রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান শুধুমাত্র বিটিভি প্রচার করতে পারবে। আর কেউ না।
বর্ষবরণ এবং ছায়ানট এখন সমার্থক। দিনের শুরু ছায়ানটের গান দিয়ে। সূর্য ওঠার আগে রমনা বটমূল লোকারণ্য। ছোট ছোট বাচ্চাদের কেউ মা'র হাত ধরে এসেছে, কেউ এসেছে বাবার ঘাড়ে চেপে। বটগাছের পাখিরা কিচির-মিচির করে অস্থির। প্রতি বছর এই দিনে কিছু একটা হয় এটা এখন পাখিরাও জানে। তারা অপেক্ষা করে কখন গাওয়া হবে_
'এসো হে বৈশাখ এসো এসো
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে।'
মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি আমার দীর্ঘজীবনে রমনা বটমূলের অনুষ্ঠানে যাইনি। কিছু কিছু অনুষ্ঠান আমার টিভির পর্দায় দেখতে ভালো লাগে। যেমন- ক্রিকেট খেলা, বর্ষবরণ উৎসব, একুশের মধ্যরাতে শহীদ মিনারে পুষ্পদান। নিজে উপস্থিত না হয়ে টিভি পর্দায় অনুষ্ঠান দেখার আসল মজা অদৃশ্য হয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা। আমার অদৃশ্য মানব হতে ভালো লাগে।
দুই বছর আগে হঠাৎ আবিষ্কার করলাম পহেলা বৈশাখে অদৃশ্য মানব হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আমি তখন সুইডেনে। সুইডেনের কোনো টিভি চ্যানেল নিশ্চয়ই রমনা বটমূলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান দেখাবে না। মনটা খুবই খারাপ হলো, মনে হলো আচমকা বাঙালির মূল সে াতের বাইরে চলে গেছি। তখন খবর পেলাম সুইডেনে 'চ্যানেল আই' দেখা যায়। রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান তারা সবসময় প্রচার করে। মূল সে াতে ভেসে থাকা এখন সম্ভব। সে দিনের অনুষ্ঠান দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমি 'চ্যানেল আই'কে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
এ বছর কী হলো বুঝতে পারছি না। চ্যানেল আই স্ক্রলে দেখাচ্ছে তাদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে তারা বর্ষবরণ উৎসব দেখাতে পারছে না। চ্যানেল আইকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, এ অনুষ্ঠান শুধুমাত্র বিটিভি প্রচার করতে পারবে। আর কেউ না।
ঘটনাটা কী? রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান এখন সার্বজনীন অনুষ্ঠান। কারও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান না। শুধু সরকারি টিভি বিটিভি এই অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারবে, আর কেউ পারবে না_ কারণটা কী? ইউরোপে যেসব বাঙালি থাকেন তারা এবার কিছু দেখবেন না? বিটিভি ওইসব দেশে নেই।
ছায়ানট ভবন নামের বিশাল ভবনটি কিন্তু জনগণের টাকায় বানানো। ছায়ানটের কর্মকর্তাদের টাকায় না। জনগণের একটি বড় অংশ প্রবাসী বাঙালি। আজ তাদের কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে? যারা বিদেশে থাকেন তাদের প্রকৃতি চিলের মতো। চিল আকাশে উড়ে, তার দৃষ্টি থাকে মাটিতে। প্রবাসীরা বিদেশে বাস করেন, তাদের মন পড়ে থাকে দেশে। দেশে কী হচ্ছে তা নিয়ে তাদের সীমাহীন আকুলতা। রমনা বটমূলের চমৎকার অনুষ্ঠানটি তাদের অনেকেই দেখতে পারবেন না। তাদের দুঃখবোধ কি ছায়ানটের কর্মকর্তাদের স্পর্শ করবে? তারা গভীর আবেগে গাইবেন_
'তোমার আমায় মিলন হলে সকলই যায় খুলে
বিশ্বসাগর ঢেউ খেলায়ে উঠে তখন দুলে।'
গানের বাণী তারা বিশ্বাস করেন কি? তাদের চেতনায় কি 'বিশ্বসাগর' আছে?
সূত্ত - Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ২:০০