গ্রিক মিথ সিরিজ: গ্রিক মিথ: মহাশূণ্য থেকে বৈচিত্রময় পৃথিবীর উত্থান।
পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে আসে প্রমিথিউসের আর্তনাদ। তার সৃষ্টি মানুষ আজ ধ্বংসের দারপ্রান্তে। সভা বসে দেবতলয়ে, দেবতা হার্মিস মানুষের পক্ষে দাড়ায়। পিতা জিউসকে সে বলে ‘পাপাচারের জন্য যদি ধ্বংস করতে চান তাহলে যারা আপনার অনুগত তাদেরকেও কেন ধ্বংস করবেন? আপনি কি ভুলে গেছেন ডিউক্যালিয়ন ও পীরার কথা? তারাতো আপনার অনুগত দাস।’ জিউস কিছুটা ভেবে বলেন, ’ঠিক আছে শুধু ওই দুজনকে মারবো না’
মানবজাতির শ্রেষ্ট বন্ধু চিরদুঃখী প্রমিথিউসের সাথে দেখা করতে আসে তার ছেলে ডিউক্যালিয়ন, প্রতিবারই দেখে তার বাবার অনন্ত শাস্তির বিভৎসতা। মনটা ভারাক্রান্ত হয় কিন্তু সেচ্ছাচারি দেবতারাজ জিউস এর হুকুম কোনদিনও নড়ে না। বাবা তার আদরের ছেলেটিকে নানা পরামর্শ দেয়। কিন্তু একদিন ডিউক্যালিয়ন এর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, বাবা তাকে জানিয়েছে জিউস আর মানুষের অস্তিত্ব রাখবেন না। কোন রকমে বাড়ী ফিরে আসে ডিউক্যালিয়ন।সে ঢলে পড়ে প্রিয়তমা পীরার কোলে। জিজ্ঞেস করে-
- আমরা কি জিউসের অনুগত নই?
- হ্যাঁ, আমরা জিউসের পুজা করি।
- তাহলে তিনি কেন তিনি ধ্বংশ করবেন আমাদের? আমরা নাকি পাপে ডুবে গেছি।
- তুমি আমি তার অনুগত হলেও অন্য সবাই তো পাপাচারে লিপ্ত।
- সেটার জন্য কি সাধারন মানুষেরা কোন ভাবেই দায়ী। দায়ী তোমার মা প্যান্ডেরা, সে কেন লাফ দিয়ে বক্সটা খুলতে গিয়েছিল? সেই বক্স খোলার পর থেকে দুঃখ, কষ্ট, ক্রোধ, ঘ্রিনা আর পাপে ছেয়ে গেছে পৃথিবী।
- দোষ কি শুধু আমার মায়ের? জিউসের কোন দোষ নেই? তিনি কেন সেই বক্সটা আমার মাকে উপহার দিতে গিয়েছিলেন?
দুজনে থেমে যায় যেন আর কোন শব্দ পৃথিবীতে অবশিষ্ট নেই। জিউস অঢেল শক্তির আধার কে দাড়াবে তার বিরুদ্ধে?
ডিউক্যালিয়ন আক্ষেপের স্বরে বলে উঠে, ’এসব ভেবে আর লাভ নেই। জিউস যা করবেন আমাদের মঙ্গলের জন্য করবেন। বাবা আমাদের নৌকা বানাতে বলেছেন।’ তারপর নৌকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় সব তুলে নিল তাতে।
হটাৎ একদিন সমুদ্রের পানি দখল করতে শুরু করলো সব কিছু। ডিউক্যালিয়ন ও পীরা উঠল নৌকায়। ক্রমে ক্রমে পানি আরও বাড়তে লাগলো যারা ভয়ে পাহাড়ে উঠেছিল তারাও পতিত হলো, শুধু ভেসে চলল ডিউক্যালিয়ন ও পীরার নৌকা। পৃথিবী পরিণত হলো মহাসমুদ্রে, অহংকারে যে পাহাড়গুলো এতদিন গর্জন করতো নিজেদের উচ্চতা নিয়ে তারাও আজ নেই। সব কিছু তলিয়ে গেছে, সবাই দেবতারাজ জিউসের ক্রোধের শিকার। ৯ দিন পর পানি কমতে শুরু করলো, জেগে উঠতে লাগলো সু্উচ্চ পর্বত শ্রেনী। দুজনের মন তখন আনন্দে বিহব্বল।দুজনে সনন্দে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। চারপাশে ধ্বংস স্তুপের ভিতর দাড়িয়ে দেখতে লাগলো উজ্জ্বল এক পৃথিবীর স্বপ্ন। কোরিন্থ উপসাগরের তীরে দাড়িয়ে আছে শুন্য ডেলফির মন্দির। পীরা আনন্দে চিৎকার করে উঠে। পাহাড় থেকে নেমে ডেলফির মন্দিরে নত হয় মহান জিউসের কাছে। ধন্যবাদ জানায় তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য। শুন্য এই পৃথিবীর বুকে তারা আবদার করে কিছু মানুষ দেওয়ার জন্য। তাদের আনুগত্য জিউসের হৃদয় স্পর্শ করে।হতভাগা এই দম্পতির কাছে পাঠান দেবতা হার্মিসকে।
হার্মিস ডেলফির মন্দিরে পা রেখে নিজের অশ্রু সংবরণ করতে পারেন না। তগভাগা ভাই বোনের সন্তানদের প্রতি তার দরদের কমতি কখনোই ছিল না। বলে উঠলেন, ‘হে মহান পিতা মাতার সন্তানেরা তোমরা কি চাও?’ দুজন একই স্বরে বলে উঠলো ’মানুষ চাই’। হার্মিস বললেন, ‘তোমাদের আশা পূর্ণ হবে কারণ দেবতারাজ জিউস তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট। তবে কাজটা করতে হবে তোমাদের। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দাও তোমাদের মাতার হাড়।’ ডিউক্যালিয়ন ক্ষনিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল সে এসবের কিছুই বুঝলো না। কিন্তু বিদুৎ খেলে গেল পীরার মাথায়। তারাতো সাধারণ মানুষ নয়, তারা দেবতাদের উত্তরসূরী, তারা টাইটান, তারা মাতা পৃথিবীর সন্তান। আর পৃথিবীর হাড় হলো পাথরে।তারপর দুজন মিলে পাথর ছুড়তে লাগলেন। ছুড়ে মারা প্রতিটি পাথর পরিনত হতে শুরু করলো মানুষে, ডিউক্যালিয়ন এর ছোড়া পাথরগুলো হতে উঠলো পুরুষ আর পীরার গুলো নারী। আবার পৃথিবী ভরে উঠলো মানুষে।
গড়ে উঠলো থেসালী নামের এক রাজ্য। রাজ্যের রাজা ডিউক্যালিয়ন আর পীরার ঘরে আসলো পুত্র হেলেন। অপূর্ব সুন্দর এই রাজপুরুষের নাম থেকে দেশের নাম রাখা হলো হেলাস। বাড়তে লাগলো দেশের ব্যাপ্তি।শুরু হলো মানবজাতির নতুন পথচলা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫০