মৃত্যুঞ্জয়,
জীবনভর অজস্র সত্যের মুখোমুখি আমি হয়েছি। আমি জানি, সত্য কতো নির্মম। কতো একা। কতো ভয়ানক। সত্য কতোটা বান্ধবহীন!
হতে পারে, একটি সত্য বিকেলের কাছে খুন হয়েছো তুমি। খুন হয়েছে একটি বিকেল। সবুজ প্রান্তর। নীল আকাশ। এমনকি মাঠে বসে থাকা পাখিগুলোও বিদ্ধস্ত হয়েছিলো কাল এবং সবশেষে এতোসব বিধ্বস্ত বেলা আমার বুকের মধ্যে ঢুকে পড়লো অতর্কিতে। তীর হয়ে হয়ে সারাক্ষণ বিঁধে থাকলো বুকপাঁজরে। এই বুকের জমিন ছাড়া কালবেলাগুলোও যেনো খুব অসহায়। কোথাও আর ঠাঁই নেই ওদের।
মৃত্যুঞ্জয়,
প্রকৃত অর্থে আমরা সকলেই ভালোবাসার পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত। কিন্তু ভালোবাসার ডাকে ফিরে তাকাতে কেউ শিখিনি। এখানেই পৃথিবীর যতো গণ্ডগোল। তাকালেও বেশিদিন তার যত্ন নিতে জানিনে। কিংবা সময়ের চপেটাঘাতে সে সুযোগটুকুকে হারিয়ে আবার তাজিয়া ঘোড়া হয়ে ছুটতে হয় নতুন কোনো সময়ের বুকে। কিন্তু ইতিহাসের বুক থেকে কিছু সত্য আমিও মুছে দিতে পারিনে। প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে আমি খুন হই সেই সত্যের কাছে। দ্যাখো, কি তীরবিদ্ধ বুক আমার। কেবল হেরে গেছি সময়ের কাছে। যদিও এভাবে হেরে যেতে যেতে আমি অজস্রবার অপরাজিতা হয়ে উঠেছি। সময়ের কাছে এতো প্রশ্ন যে, বুঝে উঠতে পারিনে ঠিক কোত্থেকে শুরু করবো। কোন দুঃখভোগ! তাই সময়ের সাথে আজকাল কথা বলা ছেড়ে দিয়েছি।
মাঝে-মাঝে সত্যের দাপটে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি। শূন্য হয়ে পড়ি। ফাঁকা হয়ে পড়ি। সত্য আমাকে কিছুই দেয়নি রক্তক্ষরণ ছাড়া! আমি রক্তক্ষরণের মধ্যেই বেঁচে আছি। বেঁচে থাকি। তবে উঠে তো দাঁড়াতেই হয় আমাদেরকে। সময়ের কাছে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকলে তোমাকে খেতে দেবে কে! কোন সমাজ, কোন রাষ্ট্র, কোন বুক তোমাকে টেনে নেবে তোমার অসহায়ত্বে!!! জেনো, নিজের থেকে সত্য বুক আর নেই। ওখানেই স্থির হয় সকল ঘাতকীয় বাতাস। তুমিও স্থির হও। তোমার বুকের বাতাসে।
আমি বিশ্বাস করি, সত্যের মৃত্যু নেই। সত্য অবিনশ্বর। অতীত থেকে শক্তি নাও। জেনো, অতীতের থেকে বড়ো শিক্ষা আর নেই। একটি সুন্দর আগামীর জন্য অতীতের ভুলগুলো শোধরানো প্রয়োজন। নতুবা, ক্রমশ উচ্ছিষ্ট শ্রেণীর তলানীতে পড়ে যেতে হবে মননে। সত্য একদিন ঠিকই জীবনকে পৌঁছে দেবে সূর্যনগরের কাছাকাছি। অন্ধকার ভেদ করে সব। কেবল সৎ থেকো, থেকো সত্য, সহজ ও সুন্দর।
জেনো, কষ্ট মানুষকে ঋদ্ধ করে। কষ্ট পাও আর মহান হয়ে ওঠো…
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩৮