মরন্তের বিপন্নতা
আম্মাকে বহুদিন বলেছে রেশমা, লোকটাকে সে সহ্যই করতে পারে না। আম্মা খুব সুন্দর করে বোঝান ওকে, 'তুই তোর মত থাকবি, সামনে যাবি না...তাইলেই তো হয়'। রেশমার তো যেতে হয় না, সে নিজেই এসে হাজির হয়। কি ভয়ংকর একটা লোক। দেখলেই কেমন গিরগিটির মতন লাগে। মণি দুটো ঠিকড়ে আসা কেমন ঢুলু ঢুলু চোখ, কোলে আস্ত বালিশের মত শুয়ে আছে মাংস পিন্ড; ভারী, কুচকুচে কাল, ভেজা ভেজা দুটো ঠোঁট; তেল চকচকে চুল চাঁদিতে পাট করে শোয়ানো; আর থলথলে দৈত্যের মত লোমশ একটা দেহ; দুটো হাততো বটেই, শার্টের ভিতরে বুক কিংবা ঘাড়ের যতটুকু দেখা যায় তাতেও বনমানুষের মত ঘন কুচকুচে কাল লোম। রেশমা সামনে এলেই লোকটা কেমন জুলজুলে চোখে চেয়ে থাকে, ঠোঁট ঝুলে পড়ে, ভেজা ভেজা হয়ে যায়...যেন এখনি গড়িয়ে পড়বে লালা। আর রেশমা ভীষণ আতংকে কুকড়ে যায়। ওর মনে হতে থাকে একটা গিরগিটি খুব সন্তর্পণে ওঁত পেতেছে, এগুচ্ছে গুড়ি মেরে। আর একটু...আর একটু...
শিউড়ে ওঠে রেশমা, চমকে তাকায় দরজার দিকে। নাহ, দরজা বন্ধই আছে। তারপরও তার ভয় কাটে না। যেন ঘরের কোন না কোন ফাঁক ফোকড় থেকে উকি মেরে আছে একটা গিরগিটি। ভীষণ গা গুলায় ওর। লোকটাকে যে এতখানি অবহেলা বা অগ্রাহ্য করা যায় না, তা রেশমা বোঝে। অঢেল টাকা তার, পুরান ঢাকায় দুটো বিশাল বনেদী বাড়ি, তিন তিনটা গ্যারাজ, কম করে হলেও দশটা ট্রাক, আর আরো কি কি সব কারবার। তবে কুৎসাও কম নেই তার নামে। সে নাকি বিয়েও করেছিল দুইবার; একটা বউ মরে গেছে, লোকে বলে খুন করেছে; আর আরেকটা পালিয়েছে। এইসব কানকথায় আম্মার কিছু আসে যায় না। এমন একটা মক্কেল হাতছাড়া করার মত বোকাতো আর জুলেখা বেগম নয়। স্বামী পরিত্যাক্ত যে মহিলাকে এই চল্লিশের ঘরে এসেও এখনও পুরুষমানুষের লোলুপ দৃষ্টি সইতে আর সামলে চলতে হয়; রেশমার মত সোমত্ত, সুন্দরী একটা মেয়ে তার জন্য কি বিশাল একটা বোঝা তাতো সহজেই অনুমেয়। সরাসরি কিছু বলে নি আম্মা, নিজেদের এতটা সহজলোভ্য করতে নেই তা তিনি ভালই জানেন। তবে পরোক্ষে তার কাছ থেকে আশকারাই পেয়ে যাচ্ছে লোকটা। রেশমার কিছুতেই সহ্য হয় না এমন বেহায়াপনা। তার মাঝে মাঝে খুব বেপরোয়া কিছু করে ফেলতে ইচ্ছা হয়।
মাংসলোভী কুকুরটা বহুদিন ধরেই ছোঁক ছোঁক করে যাচ্ছে এ এলাকায়, এ বাড়ির আশেপাশে, রেশমার কাছাকাছি। রাস্তায়, কি কলেজের সামনে লোকটার অত্যাচার সয়েছে রেশমা। একা পেলেই লোকটা বিচ্ছিরি আর নোংরা সব কথা বলে। সাপের মত জিভ বের করে ঘন ঘন চাটতে থাকে থলথলে ঠোঁটজোড়া। মোটা ঘড়ঘড়ে অশ্লীল কন্ঠটা যেন তার কানে গরম সীসা ঢেলে দেয়। রেশমা শুধু কুকড়ে যায়, পিছাতে পিছাতে আর যখন জায়গা থাকে না তখন কাঁপতে থাকে একটা ভীরু খরগোশের মতন। ভীষণ অপমানে চোখে শ্রাবণ নামে। কতদিন রেশমার ভেতরটা বিদ্রোহ করে উঠেছে। ওই ভয়ংকর দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচানোর কত উপায়ই না সে মনে মনে ভেবেছে। কখনো কখনো সেটা তার কল্পনাতেই এত ভীষণ রকম হিংস্র আর ভয়ংকরও হয়ে উঠেছে যে সে নিজেই আঁতকে উঠেছে ভয়ে।
কিন্তু তার কিছুই করা হয়ে উঠেনি। শুধু আম্মাকে বলেছে, যদিও বলে কোন লাভ নেই। উল্টে বকাই শুনতে হয়, রেশমার মত বোকা মেয়ে পৃথিবীতে দুটো নেই, কত সুখেই না রাখবে এই লোক রেশমাকে, এমন সুযোগ হেলায় হারাতে নেই। আবার সন্তর্পণে এ খেয়ালও তার থাকে রেশমার রাগ যেন মাত্রা না ছাড়ায়। চিরকাল চুপচাপ, নরম সরম মেয়েটা যে ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড জেদী আর গোয়ার, মাতো তা ভাল করেই জানেন। ধমক দিয়ে, আদর দিয়ে কতভাবে তিনি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তবু রেশমা বোঝে না। ওর সমস্ত শরীর জুড়ে থাকে ভয়ানক এক ঘৃণা, আর অস্বস্তির এক চাদর। লোকটা সামনে এলেই গা গুলায় রেশমার। মনে হয় যদি গেলে দেয়া যেতো ওই ড্যাবড্যাবে চোখ দুটো, চিরদিনের মত শেষ করে দেয়া যেতো ওই চোখের দৃষ্টি!
আজকাল লোকটার সাহস বেড়েছে বেশ। সে এখন রাস্তা, গলি পেরিয়ে বাড়ির উঠান অবধি এসে হাজির হয়। পাশের ঘরের পিচ্চিটার সাথে উঠানে বসেই গল্প করছিল রেশমা। হঠাৎ চেয়ে দেখে লোকটা, একদম সামনেই দাঁড়ানো, সেই গা ঘিনঘিনে চোখে চেয়ে থাকা আর লকলকে জিভের ভিতর বাহির নিয়ে। রেশমা বিপন্নের মত এদিক ওদিক চায়। কিন্তু খুঁজে পায় না কোন মানুষ বা প্রাণী তাকে বাঁচানোর মত। গুড়ি মেরে এগুতে থাকে গিরগিটিটা; লালসা ভরা জুলজুলে চোখে, ঝুলে পড়া ভেজা থ্যাবড়া ঠোঁটে অশ্লীল হাসি নিয়ে।
ভয়ে, আতংকে, ঘৃণায় অবশ হয়ে আসে রেশমার দেহ। এক পা এক পা করে সে পিছায়, পিছায়......কিন্তু একসময় পিঠ ঠেকে যায় ঘরের নড়বড়ে বেড়াটায়। মরিয়া হয়ে রেশমা ঘুরে দাঁড়ায়, এক ছুটে ঢুকে যায় ঘরের ভিতর। তেতো হয়ে উঠে মুখ, ভয়ংকর একটা ভাঙচুর রাগে থরথর করে কাঁপতে থাকে রেশমা। উদভ্রান্ত দৃষ্টি মেলে আঁতিপাতি খোঁজে ঘরের চারদিক। কিছু একটা ভাঙতে হবে, ধ্বংস করতে হবে কিছু একটা.......
রেশমার দৃষ্টি আটকে যায় ওর ছোট্ট পড়ার টেবিলটার ওপর। কি উপলক্ষে পড়শী এক ঘর থেকে মিষ্টি দিয়েছিল, খাওয়া শেষে প্লেটটা সরানো হয়নি, রয়ে গেছে কাঁটাচামচটাও। চোখে আগুন নিয়ে রেশমা চেয়ে থাকে চামচটার দিকে।
বাইরে আম্মার গলা পাওয়া যায়। কোথা থেকে ফিরলেন তিনি কে জানে! খুব বিগলিত ভঙ্গিতে হাসছেন গিরগিটিটার সাথে, ওই ভয়ংকর প্রাণীটার ঘড়ঘড়ে গলার হাসিও শুনতে পাচ্ছে রেশমা। ওর খুব গা গুলায়। শুনতে পায় আম্মা খুব মিষ্টি করে ডাকছেন ওকে। আজ আর কোন রাখঢাক নেই।
ওর চোখে জ্বালা আরো বাড়ে, ঠিকরে বেরোয় আগুন। সেই উত্তাপে শুকিয়ে যায় চোখের পানি। ধকধকে চোখে রেশমা এগিয়ে যায় টেবিলের দিকে। সর্বশক্তিতে চেপে ধরে কাঁটাচামচটা। তার ভেতরে যেন কি এক প্রলয় ঘটে গেছে। আজ সে আর সহ্য করবে না এই নোংরা, ভয়ংকর লোকটার স্বেচ্ছাচার। তার হাতে ধরা চামচটা যেন গলে যাবে দৃষ্টির ভীষণ উত্তাপে।
ভেতরে থেকেই টের পায় লোকটাকে সামনের ঘরে বসিয়ে আম্মা সরে গেছে কোথাও। কাঁটাচামচ ধরা হাতটা দেহের পিছনে আড়াল করে, ভীষণ এক হাসির ভঙ্গিতে ঠোঁট বাঁকিয়ে রেশমা দরজার আগল সরায়।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন