১।
মরু শহর আবুধাবির বিলাশবহুল হোটেল-গোল্ডেন গেট এর নবম তলায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক বসেছে। ইহুদি ধর্মের বিশিষ্ট মানুষ ছাড়া কারো এখানে প্রবেশ নিষেধ। গোয়েন্দা প্রধান-মি. সিমন শুরু করলেন মুখে এক টুকরো হাসি ঝুলিয়ে।
-আমরা ইসলাম-কে ধ্বংস করার জন্য আইএস থেকেও আরো কার্যকরী একটি সংগঠন তৈরী করছি। আপনারা জানেন ‘সহী ইসলামী শরিয়া’ নামক দলটি তৈরী করা হচ্ছে সারা পৃথিবী থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য। এর প্রধান কাজ হচ্ছে -প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কার্যক্রম শুরু করা এবং সহী ইসলামী দল হিসেবে সুনাম অর্জন করা। তারপর একে একে নীল নকশা বাস্তবায়ন করে পৃথিবী-কে মুসলিম শূণ্য করা হবে।
বক্তেব্যের এ পর্যায়ে যেন তিনি কল্পনায় দেখতে পেলেন সারা পৃথিবীতে দু’একটা নগন্য মুসলিম লোক ছাড়া ইহুদী দ্বারা সয়লাব হয়ে গেছে এবং এক স্বর্গীয় পৃথিবী যেন রচিত হয়েছে ইহুদি জাতির কল্যানে। সেই কল্পিত সুখের রেশ অনুভব করে চোখ দুটি বন্ধ করে দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠলেন মি. সিমন।
আর সেই দলের প্রধান হবেন- মি. জামাল যাফরী। যিনি ইতিমধ্যে সৌদি আরব থেকে ইসলামের উপর সমস্ত পান্ডিত্য অর্জণ করেছেন। বর্তমান দুনিয়ার প্রধান প্রধান ইসলামী চিন্তাবিদ ও ব্যক্তিত্বকে চ্যালেঞ্চ করতে পারেন একমাত্র এই মি. জামাল যাফরী। যার ব্যক্তিত্বের কাছে সবাই ভেসে যাবে বানের জলের মত। কথাটা বলে মি. মর্ডিসাই কোহেন তাকালেন আলেক্স আব্রাহামের দিকে যার বর্তমান নাম জামাল যাফরী। তার কথা শুনে জামাল যাফরী সম্মতি সূচক মাথা নাড়লেন।
মিডিয়া মুগল হিসেবে পরিচিত-বেন এ্যাফেন মুখ খুললেন এবার- আমি এর মধ্যে বিশ্ব মিডিয়ায় বর্তমান যুগের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আলেম হিসেবে জামাল যাফরীকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। শুধু ইসরাইল বা আমেরিকা নয় সামনে সারা পৃথিবী হবে আমাদের গোলাম।
সবাই এবার জামাল যাফরীর দিকে দৃষ্টি ফিরালেন। ভবিষ্যৎ ধোকাবাজীর নেতা যিনি হবেন তিনি দশ মিনিট ধরে যা বললেন শুনে সবার কলিজা ঠান্ডা হলো এবং হাতে হাত রেখে শপথ করলেন যে কোন মূল্যে তারা তাদের এই ষড়যন্ত্রের আগুনে সমগ্র মুসলিম দেশসমূহ পুড়িয়ে ছারখার করবেন।
তাদের এই অপকর্মের কথা অন্তর্যামী ছাড়াও আরেকজন নীরবে শুনে গেলেন যিনি আজকের সিকিউরিটি ইনচার্জ। সে আর কেহ নয় ইহুদি ধর্ম ত্যাগকারী ব্যাঞ্জামিন বাস্তিয়ান। যারা মুসলিম নাম - জলিল আনসারী। তার ধর্মান্তরিত হওয়া ব্যাপারটি ইহুদি সমাজের কেউ জানেনা।
২।
দুই মাস পরের এক পড়ন্ত বিকেল বেলা জলিল আনসারী তার গোপন সিমকার্ড মোবাইলে ভরে তার স্ত্রী আফিয়ার কাছে ফোন দিলেন যিনি মিশরের কায়রোতে বসবাস করছেন বছর খানেক ধরে। ইসলামকে ধ্বংশ করার জন্য কি কি কার্যক্রম চলছে তা সবিস্তারে বলে গেলেন এবং আফিয়া তা রেকর্ড করে রাখলেন। রাতে জলিল আনসারীর বন্ধু ডিয়ান মেন্ডেল যে এখন মোঃ জাবের নামে পরিচিত তাকে রেকর্ডকৃত তথ্যটি মেইলে পাঠিয়ে দিলেন।
এদিকে জামাল যাফরী পুরো আরব বিশ্ব সফর করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার অনুসারী দিন দিন বাড়তে লাগলো। অবস্থা এমন হলো যে তাকে এক নজর দেখার জন্য বহুদূর থেকে মানুষ আসতে লাগলো যেন তাকে দেখা পূণ্যের কাজ। জিহাদি কার্যক্রম চালানোর জন্য যুবকদের তাড় দলে ভিড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন কায়দায়। যারা জিহাদি হবে তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা- এই ঘোষনার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে জিহাদি সদস্য সংখ্যা।
এসব জিহাদিদের মধ্যে আছে শিক্ষিত, বেকার, অর্ধ-শিক্ষিত, ধনী, দরিদ্র, ছাত্রসহ আরও অনেকেই। এদেরকে নতুন ভবনে রাখা হচ্ছে,
ব্রেন ওয়াশ করে তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে ইসলাম বর্হিভূত কর্মকান্ড। দুনিয়াতেই বেহেস্তি নেয়ামত দেওয়ার নামে- মদ, নেশা, নারী দিয়ে তাদেকে এক রঙিন দুনিয়া আসক্ত করে ফেলল। এসবের সাথে অস্ত্র চালনাই এদের প্রধান কর্ম ক্ষেত্র হয়ে উঠল। ধর্ম থেকে দূরে ঠেলে দিয়ে যুদ্ধের জন্য এদেরকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এদেরকে বলা হয়েছে ইসলামী শাসন কায়েমের জন্য যুদ্ধ আসন্ন তাই প্রস্তুত থাকা জিহাদি সদস্যদের জন্য কর্তব্য।
মোঃ জাবের বসে নেই। সে এই নাশকতা ও জামাল যাফরীর মুখোশ খুলে দিতে তৎপর। তুরস্কের গোয়েন্দ্রা প্রধানকে সে ইতিমধ্যেই সব ব্যাপার খুলে বলেছে এবং তুরস্কই যে হতে যাচ্ছে জামাল যাফরীর কথিত ইসলামি শাসনের লক্ষ্যবস্তু যা গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে তারও প্রমানসহ রিপোর্ট পাঠিয়েছে।
জাবেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সাপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে তুরস্ক সরকার এবং তাকে জরুরী তলব করেছেন। একটি বিমান মিশর থেকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছে জাবের-কে তুরঙ্কে খুবই গোপনে।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরই রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে একান্ত সাক্ষাৎ করে জাবের। সেখানেই সে তুলে ধরে এক অজানা অধ্যায়ের গোপন ইতিহাস।
জাবেরের অন্যতম সহকর্মী মালেক মিরহাম নিহত হয়েছে জর্ডানে জামাল যাফরীর জিহাদী ক্যাম্পে। মালেক দেখতে ছিল সুদর্শন। তাই তাকে নারী সাজিয়ে গোয়েন্দা হিসেবে পাঠানো হয়েছিল জর্ডানে। সেখানে সে সফলতার সাথে জিহাদীদের অবস্থান ও কার্যক্রমের তথ্যসহ ছবি পাঠাতে সক্ষম হয়। কিন্তু এক জিহাদী যুবক তার প্রেমে পড়ে যায় এবং তাকে পাওয়ার জন্য দেওয়ানা হয়।
সেই জিহাদী যুবক সবসময় ফলো করতো মালেককে। একদিন সুযোগ পেয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য চড়াও হয় মালেকের উপর। কোন ছলনায় ভুলাতে না পেরে মালেক খুন করে সেই জিহাদী যুববকে। কিন্তু লাশ গুম করার আগেই দেখে ফেলে আরও দুই জিহাদি ও এক নারী। ওদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গিয়ে সব তথ্য ও ছবি জাবেরকে পাঠিয়ে সমস্ত প্রমান ধ্বংস করে গোপনে ক্যাম্প ছাড়তে গিয়ে ধরা পড়ে যায় এবং তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ছবি-নিজের তোলা।