somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশরীরী

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না , আকাশের তারারা আজ আছে কি নেই। আমার চোখ যে একদম খারাপ হয়ে গেছে তাও না। আকাশে ভীষণ মেঘ হয়েছে তেমন কোনো সম্ভাবনাও নেই। দূর থেকে ভেসে আসা সুমধুর এক কণ্ঠের গান, মনে হয় আমার কানের কাছেই গুনগুন করে কেউ গাচ্ছে
'' আমি তোমারি কাছের খুব চেনা কেউ ,
আমায় হারিয়ে যেতে দিওনা কখনো
''।

খুব সাবধানে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি মায়া এসেছে কিনা। এই যে , আজ ডান পাশের দরজার পেছনে লুকিয়ে সে এমন করে অদৃশ্য হয়ে আছে। ইদানিং বড্ডো বোকা হয়ে গেছি ,কিছুই বুঝতে চাই না।
বেরিয়ে এসো , সারাদিন চা জোটেনি আজ। বাগান থেকে লেবু তুলে রেখেছি , মায়া এলে যত্ন করে চা বানাবে। কি জানি কি হয়েছে , মায়া আর চা বানায় না। প্রতিদিন তুলে নিয়ে আসা লেবু গুলো শুকিয়ে যায়, কিন্তু মায়ার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। মাঝে মাঝে ভীষণ রাগ হয়,গোস্যা করে থাকি। কত কাল হয়ে গেলো মায়া চা বানায় না। কি যে এক জাদু আছে মায়ার চায়ে তা আমি কখনো প্রকাশ করতে পারিনি। আজ অনুরোধ করলাম ,আমাকে যেন একটু ছুঁয়ে দেয় , মাথায় আলতো করে বিলি কেটে দেয়। ওই আগের মতোই শুধু হাসে আর গুনগুন করে গান গায়
''তোমার হিয়ায় আমি বেঁচে আছি মায়ার ছায়া হয়ে ,
তুমি খুঁজোনা আমায় স্পর্শ পেতে নিঃশেষ অভিলাষে।
''

আমি আচ্ছন্ন হয়ে যাই তন্দ্রায় , মায়া পাশে এসে বসে , ছুঁয়ে দেয় আমার চিবুক , কপাল। বিলি কাটে মাথার এপাশ থেকে ওপাশে। আমার তন্দ্রা থেকে নিদ্রা চলে আসে। জোর করে বেরিয়ে আসি। ভয় হয় অনেক , মায়া যদি চলে যায় এখনই , তবে আমি নিঃসঙ্গ রাত কাটাতে পারবো না। জেগে রই। মায়াকে নিয়ে ছাদে যাই , নিশি পোকার ঝি ঝি শব্দে মায়াকে সুরসুরি দিতে আমার ভীষণ ভালো লাগছে । মায়া যখন কেঁপে উঠে আমাকে সরিয়ে দিয়ে লজ্জা পেলো, আমি তাকে বেগুনি শাড়িতে কেমন মানিয়েছে তা বলতে শুরু করলাম। যদিও রাতে কখনো গাছ থেকে ফুল তুলিনা ,তাও আজ একটা ঝুমকো জবা মায়ার কানে গুজিয়ে দিলাম । মায়া বললো, তোমার পাগলামি ঠিক আগের মতো এখনো রয়ে গেছে , একটু তো বড় হও এবার। আমি হাসলাম শুধু। একটা গান ধরলাম,
''কত ফুল শুকিয়ে গেলো আমার ডায়রির পাতায় ,
আজ সার্থক হল ফুলের জন্ম তোমার বুনো খোঁপায় ''

মাঝরাত হতে চললো , এবার ঘরে যাবার সময় হল এলো মায়ার। এক প্রকার করা শাসনে মায়া আমাকে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে এলো। আমি এতবার আবদার করলাম , আজ একসাথে ভোর হওয়া দেখবো , ভোরের কাক যখন প্রথম ডাকবে তখনই ঘরে যাবো। মায়া বললো , সে অবধি তার আয়ু নেই।
একপ্রকার জোর করেই আমাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে এলো। কোনো কথা নয়, এখন সোজা ঘুমোবে। আমার শিওরে বসে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো,আমি মায়ার শাড়ীর আঁচল শক্ত করে ধরে রইলাম। ঘুমিয়ে গেলাম কখন নিজেও জানিনা।
বেশ বেলায় ঘুম ভাঙলো। দেখি পাশে ডাক্তার বসে হাত ধরে কি যেন দেখছে। বাসার কাজের লোকটি ডাক্তার কে বলেছে , আমি নাকি আর ঠিকমতো ওষুধ খাই না। একা একাই রাত বিরাতে বারান্দা,বাগান,ছাদে ঘুরাঘুরি করি। কেউ ডাকলেও কিছু শুনিনা। ডাক্তার বললো , অবস্থা খুবই খারাপ , কোনো মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিলে হয়তো একটু ভালো হতে পারে , তবে সময় সাপেক্ষ বেপার। নিজের কাছের কেউ আছে কিনা জানতে চাইলে কাজের লোক বললো , মায়া ম্যাডাম ছিলেন তবে তিনি গত হয়েছেন ২৩ বছর আগে। স্যার নাকি মেডামের সাথেই কথা বলেন এখনো। আমার ভীষণ ভয় করে এ বাড়িতে। ডাক্তার একটু হেসে বললেন এসব কিছু নয় , সব এ মনের ভুল। চিকিৎসায় ঠিক হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:২৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×