
ফুটফুটে দুবছরের সন্তানের চোখের সামনে কিভাবে একজন মানুষ তার প্রিয়তমা স্ত্রী যাকে সে অনেক ভালবেসে বিয়ে করেছিল তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে? কল্পনা করা যায় সে দৃশ্য যখন একজন মা রূপী শাশুড়ি তারই মেয়ে সমতুল্য একজনকে পিছনে থেকে ধরে রাখে যাতে ছেলের বউয়ের গায়ে আগুন দিতে সুবিধা হয় সেজন্য?
হুম এমন পাষণ্ড কাজটি ঘটেছে গত ২ জুন নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চরপার্বতী গ্রামে। সেদিন পাষণ্ড স্বামী-শাশুড়ি মিলে রুমার গায়ে আগুন দিয়েছিল যৌতুকের টাকা এবং কন্যা সন্তান জন্মদানের অভিশাপ!! সহ আরো কিছু কারনে। এতদিন ঘটনাটি তেমন আলোচিত হয়নি কারন ঘটনার পর প্রায় বিশদিন রুমার অচেতন ছিল এবং এই সময়ে তার শুশুর পক্ষ প্রচার করেছিল রুমার গায়ে চুলা থেকে আগুন ধরে সে পুড়ে গিয়েছে!! আর তার স্বামী ইমন সাংবাদিকদের ফোনে জানাই রুমা নাকি হঠাৎই উত্তেজিত হয়ে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন!!!
ফুটফুটে সন্তানসহ রুমা
কিন্তু ঘটনার প্রায় পনেরদিন পর রুমার যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন বের হয়ে আসে মুল কাহিনী। সৌদি প্রবাসী সেলিম রেজার মেয়ে রুমার রূপে পাগল হয়ে তাকে বিয়ে করে বসুরহাট এর বিড়ি ব্যবসায়ি আবদুল মালেকের ছেলে হারুনুর রশিদ ইমন। কিন্তু বিয়ের আগে ইমনের অনেক বিষয় রুমার পরিবার জানতে পারেনি। ইমন বেকার জীবনের সাথে সাথে ছিল নেশাগ্রস্ত। বিয়ের পর থেকেই ইমন এবং তার পরিবার তাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। তারা বারবার ব্যবসার কথা বলে রুমার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দিত। মেয়ের সুখের কথা ভেবে বাবা সেলিম রেজা ইমনকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন ব্যবসা করার জন্য। কিন্তু সে এই টাকা অনেক আগেই নষ্ট করে গটনার কিছুদিন আগ থেকে রুমাকে আরো ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু রুমা আর টাকা আনতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেই। শুরু হলো মানসিক শারিরীক অত্যাচার। আর রুমার মুখে সেই পুরোনো গল্প। বোকা দু:খী মেয়েটা নিজের মেয়ের কথা ভেবে , সংসার টিকানোর কথা ভেবে এসব নির্যাতনের কথা কিছুই বলেনি তার পরিবারের কাছে। সয়ে গেছে অত্যাচার। ঘটনার দিন ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসা নিয়ে তার সাথে স্বামী-শাশুড়ির জগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে শাশুড়ি রুমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেয়। আর তার স্বামী ম্যাচের কাঠি জ্বেলে আগুন ধরিয়ে দেয় । তারপর রুমা মাটিতে গড়াগড়ি করে আগুন নিয়ন্ত্রন করার একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর সে গত পনেরদিন ছিল অচেতন। ঘটনার সময় পাশে থাকা রুমার ২ বছরের শিশুকন্যা এমন বীভৎসতায় এখন অস্বাভাবিক আচরন করছে।
সর্বশেষ শারীরিক অবস্থাঃ বর্তমানে রুমা রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ঢাকা বার্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর দুই হাত, পা, বুক, মুখের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গেছে। বাম পাশের স্তন পুরোপুরি গলে শরীরের সঙ্গে লেগে গেছে। তার চিকিৎসক সৈয়দ শামসুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, রুমার শরীরের প্রায় ৩৫ শতাংশ গভীরভাবে পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। কারন শরীরের বিভিন্ন অংশ একেবারেই পুড়ে গিয়েছে যা রিকভার করা সম্ভব নয়।

মানুষরূপী সেই পশুটি
পুলিশের ভাষ্যঃ পুলিশ যথারীতি আসামিকে খুজে পাচ্ছেনা। অথচ তার স্বামী প্রতিনিয়ত তাদের এবং হাস্পাতালে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা না করানোর জন্য। আধুনিক এই যুগে ফোন ট্রেকিং এর মাধ্যমে আসামিকে ধরা খুব সহজ হওয়া স্বত্তেও পুলিশ কেন তাদের খুজে পাচ্ছেনা তা কিছুটা অনুমেয়। ইমনের বাবা এলাকার প্রভাবশালী এবং তার অনেক পরিচিত ক্ষমতাসীনদের কাছের লোক হওয়ায় পুলিশ বোধহয় তাদের খুজে পাচ্ছেনা। কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক আকন্দ টেলিফোনে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন যে, ‘হত্যার উদ্দেশে দাহ্য পদার্থ দিয়ে পোড়া, যৌতুকের জন্য মারধরের জন্য মামলা করা হয়েছে। আসামিরা বর্তমানে পলাতক। গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
সমাজে হটাত পারিবারিক কলহ বৃদ্ধি আমাদের চিন্তিত না করে পারেনা। কিছুদিন পুর্বের ঢাবির শিক্ষক রুমানাকে তার স্বামী কর্তক পাশবিক নির্যাতন, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর বেসামরিক কর্মকর্তা মার্টিন সরকারকে তারই নিজ স্ত্রী-কন্যার হত্যা খবর আমাদের ব্যপকভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সবসময় দেখা যায় আইনের ফাক ফোকর দিয়ে এসব অপরাধী পার পেয়ে যায়। যার কারনে বারবার ঘটছে এমন বর্বর ঘটনা। আমরা যারা শিক্ষিত দাবি করি তারা অপরাধ বিবেচনা না করে শুরু করি নারী-পুরুষের বিভেদ সৃষ্টিকারী জগরা। কিন্তু এতে মধ্যখানে লাভবান হয়ে যায় মুল অপরাধী আর সমাজে ঘটতে থাকে এমন নিষ্ঠুর ঘটনা। আর যার বলি হয় মার্টিন সরকার,রুমা,রুমানার মত অসংখ্য প্রান।
রুমাকে নিয়ে কেরামতুল্লাহ বিপ্লবের করা অসম্ভব টাচি সেই আলোচিত রিপোর্ট টি দেখুন-
শেষ করছি প্রিয় শিল্পী হায়দার হোসেনের সেই গানটির কিছু লাইন দিয়ে-
কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত
কত প্রদীপ শিখা জ্বালালেই জীবন আলোয় উদ্দীপ্ত
কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য
নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার...