বেশ কিছুদিন আগের কথা উদাসিনভাবে অনেক সময় ধরে হাঁটছিলাম ।বুঝতে পারছিলাম না মন ভালো হওয়া উচিত নাকি খারাপ..পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছে..বরাবরের মতই খুব একটা ভালো রেজাল্ট হয়নি।সবচেয়ে সুখের কথা জেনেটিক্স এ পাশ এসে গেছে।আনমনে হাঁটছি কানে আসলো দুই বান্ধবীর কথোপকথন।একজন আরেক জনকে বলছে 'উফ আর একটুর জন্য ফোর আউট অব ফোর আসলো না'
আমি উদাস মনে আকাশের দিকে চেয়ে থেকে নিজেকে সান্তনা দেই আর ভাবি ঐ যে ছোট বেলায় দুটো লাইন পড়েছিলাম যে
"এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি..."
গিয়ে বসলাম বঙ্গবন্ধু চত্বরে ,নোংরা জামা পড়া একটা ছেলে এসে পাশে ঘুরোঘুরি করছিলো।বয়স কত আর হবে চার কি পাঁচ।আমার স্বভাব আবার বাচ্চাকাচ্চা দেখলে গল্প জুড়ে দেই।ডাক দিলাম প্রথমে কিছুতেই কাছে আসতে চায়নি।হাত ধরে টেনে নিয়ে আসার পর যখন এলো তখন আমরা অনেক গল্প করলাম।ঠিক গল্প নয় আমি প্রশ্ন করলাম পিচ্চিটা উত্তর দিয়ে গেলো। কথায় কথায় জানতে পারলাম তার বাবা দিনমজুরের কাজ করে।।তাও সব সময় কাজ করে না..কখনো করে কখনো বসে থাকে।ওরা দিনে একবার খায় ।সকালে কিছু খেলে খাবে না হলে ভাত খাবে একেবারে সন্ধ্যে বেলা।কি আশ্চর্য ব্যাপার বাচ্চাটার চোখে মুখে এই নিয়ে কোন অভিযোগ বা অভিমান ছিলো না।সে কথা বলছিলো আর মুচকি হাসছিলো।তাকে বহু সাধাসাধি করলাম দুপুরের খাবারটা আমি তাকে খাওয়াতে চাই।সে কিছুতেই খাবে না কিছুতেই না।বাচ্চা মানুষ সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ায় কতক্ষণ আর আমার সাথে বসে থাকবে উঠে চলে গেলো।আমি বসেই রইলাম।
আমি এসব সাত পাঁচ ভেবে যাচ্ছি কোথা থেকে জানি আবার ঐ দুই বান্ধবী উড়ে এসে জুড়ে বসলো...
তারা গল্প করছে।তাদের গল্পের বিষয় বস্তু হচ্ছে ঈদের শপিং।
কিছুটা দূরে বসে আমি ভাবছি মানুষে মানুষে জীবন যাপনের কত পার্থক্য।কেউ একবেলা খেতে পায় না আর কেউ বসে বসে ঈদের শপিং এর প্ল্যান করে।উফফ প্রকৃতি নিষ্ঠুর!!!কত সামান্য কারণে আমাদের মন খারাপ হয়ে যায় অথচ এরা... ঐ দিনের ঐ বাচ্চা ছেলেটা আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলো নিজের যা আছে চাইলে তা নিয়েই দিব্যি ভালো থাকা যায়।এইবার আমি উঠে আবার হাঁটা শুরু করলাম উদ্দেশ্য হলে ফেরা।হাঁটছি এমন সময় এক বন্ধু পেছন থেকে এসে ডাক দিলো
'ওই ট্রিট দিবি না??'
'খাইছেরে কিসের ট্রিট??'
'তুই বলছিলি না যে জেনেটিক্স এ পাশ হবে না পাশ তো হয়েই গেলো এইবার ট্রিট দে।'
আমি ঢোক গিলে বললাম আরে এরকম কিছু আমি বলি নাই আর আমার কাছে টাকা পয়সাও নাই।
'তোর পার্স আমি দেখেছি যা আছে আমরা ভাগাভাগি করে খাবো আমার আমরাই তো...'
বুঝলাম এরে ফাকি দেওয়ার কোন উপায় নেই।আমি উদাস ভঙ্গীতে সাথে সাথে হাঁটতে থাকলাম
তখনও অজানা কারণে সেই দুই লাইন মাথায় ঘুরছিলো
"এ জগতে হায় সেই বেশি চায়...."
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৭ রাত ১২:০৭