somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাজী মেহেদী হাসান
আমি বাই ব্লাড বাংলাদেশি। কারো মাস্তানি ভালো লাগে না, কিন্তু সহ্য করি। সবসময় ভাবি: আহা, সবাইকে যদি মুক্ত আকাশে ছেড়ে দিতে পারতাম। আপাতত যুক্তরাষ্ট্রে বসে অনর্থক একটা বিষয় নিয়ে পিএইচডি করছি।

জলবায়ু চুক্তি: প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতা

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১২ সালে শেষ হয়ে গেছে কিয়োটে প্রটোকলের মেয়াদ। বিশ্ব এখন কার্বনসহ বাতাসের তাপমাত্রা বাড়ার জন্য দায়ী গ্যাসগুলোর নিঃসরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আরেকটি চুক্তির জন্য লড়ছে। ২০০৯ এর কোপেনহেগেন সম্মেলন থেকে শুরু করে ২০১২ এর ডারবান জলবায়ু সম্মেলনেও কোন সমঝোতা হয়নি। ২০১৩ সালের ওয়ারস সম্মেলন আরো হতাশ করে পরিবেশবাদি বিশ্বকে। কিয়োটো প্রটোকলের দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতির মেয়াদ ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্থগিত করেছে কোপ-১৮ এর নির্বাহী পরিষদ। তাই কার্বন নিঃসরণ মাত্রা কমানোর বড় দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি এখনো কেবল পেপার ওয়ার্কেই সীমাবদ্ধ।

জাতিসংঘের ক্লাইমেট চেঞ্জ কনভেনশনের (United Nations Framework Convention on Climate Change) উদ্যোগে ১৯৯২ সাল থেকে ১৬০টি দেশের প্রতিনিধিরা গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর উপায় নিয়ে নিয়মিত বৈঠক শুরু করেন। ১৯৯৭ সালের ১১ ডিসেম্বর জাপানের কিয়োটোতে এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিয়োটো প্রটোকল নামে পরিচিত এ চুক্তিতে ৮৩টি দেশ স্বাক্ষর করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালের মধ্যে শিল্পোন্নত ৩৭টি দেশকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমাতে হবে।

পৃথিবীকে বাঁচাতে,সবুজ রাখতে, গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে গৃহীত হয়েছিল কিয়োটো প্রটোকল। কিয়োটে প্রটোকলে যে সব শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছিল তার মোদ্দা কথা ছিল, উন্নত দেশগুলোকে এই গ্রহকে উষ্ণ করে তোলা গ্রীন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমানোর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে এবং তা আইনগত বাধ্যবাধকতা মেনে। প্রটোকলের প্রথম দফা প্রতিশ্রুতির পর্যায় শেষ হয় ২০১২ সালে। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার যে-সব উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, শিল্পোন্নত দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব এই গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডের কিছু দিক নিয়ে আপত্তি তুলে আসছে। ইউরোপ এবং আমেরিকার ঋণ সঙ্কটের কারণে তারা আরও অর্থ বরাদ্দ করবে কিনা তাও এখনো নিশ্চিত নয়।

শিল্পায়নের ফলে শিল্পোন্নত দেশগুলো ব্যাপক হারে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ শুরু করে। শিল্প বিপ্লবের আগে ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমান ছিল ২৬০-২৮০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন বা প্রতি ১০ লাখ টনে বায়ুতে ২৬০-২৮০ টন)। ১৯৫৮ সালে এই মাত্রা ছিল বেড়ে দাড়ায় ৩১৬ পিপিএম। ২০১২ সালের শেষে এসে দাঁড়ায় ৩৯১। এখন তাপমাত্রা এত দ্রুত বাড়ছে যে ২০১৩ সালের শেষে তাপমাত্রা ৪০০ পিপিএম বা তার উপরে। বায়ুমণ্ডলে এ গ্যাসের মাত্রা যত বাড়বে ততই ভবিষ্যতে পৃথিবীতে তাপমাত্রা বাড়বে। এ তাপমাত্রা বাড়ার পরিমাণ হতে পারে গড়ে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পরিবেশবাদি সংগঠন ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মেরু অঞ্চলের বরফ গলা কমাতে বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ ৩৫০ পিপিএম-এর মধ্যে স্থিতিশীল রাখতে হবে। আর এজন্য ২০৫০ লাগাদ বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা কোনভাবেই ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দেয়া যাবে না। আর এটি করতে হলে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই একটি আইনগত বাধ্যবাধকতার অধীনে আনতে হবে।

ওয়ারস সম্মেলনের বড় ব্যর্থতা হচ্ছে, শিল্পোন্নত দেশগুলো নির্দিষ্ট পরিমান কার্বন নিঃসরণ কমাতে রাজী নয়। এজন্য পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে ওই দেশগুলোর শিল্পপতিরা। এরআগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর করেনি। বিশেষ করে মার্কিন কংগ্রেস কার্বন নিঃসরণ কমানোর নির্দিষ্ট কোন মাত্রা বেধে নিতে রাজী নয়। আর কংগ্রেস রাজী না হলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কোন আর্ন্তজাতিক চুক্তিতে রাজী হওয়াও সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে রাজী করানো না গেলে অন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোকে রাজী করানোও অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলো কয়েকটি ফোরামে ভাগ হয়ে গেছে। প্রথমত শিল্পোন্নত দেশ বা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মিলে ৩৭টি দেশ, দ্বিতীয়ত চীন, ব্রাজিল, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার চার দেশীয় জোট, চতুর্থত আফ্রিকা ও এশিয়ার ৭০টি দেশ, এবং পঞ্চমত এলডিসি বা উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় থাকা বাকী দেশগুলো।

সম্মেলনে একেক ফোরামের বক্তব্য একেক রকম। এখন সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে দ্বিতীয় জোটের দেশ গুলো। কিন্তু তাদের বক্তব্য হচ্ছে, মাত্রই তারা শিল্প উৎপাদনের শিখরে পৌঁছেছে। তাদের পক্ষে কার্বন নিঃসরণ কমানো মানেই উন্নয়ন থমকে যাওয়া। তারা বলছে, দুইশ বছর ধরে যারা পৃথিবীকে উঞ্চ করেছে দায়দায়িত্ব তাদের নিতে হবে।
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশের কার্বন নিঃসরনের মাত্রা খুবই নগন্য, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্নক ঝুকির মুখে। এসব দেশের অধিবাসীরা প্রায়ই জলবায়ু উদ্বাস্তু হচ্ছে, পরিবর্তনের প্রভাবে তাদের কৃষি উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে এবং ফলসুত্রিতে বিশ্বের অনেক মানুষ আজ দুর্ভিক্ষের শিকার।

সবশেষ কথা হচ্ছে, উন্নয়নশীল অধিকাংশ দরিদ্র দেশের পক্ষেই এসব ঝুঁকি মোকাবেলার ক্ষমতা নেই। অথচ আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ আফ্রিকায় কৃষি উৎপাদন ৫০ শতাংশ হ্রাস পাবে। ফলে আফ্রিকার দেশগুলো ভয়ানক খাদ্য সঙ্কটে পড়বে। ইতোমধ্যে সুদানে চারণভূমি নিয়ে মানুষের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে। সোমালিয়ায় প্রচন্ড খরায় মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। কেনিয়ায় উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের দেশেও উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যার কারণে মানুষ ঘরবাড়ি ও কর্মসংস্থান হারাচ্ছে। জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

আগামী দুটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পেরুর লিমা এরপর ২০১৫ সালের ফ্রান্সের প্যারিসে। এ দুটি সম্মেলনের মধ্যেই একটি আইনি বাধ্যবাধকতার চুক্তিতে দেশগুলোর একমত হওয়া জরুরী।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×