somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোজ রাতে শয়তান আসে আমার কাছে

২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোজ রাতে আমার কাছে শয়তান আসে। ঘুমের মাঝেই প্রচন্ড ভয়ে আমি ছটফট করে উঠি, অনেকক্ষণ হাস ফাস করে হয়তো আমার ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু তারপরও বহুক্ষণ তার উপস্থিতি আমি টের পাই আমার আশেপাশে।

সে আসে...কোন ভয়ংকর রূপ ধরে নয়...খুব মিষ্টি নিষ্পাপ চেহারার একটা বাচ্চা মেয়ে হয়ে। বছর পাঁচ কি ছয় বয়স, বেশ ফর্সা, গোলগাল মুখ, মাথাভর্তি ঝাকড়া চুল, বড় বড় চোখ, ঠোঁট টেপা একটা হাসি...এইসবের মধ্যে সবচেয়ে বেমানান হল মেয়েটার ডান গালে বেশ বড় একটা ক্ষত, গোলাপী মাংস বের হয়ে আছে। সাদা একটা ফ্রক পরনে, আর হাতে বাদামী রঙের একটা উলের পুতুল।

মেয়েটা আসে, একেক রাতে তার সাথে আমার একেক জায়গায় দেখা হয়। আর সে দূর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, শুধু তাকিয়ে থাকে। তার চোখ, তার হাসি কিছুই বদলায় না। কিন্তু তারপরও আমি প্রচন্ড ভয়ে অস্থির হয়ে যাই। আমার হাত-পা জমে যায়। এমনকি নড়াচড়ার শক্তিটুকুও আমি হারিয়ে ফেলি। ভয়ে আতংকে কাঠ হয়ে যায় আমার শরীর, আমি নড়তে পারি না, তার চোখ থেকে চোখ সরাতে পারি না, ঘুম ভেঙে জেগে উঠতে পারি না। বহুক্ষণ...জানি না কত...কতক্ষণ পরে আমার ঘুম ভাঙে। এবং তখনো আমি আমার আশেপাশে, ঘরের বাতাসে তার অস্তিত্ব টের পাই। দেখতে পাই চেয়ারে বসে কি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সে আমাকে দেখছে। আমি টের পাই খুব বেকায়দা ভঙ্গিতে তেড়া বাঁকা হয়ে আমার দেহটা বিছানায় পড়ে আছে, হয়তো ঘাড়টা বাঁকা হয়ে এলিয়ে আছে বালিশ ছেড়ে, হয়তো হাতগুলো উঠে আছে মাথার ওপর, পা দুটো ছড়িয়ে আছে দুদিকে বা মুড়ে আছে হাঁটু, যা স্বাভাবিক অবস্থায় কখনোই হওয়া সম্ভব না। আর বহুক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ মেয়েটাকে আমি টের পাই, আমি এমনকি নড়তেও পারি না একচুল। ওইভাবেই পড়ে থাকি দুমড়ে মুচড়ে কাঠ হয়ে। তারপর একসময়, নিজেকে ওই রাতের মত যথেষ্ট বিনোদিত মনে হলে মেয়েটি চলে যায়। আর তখনই কেবল আমি নিজের মধ্যে ফিরে আসি। শ্বাস নিই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে, শক্তি ফিরে পাই শরীরে, নড়ে চড়ে স্বাভাবিকভাবে পাশ ফিরে শুই, এবং আশ্চর্যের ব্যাপার...একসময় আমি ঘুমিয়েও পড়ি।

কেন সে আসে আমার কাছে? আমার রাতের ঘুম, বহুকষ্টে ভান করে হলেও পাওয়া মনের শান্তি কেড়ে নিতে? কার কি ক্ষতি করেছি আমি? যতদূর জানি আমি তো কারো কোন ক্ষতি করি নি। বরং বারবার সরল মনে একের পর এক মানুষকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছি। আর তারপরে আমার সে বিশ্বাস কাঁচের মত ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেছে। আমার ভেতরের গভীর আবেগ উঁচু প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমি তো কোনদিন কাউকে কষ্ট দেই নি। বরং হাসিমুখে সবাইকে কাছে টেনে নিয়েছি, নিজের কষ্টটা লুকিয়ে অন্যকে আনন্দ দিয়েছি, ভালবাসা বিলিয়েছি অকৃপণভাবে।

তাহলে আমাকেই কেন রোজ রাতে এই নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়? এত নিষ্পাপ চেহারার বাচ্চা একটা মেয়ে কি করে শয়তান হয়?মুভিতে, গল্পের বইতে সবসময় দেখেছি মৃত্যু, শয়তান, অশুভ আত্মা বরাবর খুব ভয়ংরূপী পুরুষমানুষ। আমি ভাবতাম শয়তান কেন সবসময় পুরুষই হবে? আমরা কেন নারীর রূপে তাকে কল্পনা করি না? তাই বুঝি শয়তান আমাকে কোমল মায়াময় একটা বাচ্চা মেয়ের রূপে ধরা দেয়। যার নিষ্পাপ চোখের ভেতর লুকানো বরফের মত ঠান্ডা ধারালো দৃষ্টি, যার টুকটুকে লাল দুটো ঠোঁটে সর্বগ্রাসী হাসি।

আমি রোজ রাতে তাকে দেখে আতংকে দিশেহারা হই, আমার সারাদিন কাটে ঘোরের মধ্যে। আমি দিনভর প্রার্থনা করি তার হাত থেকে মুক্তি পেতে, ক্ষমা চাই জানা, না জানা সকল পাপের, কামনা করি পৃথিবীর সকল মানুষের, প্রাণীর মঙ্গল, কারো ক্ষতি তো দূরে থাক, এমনকি কারো অমঙ্গল চিন্তাও কখনো করি না, রাতে ঘুমুবার সময় বাতি নেভানোর আগে রোজ আশা করি আজ রাতে সে আসবে না।

কিন্তু সে আসে। আমারই মত তার ঠোঁটে থাকে মিষ্টি একটা হাসি। আতংকে জমে যেতে যেতেও আমার মনে পড়ে আজ পর্যন্ত পরিচিত যত মানুষ আমাকে ব্যথা দিয়েছে, আমার বিশ্বাস ভেঙেছে তারা কেউই শেষ পর্যন্ত ভাল ছিল না, কোন না কোন ক্ষতি তাদের হয়েই গেছে। আমি অনেক ভয় পাই, কিন্তু তারপরও তার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নেই না। সেই অশুভ বরফ শীতল দৃষ্টি আমার মধ্যে সঞ্চালন করে একটা অশুভ ছায়া।

দিনভর প্রার্থনা, শুভকামনায় মশগুল থাকলেও রোজ রাতে আমি তার জন্য অবচেতনে অপেক্ষা করে থাকি। রোজ রাতে শয়তান আসে আমার কাছে। একটু একটু করে মৃত্যু ঘটে আমার ভেতরের শুভ সত্ত্বার। আর আমি একটু একটু করে শয়তান হয়ে উঠি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:২৭
৪৪টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×