ঈদের সময় বাড়ি গিয়েছি... একদিন সন্ধ্যাবেলা আব্বু-আম্মুর ঘরে উঁকি দিলাম... দেখি বুড়োটা কি যেন বলছে, আর বুড়িটা হেসে কুটি-বাটি হয়ে যাচ্ছে ... আমারও খুব মজা লাগতেছে তাঁদের প্রেম দেখে... দেয়ালের ওপাশে আমি চুপ করে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাঁদের কথা শুনছি...
আব্বু কথায় কথায় আম্মিকে জিজ্ঞাসা করতেছে, “আচ্ছা তুমি সবচেয়ে বেশি কাকে ভালোবাসো?? কার জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারবা???”
আম্মি একটু চিন্তা করে বলল, “আমার দুই ছেলের জন্য আমি আমার জীবন দিয়ে দিতে পারব...”
-কেন??? আমার জন্য দিতে পারবা না কেন??? আমার জন্যই তো তুমি দুই ছেলেকে পাইলা...
-তোমার জন্য জীবন দিতে পারব না, এইটা সিউর...
-জানো, তুমি যদি আমাকে একই প্রশ্ন করতে, তাহলে আমিও একই উত্তর দিতাম...
তাঁদের কথা শুনে আমি আমার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম... আব্বুকে আমি নিজে থেকে খুব কমই ফোন দেই... একদিন সে আক্ষেপ করে বলছিল, “তুমি তো আমাকে ফোন দেও না, ঠিক আছে... এখন বুঝবা না... যখন তুমি বাবা হবে আর তোমার ছেলে এমন করবে, তখন ঠিকই বুঝবা...”
আম্মি মাঝে বলছিল আমার আব্বা নাকি খেতে বসে প্রায়ই কান্নাকাটি করে আমার জন্য... কারণ আমি একটু বেশি খেতাম বলে, খেতে বসে আমাকে বকা দিত... এখন যে বকা দেয়ার মানুষ নেই, এজন্য সে কাঁদে...
কি করব বলো আব্বা... আমি যে এখন বড় হয়ে গেছি... খুব ইচ্ছা করে আবার যদি ছোট হতে পারতাম, তাহলে তোমার আঙ্গুল ধরে আবার বাজারে যেতাম... তোমার কাছে আবদার করে চকলেট কিনে নিতে খুব ইচ্ছা করে... আমার আম্মি স্কুল শিক্ষিকা... ছোটবেলায় আম্মির যখন ফেরার সময় হত, রাস্তার দিকে তাকিয়ে জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে থাকতাম... আমার জন্য শিঙ্গারা না নিয়ে আসলে, রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতাম... জানো, আবার ছোট হতে খুব ইচ্ছা করে...
কিন্তু কি করব বলো... আমি যে এখন বড় হয়ে গেছি...
সময় যে বড় নিষ্ঠুর... সে কি কারও ধার ধারে...???