somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বি-চক্রযান খরিদ না করিবার ইতি কথা

০৩ রা মে, ২০১৬ রাত ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বি-চক্রযান খরিদের নিমিত্তে কিছুকাল পূর্বে আমি একটি পণ করিয়াছিলাম, সে পণ আজও পণ ই রহিয়া গেল। পণ আর বাস্তব হইতে পারিলো না। বেশ কিছুদিন ধরিয়া সেই পণ বাস্তবায়িত করিবার একটি তাগাদা অনুভব করিতেছিলাম। তাই এই পণ আমাকে বাস্তবায়ন করিতেই হইবে এই রকম আরো একটি পণ করিয়া বসিলাম। কিন্তু জানি না সেই আশা আমার পূর্ন হইবে কিনা।
শেষ পর্যন্ত পণ পূর্ন করিবার লক্ষ্যে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করিলাম, ভাবিতে লাগিলাম কিভাবে দ্বি-চক্রযান খরিদের অর্থ সংস্থান করা যায়। ভাবিতে ভাবিতে আবিস্কার করিলাম আমার আব্বাজান, আম্মাজান, ও বড় ভ্রাতা ব্যতিত অন্য কোন উপায়ে অর্থ সংস্থান করা যাইবে না। যাহা ভাবোনা তাহা কর্মে রূপ দান করিবার নিমিত্তে কর্মকান্ড শুরু করিয়া দিলাম।
মাসের প্রথম দিকে আব্বাজানে মতি গতি পর্যবেক্ষন করিয়া একটি শুভ দিন দেখিয়া তাহার নিকট আমার আবদার পেশ করিলাম। আমার আব্বাজান বলিলেন এই বয়সে আসিয়া কেন আমি পুনরায় দ্বি-চক্রযান খরিদ করিবার মনস্থির করিলাম। আমি বলিলাম এখন তো সবাই দ্বি-চক্রযান খরিদ করিতেছে এবং সবাই ইহাকে ভালোভাবেই ব্যবহার করিতেছে, এমনকি সবাই ইহা দিয়া অফিস বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যাইতেছে। এবং ইহা ঢাকা শহরের মানুষকে জ্যাম নামক আতংক হইতে কিছুটা হইলেও নিস্তার দিতে সক্ষম হইতেছে। সে আমাকে কহিল সবার হঠাৎ ভীমরতি ধরিয়াছে দেখিয়া আমার ও ভীমরতি ধরিল কেন? সবাই তো ভালোভাবে পড়াশুনা করিয়া ভালো চাকরি বাকরি করিতেছে আর তুমি কেন করিতেছেন না। এই রকম একটি প্রশ্ন ছুড়িয়া দিয়া আমাকে অপদস্থ করিবার কূট পরিকল্পনার আশ্রয় নিলেন তিনি। সাথে তিনি আরও যোগ করিলেন আপনাকে তো বাল্যকালে একবার সাইকেল খরিদ করিয়া দেওয়া হইয়াছিল। আপনি প্রবল উৎসাহে ছয় মাস চালোনা করিয়া উহা বিক্রয় করিয়া দিয়াছিলেন। তখন আপনাকে বারন করা হইয়া ছিল কিন্তু আপনি আমাদের কথায় কোন কর্ণপাতই করেন নাই। এমনকি আপনি সাইকেল বিক্রয়ের অর্থ পর্যন্ত গায়েব করিয়া দিয়াছিলেন। তখন আপনার কাছে বারংবার এই অর্থের হদিশ জানিতে চাওয়া হইয়াছিল। কিন্তু খুব কৌশল অবলম্বন করিয়া আপনি তখন পার পাইয়া গিয়াছিলেন। আপনি আবার দ্বি-চক্রযান ক্রয় করিতে চান আপনি যে উহা ছয় মাস ব্যবহার করিয়া পুনরায় অর্ধেক দামে বিক্রয় করিয়া দিবেন না তাহার কোন গ্যারান্টি আছে কিনা তিনি তা জানতে চাইলেন। আমি কহিলাম আছে, আপনি নিশ্চিন্তে থাকিতে পারেন। সে কহিল আমি তো আপনাকে জন্ম অবধি চিনি, এবং আমি নিশ্চিন্ত আপনি কোন ভাবেই উহা তিন থেকে ছয় মাসের বেশি ব্যবহার করিবেন না। এবং আপনি আবার উহা বিক্রয় করিয়া দিবেন অর্ধেক দামে। তাই আমি আপনাকে এই ব্যাপারে কোন প্রকার আর্থিক বা মানসিক সাহায্য করিতে পারিব না। আমি বলিলাম আপনি সাহায্য না করিলে তো আমি দ্বি-চক্রযান ক্রয় করিতে পারিব না। সে বলিল আমি তো তাহাই চাই। আপনি যাহাতে ক্রয় করিতে না পারেন ইহার জন্য দরকার হইলে আমি দুই রাকাত নফল নামায আদায় করিব। আল্লাহর নিকট দোয়া করিব আপনি যেন কোন ভাবেই সাইকেল খরিদের অর্থ সংস্থান না করিতে পারেন। এখন আপনি আসিতে পারেন বলিয়া তিনি নিজ কর্মে মনোযোগ দিলেন। আমি মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম ইহা আমি কোন ফ্যাসাদে পরিয়া গেলাম। চেয়েছিলাম দ্বি-চক্রযান খরিদ করিতে, কিন্তু আব্বাজান আমাকে ইহা কি শুধাইলেন। আমি তো পুরাই বেকুব হইয়া গেলাম, কিন্তু না আমি বেকুব হই নাই তবে বেকুবের কাছাকাছি চলিয়া গেলাম।
যাই হোক কি আর করা। আব্বাজান যেহেতু মুখ ফিরিয়া নিয়াছেন তো কি হইয়াছে। এখনো আমার ভ্রাতা ও সকল সমস্যার আসান আম্মাজান তো আছেনই। পরবর্তি পদক্ষেপ হিসেবে আমার বড় ভাইজানের শরনাপন্ন হইলাম। সেখানেও আরেক ট্রাজেডি।
মাসের প্রথমার্ধে যখন আমার ভ্রাতা তাহার বেতন পাইয়া যায় ঠিক ইহার পর পরই তাহার দিলটি কেমন জানি উদার উদার হইয়া যায়। সে তখন মুক্ত হস্তে অনেক কিছু অকাতরে দান করিয়ার থাকেন। আমিও তাহার উদার হৃদয়ের ব্যবহার উদার ভাবেই গ্রহন করিতাম, এখনো করিতেছি। যাহাই হোক মাসের প্রথম দিকে আমি ভাইজানের কক্ষে গিয়া কিছুক্ষন তাহার প্রশংসা করিয়া আসল বিষয় টা উত্থাপন করিলাম। আমি একটি দ্বি-চক্রযান খরিদ করিতে চাই। ইহার নিমিত্তে আমি আপনার সাহায্য এবং দোয়া প্রার্থি। সে তৎক্ষনাৎ মানি ব্যাগে হাত দিল। আমি তো খুশিতে ষোলখানা হইয়া গেলাম। যাক শেষ পর্যন্ত কিছু অর্থ সাহায্য পাওয়া যাইবে। কিন্তু সেই আশার গুরে বালি, ইট, সিমেন্ট ঢালিয়া দিয়া আগ্রহ সহকারে আমাকে ১০০ টি টাকা দিয়া কহিল আমি এর বেশি তোকে সাহায্য করিতে পারিবো না। বাকিটা তুই নিজ উদ্যোগে সংস্থান করিয়া নে। আমার পক্ষে এর বেশি কন্ট্রিবিউট করা সম্ভব হইবে না। এর সাথে সাথে বলিল দ্বি-চক্রযান কেনার পর আমার সাথে দেখা করিস তোকে আমি একটা বেল কিনিয়া দিবো । তুই চিন্তা করিস না আমি তো তোকে ভালোভাবেই চিনি তুই কোন না কোন ভাবে নিশ্চই টাকার সংস্থান করিয়া ফেলবি এবং অতি দ্রুত দ্বি-চক্রযান কিনিয়া ফেলিতে পারবি। আমিও প্রবল হতাশায় ব্যাপক আশান্বিত একশত টাকা হাতে লইয়া চলিয়া আসিলাম। আমি আর কিছুই ভাবনার সুযোগ পাইলাম না। কি আর করা যাইবে। এক বুক আশা নিইয়া ভাইজানের নিকট গিয়াছিলাম, সেই সাথে তিন চার বুক হতাশা নিয়া স্বীয় কক্ষে চলিয়া আসিলাম
এখন আর কি করিব তাহা ভাবিতে পারিতেছি না। এখন কিভাবে দ্বি-চক্রযান খরিদ করা যাইবে, কোথা হইতে অর্থ যোগার হইবে তাহার ভাবনা করিতে করিতে কতক্ষন বসিলাম, কতক্ষন দাড়াইলাম, আরোও কিছু বোধ হয় করিয়াছিলাম কিন্তু উহা ভুলিয়া গিয়াছি, মনে করিতে পারিতেছি না। কিছুতেই কি দ্বি-চক্রযান খরিদ করিতে পারিব না উহা ভাবিতে গিয়া স্বীয় মস্তকের চুল উঠাইতে উঠাইতে এক চতুর্থাংশ খালি করিয়া ফেলিলাম। তবে ভরসা এখনো শেষ হইয়া যায় নাই। শেষ ভরসা আম্মাজান। যদি কিছু করা যায়, কোন ভাবেই যদি তাহার মন গলাইতে পারি তাহা হইলেই পাইয়া যাইব চৌদ্দ রাজার ধন আমার সাধের দ্বি-চক্রযান । এই আশায় তাহার কাছে যাইয়া আমার মনোবাসনা পেশ করিবার নিমিত্তে জটিল কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করিলাম।
একদা সুন্দর সকালে পরিবেশ পরিস্থিতি আয়ত্তে আনিয়া আম্মার নৈকটে গিয়া বলিলাম আম্মা আমি একটি সাইকেল কিনিতে চাই। আপনার আর্থিক সাহায্য আমার একান্ত ভাবে কাম্য। তিনি আমার এই আবদারের কথা শুনিয়া মনে হইল সাত আসমানের ঠিক সাত নম্বর থেকে ধপাস করিয়া পড়িয়া গেলেন এবং দুই একটা হাড়ও হয়তবা ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন। তাহার মুখশ্রী দেখিয়া আমার মনে হইল তিনি অন্য জগতের কোন প্রানীর কথা শুনিতেছেন এবং ইহার কিছুই তিনি বুঝিতেছেন না। একই সাথে এও মনে হইল তিনি তাহার স্বর হারাইয়া ফেলিয়াছেন। যাহা হউক শেষ পর্যন্ত তিনি তাহার স্বর ফিরিয়া পাইলেন এবং তিনি যাহা বলিলেন আমি মন্ত্রমুগ্ধ হইয়া শুনিতে লাগিলাম। তিনি বলিলেন আমি কি তোমাকে টাকা দিয়া স্বয়ং আজরাঈল কিনিয়া দিবো? ঢাকা শহরের রাস্তা ঘাটের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ননা দিয়া বলিলেন এই শহরে সাইকেল চালানো যে কথা সাথে একটা আজরাঈল নিইয়া চলাও একই কথা। তিনি এই মর্মে সিদ্ধান্ত দিলেন যে কোন ভাবেই আমাকে আজরাঈল কিনিতে তিনি দিবেন না এবং সাথে এও বলিলেন আমি যদি সাইকেল কোন ভাবে কিনিয়াও ফেলি তাহা হইলে তিনি সেই সাইকেলে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরাইয়া দিবেন।
কি আর করা যাইবে। আমি আর ইহজীবনে হয়ত সাইকেল খরিদ করিবার যে বাসনা করিয়া ছিলাম তাহা হয়ত পূরন হইবে না। সাইকেল আমার ললাটে লিখিত হয় নাই উহা মনে করিয়া আপন মনে স্বীয় ঘরে ফেরত চলিয়া আসিলাম। আমার ললাট নিতান্তই মন্দ তাহা না হইলে কি একটি সাইকেল খরিদ করিবার সামান্য(বিশাল) অর্থ যোগাড় করিতে পারিব না।
এখন পর্যন্ত আমি দ্বি-চক্রযান খরিদ করিতে পার নাই। তবে মনে ক্ষীন আশা লালন করিতেছি যদি কোন কালে অর্থ যোগাড় করিতে পারি তাহা হইলে অবশ্যই একটি সাইকেল খরিদ করিব এবং জনগনকে দেখাইয়া দিব আমিও পারি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ রাত ১:৪২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×