'মিনিকেট' নামে ধানের কোনো জাত নেই। সাধারণ মোটা চাল মেশিনে চিকন করা হয়। তার নাম হয় মিনিকেট। এই চালের পুষ্টিগুণ কমে যায়। চাল ব্যাবসার সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের মুখ থেকেই এসব তথ্য পেয়েছি। বিষয়টি চরম উদ্বেগের। শুধু মুনাফার লোভেই ব্যবসায়ীরা দেশবাসীর প্রধান খাদ্যপণ্যের এই হাল করবে এবং মানুষ না জেনে সেগুলোকে উৎকর্ষ ভেবে বেশি দামে কিনবে-এ ধরণের প্রতারণা মেনে নেয়া যায় না। সরকারের উচিত বিষয়টি তদন্ত করা। মানুষকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণাও দরকার। এ ধরণের অপকর্ম হয়ে থাকলে তা নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ কিংবা ভারত-কোনো দেশেই মিনিকেট নামে ধানের কোনো জাত নেই। মূলত একশ্রেণীর চালকল মালিক ভোক্তাদেরকে বোকা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মোটা চাল ছেঁটে সরু করে তা মিনিকেট নামে চালিয়ে যাচ্ছে।
১৯৯৫ সালের দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের কৃষকদের মাঝে সে দেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন জাতের চিকন ‘শতাব্দী ধানবীজ’ বিতরণ করে। মাঠপর্যায়ে চাষের জন্য কৃষকদেরকে এ ধানবীজের সঙ্গে আরও কিছু কৃষি উপকরণসহ একটি মিনিপ্যাকেট প্রদান করে ভারতীয় সরকার। মিনিপ্যাকেটে করে দেয়ায় ভারতীয় কৃষকদের কাছে এ ধান শেষমেষ মিনিকিট বলেই পরিচিতি লাভ করে। কৃষকরা মিনিপ্যাকেট শব্দটির মধ্য থেকে ‘প্যা’ অক্ষরটি বাদ দিয়ে মিনিকেট বলে পরিচয় দিতে শুরু করে। মোটা চালকে পলিশ করে মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু এসব দেখবে কে আর কেই-বা এ গুরুতর অপরাধের শাস্তি দেবে?
অটোরাইস মিলে রয়েছে একটি অতি বেগুনি রশ্মির ডিজিটাল সেন্সর প্ল্যান্ট। এর মধ্য দিয়ে যে কোনো ধান বা চাল পার হলে সেটি থেকে প্রথমে কালো, ময়লা ও পাথর সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর মোটা ধান চলে যায় অটোমিলের বয়লার ইউনিটে। সেখানে পর্যায়ক্রমে ৫টি ধাপ পার হবার পর লাল কিংবা মোটা চাল সাদা রংয়ের আকার ধারণ করে। এরপর আসে পলিশিং মেশিংয়ে। অতি সুক্ষ্ম এই মেশিনে মোটা চালের চারপাশ কেটে চালটিকে চিকন আকার দেয়া হয়। এরপর সেটি আবারও পলিশ ও স্টিম দিয়ে চকচকে শক্ত আকার দেয়া হয়। শেষে সেটি হয়ে যায় সেই কথিত এবং আকর্ষণীয় মিনিকেট চাল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, একমাত্র পশ্চিমের জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গা জেলাতে কথিত ‘মিনিকেট’ ধানের চাষ হয়। ‘মিনিকেট’ নামে বাংলাদেশসরকার অনুমোদিত কোনো জাতের ধান নেই। বিআর ২৮, কল্যানী, স্বর্ণা, গুটিস্বর্ণা, লাল স্বর্ণা আইঅর-৫০, জাম্বু ও কাজল লতা জাতের ধান ছেঁটে মিনিকেট বলে বাস্তায় ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে এ চালের ব্যাপক চাহিদার জন্য এ ‘মিনিকেট’ প্রতারণার ব্যবসা চলছে। ব্যবসা করা হালাল কিন্তু মানুষ ঠকানো কি?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:২৮