বাল্যকালে যখন পার্শ্ববর্তি কেউ বলতো কোন এক পাড়ায় পোকা ধরেছে গরুর শরীরে, তখন প্রবল ঘ্রিনা আর আতঙ্কে চোখ মুখ নীল হয়ে উঠতো, সন্ত্রস্থ বোধ করতাম। তার চেয়ে বেশী ভয়ার্ত হয়ে পড়তাম যখন রোগ উপশমের জন্য ব্যাতিক্রমতম ঔষধের কথা বলা হতো; সুদখোদের নামের তালিকা গরুর গায়ে বেধে দিলেই অবধারিত ধ্বংশের মত পোকাগুলো পতিত হবে গরুর শরীর থেকে। তখন কল্পনায় আসতো সুদখোরদের প্রতিমুর্তি, ভুড়ি মোটা লোমশ শারীর থেকে ঝরে পড়ছে পোকা, যেন পৃথিবীর নিকৃষ্টতম এক অর্থদানব। অন্ধকারের গর্ভে কাটানো বাল্যকালেই দেখা পাই বাস্তবের সুদখোরদের, কল্পনার সাথে অমিল, তারাও সবার মত স্বাভাবিক, কেউ সুন্দর কেউ অসুন্দর। তবুও সুদখোর শব্টা থেকে গেল দানবিক বিভিষিকা নিয়ে।
একদিন আমাদের লোকালয়ে বিপুল উৎসাহে হানা দিলো রাজকীয় সুদখোরেরা তাদের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প নিয়ে। সুদখোরদের প্রতি অনিঃশেষ ঘ্রিনায় যার কর্তার বদন মোবরক জ্বল জ্বল করতো সেই গৃহবধু বাড়ির একমাত্র চেয়ারটি এগিয়ে দেয় সুদখোরদের প্রতিনিধির দিকে। কর্তা দেখতে পায় তার কর্তি সুদখোরদের পোকায় খাওয়া শরীর লোহন করছে, কর্তা বিভ্রান্ত ও বিপদগ্রস্থ হয়। তার ধর্ম, চেতনা, সমাজ, কর্ম সব নিমিষেই প্রাচীন সভ্যতার মত পতিত হয়। তবুও সে নিরুত্তর থাকে কারন তারও ভিষন অর্থের প্রয়োজন। অর্থের জন্য শয়তানকে ঈশ্বরের অর্ঘ্য দিতে পিছুপা হয় না অহমিকাগ্রস্থ বিধাতার পুজারীরা। অর্থ সাহায্য নেওয়ার পর সমাজে গিয়ে প্রচার করে নিজের মহিমা আর অর্থদাতার বিরুদ্ধে কুৎসা। স্থানীয় সুদখোরেরা ভেঙে যায়, মুচড়ে যায়। রাজকীয় সুদখোরেরা রাজত্ব কায়েম করে। ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষ ভুলে যায়, গরুর গায়ের পোকা তাড়ানোর পদ্ধতি। রাজকীয় দাসদের কাছে সবাই মাথা নত করে কিন্তু উপকারভোগী সেই নির্লজ্জরা আড়ালে তাদের বিষাদ করে, অন্তরে পুষে রাখে ঘ্রিনার মালা, যা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায় গ্রাম, শহরে।
গ্রামের ডাকাত প্রবৃত্তির সুদখোরেরা কড়া সুদ আদায় করতো ও নিজেই ভোগ করতো কিন্তু রাজকীয় সুদ ব্যবস্থায় সুদের টাকা কার পাকস্থলিগত হয়? সব কি প্রতিষ্ঠানের প্রধান গিলে ফেলে? সে তো আর প্রতিষ্টানের মালিক নয়। সে গিলবে কিভাবে? এই ধরনের প্রতিষ্টানে সব চেয়ে বড় অংশ থাকে সরকারের ও জনতার। তাহলে কি রাষ্ট্র সুদখোর? জনতা সুদখোর? তাহলে আমাদের সব সমাজ, সংস্কার রাষ্ট্র সব কিছুই সুদখোর? রাষ্ট্রের সব নাগরিক কি সুদখোর? যারা ব্যাংকে টাকা রাখে তারা সবাই সুদখোর? সেইসব সুদখোরদের টাকায় চলে সমাজ সংসার, পতিত দেশ, বিভক্ত বিশ্ব, আর আমাদের গ্রাম শহর ধর্ম মন্দির। এই পৃথিবী পুষ্ট হয়েছে সুদখোরের অর্থে।
সেই সব সুদখোর মানুষেরা বেচে থাকুক যারা গড়ে চলেছে পৃথিবী। সুদখোর জিন্দাবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০৩