-এই ফয়সাল... ফয়সাল
-হুম
-ঘুমাইছো??
-না ঘুমাই নাই... রাত তিনটার সময় আমি ফুটবল খেলতেছি...
-তুমি একটা অসহ্য...
-আমি আবার কি করলাম??
-দেখ না আমি কেমন ঘেমে গেছি??
-তাই তো... কিভাবে ঘামলে???
-খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি...
-ও আচ্ছা... দাঁড়াও তোমার জন্য পানি নিয়ে আসি...
ফয়সাল খাট থেকে নেমে ডাইনিং টেবিল এর দিকে গেল... তিথির জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসল... তিথি ছয়মাসের অন্তসত্তা... আজকাল প্রায় গভীর রাতে ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়... সে নাকি দুঃস্বপ্ন দেখে... স্বপ্নে দেখে কেউ তার সোনা বাবুটাকে গলা টিপে মেরে ফেলছে... এর অবশ্য একটা কারণও আছে... প্রথমবার মা হতে গিয়ে সে একটা মৃত সন্তানের জন্ম দিয়েছিল... খুব কেঁদেছিল সে... মনে হয়েছিল সে আর বাঁচবে না... কিন্তু এই মানুষটা তাঁকে সারাক্ষণ আগলে রেখেছে... সবসময় ফয়সালকে সে জ্বালাতন করে... কিন্তু মানুষটা তাঁকে কিচ্ছু বলে না... শুধু হাসে... সবসময় তিথিকে সে হাসায়...
-পানি খেয়ে নাও...
তিথি ঢকঢক করে পুরোটুকু পানি খেয়ে নিল...
-আমি তোমার বুকের উপর একটু মাথা রাখব??
-রাখো...
-আচ্ছা... আমদের তো ছেলে বাবু হবে তাই না??
-ডাক্তার তো তাই বলল...
-কি নাম রাখা যায় বলো তো??
-আমি চিন্তা করছি ‘ভুতো’ রাখব...
-তোমার সব অলক্ষণে নাম...
-হেহে
-এই বলদের মত হাসবে না...
-আমি আরেকটা আনকমন নাম ভেবেছি... শুনবে??
-বলো
-আড়িয়াল খাঁ
-কি?? এইটা কোন নাম হল??
-এত আনকমন নাম তুমি দুনিয়ায় আর খুঁজে পাবে না...
-তুমি না একটা শয়তান... সব সময় আমার সাথে দুষ্টুমি কর...
-তুমি আমার বউ... তোমার সাথে দুষ্টুমি করব না তো পাশের বাড়ির ভাবীর সাথে করব???
-তুমি কি বল্লা??? তুমি ঐ ঢেপসী মহিলার সাথে দুষ্টুমি করতে চাও??? তোমার মনে তাইলে এই ছিল...
-আরে আমি তো কথার কথা বললাম...
-আমিও তাইলে কালকে পাশের বাড়ির রাকিব ভাইয়ের সাথে দুষ্টুমি করব...
-আচ্ছা কোর...
-তুমি আমাকে বকা দিলা না কেন...??
-বকা দিব কেন??
-এই যে আমি দুষ্টুমি করতে চাইলাম এজন্য...
-কেন?? তুমি তো আমার সাথে মজা করছো??
-তোমার কি আমার উপর একটুও রাগ হয় না...
-না...
-একটু রাগো না... আমাকে একটু বকা দেও না...
-সকালবেলা উঠে বকা দিব... ঠিক আছে...
-আচ্ছা... বকা দিবা কিন্তু...
-ওকে...
তিথি ফয়সালের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে... খুব শক্ত করে ধরে আছে তাকে...
ফয়সাল আগে তিথির সাথে খুব ঝগড়া করত... শুধু বকা দিত... একদিন তো গায়ে হাতও তুলে ফেলেছিল... সেদিন মেয়েটা খুব কেঁদেছিল...
কিন্তু একদিনের ঘটনায় সবকিছু বদলে গেল... তিথি প্রথমবারের মত মা হবে... অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে তিথি জোরে কেঁদে উঠল... তার স্বামীকেও সেখানে থাকতে হবে... ফয়সাল ভয়ে ভয়ে ঢুকল... একটা মেয়ের প্রসব যন্ত্রণা যে কেমন হতে পারে সে সেদিন বুঝেছিল, দেখেছিল ... সন্তান জন্ম দিতে যে এত কষ্ট সহ্য করতে হয় সেটা ফয়সালের জানা ছিল না... তার বৌ অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তান জন্ম দিল... অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল মেয়েটা... কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস... বাচ্চাটা বাঁচে নি... কিন্তু সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই... তার সবকিছু জুড়ে তখন তিথি... তিথি বাঁচবে তো... সেদিন তিথির কিছু হয় নি... জ্ঞান ফিরে দেখে তার স্বামী তার হাত ধরে দাড়িয়ে আছে...
তখন সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে... তিথিকে আর কোনদিন সে কষ্ট দিবে না... একটা সন্তান জন্ম দিতে যে পরিমাণ কষ্ট তার হয়েছে... তার তুলনায় ফয়সালের কষ্ট গুলো একদম তুচ্ছ... কোন কষ্টের সাথে এর কোন তুলনা চলে না... আর কোনদিন তিথিকে সে কষ্ট দিবে না... যতই জ্বালাতন করুক না কেন??? আর করবেই বা কেন??? সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে এই একটা ছেলেকেই সে তার জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছে... এর কি কোন মূল্য নেই... আর তিথিকে কষ্ট দেয়ার ফল সে পেয়েছে... তার সন্তান তার চোখের সামনে মারা গেছে...
আল্লাহও মনে হয় এমনটা চেয়েছিলেন... এই ঘটনার মাধ্যমে সে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে, আগে নিজে পরিবর্তন হও... তারপর তুমি বাবা হতে পারবে...
আসলেই সে এখন অনেক পাল্টে গেছে... গত দুবছর হল, সে একটা সিগারেটও খাইনি...
সে যে এখন বাবা হতে যাচ্ছে... তার পরিবর্তন না হলে চলবে... তাকে দেখেই তো তার ছেলে শিখবে...
তাই নয় কি?