপকথনই না হয় আমাদের! ইবন আল কায়্যিম বলেন, সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হল আল্লাহ আমাদেরকে তাঁরই বান্দা বলে সম্বোধন করেছেন। আল্লাহ যখন নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)কে ইসরা এবং মিরাজে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি বলেনঃ ১৭) সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত নং:১
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।
মানুষের দাসত্ব অপমানজনক; কিন্তু আল্লাহর দাসত্ব, যার সাথে থাকে ভালবাসা, তা হল মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মানের বিষয়।
*ইবনে কাসীরের আল বিদায়া ওয়া আন নিহায়া ১ম খণ্ড থেকে
আমরা যদি এই সুরার আয়াতের ক্রমের দিকে লক্ষ্য করি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারেঃ আল্লাহ কেন প্রথম আয়াত ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সৃষ্টি জগতসমূহের রব’ এর পরপরই ‘আর রহমানির রহীম’ বা পরম করুনাময়, পরম দয়ালু এই আয়াতটি বললেন? ইবনে উথাইমীন বলেন – কারণ আল্লাহর রুবুবিয়াত বা প্রভুত্বের ভিত্তি হল মুলত করুনা বা দয়াময়তা। আমরা যখন পড়ি ‘আল্লাহ সকল সৃষ্টি জগতসমূহের রব’ তখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসে তিনি কেমন রব? আল্লাহ এই আয়াতে তারই উত্তর দিয়েছেনঃ
সূরা আল ফাতিহা আয়াত নং: ২
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ 02
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
পরম করুনাময়, পরম দয়ালু: সুরা ফাতিহা পড়েছেন এমন অনেকেই ‘আর রহমান’ ও ‘আর রহীম’ এর মধ্যে পার্থক্য জানেন না। এটা অনুবাদ করা হয় ‘পরম করুনাময় ও অতিশয় দয়ালু’। মিশরের একজন বিখ্যাত ইসলামিক আলোচক আমর খালেদ এই পার্থক্যটাকে এভাবে ব্যখ্যা করেছেনঃ
আল্লাহ যখন তাঁর সমস্ত সৃষ্টির উপর এই দুনিয়াতে দয়া বর্ষণ করেন তখন তিনি ‘আর রহমান’। আল্লাহ বলেনঃ সুরা আম্বিয়াঃ ২১:আয়াত নং: ৪২
قُلْ مَن يَكْلَؤُكُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ مِنَ الرَّحْمَنِ بَلْ هُمْ عَن ذِكْرِ رَبِّهِم مُّعْرِضُونَ 42
বলুনঃ ‘রহমান’ থেকে কে তোমাদেরকে হেফাযত করবে রাত্রে ও দিনে। বরং তারা তাদের পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।
অপরদিকে ‘আর রহীম’ বলা হয় যখন আল্লাহ তাঁর বিশেষ রহমত বিশ্বাসীদের উপর বর্ষণ করেন। যেমনঃ খাদ্য, পানি ইত্যাদি রহমতসমূহ বিশ্বাসী অবিশ্বাসী সবাইকেই করুনাময় আল্লাহ দিয়ে যাচ্ছেন; আবার রমজান মাসে বিশেষ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সুযোগ আতিশয় দয়ালু আল্লাহ শুধু বিশ্বাসীদেরই দিয়েছেন।
‘আর রাহমানির রাহীম’ এর পরপরই ‘প্রতিফল দিবসের মালিক’ কেন? যদি উল্টোটা হত তাহলে আমাদের অন্তর ভীতিতে ভরে যেত। প্রথমে আমরা পড়ি আল্লাহই আমাদের রব, তারপরে তিনিই প্রতিফল দিবসে আমাদের বিচার করবেন। আমরা নিজ নিজ আমলের ব্যপারে ওয়াকিবহাল। কাজেই আমরা যদি বিচার দিবসের ভয়াবহতার আগে আমাদের রবের করুনার কথা জানতে পারি তবে ভয়ের মাঝেও আমাদের মনে আশার সঞ্চার হয়। পরম করুনাময় দয়ালু আল্লাহই প্রতিফল দিবসের মালিক।
কাজেই কিয়ামতের দিন আল্লাহর ক্ষমা, ধৈর্য ও করুনার জন্য আমরা গভীরভাবে আশা রাখব। তারপরও আমাদের এর জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ বলেছেন- সূরা ত্বোয়া-হা:২০: আয়াত নং:৮২
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَى 82
আর যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে, আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল।
আমরা কি আল্লাহর সেই বান্দাদের মধ্যে একজন হব না যা্দের উপর আল্লাহ তাঁর পরম করুনা বর্ষণ করবেন? আমরা তা ই আশা করি, ইনশাআল্লাহ। আর আমরা আসলেই যে তা চাই তার প্রমাণস্বরূপ সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা ও আমল করব।
সেই গোপন চাবিকাঠিটি মনে আছে তো? আল্লাহর সাথ। কথা বলুন। যখনই বলবেন আর রহমানির রহীম, মনে রাখবেন আল্লাহ জবাব দিচ্ছেন – ‘আমার বান্দা আমার গুনগান করল’। এটা মনে রেখে আপনার অন্তরকে নরম করুন যে আপনি তাঁর সাথে কথা বলছেন যিনি আপানারই উপর পরম করুনাময়।
সূরা আল ফাতিহা ১: আয়াত নং:৩:
مَـالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
যিনি বিচার দিনের মালিক।
‘মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’ বা ‘প্রতিফল দিবসের মালিক’ বলার ঠিক আগেই ‘পরম করুনাময় ও অতিশয় দয়ালু’ বা ‘আর রহমানির রহীম’ আয়াতটি বলেছেন; যাতে আমরা জানতে পারি যে- যিনি প্রতিফল দিবসের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তিনি হলেন পরম করুনাময়।
আরবী ভাষায় ‘মালিক’ শব্দটির উচ্চারণের কারনে এর অর্থে সামান্য ভিন্নতা আছে। বহুল ব্যবহৃত উচ্চারণ হল – ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন’ অর্থাৎ মীম এর উপর লম্বা টান বিশিষ্ট খাড়া যবর এর উচ্চারণ। আরেকটি উচ্চারণ হল- مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ বা ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’। এই দুটি উচ্চারণই সঠিক। তবে ‘মা-লিক’ এবং ‘মালিক’ এর অর্থের মধ্যে সূক্ষ্ম তফাত রয়েছে। ‘মা-লিক’ বলতে বোঝায় কোন কিছুর অধিকারী হওয়া বা যার দখলে কোন কিছু আছে এমন। ‘মালিক’ হল কোন কিছুর উপর এমন আধিপত্য থাকা যে সেটির উপর যেমন খুশি তেমন কর্তৃত্ব করা যায়। কোন ব্যক্তি হয়তো কোনকিছুর শুধু ‘মা-লিক’ হতে পারে, ‘মালিক’ নয়; অথবা উল্টোটাও হতে পারে। যেমন, একজন প্রেসিডেন্টের একটি দেশের উপর কর্তৃত্ব বা আধিপত্য থাকে, সে দেশের সম্পদ যেমন খুশি তেমনভাবে কাজে লাগাতে পারে, কিন্তু ৫ বা ১০ বছর পর তার সেই পদ থাকে না। এক্ষেত্রে সে মালিক ছিল, কিন্তু মা-লিক নয়। কারণ যার উপর তার ক্ষমতা ছিল, সেই দেশের পদের সে চিরস্থায়ী অধিকারী নয়। আবার, এমনও আছে যে, কোন রাজা বা রানী বংশ পরম্পরায় কোন দেশের রাজত্বের চিরস্থায়ী অধিকারী হয়ে থাকে, যেমনটি আছে যুক্তরাজ্যের বেলায়। কিন্তু তাদের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা নেই যা আছে সেই দেশের প্রধান মন্ত্রীর। এক্ষেত্রে সেই রাজা বা রানীকে সেই দেশের মা-লিক বলা যায়, কিন্তু সত্যিকার অর্থে মালিক নয়।
আল্লাহ সুবহানা ওয়াতা’য়ালা মা-লিক এবং মালিক দুটোই। তিনি কিয়ামত দিবসের এবং সেদিন যা ঘটবে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী এবং সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
প্রতিফল দিবস: যখন আমরা যখন বলিঃ مَالِكِ يَوْمِ الدِّين বা ‘প্রতিফল দিবসের মালিক’, আমরা এই শব্দগুলোর ক্ষমতা, ব্যপকতা ও গুরুত্ব খুব কম ই অনুধাবন করতে পারি। প্রতিফল দিবস হল চূড়ান্ত হিশাব-নিকাশের দিন, যেদিন আমরা সবাই আল্লাহর কাছে ফিরে যাবো, আমাদের জীবদ্দশায় যা কিছু করেছি তার বিচার হওয়ার জন্য। আল্লাহ কেন তাঁর এই দিনের আধিপত্যের উপর বিশেষভাবে জোর দিয়ে উল্লেখ করছেন, যখন তিনি একবার বলেই দিয়েছেন যে তিনিই সমস্ত জগত সমূহের রব, যাতে বিচার দিবসও অন্তর্ভুক্ত। আমাদের শেষ পরিণতি স্মরন করিয়ে দেওয়ার জন্য, যে আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাবো আমাদের আমলনামা নিয়ে, এবং এটা দেখানোর জন্য যে এই দুনিয়াতে মানুষের যত প্রভাব, প্রতিপত্তি, আধিপত্ত্য ও ক্ষমতা আছে তা সব বিলীন হয়ে যাবে; রয়ে যাবে শুধুই তাঁর সর্বময় অসীম ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব। সেই দিন আমাদের একটি শব্দও উচ্চারণ করার শক্তি থাকবে না যদি না মহান আল্লাহ আমাদেরকে অনুমতি দেন, যেমন আল্লাহ বলেন-
يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا لَّا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا
সূরা আন-নাবা ৭৮), আয়াত নং: ৩৮ :যেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতিত কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্যকথা বলবে।
তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কারও জন্য সুপারিশও করতে পারবে না: সুরা বাকারা ২: আয়াত:২৫৫
اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ 255
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
আমাদের সবসময় এটা মনে রাখা দরকার যে, আমরা যতটা ভাবি, বিচার দিবস আসলে তার চেয়ে অনেক নিকটবর্তী।
সূরা আল ফাতিহা ১: আয়াত নং: ৪:
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
আল্লাহর রহমত ও সর্বময় পরম ক্ষমতার বিষয়ে জানার পর, এবং তারই কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেকথা উপলব্ধি করার পর, এই আয়াত টি আমাদের জানিয়ে দেয় আমাদের এই পৃথিবীতে কি করণীও, আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি- শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা আর এই কাজেও তাঁরই সাহায্য প্রার্থনা করা।
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি – বিনম্রতা
আন্তরিকতা ও সততা হল সেই উপকরণ যার কারনে আমরা নামাজ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হতে পারি; আর আমরা সত্যিকার অর্থে আন্তরিকও হতে পারব না যদি আল্লাহর কাছে সাহায্য না চাই।
একারনে আল্লাহ আমাদেরকে ‘শুধু তোমারই ইবাদত করি’ বলার পরপরই শিখিয়েছেন ‘শুধুমাত্র তোমার সাহায্য প্রার্থনা করি’। হাদীসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন-
كلكم ضال الا من هديته فاستهدوني اهدكم
“তোমাদের সকলের জন্য রয়েছে ধ্বংস তাদের ছাড়া যাদের আমি সাহায্য করি, অতএব আমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং আমিই তোমাদের সাহায্য করব”।
একারনে পরবর্তী আয়াতেই আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন-
সূরা আল ফাতিহা ১: আয়াত নং:৫
اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ
আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,
সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ কেমন নিখুঁত ভাবে তার কালাম গুলো সাজিয়েছেন!
ইবনে আল কাইয়্যিম বলেছেন তিনি ইবনে তাইয়মিয়্যাকে বলতে শুনেছেন, ‘ইয়্যাকা না’বুদু’ এবং ‘ইয়্যাকা নাসতা’ঈন’ বা ‘শুধুমাত্র তোমারই বন্দেগী করি’ ও ‘শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি’ কথা দুটি মানুষের অহংকার ও দম্ভকে দূর করে দেয়। আমরা যখন বলি ‘আমরা তোমারই সাহায্য চাই’ তখন আমরা স্বীকার করে নেই যে আমাদের সেই ক্ষমতাটি নেই যে আমরা নিজেরাই নিজেদের সাহায্য করতে পারব এবং আমাদের সকল বিষয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন। আমরা প্রায়ই এমন কথা শুনি বা বলি যে ‘কেউ এত অহঙ্কারী যে কারও কাছে হাত পাতে না’, এমন লোক নিজেকে অন্যদের চেয়ে উঁচু মনে করে বা নিজেই নিজেকে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করে। অপরদিকে এই আয়াতের মাধ্যমে আমরা স্বীকার করছি যে আমরা অক্ষম, তাই সেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যিনি কারও মুখাপেক্ষী নন।
আল্লাহ প্রতিটি আয়াতের সাথে সাথে কিভাবে জবাব দেন। এই সুরা আল্লাহর রুবুবিয়াতের (আল্লাহই সমস্ত সৃষ্টি জগতসমূহের রব) ঘোষণা দেয়, সাথে সাথে এটাও বর্ণনা করে যে আল্লাহর রুবুবিয়াতে রয়েছে তাঁর রহমত ও করুনার প্রাধান্য, যে কারনে সৃষ্টি জগতসমূহের রবের প্রশংসার পর পরই আমরা বলি –‘আর রহমানির রহীম’। কিয়ামত দিবসের মালিকত্বের বর্ণনার আগেই আমরা জানতে পারি যে তাঁর করুনা তাঁর ক্রোধের চেয়ে বেশী। অতঃপর আমরা জানতে পারি কেন আমাদেরকে এই করুনা করা হয় – যাতে আমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করি। এবং তাঁর ইবাদত করতেও আমরা তাঁর কাছেই সাহায্য চাই। একারনে আমরা বলি – إِيّاكَ نَعبُدُ وَإِيّاكَ نَستَعينُ -“শুধুমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি”
কাজেই আমরা যদি সাহায্য পেতে চাই, আমাদেরকে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
পথপ্রদর্শন: এখন আমরা প্রকৃতপক্ষে দোয়া শুরু করছি।
সূরা আল ফাতিহা ১: আয়াত নং:৬-৭
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
ইবনে তাইমিয়্যা বলেন, সুরা ফাতিহার এই দোয়াটিই হল সর্বশ্রেষ্ঠ, বিজ্ঞতম, এবং সবচেয়ে উপকারী দোয়া। আল্লাহ যদি আমাদের সরলতম পথ প্রদর্শন করেন, তিনি আমাদের তাঁর ইবাদত করতেও সাহায্য করেন।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে, ‘আমি যদি সঠিক পথেই থাকি তবে আবার কেন পথপ্রদর্শনের জন্য প্রার্থনা করব? আমি নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, কুরআন তেলাওয়াত করি- আল্লাহ তো নিশ্চয়ই আমাকে হেদায়াত করেছেনই।’
প্রথমত, হেদায়াতের সর্বোচ্চ পর্যায় হল মহানবী (সাঃ) এর সমান পর্যায়ে পৌছতে পারা, অথচ আমরা কেউই এমনকি সাহাবীদের পর্যায় পর্যন্ত পৌছতে সক্ষম হয়েছি বলেও দাবী করতে পারি না। একারনেই আমরা প্রার্থনা করি যাতে আল্লাহ আমাদের আরও বেশী করে হেদায়াত দান করেন।
দ্বিতীয়ত, আল্লাহর উপর নির্ভরতা ও তাঁর সামনে আমাদের বিনয়াবনত অবস্থার উপর হেদায়াত প্রাপ্তি নির্ভর করে, এবং আল্লাহর কাছে আরও হেয়াদায়াতের জন্য প্রার্থনাও সেটাই সাক্ষী দেয়। আমরা যদি আল্লাহর কাছে প্রার্থনাই না করি, তবে আমরা কি করে দাবী করতে পারি যে আমরা হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছি?
সীরাতুল মুসতাকিমঃ সরলতম পথ:“আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করেন যে রাসুল (সাঃ) কি কিয়ামত দিবসে উনার হয়ে সুপারিশ করবেন কিনা। উত্তরে নবীজী (সাঃ) বললেন, ‘করব’। তখন আনাস (রাঃ) আবার প্রশ্ন করলেন, আমি আপনাকে ঐ দিন কোথায় খুঁজে পাব? উত্তরে রাসুল (সাঃ) বললেন, ‘আমাকে যখন তোমার প্রয়োজন হবে, আমাকে পুলসীরাতের কাছে খুঁজবে’। আনাস (রাঃ) আবার জিজ্ঞেস করলেন, আর যদি সেখানে খুঁজে না পাই? মহানবী (সাঃ) বললেন- ‘তখন আমাকে মীযানের (দাঁড়িপাল্লার) কাছে খুঁজবে’। আনাস (রাঃ) আবার প্রশ্ন করলেন, মীযানের কাছেও যদি না পাই তবে আপনাকে কোথায় খুঁজে পাব? মহানবী (সাঃ) জবাবে বললেন, ‘তখন আমাকে হাউয এর কাছে খুঁজবে। আমি তখন এই তিনটি জায়গা ছাড়া কোথাও যাবো না।” (তিরমিযীঃ ২৪৪২; আহমাদঃ ১২৮২৫)
ইবনে আল কাইয়্যিম বলেন- আল্লাহ এই দুনিয়াতে সরল পথ অবলম্বন করতে বলেছেন। যে এই দুনিয়াতে সরল পথে চলার জন্য হেদায়াত প্রাপ্ত হবে, পরবর্তী জীবনে সেই পুলসীরাত ও তার জন্য সহজ হবে,
ইনশাআল্লাহ। আমরা এই জীবনে সরল পথের উপর কতটুকু দৃঢ় থাকব তার উপর আমাদের আখেরাতের জীবনে সেই সীরাতে আমাদের অবস্থা নির্ভর করবে।
আমরা কি তাহলে এখন বুঝতে পারছি, যে দোয়াটি আমরা প্রতিদিন করছি তার গুরুত্ব কতখানি?
আমরা যখন এই আয়াতটি পড়ব, صراط الذين أنعمت عليهم “তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন” আমাদের অন্তরকে নরম করব, কারণ আমরা সেই নবী (আঃ) গণ, রাসুল (সাঃ), সাহাবাগণ (রাঃ), সত্যের পথ অনুসরণকারীগণের কথা স্মরণ করছি যাদের উপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর বিশেষ রহমত নাযিল করেছেন। এই আয়াতটি পড়ে আমরা স্বস্তি পাই কারণ আমরা জানতে পারি, যারা এই সরল পথ অবলম্বন করে চলেন আল্লাহ তাদের সাথে থাকেন; কাজেই যখন অন্যেরা আপনাকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, আপনার আকীদার ব্যপারে লজ্জিত হবেন না। অথবা আপনার মদ্যপান না করা, দাড়ি-টুপি পড়া বা হিজাব পড়া নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, কুঁকড়ে যাবেন না।
কুরআনের অনেক সূরাতে আমরা নবীগনের এমন কাহিনী পাই, যা আমাদের রাসুল (সাঃ) কে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নাযিল করা হয় যখন তিনি কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতেন। এই আয়াতটিও আমাদের জন্য ঠিক তেমনই হওয়া উচিত- আমাদের মনে রাখা উচিত আমরা যতক্ষণ সরল পথ অনুসরণ করব, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।
এই আয়াতের বাকী অংশে আমরা পড়িঃ
غير المغضوب عليهم ولا الضالين
“তাদের পথ নয় যাদের উপর আপনার গজব বর্ষিত হয়েছে এবং তাদেরও নয় যারা পথভ্রষ্ট।”
তারা কারা যাদের উপর আল্লাহর গজব বর্ষিত হয়েছে? ইবনে কাসীর বর্ণনা করেন এরা তারা যারা সব কিছু জেনেও তা অনুসরণ করে না। আর পথভ্রষ্ট তারা যারা জ্ঞান রাখে না। আমাদের এই দুই পথ সম্পর্কেই সাবধান থাকতে হবে যাতে আমরা এর কোন একটিও অনুসরন না করি। কাজেই সরল পথে থাকতে হলে আমাদের জ্ঞান এবং আমল দুটোরই সমন্বয় করতে হবে।
আমীন: যখন আমরা সুরা ফাতিহার শেষে “আমীন” (হে আল্লাহ, কবুল কর) বলি, তখন তা আমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ থেকে বলা উচিত। কারণ, এই সুরার সমস্ত অর্থ অনুধাবন করার পর, আমাদের অন্তরে গভীর অনুরক্তি ও সত্যিকারের আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত যেন আল্লাহ আমাদের এই প্রার্থনা কবুল করে নেন। আবার, আমাদের মন যদি আমাদের প্রার্থনার মধ্যে না থাকে, তাহলে সে দোয়ার জবাব আল্লাহ দিবেন না। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-
“আল্লাহর কাছে এই নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে প্রার্থনা করবে যে আল্লাহ জবাব দিবেন, জেনে রেখ অবহেলার আর অমনোযোগী হৃদয়ের প্রার্থনার জবাব আল্লাহ দেন না।” (তিরমিযী)
ইবন আল কাইয়্যিম বলেছেন, যখন কেউ সুরা ফাতিহা পড়ে, সে যেন প্রতিটা আয়াত থেমে থেমে পড়ে, কারণ আল্লাহ প্রতিটি আয়াতের জবাব দিচ্ছেন। উম্মে সালামা (রাঃ) এর বর্ণনায় রাসুল (সাঃ) এমন করে থেমে থেমে পড়তেন।
Nouman Ali Khan - 001 al-Fatiha (Points to ponder) - Tafseer
পুর্বের পোস্ট:অর্থপূর্ন ও বরকতময় নামাজ পর্ব ১-৩ পাবেন এখানে
Click This Link
বিদ্র: আমি যথা সাধ্য চেস্টা করেছি কোরআন বা সহীহ হাদিসের রেফারেন্স + ছবি ও ভিডিও সহ দিতে . যদি ভুল ভ্রন্তি হয় ক্ষমার চোখে দেখবেন এবং আমাকে অবশ্যই জানাবেন যাতে শুধরে নিতে পারি। সাথে থাকুন ইনশাআল্লাহ পযায়ক্রমে বাকি গুলোও পোস্ট করব
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১২ সকাল ৮:১৯