খুব শান্ত শিষ্ট মেয়ে রূপা। সবাই রূপাকে অনেক ভালোবাসে। পবিবারের ছোট মেয়ে বলে সবাই অনেক আদর করে। এক কথায় বলা যায় সবার খুব প্রিয়। আসলে এমনি এমনি সবার প্রিয় হওয়া যায় না। রূপার মাঝে অনেক গুণ আছে যেগুলো সবার কাছে প্রিয় বানিয়েছে। পড়াশোনায় রূপা অনেক ভালো বরাবর ভালো রেজাল্ট করে এসেছে। আমি অবশ্য যাকে নিয়ে লিখছি তার বেশি একটা কাছের কেউ না তবুও যতটুকু জানি লিখছি। আমি তার ব্যাপারে লিখতাম না। তার সব কিছুই প্রায় ভালো লাগে তাই লিখছি।
একবার আমি এক প্রতিযোগিতায় গিয়েছিলাম সেখানে গিয়ে বসে আছি সব কিছুই ভালো লাগতেছিল। আসলে নতুন কোন জায়গায় গেলে সবারই ভালো লাগে। আমারও তেমন ভালো লাগছিল। একা একা বসে আছি সবুজ ঘাসের উপর। হঠাৎ কেউ পেছন থেকে ডাকলো পিছনে ফিরে দেখি ‘অনিক’। অনিক হচ্ছে আমার ক্লাস ফোরের বন্ধু। বাসা অবশ্য পাশাপাশি তবুও ফোর পাশ করার পর তেমন কথা হতো না। তাই বন্ধু বললে ভূল হবে ক্লাসমেট বলাই ভালো। আমায় ডাকলো অনিক, আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম আসলে নামি দামি কেউ ডাকলে অবশ্য অবাকই লাগে। আমি সামান্য একজন মানুষ একা একা ঘুরে বেরাই। অনিক আমার পাশে বসলো কিছুক্ষণ কথা বার্তা হলো তারপর বললো মাঝে মাঝে তো ফোনও করতে পারিস। এবার একটা সত্য কথা বলে নেওয়া ভালো আসলে আমি ফোনে টাকা রিচার্জ করি না। আর কাউকে ফোনও করি না। কারো সাথে কথা বলি না বলেই টাকা রিচার্জ করার কোন প্রয়োজন হয় না।
অতঃপর অনিক কিছুক্ষন গল্প করে চলে গেল আমি মাঠেই বসে রইলাম। প্রতোযোগিতা শেষ হলো আমি চলে এলাম বাসায়। তখন আমার কাছে কোন মোবাইল ফোন ছিল না কারণ কিছুদিন আগেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। ভাবলাম ফেসবুকে একটু লগ-ইন করি তাই ল্যাপটপে লগ-ইন করে ফেসবুকে ঢুকলাম। ফেসবুকে ঢুকে দেখি ৫ টা ম্যাসেজ। ম্যাসেজ গুলো অবশ্য একজনই করেছে। ম্যাসেজে লিখেছে, আপনাকে আজ দেখেছি আমাদের স্কুলে। তখনো অবশ্য সে অনলাইনে ছিল, অতঃপর আমি তার ম্যাসেজ রি-প্লে করলাম।
-আমাকে যে আপনি দেখেছেন এটা নিশ্চিত হচ্ছেন কি করে? আর আপনি যাকে দেখেছেন সে টা আমি নাও হতে পারি!
-আমি নিশ্চিত ভাবেই জানি ওটা আপনিই। আর আপনি আজকে সাদা আর নীল রঙের শার্ট পরেছিলেন তাই না?
-অবাক তো আপনি কি করে জানলেন? আর আপনি কি আমাকে ফলো করছিলেন নাকি?
-আমি তো আগেই বলেছি আপনাকে আমি দেখেছি। না ফলো করি নি কিন্তু তাকিয়েছিলাম কয়েকবার।
কিছুক্ষণ কথা বলে বুজতে পারলাম মেয়েটির নাম রূপা। সে আমাকে দেখেছে তাই আমাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। আমি অবশ্য এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ কেউ না যে, আমাকে দেখে ম্যাসেজ করতে হবে। আমি যেহেতু রাস্তায় মাঝে মাঝে একা একা কবি কবি ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াই তাই যে কেউ আমায় দেখতে পারে এতে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবার কিছু নেই। আমি মনে মনে ভাবছিলাম সে এত রাত অবধি জেগে আছে কেন। নিশ্চই তার প্রেমিকের সাথে কথা বলছিল। আমার অবশ্য এগুলো ভেবেও লাভ ছিল না আর আমি ভাবারই বা কে? তবুও মানুষের মাথা বলে কথা তাই উল্টা পাল্টা জিনিস মাথায় চলে আসে। আজ আপনাদের একটা সত্য কথা বলি গোপন কথা কিন্তু! আরে ভাই দূরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? জানেন না যে গোপন কথা কানে কানে বলতে হয়? শুনুন তাহলে, আমার মেয়েটিকে প্রথম কিছুক্ষণ কথা বলার পরই ভালো লেগেছিল কিন্তু এখন তো সবাই প্রেম করে সেও নিশ্চই প্রেম করে। তাই আমি বলে লাভ হবে না উল্টো আমায় ভুল বুঝবে। ভাবনা চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নিজেও জানি না।
অতঃপর পরের দিন ভাবলাম মেয়েটির নাম যেহেতু রূপা তার কথা বার্তা গুলো সোনার মত হবে না নিশ্চই। যাইহোক রূপার মোবাইল নাম্বার চেয়ে বসলাম রূপাও দিয়ে দিলো। রূপা হয়তো জানতো যে আমি তাকে বিরক্ত করবো না। আসলে ব্যাপার টা হচ্ছে আমি মেয়েদের সাথে কথা বলি না আর ছোট থেকে মেয়েদের সামনে গেলেই লজ্জা লাগতো।
রূপা কে ফোন দিলাম। হ্যালো আপনি কি রূপা?
-জী আমি রূপা। কেমন আছেন আপনি?
-হ্যা আমি ভালো আছি। আর আপনাকে ফোন দেওয়ার কারন আপনার কন্ঠ টা শোনা আর অন্য কিছুই নয়।
-ও আচ্ছা। আমার কন্ঠ শোনার মত না আসলে আমি ভালো করে কথাই বলতে পারি না।
-আচ্ছা তাহলে আজ ফোন রাখি প্রায় অনেক্ষন কন্ঠ শুনলাম!
এখন পাঠকদের বলি, আমি যা ভেবেছিলাম যে নাম যেহেতু রূপা তার কন্ঠ নিশ্চই রূপার মতো সোনার মত হবার নয়। আমার এই ধারনা ভূল ছিল আসলে রূপার কন্ঠ ঠিক সোনার চেয়েও ভালো। আরে ভাই সোনা কথা বলতে পারে না ওটা আমিও জানি তাই বলে উদাহরণ বলে একটা কথা আছে না। এখন নিশ্চই আপনাদের রূপার কন্ঠ শোনার ইচ্ছা হচ্ছে তাহলে আমি মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিচ্ছি নিজেই কন্ঠ শুনুন আর নিজেই বিচার করুন। এই নিন নাম্বার ০১৭******** !! অবাক হচ্ছেন? আরে ভাই আমি এমনই।
হ্যা রে ভাইইইই যা ভাবছিলাম ঠিক তাই, রূপার লাভারের নাম থাক অন্যদিন বলবো। এত করে বলছেন যেহেতু তাহলে বলি রূপার লাভারের নাম ‘রাকিব'। রূপা+রাকিব, রাকিব+রূপা এটা অংক না তো এভাবে মাঝে মাঝে ছেলের নামের শেষে মেয়ের নাম যোগ করে লিখে রাখে অনেকে। আমার মন ভীষণ খারাপ হলো কারণ তো আগেই বলেছি আমি রূপার প্রেমে পড়ছি। মাঝে মাঝে ফোন দিতাম একটু কন্ঠ শোনার জন্য এই আর কি এভাবেই চললো কিছুকাল। আমি অনেক ভাবেই রূপাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কোন লাভ হয়নি আর হবেই বা কি করে রূপা তো অন্য কারো। আমি একদিন বলেই ফেললাম রূপা তোমাকে আমি ভালোবাসি! দেখছেন আমার সাহস কত একটা মেয়েকে বলে দিছি যে আমি তাকে ভালোবাসি। রূপা বলবো তার পক্ষে এটা সম্ভব না কারণ হচ্ছে রাকিব।
আরে ভাই রাকিব তোকে সামনে পাইলে বলতাম তোর থেকেও আমি রূপাকে অনেক বেশি ভালবাসি। যাইহোক ভালো বাসাবাসি পরে আগে কাহিনি টা শুনুন- রূপাও আমায় ভালোবাসতো কিন্তু রাকিবের থেকে কম! একদিন রাকিবের সম্পর্কে জানা গেল সে বেশি ভালো ছেলে না। আমি মুখে বললাম রাকিব ভালো ছেলে না আর আপনারা ওটা বিশ্বাস করে নিলেন অবাক তো। তাহলে কিছু তুলে ধরা যাক, রাকিব অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করেছে অনেক না ঠিক কয়েকটা বলাই ভালো। আর রূপার সাথে প্রেম চলাকালীন রাকিব প্রেম করেছে আর রূপার ব্যাপারে ওত গুরুত্ব ছিল না। রূপার ব্যাপারে গুরুত্ব ছিল না এটা আমি কি করে জানলাম? হ্যা বলছি তাহলে, রূপাকে রাকিব অনেক মিথ্যা বলেছিল, অনেক কিছু লুকিয়েছিল, সেই সাথে তার কিছু ব্যাপার নিয়ে সে অবহেলা করেছিল এমন ভাব করেছিল যেন রূপার কিছু হয়ে গেলে তার কিছু যায় আসে না। এবার আপনারাই বলুন এটা কেমন ভালোবাসা? রূপা রাকিবের উপর ভীষণ রেগে গেল তার সাথে আমিও রেগে গেলাম রাকিবের উপর। আসলে রাকিব ছেলেটা যে ভালো না তার চরিত্র যে ফুলের মত পবিত্র তা রূপা খুব হারে হারে টের পেয়েছে।
রূপা ইদানীং আমাকে আগের চেয়ে একটু বেশি ভালোবাসতে শুরু করেছে, আমি তো আর রাকিবের মত নই তাই হয়তো। আমি আসলে কেমন মানুষ সেটা আমি নিজেও জানি না। আমাকে নাকি কারো বেশি একটা ভালো লাগে না এখানেই বুঝে নিন আমি কেমন মানুষ। রূপা যে আমায় ভালোবাসতে শুরু করেছে সেটা আমি জানিই না। আন্দাজ করতাম আর কি। একদিন রূপা আমায় বললো, তোমার সাথে আমার অনেক মিল, সবকিছুরই প্রায়। তুমি আমাকে ভালোবাসো জানি। আমিও তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমাকে এখন যতটা ভালোবাসো এমন ভালোবাসা সব সময় থাকবে তো? বদলে যাবে না তো তুমি? আমি কিছু বললাম না। শুধু বললাম তোমার সব প্রশ্নের জবাব চিঠি লিখে দেবো। অপেক্ষা করো।
আমি ওর জানতে চাওয়া সবকিছু লিখতে বসলাম। প্রিয় রূপা, আমি তোমাকে ভালোবাসি কারণ তোমার সবকিছু আমার খুব ভালো লাগে। তুমি অন্য দশটা মেয়ের থেকে আলাদা। তোমার চিন্তা চেতনাও অনেক ভিন্ন। আমার এজন্য তোমায় ভালো লাগে। আমি এখন যেমন তোমাকে ভালোবাসি যদি তুমি সারাজীবন আমার সাথে থাকো তাহলে সারাজীবন ঠিক এমন করেই ভালোবাসবো। তুমি বদলে গেলে আমি সহ্য করতে পারবো না। প্লিজ বদলে যেও না।
রূপার সব জবাব আমি দিয়েছিলাম। রূপাও আমার জবাব পেয়ে খুশি হয়েছিল। এভাবে একটি গল্প শুরু হলো। অনেক সমস্যা আসতো সেগুলো নিজেরাই সমাধান করতাম। অনেক ঝগড়া করতাম। ওকে বোধহয় খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম অনেক কিছুই সহ্য করতে পারতাম না। আমাদের মাঝে ঝামেলা হত আবার সব ঠিকও হয়ে যেত। আমি লক্ষ্য করলাম রূপা আস্তে আস্তে বদলে যেতে থাকলো আর আমার থেকে দূরে যেতে থাকলো। আমি অনেক চেষ্টা করেছি তাকে বোঝানোর কিছুই বোঝাতে পারছিলাম না। এভাবে সময়ের সাথে সাথে রূপা বদলে গেল। আমি যাকে ভালোবাসতাম, যাকে ভালো লাগতো সে রূপা আর নেই। আমি একটুও বদলে যাইনি। তবে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলে গেছে। একটি গল্পও হারিয়ে গেছে।