২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত পুরির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। সাধারণত ভারতের সৈকতগুলোতে ঢেউ কম। কিন্তু পুরিতে ঢেউ অনেক বেশি। অনেক সমুদ্রপ্রিয় মানুষের পছন্দের তালিকায় এই সৈকত।
ট্রেনে এক বয়স্ক দম্পতিকে পেয়েছিলাম যারা ১৪/১৫ বার পুরি এসেছেন। এই ঢেউ এমন উদাস মানুষকে এমন পাগলপারা করে দেয় যে মানুষ বার বার আসেন। আমার অসুস্থ দুলাভাই পারলে দেশে ফিরে গিয়েই আপাকে নিয়ে আসেন।
ওডিশা বা ওড়িশ্যা অর্থনৈতিকভাবে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা রাজ্য। মাথাপিছু আয় ভারতের গড় মাথাপিছু আয়ের প্রায় অর্ধেক। কিন্তু সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। যত রাতই হোক, সৈকতে হাটতে আপনার বুক ভয়ে কাঁপবে না।
পুরি শহরটি খুব ছিমছাম। সৈকতের কোল ঘেষে শতশত হোটেল-রিসোর্ট। এরপর শহরের মূল রাস্তা। তারপর আবাসিক এলাকা। দরিদ্র এলাকা হলেও পুরির রাস্তা মোটামুটি পরিচ্ছন্ন। চক্রতীর্থ রোডে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের পড়ল বাংলায় লেখা একটি ভবনের শিলান্যাস। লেখা 'ভাদুড়ি ভবন, ১৯৩২ সন, পাবনা, পূর্ব্ববঙ্গ'। ভবনটি বর্তমানে রেড ক্রসের দপ্তর। আরো কিছুদূর হাঁটছি। সন্ধ্যা গড়িয়ে এসেছে। হঠাৎ বাংলায় রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর। বাড়ীর কাছে গেলাম। গেইটে বাংলায় লেখা 'ঠাকুর তীর্থ'। পাশেই ইংরেজিতে লেখা রবীন্দ্রনাথ কবে কবে এই বাড়ীতে এসেছেন। ঠাকুর পরিবার সৌন্দর্য্যের নেশায় পুরিতেও ডেরা বেধেছিলেন। একটা দীর্ঘতর নিঃশ্বাস ছাড়লাম। কেন ছাড়লাম জানিনা।
আবাসিক এলাকা পার হলেই পুরির রেল স্টেশন। এরপর জগন্নাথ রোড ধরে বাজার, বাসস্ট্যান্ড এইসব। জগন্নাথ রোড ধরে গেলে পথে পড়বে বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দির। গড়ে প্রতিদিন ১৫/২০ হাজার মানুষ এই মন্দিরে আসেন। ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের বিশ্বাস এই মন্দিদের দেবতা বড় জাগ্রত। পূজা দিয়ে পাশেই সমুদ্র স্নান করে উঠলে সব পাপ ধুয়ে মুছে যায়।
একদিকে পূণ্য লাভের সুযোগ, আরেকদিকে পুরি সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য্য। আর কী লাগে!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬