বিসমিল্লাহির রহ্’মানির রহিম
আমরা অনেকেই নামাজ পড়ি মসজিদে আসি আর যাই বা বাসায় পড়ি , কেন নামাজ পরি নিজেও জানিনা অনেকে এটা ভাবে পরতে হবে তাই পরি, নামাজে আসলে আমাদের কি শিক্ষা বা সুফল দেয় তা আমরা পাচ্ছিনা না জেনে পড়ার কারনে তাই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেস্টা নিজের জন্য শুরু করেছি আর সাথে সবাই কে জানানোর প্রচেস্টা আল্লাহ আমাদের সহায় হোন.
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর। সূরা আল আনকাবুত আয়াত (২৯:৪৫)
Bayyinah Institute presents, Meaningful Prayer: Vocabulary of Salah by Shaykh AbdulNasir Jangda
***************************************************
নামাজের শর্তাবলী, যথা: (১) ইসলাম কবুল কারী/মুসলিম/ঈমান দার হওয়া (২) বুদ্ধিমত্তা (৩) ভাল-মন্দ পার্থক্যের জ্ঞান (৪) নাপাকি দুর করা (৫) অজু করা। (৬) সতরে আওরাত অর্থাৎ লজ্জাস্থানসহ শরীরের নির্ধারিত অংশ আবৃত রাখা (৭) নামাজের সময় উপস্থিত হওয়া /নামাজের ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা (৮) কেবলামুখী হওয়া এবং (৯) নিয়ত করা।
নামাজ বাতেল করে এমন বিষয় আটটি; যথা:১) জেনে-শুনে ইচ্ছাকৃত কথা বলা। না জানার কারণে বা ভূলে কথা বললে তাতে নামাজ বাতেল হয় না, (২) হাসি, (৩) খাওয়া, (৪) পান করা, ৫) লজ্জাস্থানসহ নামাজে অবশ্যই আবৃত রাখতে হয় শরীরের এমন অংশ উন্মুক্ত হওয়া, (৬) কিবলার দিক হতে অন্যদিকে বেশী ফিরে যাওয়া,/যদি কিবলার দিক না জানা থাকে তবে যে কোন দিকে ফিরে নামাজ আদায় করা যায় কারন নিয়তে আপনি বলছেন কিবলা মুখি হয়ে নামাজ আদায় করছি আবে কিবলার দিক জানার চেস্টা করে কিবলা মুখি হওয়া নামাজের আবশ্যিক শর্ত। (৭) নামাজের মধ্যে পর পর অহেতুক কর্ম বেশী করা, (৮) অজু নষ্ট হওয়া।
অজুর শর্ত ; যথা:১- ইসলাম কবুল কারী/মুসলিম/ঈমান দার হওয়া , ২-বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া, ৩-ভাল-মন্দ পার্থক্যের জ্ঞান, ৪- নিয়ত, ৫- অজু ওয়াজিব করে এমন কাজ বন্ধ করা, ৬-অজুর পূর্বে ইস্তেনজা অথবা ইস্তেজমার করা, ৭-পানির পবিত্রতা ও উহা ব্যবহারের বৈধতা, ৮-শরীরের চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছার প্রতিবন্ধকতা দূর করা
অজুর ফরজসমূহ; ১. মুখ মন্ডল ধৌঁত করা; নাকে পানি দিয়ে ঝাড়া ও কুলি করা এর অন্তর্ভূক্ত ২.কনুই পযর্ন্ত উভয় হাত ধৌত কর, ৩. সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা, কান ও উহার অন্তর্ভুক্ত,
উল্লেখ থাকে যে মুখমণ্ডল, উভয় হাত ও পা তিনবার করে ধৌত করা মুস্তাহাব। এইভাবে কুল্লি করা ও নামে পানি দিয়ে ঝাড়া তিনবার মুস্তাহাব। ফরজ মাত্র একবারই। তবে, মাথামাসেহ একাধিকবার করা মুস্তাহাব নয়। এই ব্যাপারে কতিপয় ছহীহ হাদীস বর্ণিত আছে।
অজু ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ: আর তা হলো মোট ছয়টিা; যথা:১. মুত্রনালী ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া, ২. দেহ থেকে স্পষ্ট অপবিত্র কোন পদার্থ নির্গত হওয়া,৩. নিদ্রা বা অন্য কোন কারণে জ্ঞান হারা হওয়া,৪. কোন আবরণ ব্যতীত থেকে হাত দ্বারা লজ্জাস্থান স্পর্শ করা,৫. মাংস ভক্ষণ করা এবং৬. ইসলাম পরিত্যাগ করা। আল্লাহ পাক আমাদের ও অন্যান্য সব মুসলমানদের এথেকে পানাহ দান করুন।
দোয়া ব্যতীত ওযু ?? : প্রকৃতপক্ষে রসূল (স.) থেকে এ রকম দোয়ার কোনো বর্ণনাই পাওয়া যায় না। তবে একটি দোয়া তিনি পড়তেন। কারো মতে এই দোয়া তিনি ওযু করার সময় পড়তেন কারো মতে ওযু করার পরে পড়তেন। দোয়াটি হচ্ছে, 'আল্লাহুম্মাগফেরলি যামবি ওয়া ওয়াসে লী ফী দারী ওয়া বারেক লী ফী রেযকী'। অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমার পাপ মাফ করে দাও, আমার ঘরে প্রশস্ততা দাও, আমার রেযেকে বরকত দাও। (নাসাঈ)
ওযু শেষ করার পর এই দোয়া পাঠ করতে হবে, 'আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মোহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু'। অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তাঁর কোনো শরিক নেই। মোহাম্মদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।
এইসব দোয়া পাঠ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে স্রেফ সুন্নত। এমন কোন দোয়া নেই যা পাঠ করা আবশ্যক। ওযুর মধ্যে যেসব দোয়া সাধারণত পাঠ করা হয় এসব দোয়া পাঠের প্রচলন শুরু হয়েছিলো রসূল (স.)-এর ওফাতের পর। ওযু একটি এবাদাত। এই এবাদাতে রসূল (স.) থেকে প্রমাণিত হয়নি এ রকম কোনো আমল সংযুক্ত করা সুস্পষ্ট বেদয়াত। মহানবী (স.)-এর হাদীসে রয়েছে, নতুন নতুন আবিস্কার করা আমল সম্পর্কে তোমরা সাবধান থাকবে। কারণ নতুন আবিস্কার করা প্রতিটি আমলই হচ্ছে বেদয়াত, আর বেদয়াতই হচ্ছে গোমরাহী। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
প্রতিটি এবাদাতের ক্ষেত্রে দু'টি কথা মনে রাখা আবশ্যক। সেই এবাদাত কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে এ দু'টি হচ্ছে শর্ত।
১. সেই এবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্যেই হতে হবে। সেই এবাদাতে কাউকে শরিক করা যাবে না।
২. সেই নিয়মেই এবাদাত করতে হবে যে নিয়ম শরীয়ত আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছে। সেই এবাদাতে নিজের পক্ষ থেকে কম বা বেশী করা এবাদাতের প্রাণশক্তির পরিপন্থী।
নামাজের রুকুন চৌদ্দটি; যথা১) সমর্থ হলে দণ্ডায়মান হওয়া, (২) ইহরামের তাকবীর, (৩) সূরা ফাতেহা পড়া, (৪) রুকুতে যাওয়া, (৫) রুকু হতে উঠে সোজা দণ্ডায়মান হওয়া, (৬) সিজদা করা, (৭) সিজদা থেকে উঠা, (৮) উভয় সিজদার মধ্যে বসা, (৯) নামাজের সকল কর্ম সম্পাদনে স্হিরতা অবলম্বন করা, (১০) সকল রুকুন ধারাবাহিকভাবে তরতীবের সাথে সম্পাদন করা, (১১) শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া, (১২) তাশাহ্হুদ পড়া কালে বসা, (১৩) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দরুদ পড়া (১৪) ডানে ওবামে দুই সালাম প্রদান।
নামাজের ওয়াজিবসমূহ; এগুলোর সংখ্যা আট। যথা: (১) ইহ্রামের তাকবীর ব্যতীত অন্যান্য তাকবীরগুলো (২) ইমাম এবং একা নামাজীর পক্ষে سَمِعَ للهُ لِمَنْ حَمِدَه বলা। (৩) সকলের পক্ষে رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْد বলা (৪) রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ বলা (৫) সিজদায় سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأعْلى বলা। (৬) উভয় সিজদার মধ্যে رَبِّ اغْفِرْ لِيْ বলা (৭) প্রথম তাশাহ্হুদ পড়া (৮) প্রথম তাশাহ্হুদ পড়ার জন্য বসা।
নামাজের সুন্নতসমূহ: তন্মধ্যে কয়েকটি হলো: (১) নামাজের শুরুতে প্রারম্ভিক দো‘আ বা তাস্বীহ পড়া;(২) দাড়ানো অবস্থায় ডান হাতের তালু বাম হাতের উপর রেখে পেটের বা মহিলাদের জন্য বুকের উপর ধারণ করা।(৩) অঙ্গুলিসমুহ সংযুক্ত ও সরল রেখে উভয় হাত উভয় কাঁধ বা কান বরাবর উত্তোলন করা এবং তা প্রথম তাকবীর বলার সময়, রুকুতে যাওয়ার এবং রুকু থেকে উঠার সময় এবং প্রথম তাশাহ্হুদ শেষে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর সময়।(৪) রুকু এবং সিজদায় একাধিকবার তাসবীহ পড়া। (৫) উভয় সিজদার মধ্যে বসে একাধিকবার মাগফিরাতের দু‘আ পড়া। (৬) রুকু অবস্থায় পিঠ বরাবর মাথা রাখা। (৭) সিজদাবস্থায় বাহুদ্বয় বক্ষের উভয় পার্শ্ব হতে এবং পেট উরুদ্বয় হতে ব্যবধানে রাখা।(৮) সিজদার সময় বাহুদ্বয় যমীন থেকে উপরে উঠায়ে রাখা।(৯) প্রথম তাশাহ্হুদ পড়ার সময় ও সিজদার মধ্যবর্তী সময় বসা (১০) শেষ তাশাহ্হুদে ‘তাওয়াররুক’ করে বসা। ১১) প্রথম ও দ্বিতীয় তাশাহুদে বসার শুরু থেকে তাশাহ্হুদ পড়ার শেষ পর্যন্ত শাহাদাত অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করা এবং দু‘আর সময় নাড়াচড়া করা। (১২) প্রথম তাশাহ্হুদের সময় মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবার-পরিজন এবং ইব্রাহীম (আ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর দরুদ ও বরকতের দু‘আ করা।(১৩) শেষ তাশাহ্হুদে দু‘আ করা।(১৪) ফজর, জুমআ’, উভয় ঈদ ও ইস্তেসক্বার নামাজে এবং মাগরিব ও এশার নামাজের প্রথম দুই রাকাআতে উচ্চঃস্বরে ক্বিরাত পড়া।(১৫) জোহর ও আছরের নামাজে, মাগরিবের তৃতীয় রাকআ‘তে এবং ইশার শেষ দুই রাকআ‘তে চুপে চুপে ক্বিরাত পাড়া। (১৬) সূরা ফাতেহার অতিরিক্ত কুরআন পড়া।
এই সাথে হাদীসে বর্ণিত অন্যান্য সুন্নাতগুলোর প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে; যেমন : ইমাম, মুকতাদী ও একা নামাজীর পক্ষে রুকু থেকে উঠার পর (রাব্বানা ওয়ালাকাল হাম্দ) বলার সাথে অতিরিক্ত যা পড়া হয় তা ও সুন্নাত। এইভাবে রুকুতে অঙ্গুলিগুলো ফাঁক করে উভয় হাত হাঁটুর উপর রাখা সুন্নাত।
ইসলাম এর পাঁচটি স্তম্ভ এর মধ্যে নামাজ অন্যতম।নামাজ হল শরির ও আত্মার সংমিশ্রণ এর মাধমে ইবাদত।কিন্ত প্রায়ই নামাজে আমরা পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারি না।নানা চিন্তা আমাদের মনে চলে আসে।এর প্রধান কারন হল নামাজে আমরা যা পরি তার বাংলা অর্থ আমরা না বুঝে যন্ত্রের মত মুখস্ত পরি।এজন্য আমাদের মন নামাজে মনযোগী না হয়ে অন্য কোথাও ঘুরে বেড়াই।আমরা যদি নামাজে যে সব আরবি সূরা পরি তার বাংলা অর্থ জানি এবং নামাজ পরার সময় সেই অর্থ মনে করে পড়ি তা হলে ইনশাআল্লাহ নামাজে আমাদের মন অন্য কোথাও যাবে না এবং নামাজে আমরা মনোযোগী হতে পারব।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১২ সকাল ৮:২২