ভূবনেশ্বর নামটি বাংলদেশের মানুষের কাছে খুব বেশি পরিচিত নয়। ভারতের ওড়িশা রাজ্যের রাজধানী। ভুবনেশ্বরে পা দেয়ার আগে এ তথ্যটিও আমার জানা ছিল না।
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে ভারত যাওয়ার সুযোগ এল। পরিচিত এক দুলাভাইয়ের চিকিৎসার জন্য কলকাতা গিয়েছিলাম। তার চিকিৎসার ফাকেই তিন দিনের বিরতি। ভাবছিলাম কোথাও গেলে মন্দ হয়না। এমন দূরত্বে যেতে হবে যাতে তিনদিনে ফেরা যায়।
পরদিন সকালে কয়েকটি বাংলা পত্রিকা নিয়ে বসতেই পুরির একটি হোটেলের বিজ্ঞাপণ চোখে পড়লো। পুরি ভারতের অন্যতম একটি সৈকত শহর। অনেকটা আমাদের কক্সবাজারের মতো। আট-নয় ঘন্টার ট্রেন জার্নি। মন্দ হয় না। বলতেই সুফি ধরনের (ধার্মিক) দুলাভাইও রাজি হয়ে গেলেন।
ট্রেনের টিকিট কাটতে হবে। কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় অনেক ট্রাভেেল এজেন্ট। কয়েকটায় ঢু মারলাম।
-কবে যেতে চান?
-আজ রাতে।
-অসম্ভব।
এই বলে এজেন্ট ব্যাটারা এমনভাবে মুখ ঘুরায় আর তাকায় না। হোটেলে পরামর্শ করলাম। তাদের পরামর্শ,' দাদা হাওড়া স্টেশনে যান। ব্ল্যাকে টিকিট পেতে পারেন।
গেলাম হাওড়া স্টেশনে। পার্ক স্টিট থেকে সাত টাকা বাসভাড়া। দুজনের পনের টাকা ভাড়া দিতেই ঝনঝন করে একটাকা ফেরত দিল কনটাকটর। ঢাকায় একটাকা ফেরত পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।
হাওড়া স্টেশনে গিয়ে ঘুরে ঘুরে কাউন্টার পেলাম, একমাসের আগে টিকেট নেই। কয়েকজন দালাল পেলাম। রাতের টিকেট দেবে ডাবল ভাড়া নেবে। দুলাভাই রাজি। আমার মন টানলো না।
এবার গেলাম অগ্রিম কাউন্টারে। তারা জানালো দালালদের বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। স্ট্যান্ডিং টিকেট দেবে। রিজারভেশন পাওয়া যাবে না। শেষে লোকাল বগিতে যেতে হবে। সুতরাং দালাল পর্ব বাতিল।
হঠাৎ মনে পড়লো ফেয়ারলি প্লেস থেকে বিদেশি কোটায় টিকেট পাওয়া যায়। কোথায় ফেয়াররি প্লেস। গঙ্গার ওপারে যেতে হবে, ফেরিতে। পাঁচ টাকায় গঙ্গা পার হয়ে বিবিডি বাগে এলাম, তারপর পূর্ববঙ্গ রেলের সদর দপ্তর ফেয়ারলি প্লেসে। খুঁজে নিলাম ফরেনার কাউন্টার। সামান্য ভিড়। বেশিরভাগই ইউরোপিয়ান টুরিস্ট। কম জামাকাপড়ের ফাক-ফোকর তাদের দিয়ে সৌন্দর্য উথাল-পাথাল। সুফি দুলাভাইকে তাদের পাশেই বসালাম।
এবার ভ্রমনের ফরম পুরন করে পাসপোর্টসহ জমা দিলাম। ১০ মিনিট পর ডাক এল।
-কোথায় যাবেন
-পুরি
-কবে যাবেন
-আজ যাওয়া যাবে
-হ্যা, রাতে দুটি ট্রেন আছে। সাড়ে দশটা ও রাত দেড় টায়
-সাড়ে দশটায় যাবো। ফেরার টিকেট পাওয়া যাবে
-অবশ্যই
-রোববার ফিরতে চাই
-শুধু পুরি যাবেন না আরো কোথাও ?
-আর কোথাও যাওয়া যায়?
-ভুবনেশ্বর যেতে পারেন।
কাউন্টারের ভদ্রলোকই রিজার্ভেশনসহ টিকিট ঠিক করে দিলেন। নায্য দামে। আহা, ভারতে বিদেশি হিসেবে এত সুবিধা পাওয়া যায়, ঝানতাম না!
রাতে হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন। স্টেশনে এত মানুষ। প্রতিদিন নাকি সারা ভারতে প্রায় দশ কোটি মানুষ ট্রেনে চলাচল করে। হাওড়া স্টেশন থেকেই চলাচল করে প্রায় পাঁচ লাখ। ভাবা যায়।
দশটা বাজতেই ট্রেন আসার ঘোষণা এল। নির্দিষ্ট বগিতে রিজার্ভ যাত্রীদের তালিকা ঝুলানো। আমাদেরও নাম সেখানে আছে। আমরা আসন নেয়ার পরপর তিন ফরাসী সুন্দরী এল। দুজন আমার সামনের দুটি বার্থে, আর একজন আমার উপরে। আমি মাঝখানে। কী সুখ। মনে করলাম ঘুমই হবে না। তবে ট্রেন ছাড়ার ঘন্টা খানেকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লাম। এই একঘন্টা সুন্দরীদের সাথে বাতচিত করতে ভুল হলো না।
তিন ফরাসী সুন্দরী
কটক রেল স্টেশনে একবার ঘুম ভাঙল। ভুবনেশ্বরে গিয়ে সুন্দরীরা নেমে গেল। আর ঘুম হয়! সকাল সাতটায় পুরি স্টেশনে ট্রেন থামল।
পুরি স্টেশনে র্তীথযাত্রীদের ঢল
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৩০