আমরা অনেকেই নামাজ পড়ি মসজিদে আসি আর যাই বা বাসায় পড়ি , কেন নামাজ পড়ি নিজেও জানিনা অনেকে এটা ভাবে পরতে হবে তাই পরি, নামাজে আসলে আমাদের কি শিক্ষা বা সুফল দেয় তা আমরা পাচ্ছিনা না জেনে পড়ার কারনে তাই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেস্টা নিজের জন্য শুরু করেছি আর সাথে সবাই কে জানানোর প্রচেস্টা আল্লাহ আমাদের সহায় হোন.
অর্থপূর্ন ও বরকতময় নামাজ পর্ব ৩/ নামাজ শুরু করার সময়ের দো‘আ বা তাস্বীহ, তাআউয (আউযুবিল্লাহ) তাসমিয়াহ্ (বিসমিল্লাহ্) বলার অর্থ
৩। দো‘আ বা তাস্বীহ পড়া;
যেমন : (ক)
«سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكْ»
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাস্’মুকা ওয়া তায়া’লা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।.
অর্থ : হে আল্লাহ ! তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি তোমরা প্রশংসার সাথে। তোমার নাম পবিত্র এবং বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি সুউচ্চে এবং তুমি ছাড়া ইবাদতের সত্যিকার কোন উপাস্য নেই।
অথবা (খ)
«اَللهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْن خَطَايَايَ، كَمَا بَاعَدْتَ الْمُشْرِقِ وَ الْمَغْرِبِ، اللهُمَّ نَفنِىْ مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقِّىْ اَلثَّوْبِ الأبْيَضُ مِنَ الدّنَسِ، اللهُمَّ اَغسِلْنِيْ مِنْ خَطَايَايَ بَالثَّلجِ وَالْمَاءِ وَالْبَرَد»
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার এবং আমার পাপরাশির মধ্যে এমন দুরত্ব সৃষ্টি করে দাও যেমন তুমি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি করেছো। হে আল্লাহ ! তুমি আমাকে আমার পাপসমূহ থেকে এমন ভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে দাও, যেভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। হে আল্লাহ্, তুমি আমাকে আমার পাপসমূহ থেকে পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও।”
এগুলো ব্যতীত হাদীছে বর্নিত যে কোন প্রারম্ভিক দু‘আ পড়লেও চলবে।
**************************************************
৪। তাউজ বলা: তাআউয (আউযুবিল্লাহ):
আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বোনির রাজীম।
অর্থ: আল্লাহ তা’য়ালার আশ্রয় প্রার্থনা করিতেছি বিতারিত শয়তান হইতে
( সকল প্রকার খারাপ কাজ /অশুভ শক্তি, ও নিজের খারাপ প্রবত্তি/ ইচ্ছা থেকে )
[শয়তান =অহংবোধ/ অহংকার=স্বার্থপর = নিজের কামনা/বাসনা=খাপ-ছাড়া/ নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হীন= এমন কামনা/বাসনা যা মানুষের সাধারন চিন্তা ভাবনার বিরেদ্ধে বিদ্রোহ করে= যা মানুষকে তার সঠিক যুক্তিপুর্ন চিন্তা করতে বাধা দেয়=আবেগ (অনুভূতি ) যা নৈতিক মূল্যবোধেকে দাবিয়ে রাখে/বশীভূত করে রাখে/পরাভূত করে= প্রকৃত ভাবে ( অন্তর্জাত/ সারভূত/ আসল /সহজাত/স্বকীয়/ অন্তর্মুখ/অন্তরভুক্ত/ খাঁটি/ অপরিহার্য/ নিহিত) বা বাহ্যিক ভাবে মন্দ/খারাপ প্ররোচনাকারি=নেতিবাচক চাপ (বন্ধু/ নিকট জন/ বা আশেপাশের মানুষ ও সমাজ হতে)=হিংস্র আবেগ=আত্মগৌরব= এমন কিছু যা মুনুষকে তার সদগুণ এবং অগ্রগতি থেকে দুরে সরিয়ে রাখে= মিথ্যা গর্ব=গুজব রটনাকারী= অগ্নিসদৃশ মেজাজ/ বদ মেজাজ=পর নিন্দুক/ নিন্দা কারি= যে পৃথিবীতে দুর্নীতি ছড়ায় ও নিয়মশৃঙ্খলা নস্ট করে= যে অন্যদের কে ঐশ্বরিক নির্দেশ আমান্য করতে প্রভাবিত করে=খারাপ সাহচর্য্য= এমন কেউ যে মানুষকে তার সৌন্দর্য ও মাধুর্য দিয়ে বিমোহিত করে ঐশ্বরিক নির্দেশ আমান্য করতে= খারাপ কাজে আকর্ষণ করা/ উতসাহ দেয়া= এমন একজন যে ঐশ্বরিক স্বভাবগত নহে /আল্লাহর আদেশ নহে এমন কাজ করতে মানুষকে প্রভাবিত করে= যে নিজেকে আল্লাহর অনুগ্রহ হতে দুরে সরিয়ে নেয়= আল্লাহর প্রেরিত আদেশ মানে না এমন কেহ]
আরো দেখুন কোরআনে... সুরা:আয়াত :- 2:14, 4:38, 4:60, 4:83, 4:119, 5:90-91, 6:43, 6:143, 7:200, 17:26-27, 22:3-4, 25:28-29, 31:21, 67:5
হিব্রুতে শয়তান অর্থ=প্রতিপক্ষ/প্রতিদ্বন্দ্বী/শত্রু /বিপক্ষ/ দুশমন/ বিরোধী /প্রতিদ্বন্দ্বী = যে একে অন্যের বিরুদ্ধে(মানুষের বিরুদ্ধে মানুষ কে বা আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষ কে) চক্রান্ত করে ষড়যন্ত্র করে কুমন্ত্রণা করেকৌশলে দুরে সরিয়ে রাখে ]
আপনি কি জানেন, আপনি যখন নামাজে দাঁড়ান, শয়তান তখন প্রচণ্ড রকম হিংসা বোধ করতে থাকে। একারনেই সে নামাজে দাঁড়ানো ব্যক্তির মনকে ভিন্নমুখী করে তাকে নামাজের এই সুউচ্চ সম্মানিত অবস্থান থেকে সরিয়ে ফেলার সমস্ত রকম চেষ্টা চালায়। এবং দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, বেশির ভাগ সময়ই আমরা শয়তানের এই প্ররোচনায় পড়ে যাই। শয়তানের সাদৃশ্য কিছুটা মাছির মত, যতবার দূরে তাড়ান, ঘুরে ফিরে আবার চলে আসে।
A HUGE trick of Shaytan - Nouman Ali Khan
এটা একটা গল্পে সুন্দর করে বোঝান হয়েছে- এক বৃদ্ধ লোক এক যুবককে প্রশ্ন করল তুমি শয়তান কে দেখলে কি করবে? যুবকটি উত্তর দিল - মারব। বৃদ্ধের প্রশ্ন - আবার আসলে? আবার মারব। আবার একই প্রশ্নে যুবকটি একই উত্তর দিল। তখন বৃদ্ধ মাথা নেড়ে বলল- রাস্তায় তোমার সামনে যদি একটি হিংস্র কুকুর আসে তুমি কতবার ওকে মেরে তাড়াবে? তারচেয়ে এটাই কি বুদ্ধিমানের কাজ না যে তুমি এর মালিককে ডেকে কুকুরটাকে পথ থেকে সরাতে বল।
একারনেই আমরা নামাজের শুরুতে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাই। ইবনে আল কাইয়িম বলেছেন- আমরা যখন নামায পড়ি আল্লাহ্ তাঁর আর আমাদের মাঝের পর্দা উঠিয়ে দেওয়ার আদেশ করেন, আর আমরা সরাসরি আল্লাহ্র মুখমুখি হয়ে যাই, আবার যখন অন্যদিকে মন ঘুরিয়ে নেই, তখন আবার পর্দা নেমে আসে। শয়তান তখনই আমাদের মনে একটার পর একটা চিন্তা দিয়ে ব্যস্ত করে ফেলে, কিন্তু যখন পর্দা সরানো থাকে তখন সে এ কাজ করার সাহস পায় না।
কাজেই, আমরা আল্লাহ্র কাছে শয়তানের হাত থেকে আশ্রয় চাইব, অর্থ বুঝে নামায পড়ব এবং নিজেদেরকে নামাজের মাধ্যমে শয়তানের কাছ থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করব। ***************************************************
৫। তাসমিয়া বলা: তাসমিয়াহ্ (বিসমিল্লাহ্):
বিসমিল্লাহির রহ্’মানির রহিম
[ শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু]
পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি অনাদি ও অনন্ত শাশ্বত/ অমর/ চিরস্থায়ী/ চিরন্তন/ অবিনশ্বর/ অনন্তকালব্যাপী/ চিরায়ত/অবিনাশী/অপরিবর্তনীয়,যিনি মূল উত্স সকল মঙ্গলের/বদান্যতার /দানশীলতার/ দয়াময়তার , যিনি পরিবেষ্টন করে/ আগলে রাখেন সমগ্র বিশ্ব, যিনি পলন কর্তা এবং তত্ত্বাবধানকারী সকল কিছুর যা হচ্ছে এবং হবে এবং যেমনটি হওয়ার কথা, ঠিক তেমনি যেমন একজন মায়ের গর্ভ পরিপোষণ করে/ভরণপোষণ করে/লালনপালন করে ভ্রূণকে জন্মদান পর্যন্ত কোন প্রতিদানের আশা ছারা নিস্বার্থ ভাবে।
আমরা এখন নামাজে একটি সুন্দর জায়গায় এসে পৌঁছেছি, আমরা সবচেয়ে সুন্দর নামটি উচ্চারণ করি - বিসমিল্লাহ। এই রাজসিক নামের উচ্চারণ আমাদের অন্তরে শান্তি আনে, সমস্ত জায়গা ও সব সময় নিরাপত্তার অনুভূতি দেয় - এই নামের স্মরণ ছাড়া আত্মা কি শান্তি পায়? কোন মুসলিমের অন্তরে অবস্থিত তাঁর এই নামটিই সবচেয়ে অসাধারণ বিস্ময়কর ব্যাপার, কারন এমন কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিস নেই যা এই নামের বরকতে বৃদ্ধি না পায়, আবার এমন কোন বড় জিনিষ নেই যা এই নামের বরকতে অনুগ্রহ না পায়। এই নামটি এতই চমকপ্রদ, এটি যেকোনো জায়গার, যে কোন সময়ের ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা দেয়।
"Bismillah" - The True Meaning of This Beautiful Phrase
কাজেই, যখন নামাজে আমরা বলি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”, এটি আল্লাহর সাথে আমাদের কথোপকথনের শুরু হওয়া নির্দেশ করে। আপনি যখন কুরআনের প্রথম সুরা ‘সুরা ফাতিহা’ তেলাওয়াত করা শুরু করেন, আল্লাহ তায়ালা তখন আপনার তেলাওাতের সাথে সাথে জবাব দেন। ইবনে জারীর বলেন, তিনি এটা ভেবে আশ্চর্য হন যারা কোন কিছু না বুঝেই কুরআন পড়ে যায় তারা কি করে এর মাধুর্য আস্বাদন করবে? আমাদের জানা মতে সুরা ফাতিহাই হচ্ছে একমাত্র সুরা যার তেলাওয়াতের সাথে সাথে আল্লাহ জবাব দেন। এর আর কি কি রহস্য আছে?
The Quran - The Book of Timeless Guidance - Nouman Ali Khan
বিদ্র: আমি যথা সাধ্য চেস্টা করেছি কোরআন বা সহীহ হাদিসের রেফারেন্স + ছবি ও ভিডিও সহ দিতে . যদি ভুল ভ্রন্তি হয় ক্ষমার চোখে দেখবেন এবং আমাকে অবশ্যই জানাবেন যাতে শুধরে নিতে পারি।
সাথে থাকুন ইনশাআল্লাহ পযায়ক্রমে বাকি গুলোও পোস্ট করব
পুর্বের পোস্ট:অর্থপূর্ন ও বরকতময় নামাজ পর্ব ১ / ওযু ও নামাজের সাধারন বিষয় সমুহ
Click This Link
অর্থপূর্ন ও বরকতময় নামাজ পর্ব ২/ নামাজ পড়ার পদ্ধতি:নামাজ শুরু করা
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১২ সকাল ৮:২১