ছোট বেলাটা আর দশ জনের মত খুব সাদামাটাভাবে কেটেছে কিনা বলতে পারছি না, যদিও আব্বুর ছিলো বদলির চাকুরী।দুই বছর এক জায়গায় তো পরের তিন বছর অন্য জায়গায়।এই যাযাবর জীবন যাপনের ভেতরে কিছু ছোট ছোট গল্প লুকিয়ে আছে।কখনো কাউকে কিছু বলা হয়ে ওঠে নি।আজ থেকে একটু একটু করে বলতে শুরু করলাম।খুব একটা দূরন্তপণার সুযোগ যদিও আমি পাইনি তারপরেও যা পেয়েছি তা কম ছিল না মোটেও।নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ ক্যাম্পাসে তখন দুটো পেয়ারা বাগান ছিল।আমাদের বাসা থেকে দূরের বাগানটায় আমি খেলতাম বেশি।তখন প্রথম কান ফুরিয়েছি কানে সোনার দুল থাকতো।কয়দিন পর কানে হাত দিলে আর তার হদিশ পাওয়া যেতো না,কোন পেয়ারা গাছের ডালে দুল ঝুলে গেছে সেই খবর রাখার সময় কি আমার আছে?? আমি শুধু দৌড়াই আর দৌড়াই। খোলা মাঠে দৌড়াই,কাঠের তৈরী বিদ্যুৎ এর খুটি উপর লাফাই,গোল্লাছুট খেলি বরফ পানি খেলি আর সন্ধ্যা না হতেই ঘুমে ঢুলি আর রোজ রোজ আম্মুর কাছে এক গাদা বকা খাই।কখনো সখনো রাতে পড়ার ফাঁকে আম্মু হয়তো পাশের বাসায় আড্ডা দিতে গেছে আর আমি অমনি খেলায় মেতে গেছি।খেলার সঙ্গী কখনো ছিলো হয়তো আমাদের বাসার কাজের মেয়েটা আর পাশের বাসার কাজের ছেলেটা। আমরা বর বউ খেলতাম।কাজের মেয়েটা কি সব বাজে ব্যাপার বলতো তখন ঠিক বুঝতে পারতাম না।বয়স আর তখন কত হবে সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছি নার্সারী কিংবা কেজিতে পড়ি। আম্মু বাসায় ফিরে আসলে আবার পড়তে বসে গেছি কিন্তু আম্মুকে ওইসব কথার কিছুই বলিনি।ছোটবেলায় কিভাবে কিভাবে জানি বুঝে গিয়েছিলাম সব কথা আম্মুকে বলা যাবে না।আমি ছড়া পড়তে থাকি আর গরগর করে মুখস্থ বলে আমার ছোট বোন।
তখন 'ছুটির ঘন্টা' মুক্তি পেয়েছে খুব সম্ভবত কেজি কিংবা ওয়ানে পড়ি হয়তো।স্কুলে গেলে সবসময় ভয়ে থাকতাম কখন জানি আমাকে রেখে সব বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়।স্কুল বন্ধের দিন গুলোতে অস্থির হয়ে থাকতাম দাদুবাড়ী যাওয়ার জন্য।সমবয়সী সব ভাইবোন মিলে পুকুরে গোসল দাপাদাপি উঠোনে বৃষ্টির দিনে কাদায় মাখামাখি।আহ!!!কি অসাধারণ ছিলো সেই দিনগুলো।
আমার ছেলেবেলার ইন্টারেস্টিং কাহিনীর সুত্রপাত হল কয়েকবছর পর।যেটা না বললে এত কথা অপূর্ণ থেকে যাবে।আব্বুর পোস্টিং তখন পাবনায় আর আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি।বিকেলে যথারীতি আমি গোল্লাছুট,বউচি খেলে বেড়াই।সাথে আমার ছোট বোন ও খেলে।তবে কিছু বোঝার পক্ষে সে তখন অনেক ছোট।একদিন বিকেলে একজন আমার হাতে একখানা কাগজ ধরিয়ে বললো পড়ে যেন আমি কাগজটা ছিড়ে ফেলি।তারপর কাগজটা মেলে ধরার পর আহ!!আমি প্রথম প্রেমপত্রের স্বাদ পেলাম।পড়ার পর লক্ষী মেয়ের মত চিঠিখানা ছিড়েও ফেলে দিয়েছিলাম।তারপর থেকে ভালোই লাগতো,ঐ রকম আড় চোখের চাহনি আর নিঃশব্দতা।এমনকি আমি নিজেও কিছু একটা লিখে দিয়েছিলাম।তবে উহাকে প্রেমপত্র কি বলা যায় ??না বোধ হয়।কিন্তু ঐ তো কাল হল। বেশিদিন টিকলো না এসব।আমাদের এই প্রেম পর্বে ভিলেন হয়ে দাড়িয়ে পড়লেন ছেলের মা।সেই ভিলেন আমার মাকে সকল দোষ আমার বলে শাসিয়ে গেলো।আব্বুর ছিলো রগচটা স্বভাব।লাঠি নিয়ে ছুটে এলেন।আমি ভয়ের চোটে এই যে বাথরুমে ঢুকেছিলাম মনে হয় পরের দিন বের হয়েছিলাম।আর আব্বু ঐ প্রথম ঐ শেষ লাঠি নিয়ে ছুটে এসেছিলেন।আহ কি বাঁচাটা বেঁচেছিলাম ঐ দিন।ঐরাতে আমাকে ঝড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলো আম্মু।আমিতো ঘুমের ভাব ধরে ছিলাম কিন্তু আসলে তো সবই টের পেয়েছি।পরেরদিন আম্মু সীমানা দিয়ে দিলো।দরজা থেকে বিশ কদম দূরে এক নারকেল গাছ ঐ গাছের পরেই ওদের বাসাটা দেখা যায়।তাই আমার সীমানা ঐ গাছ।আমি কক্ষনো ঐ গাছ পেরিয়ে ওদিকে যাইনি।কক্ষনো না।আর সব কিছু ভুলে গেলেও ঐ গাছটাকে কখনো ভুলবো না।তারপর এভাবে ভালোবাসার আদ্রর্তায় কেটে গেছে বহুবেলা।বুঝলাম আমি বড় হয়ে গেছি।এখন এই কথা মনে পড়লে ভীষণ হাসি পায় আর ভাবি আহ!!আমার প্রথম প্রেম!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:০১